What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গল্পটা পরিচিত 🎭🎭🎭🎭🎭🎭🎭 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
-বাবা, আমি আর কোনদিন ও বাড়ি ফিরে যাবো না! ওরা আমাকে মেরে ফেলবে, বাবা!

এই নিয়ে তিনবার সাজিয়া ফিরে এলো বাবার বাড়ি। শ্বশুরবাড়ির অত্যাচারের মাত্রা যে এতো ভয়ানক হয়, সে শুধু পেপার, পত্রিকায় আর কিছুটা লোকমুখে শুনেছিল। এখন নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করছে সেই বর্বরতা।

এর আগের দু'বার বাবা-মা বুঝিয়ে সাজিয়াকে সে বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। মা বলেছিলেন,
-একটু মানিয়ে নে। সময়ে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমাদের পরিবারের একটা সম্মান আছে তো, মা। মেয়ে হয়ে তোর বাবার কথা ভাববি না?

সাজিয়া ফিরে গেছে। মানিয়ে নিতে চেয়েছে, মেনে নিতে চেয়েছে। কোন লাভ হয়নি। তাদের একটাই দাবী, বাড়ির বৌ চাকরী করতে পারবে না। তাকে পুরোপুরি সংসারের হাল ধরতে হবে।

অথচ বিয়ের আগে আরিফ জানতো, সাজিয়া একটা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানীতে তিন বছর হলো ভাল জব করে আসছে। মুক্তমনা, স্মার্ট মেয়ে সাজিয়ার হাত ধরে আরিফ কথা দিয়েছিল, শুধু চাকরী কেন, সাজিয়ার ব্যক্তিগত কোন ব্যাপারেই আরিফের পরিবার কোনদিন কোন বাঁধা দেবে না।

সবটাই ভুল ছিল। একটা শিক্ষিত পরিবারের কিছু মানুষের কুৎসিত রূপ দেখতে সাজিয়ার সময় লাগলো মাত্র তিনমাস! সব বদলে গেল। সব চেয়ে বেশী বদলে গেল আরিফ। প্রেমের দিনগুলোর সেই আরিফকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না, শ্বশুর-শ্বাশুড়ী আর ননদদের উস্কানিতে!
প্রথমে কথার খোঁচা, তারপর গায়ে হাত তোলা, সর্বশেষ চরিত্রের কুৎসা রটানো, যা পুরোটাই সাজিয়াকে ঘায়েল করতে শেষ অস্ত্র! সব কিছু যদি মানাও যায়, চরিত্রের বদনাম কি মানা যায়? নাকি মানা উচিৎ?

হয়তো কোনটাই মানা উচিৎ নয়। এতে এইসব মুখোশধারীদের প্রশ্রয় দেয়া হয়। অন্যায়কে মেনে নেয়া সব চেয়ে বড় অন্যায়।

চার বছরের ছেলে রাফিদকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সাজিয়া। বাবার বাড়িতে যদি বাবার ইজ্জতের প্রশ্ন আসেই, তবে নিজেই অফিসের কাছাকাছি একরুম ভাড়া নিয়ে নেবে। রাফিদের জন্য কষ্টকর হবে অনেক কিছু, বড় ধরনের যুদ্ধ করতে হবে সাজিয়াকে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত! তবু একটা মুক্ত আকাশ, বুক ভরে শ্বাস নেবার অধিকার প্রতিটি মানুষের থাকা উচিৎ, একান্ত উচিৎ। পাঁচ বছর সাজিয়া ভালো করে আকাশ দেখেনি!

শরাফাত উল্লাহ বারান্দায় বসে আছেন। তিনটা মেয়েকে বিয়ে দিলেন, কেউ কোনদিন এভাবে তো ফিরে আসেনি! সাজিয়ার ভাগ্যটা কেন এমন হলো? এতো ভালো একটা মেয়ে, তার একটা সংসার থাকবে না! সারাটাজীবন এই নিঃসঙ্গতাকে নিয়ে বাঁচবে মেয়েটা! রাফিদ একটা নিষ্পাপ ছেলে। তার কী অপরাধ? বাবার স্নেহের ছাঁয়া থেকে বঞ্চিত হবে কেন এই শিশু?

সাজিয়া বাবার মনের অবস্থা বুঝতে পারে। হেরে যাওয়া সন্তানের কষ্ট একজন বাবাকে কতটা বিপর্যস্ত করে দেয়, সাজিয়া তার বাবার মুখ দেখে অনুভব করে। সে বাবার কাঁধে একটা হাত রাখে।
-আমি অনেক চেষ্টা করেছি, বাবা। শুধু আরিফ যদি আমার পাশে থাকতো, আমি শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যেতাম।
-আমি জীবনে কী এমন পাপ করেছি রে মা? আমার সন্তানকে ওরা এতো অসম্মান করলো। ওরা তো শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক এগিয়ে ছিল, তবে কি দাম ঐ শিক্ষার?
-শুধু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষকে শিক্ষিত করে না, বাবা। পরিবার, পারিবারিক শিক্ষার প্রয়োজন খুব বেশী দরকার। আর পাপের কথা বলছো? পাপ কিংবা ভুল যেটাই বলো না কেন, তুমি কি তা করো নি?

শরাফাত উল্লাহ একটু যেন চমকে ওঠেন, সাজিয়ার কথায়!

পনের বছর আগে এ বাড়িতে রাতের আঁধারে একটা নিষ্পাপ মেয়ে অরুনের হাত ধরে চলে এসেছিল। অরুন উনার একমাত্র ছেলে। জুয়ার আসরে মত্ত থাকতো যে। রাজপুত্রের মত চেহারা আর মুখের অমিয় বানীতে পাগল হয়ে ঘর ছাড়ে বোকা মেয়েটা। ছয় মাসের মাথায় বুঝে ফেলে, অরুনের কেবল জুয়ার নেশা নয়, আরো নেশায় মত্ত থাকে সে। বাপের অঢেল সম্পদ! কাজ, কর্ম করার কোন প্রয়োজন মনে করতো না, এবং এসবের মূল ইন্ধনদাতা ছিলেন শরাফাত উল্লাহ স্বয়ং!

-বাবা, তুমি ভাবীকে বলতে, এই মেয়ে তোমার ছেলের জীবনে না এলে তোমার ছেলে কোনদিন শেষ হয়ে যেতো না। সোনার টুকরা ছেলে তোমার, একটা নষ্ট মেয়ের পাল্লায় পড়ে সব হারালো। নিজের স্বামীকে বশে আনতে পারে না যে মেয়ে, সে মেয়ে স্বামীর বাড়ির ভাত খায় কোন মুখে?
তারপর আর ভাত খায়নি ভাবী। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ভাইয়া ভাবীর গলা এভাবেই টিপে ধরেছিল, বেচারা মরেই গেল! তুমি বুদ্ধি করে হারু চাচাকে দিয়ে গাছের পোকা মারা বিষ এনে খুব সাবধানে ভাবীর গালে ঢেলে দিলে। অনেক টাকা থানা-পুলিশে খরচ করে ঘরে এলে যখন, তখন সবাই জানলো এ বাড়ির বৌটাকে পরকীয়া করতে গিয়ে, বিষ খেয়ে মরতে হলো। আহা, আমাদের অরুন বৌকে ছাড়া কি করে বাঁচবে!!

ভাবীর অসহায়,গরীব বাবা তোমাদের কান্না দেখে নিজেই কাঁদতে ভুলে গেলেন! জানো বাবা, বিয়ের ছয়মাস পর সেদিনই ভাবীর বাবার ভাবীর সাথে প্রথম দেখা! গালের পাশ দিয়ে গড়িয়ে পড়া বেগুনী রঙের বিষ, মাথার কাছে বসে এক পরাজিত বাবা দেখতেও পেলেন না, মেয়ের গলায় রাক্ষসের আঙ্গুলের ছাপ! তার চেয়ে কষ্টের কি জানো, বাবা? ভাবী, দু'মাসের অন্তঃসত্বা ছিল! গরীব পিতা পোষ্ট মর্টেমের কথা মাথাতেই আনেননি। হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, যা হারাবার তার সবটুকুই তো হারিয়ে গেছে, পৃথিবীর কোন প্রান্তে, কোন কিছুর বিনিময়েই তো ফিরে পাওয়া যাবে না তা!
-এখানে তো আমার কোন দোষ ছিল না!
-ছিল বাবা, তোমার এবং মায়েরই সব চেয়ে বড় দোষ ছিল!
-কেন?
-তোমরা সন্তান জন্ম দিয়েছিলে, কিন্তু মানুষ বানাতে পারোনি। বিবেক, বোধ, মনুষ্যত্ব সন্তানের ভিতর জাগাতে পারোনি। তার চেয়ে বড় কথা, সন্তানের অন্যায়কে মেনে নিয়ে তাকে আরো অন্যায় করতে ইন্ধন জাগিয়েছো।

এটা আজ সমাজে, ঘরে একটা ব্যাধি! এর দ্রুত প্রতিকার দরকার। নইলে নবম শ্রেনী পাশ জুলেখা কিংবা দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে ডিগ্রীধারী সাজিয়া আমরা কেউই আরিফ বা অরুনের পাঁচ আঙ্গুল থেকে নিরাপদ নই।

আজ পনের বছর পর শরাফাত উল্লাহর বুকে চাপ ধরা ব্যথা অনুভুত হচ্ছে! সাজিয়া তার বাবাকে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি দিল। সাজিয়ার বুকটা বেশ হাল্কা লাগছে!


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top