আমার শ্বশুরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না! যমুনা ফিউচার পার্কের ওয়েস্ট এন্ট্রি থেকে তিনি হাওয়া হয়ে গেছেন! আমি আর রিহানের আম্মু ক্যাটস আই-এ ঢুকছিলাম আর তাঁরা, ইনফিনিটির সামনে ছিল। দশ মিনিটের ব্যবধানে এসে দেখি শাশুড়ি আছে শ্বশুর নাই!
আমার শ্বশুর সিক্সটি প্লাস এইজের শুভ্র সাদা চুলের সেমিবৃদ্ধ মানুষ । কথা বলেন ঠাস ঠাস। হিতাহিত জ্ঞান হান্ড্রেট পার্সেন্ট। শুধু চোখে একটু প্রবলেম, চশমা ছাড়া কিছুই দেখেন না। চোখে না দেখলে হারিয়ে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্ধ মানুষ দুনিয়া দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর তিনি কম দেখার কারণে হারিয়ে যাবেন এটা হতে পারেনা।
যাক এরপরও তিনি হারিয়ে গেছেন। তাকে খুজে বের করা আমার একান্ত কর্তব্য। মেয়ের জামাই হিসাবে আমি হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারিনা।
সুতরাং,
একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি, গোলগাল চেহারা, গায়ের রং ফর্সা ষাটোর্ধ একজন লোক এইমাত্র হারিয়ে গেছে। লোকটির মুখভর্তি লালচে-ধূসর দাড়ি। তামিল হিরোদের মতো নাকের নিচে স্মার্ট গোঁফ আছে। সুললিত মার্জিত ভাষায় কথা বলেন। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল বাদামী বর্ণের গ্যাভাডিন প্যান্ট ও ফুল হাতা সাদা শার্ট। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা থাকার কথা। যদি কোন সহৃদয়বান অথবা হৃদয়বতী সন্ধান পেয়ে থাকেন অনুগ্রহ পূর্বক আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমি উনার মেজো মেয়ের হাসবেন্ড।
আমার কথা বার্তা শুনে রিহানের আম্মু রেগে গেছে।
- অনি ফাজলামি রেখে বাবাকে খুঁজে বের করো!
- মানুষ যদি হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যদি পালিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
- মানে কী?
- মানে হলো, তোমার বাবা হারায়নি আমার ধারনা তিনি পালিয়ে গেছেন!
- আজব কথা! বাবা পালাবে কেন ?
- আজব কথা না, তোমার বাপের মেয়ে মানুষ দেখার শখ আছে। শপিংমলে এলেই তিনি চঞ্চল হয়ে যান।
- ফাজলামো রাখো, এই বয়সে বাবা মেয়ে দেখে ?
- দেখে! দেখে! উনার চোখের ভাষা আমি বুঝি! তোমার মায়ের জন্য তাকাতে পারেনা সেজন্যই পালিয়ে গেছে!
আমার শাশুড়ি কোন কথা বলছেন না! তিনি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ! উদাস দৃষ্টিতে সাউথ কোর্টের ডাবল এস্কেলেটরের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি শাশুড়ি মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি,
শ্বশুর মশাই একজন অল্প বয়সী মেয়ের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করছে!
- হায় হায়! মা, দেখুন দেখুন বাবা একজন মেয়ের সাথে পালিয়ে যাচ্ছে।
- যেতে দাও!
- প্লিজ মা, বাবাকে ফেরান!
- যে যাবার সে এমনিতেই চলে যাবে। ফিরিয়ে লাভ নেই!
- এসব কী বলছেন মা!
রিহানের আম্মুকে ডেকে তাঁর পিতার কর্মকাণ্ড দেখালাম। সে দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবাকে উদ্ধার করে আনলো। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। কঠিন স্বরে শ্বশুরকে বলেই ফেললাম,
- বাবা, শেষ বয়সে এসব কী শুরু করলেন?
- কী শুরু করলাম!
- পরনারীর হাত ধরে শপিংমলে ঘুরাঘুরি করছেন। ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক!
- আরে ফাজিল ছেলে কী সব হাবিজাবি বলছো! এই মেয়েটিই তো আমাকে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে আনলো!
- বিপদ! কিসের বিপদ ?
- তোমার শাশুড়ি আমার চশমা খুলে নিয়ে গেছে! চশমা ছাড়া আমি কিছু দেখিনা! আজ এই মেয়েটি না ধরলে তো এস্কেলেটর থেকে পড়ে মরেই যেতাম!
হায় হায়! তাই তো! শ্বশুরের চোখে তো চশমা নাই!
- সত্যিই তো বাবা আপনার চশমা কোথায় ?
- তোমার উন্মাদ শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করো !
আমি শাশুড়িকে বললাম,
- কী ব্যাপার মা, আপনি বাবার চশমা নিয়ে গেছেন কেন?
- কেন নিছি তোমার শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করো?
খাইছে রে, যা আশংকা করছিলাম তাই। মেয়েদের দিকে বদ নজর দেওয়ায় শ্বশুরের চশমা খুলে নেওয়া হয়েছে। যাহোক আমি হালকা কেশে সরে পড়লাম। শ্বশুর শাশুড়ির ইন্টারনাল বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলেও চলবে।
আমি আমার নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। বাহ্ কী সুন্দর আলো ঝলমলে পরিবেশ। বিভিন্ন ডিজাইনের নারী পুরুষ দেখে ভালোই লাগছে। নাকে নাকফুল, কানে দুল পরা ট্রান্সজেন্ডার টাইপের পোলাপানে শহর ভরে গেছে। মেয়েগুলো মনে হয় আর্থিক অনটনে ভুগছে! বেশির ভাগ মেয়ের প্যান্টই ছেঁড়া।
রিহানের আম্মু বললো,
- অনি, ঘাড় সোজা করে হাঁটো!
- কেন ঘাড় বাঁকালে সমস্যা কী?
- আমি কিন্তু চশমা খুলবো না সরাসরি চোখ খুলে ফেলবো!
আমি অত্যন্ত নিরীহ দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকালাম। রিহানের জন্য প্রচুর মায়া হচ্ছে। ছেলেটা আমার দুঃসময়ে জন্মেছে। বড় হয়ে বউ নিয়ে শপিংয়ে আসলে তাঁর বউ হয়তো মাথা খুলে ফেলার হুমকি দিবে!
(সমাপ্ত)
আমার শ্বশুর সিক্সটি প্লাস এইজের শুভ্র সাদা চুলের সেমিবৃদ্ধ মানুষ । কথা বলেন ঠাস ঠাস। হিতাহিত জ্ঞান হান্ড্রেট পার্সেন্ট। শুধু চোখে একটু প্রবলেম, চশমা ছাড়া কিছুই দেখেন না। চোখে না দেখলে হারিয়ে যেতে হবে এমন কোন কথা নেই। অন্ধ মানুষ দুনিয়া দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে আর তিনি কম দেখার কারণে হারিয়ে যাবেন এটা হতে পারেনা।
যাক এরপরও তিনি হারিয়ে গেছেন। তাকে খুজে বের করা আমার একান্ত কর্তব্য। মেয়ের জামাই হিসাবে আমি হাতগুটিয়ে বসে থাকতে পারিনা।
সুতরাং,
একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি, গোলগাল চেহারা, গায়ের রং ফর্সা ষাটোর্ধ একজন লোক এইমাত্র হারিয়ে গেছে। লোকটির মুখভর্তি লালচে-ধূসর দাড়ি। তামিল হিরোদের মতো নাকের নিচে স্মার্ট গোঁফ আছে। সুললিত মার্জিত ভাষায় কথা বলেন। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পরনে ছিল বাদামী বর্ণের গ্যাভাডিন প্যান্ট ও ফুল হাতা সাদা শার্ট। চোখে সোনালী ফ্রেমের চশমা থাকার কথা। যদি কোন সহৃদয়বান অথবা হৃদয়বতী সন্ধান পেয়ে থাকেন অনুগ্রহ পূর্বক আমার সাথে যোগাযোগ করুন। আমি উনার মেজো মেয়ের হাসবেন্ড।
আমার কথা বার্তা শুনে রিহানের আম্মু রেগে গেছে।
- অনি ফাজলামি রেখে বাবাকে খুঁজে বের করো!
- মানুষ যদি হারিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া যায় কিন্তু যদি পালিয়ে যায় তাকে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।
- মানে কী?
- মানে হলো, তোমার বাবা হারায়নি আমার ধারনা তিনি পালিয়ে গেছেন!
- আজব কথা! বাবা পালাবে কেন ?
- আজব কথা না, তোমার বাপের মেয়ে মানুষ দেখার শখ আছে। শপিংমলে এলেই তিনি চঞ্চল হয়ে যান।
- ফাজলামো রাখো, এই বয়সে বাবা মেয়ে দেখে ?
- দেখে! দেখে! উনার চোখের ভাষা আমি বুঝি! তোমার মায়ের জন্য তাকাতে পারেনা সেজন্যই পালিয়ে গেছে!
আমার শাশুড়ি কোন কথা বলছেন না! তিনি সম্পূর্ণ নিস্পৃহ! উদাস দৃষ্টিতে সাউথ কোর্টের ডাবল এস্কেলেটরের দিকে তাকিয়ে আছেন। আমি শাশুড়ি মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে দেখি,
শ্বশুর মশাই একজন অল্প বয়সী মেয়ের হাত ধরে ঘুরাঘুরি করছে!
- হায় হায়! মা, দেখুন দেখুন বাবা একজন মেয়ের সাথে পালিয়ে যাচ্ছে।
- যেতে দাও!
- প্লিজ মা, বাবাকে ফেরান!
- যে যাবার সে এমনিতেই চলে যাবে। ফিরিয়ে লাভ নেই!
- এসব কী বলছেন মা!
রিহানের আম্মুকে ডেকে তাঁর পিতার কর্মকাণ্ড দেখালাম। সে দৌড়ে গিয়ে তাঁর বাবাকে উদ্ধার করে আনলো। আমি আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারলাম না। কঠিন স্বরে শ্বশুরকে বলেই ফেললাম,
- বাবা, শেষ বয়সে এসব কী শুরু করলেন?
- কী শুরু করলাম!
- পরনারীর হাত ধরে শপিংমলে ঘুরাঘুরি করছেন। ব্যাপারটা আমাদের জন্য খুবই লজ্জাজনক!
- আরে ফাজিল ছেলে কী সব হাবিজাবি বলছো! এই মেয়েটিই তো আমাকে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে আনলো!
- বিপদ! কিসের বিপদ ?
- তোমার শাশুড়ি আমার চশমা খুলে নিয়ে গেছে! চশমা ছাড়া আমি কিছু দেখিনা! আজ এই মেয়েটি না ধরলে তো এস্কেলেটর থেকে পড়ে মরেই যেতাম!
হায় হায়! তাই তো! শ্বশুরের চোখে তো চশমা নাই!
- সত্যিই তো বাবা আপনার চশমা কোথায় ?
- তোমার উন্মাদ শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করো !
আমি শাশুড়িকে বললাম,
- কী ব্যাপার মা, আপনি বাবার চশমা নিয়ে গেছেন কেন?
- কেন নিছি তোমার শ্বশুরকে জিজ্ঞেস করো?
খাইছে রে, যা আশংকা করছিলাম তাই। মেয়েদের দিকে বদ নজর দেওয়ায় শ্বশুরের চশমা খুলে নেওয়া হয়েছে। যাহোক আমি হালকা কেশে সরে পড়লাম। শ্বশুর শাশুড়ির ইন্টারনাল বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করলেও চলবে।
আমি আমার নিজের বউ বাচ্চা নিয়ে হাঁটতে লাগলাম। বাহ্ কী সুন্দর আলো ঝলমলে পরিবেশ। বিভিন্ন ডিজাইনের নারী পুরুষ দেখে ভালোই লাগছে। নাকে নাকফুল, কানে দুল পরা ট্রান্সজেন্ডার টাইপের পোলাপানে শহর ভরে গেছে। মেয়েগুলো মনে হয় আর্থিক অনটনে ভুগছে! বেশির ভাগ মেয়ের প্যান্টই ছেঁড়া।
রিহানের আম্মু বললো,
- অনি, ঘাড় সোজা করে হাঁটো!
- কেন ঘাড় বাঁকালে সমস্যা কী?
- আমি কিন্তু চশমা খুলবো না সরাসরি চোখ খুলে ফেলবো!
আমি অত্যন্ত নিরীহ দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকালাম। রিহানের জন্য প্রচুর মায়া হচ্ছে। ছেলেটা আমার দুঃসময়ে জন্মেছে। বড় হয়ে বউ নিয়ে শপিংয়ে আসলে তাঁর বউ হয়তো মাথা খুলে ফেলার হুমকি দিবে!
(সমাপ্ত)