What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made অসম্মান 🌧🌧🌧🌧🌧 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আমার স্বামী তার মৃত্যুর মাত্র এগারো দিন আগে আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিলো ! না, এমন নয় যে, মৃত্যুটা হঠাৎ করেই হয়েছে। সে জানতো, সে মারা যাবে । মাত্র এগারো দিন পরে মারা যাবে, সেটা জানতো না । তবে হাতে যে বেশি সময় নেই, সেটা জানতো। আমরা সবাই জানতাম । গত দুই বছর ধরে আমার স্বামী রায়হান ক্যান্সারে ভুগছিলো। ঢাকা থেকে বলে দিয়েছিল, কোন আশা নেই । কিন্তু আমি আশা ছাড়িনি। ওকে চিকিৎসা করাতে ভারতে নিয়ে গেছি। আমাদের দুজনার জমি, ব্যাংক ব্যালেন্স যা ছিল সব শেষ । এমনকি আমার সব গহনাগুলোও। শুধু রায়হান এর নামে আমাদের এই বসত বাড়িটা ই সম্বল ছিল । লাগলে সেটাও বিক্রি করে দিবো, তাই ভেবেছিলাম । কিন্তু ভারত থেকেও ফিরিয়ে দিলো।



আমি রুমানা, ইতিহাসে মাস্টার্স পাশ করার পরে একটা বেসরকারী কলেজে ঢুকেছিলাম । সেখানেই রায়হান এর সাথে আমার পরিচয়। রায়হান কলেজের প্রিন্সিপাল ছিল । অসম্ভব সুন্দর করে কথা বলতো। বয়স একেবারে কম না হলেও, বয়সটা ঠিক বোঝা যায় না । যে কোন ব্যাপারে আমাকে খুবই সহযোগিতা করতো। রায়হান খুব আপন মানুষের মত কথা বলতো। আমাকে বলেছিল, তার ডিভোর্স হয়ে গেছে । বউটা নাকি তাকে একেবারেই সহ্য করতে পারতো না । শেষে ডিভোর্স নিয়ে নিয়েছে। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, এত ভালো একটা মানুষ কে মানুষ কেমনে সহ্য করতে পারে না?!



এক সময় রায়হান আমাকে জানালো, সে আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। আমি যেন এই কথাটা শোনার জন্যই অপেক্ষায় ছিলাম । কারণ বেশ কিছুদিন থেকেই আমারও মনে হচ্ছিলো, আমি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি । কিন্তু ঝামেলা বাঁধালো আমার বাড়ির লোকজন । তারা কিছুতেই ডিভোর্স হয়ে যাওয়া একজনের সাথে আমার বিয়ে দেবে না । আমার ভাইয়েরা এমনকি রায়হান এর চরিত্র নিয়েও কথা বলা আরম্ভ করলো। তার নাকি চরিত্র ভালো না । আমি জানি, এসব কিছুই আমার মন ভেঙে দেওয়ার জন্যই আমার ভাইয়েরা বলছে। আমি কিছুতেই সে সব কথায় কান দিলাম না । বাড়ি থেকে জানিয়ে দিলো, রায়হান কে বিয়ে করলে, বাপের বাড়ির সাথে আমার সম্পর্ক শেষ হয়ে যাবে । আমি তাতেও পিছু হঠলাম না । অবশেষে আত্মীয় স্বজন ছাড়াই আমি আর রায়হান বিয়ে করে ফেললাম ।



বিয়ের পরে আমার শ্বশুর বাড়িতে কোন অনুষ্ঠান না করলেও, আমাদের কলেজের অন্যান্য টিচাররা আমাদের বেশ ভালো একটা সংবর্ধনা দিয়েছিল। আমার বাড়ির সাথে আমার আর কোন যোগাযোগই থাকলো না । ওরা কিছুতেই এই বিয়ে মানবে না ।



রায়হান এর এই একতলা বাসাতেই আমরা উঠলাম । দুজনের ছোট্ট একটা সংসার । প্রথম দিকে দিনগুলো স্বপ্নের মত পার হচ্ছিলো। বারবার নিজেকে বোঝাতাম, আমি ঠিক কাজটাই করেছি ।



আস্তে আস্তে দিন বদলাতে লাগলো । আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন সারাক্ষণই প্যাচ লাগাতে ব্যস্ত থাকে । এ নিয়ে আমাদের দুজনের মধ্যে মাঝে মাঝেই ঝগড়া হয়। সেটা তাও মেনে নেওয়া যেতো। কিন্তু সমস্যা হলো, আমার আস্তে আস্তে মনে হতে লাগলো, রায়হান এর চরিত্রেরও একটু সমস্যা আছে । সারাক্ষণ কলেজের মেয়েগুলোর পিছনে ঘুর ঘুর করতো। একজন প্রিন্সিপাল এতটা ব্যক্তিত্বহীন হলে, সেটা চোখে পড়ে । যদিও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে, সে একদমই অস্বীকার করতো।



রায়হান এর দূর সম্পর্কের আত্মীয় স্বজনের কাছ থেকে কানাঘুষায় শুনেছি, এটা নিয়েই তার আগের বউ এর সাথে গন্ডগোল হতো। শেষে বাচ্চা হয় না বলে, বউটাকে রায়হান ই ডিভোর্স দিয়েছে। আমি খুব শক্ত ধরণের মেয়ে । এত সহজেই হেরে যাওয়া মেয়ে আমি নই। যেভাবেই হোক, তার এ স্বভাব আমি দূর করবো বলে মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলাম ।



রায়হান এর চরিত্রের ভালো উন্নতি হয়েছে । এখন আর আগের মত মেয়েদের পিছনে ঘুর ঘুর করে না । যেহেতু দুজনে একই কলেজে চাকরি করি, কাজেই ওর উপর নজর রাখতে সুবিধা হয়। ভালোই ছিলাম । কিন্তু সমস্যা হলো, আমিও কনসিভ করছিলাম না । ডাক্তারের কাছ থেকেই জানতে পারলাম, রায়হান এর সমস্যা আছে । রায়হান একদম ভেঙে পড়লো। আমিই ওকে সাহস যোগালাম। বললাম, পৃথিবীতে শুধু তুমি আমার পাশে থেকো, আর কিছু চাই না । রায়হান স্বস্তি ফিরে পেলো।



সাত বছরের সংসার আমার । দিন ভালোই কাটছিল। এর ভিতরেই রায়হান অসুস্থ হয়ে পড়লো। ধরা পড়লো ক্যান্সার । আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো । আমার বাপের বাড়ির সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই । শ্বশুর বাড়ির লোকজন আগে সংসারে অশান্তি ধরানোর জন্য ব্যস্ত থাকলেও এখন আর কারো টিকিটা দেখা গেলো না । কোন সাহায্য ই তারা করলো না । এক এক করে টাকা পয়সা, জমিজমা শেষ হলো চিকিৎসায়। একজন অসুস্থ মানুষ কে একা সেবা যত্ন করতে, কি অমানুষিক পরিশ্রম করা লাগে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না । শারীরিক ভাবে, মানসিক ভাবে, আমি ভেঙে পড়লাম। ভারত থেকে যখন ফিরে আসলাম, তখন আমি যেন এক ভাঙা বট গাছ । দুইটা বছর যুদ্ধ করতে করতে ক্লান্ত আমি ।



হঠাৎ করেই বাসায় শ্বশুর বাড়ির লোকজনের আনাগোনা বেড়ে গেলো । আমি ভাবলাম, হয়তো শেষ সময়ে তাদের অনুতাপ হচ্ছে, তাই আবার আসা আরম্ভ করেছে। রান্না করে এনে খাওয়াচ্ছে, ফল কিনে এনে খাওয়াচ্ছে । আদর যত্নও বেড়ে গেছে অনেক । আমি একটু রিলিফ পেলাম ।



একজন মৃত্যু পথ যাত্রী এবং তার পরিবারের লোকজন শেষ মুহূর্তে যে এমন কাজ করতে পারে, আমার ধারণাও ছিল না। চাকরি ঠেকানোর জন্য আমাকে মাঝে মাঝেই কলেজে যেতে হতো। আমার স্বামী অসুস্থ এবং সে এই কলেজের প্রাক্তন প্রিন্সিপাল বলে, আমার কলিগরা আমাকে অনেক ছাড় দিতো। তা না হলে হয়তো চাকরি করাও আমার জন্য সম্ভব হতো না ।



সেদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরে দেখি, শ্বশুর বাড়ির সব লোক উপস্থিত । সবার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে । শেষে রায়হান ই সেই ভয়ংকর কথাটা শোনালো আমাকে । সে আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে । ডিভোর্স লেটারটা আমার হাতে ধরিয়ে দিলো। আমার তখন বোঝার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে। যেন কোন দুঃস্বপ্ন দেখছি। কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না, রায়হান জানে তার হাতে সময় খুব কম । এরকম সময়ে মানুষ চায়, তার প্রিয় মানুষটা পাশে থাকবে। অথচ রায়হান আমাকে ডিভোর্স দিয়েছে !!! গত দুবছর ধরে ওর কাছে আমার চাওয়া পাওয়ার আর কিইবা আছে ? তবু ভালোবাসার মানুষটার সাথে আরো কিছু সময় যাতে থাকতে পারি, সেজন্যই তো আল্লাহর কাছে তার দীর্ঘায়ু প্রার্থনা করি । সেজন্যই তো দিনরাত নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছুটে বেড়ালাম।



প্রথমে ভাবলাম, রায়হান বুঝতে পারছে না, সে কি করছে। কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম, রায়হান বুঝে শুনেই কাজটা করেছে। রায়হান বললো, " তোমার বয়স কম। আমি মারা যাওয়ার পরে নিশ্চয়ই তুমি আবার বিয়ে করবা ? এই বাড়িটা তখন বাইরের একজন ভোগ করবে। এতে আমার বাবা মা, ভাই বোন কে ঠকানো হবে । তোমার সাথে আমার সম্পর্ক মাত্র সাত বছরের । কিন্তু বাবা মায়ের সাথে আমার সম্পর্ক জন্ম থেকে । তারা কষ্ট করে আমাকে মানুষ করেছে । আমি কিছুতেই তাদের সাথে অন্যায় করতে পারবো না । " আমি অবাক হওয়ার ক্ষমতা হারিয়ে ফেললাম ।



বুঝতে পারলাম, হঠাৎ করে তাদের আনাগোনা এবং আদর যত্ন কেন বেড়ে গিয়েছিল । এই কয়দিন ধরে তারা রায়হান কে এসব বুঝিয়েছে !! তারা বললো, আর রায়হান বুঝে গেলো ?! মানুষ এরকম সময়েও সামান্য কিছু সম্পত্তির কথা চিন্তা করতে পারে?! অপমান, ঘৃণা আর লজ্জায় ঐ সময়ই ঐ বাড়ি থেকে বের হয়ে আসলাম । কিন্তু যাবো কোথায় ? অনেক ভেবে চিন্তে আমার এক খালাতো বোনের বাসায় আশ্রয় নিলাম। পরে একটা বাসা ভাড়া নিয়ে চলে যাবো।



এর এগারো দিন পরেই রায়হান মারা গেলো। এরকম একজন অমানুষের জন্য কষ্ট লাগা ঠিক নয়। কিন্তু আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচরে যাচ্ছিলো কষ্টে । বারবার নিজেকে জিজ্ঞাসা করি, রায়হান কি কখনোই আমাকে ভালোবাসিনি ? আমাকে এতটা অসম্মান সে কিভাবে করলো ?



ডিভোর্স হওয়ার পরে লজ্জায় কলেজে যাচ্ছিলাম না। আমার কলিগ এবং ছাত্র ছাত্রীদের সামনে কিভাবে যাবো ? ওরা কি ভাবছে ? কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবনের প্রয়োজনে আবার আমাকে কলেজে যেতে হলো। না, যা ভেবেছিলাম তা ঠিক নয়। আমার সাথে যে অন্যায় হয়েছে, তার জন্য আমার কলিগরা এবং ছাত্র ছাত্রীরা খুব দুঃখ পেয়েছে। ওরা এখন আমাকে সারাক্ষণ আগলে রাখে ।



আমার বড় ভাই এসেছিল, আমাকে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য । আমি যাইনি । মাঝে মাঝে বেড়াতে যাই বাবা বাড়ি । কলেজের পাশেই একটা বাসা ভাড়া নিয়েছি। আমার জীবনের ভালোবাসাহীন, সম্মানহীন, লজ্জার সাতটা বছর আমি ভুলতে চাই ।

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top