What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made ফাগুনের রাতে 🎎 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
: সাজিয়া আপুর সাথে আমার সেটিং টা করে দে না, কি হয়?

: চুপ কর, ফাজিল, ডাকতেছিস আপু আবার তার সাথে সেটিং করতে চাস, লজ্জা করে না?

: লজ্জা তো নারীর ভূষণ, আমি কেন করব!

: দূর হ তুই, যা।

: এরকম কুকুরের মত দূর দূর করতেছিস কেন?

: ছোঁচা কুকুরের মত পেছন পেছন ঘুরছিস এজন্য, যেতে বলছি যা, গিয়ে পড়তে বস।

: ইহ্ এমন ভাবে বলতেছিস যেন আমার গার্জিয়ান তুই।

: আমি তো তোর বড়, তো গার্জিয়ান না?

: ইহ্ আসছে আমার বড়....

তমালের ক্রুদ্ধ চাহনিতেও আমি বিচলিত হলাম না বরং ক্রুর হাসি হেসে পাশ কাটিয়ে গেলাম। জানি তাতেও লাভ হবেনা। একটু পরেই তমাল আবার ঘ্যানঘ্যান করতে আসবে। আবার খানিকক্ষণ কানের কাছে প্যানপ্যান করবে, অবশ্য তাতেও কোন লাভ নাই, আমি ওর জন্য কিছুই করব না।

আচ্ছা ঘটনা খুলেই বলি। আমি তিথি, তমাল আমার ছোট ভাই। ছোট বলতে ঠিক এতোটা ছোটও নয়, মাত্র বাইশ মিনিটের ছোট। আমরা আসলে জমজ ভাইবোন।

বাবা মার বিয়ের প্রায় সাত বছর পরে অনেক চেষ্টা চরিত্র করে আমরা আসি। তবে শুরুতে বাবা মা জানতেন তাদের দুটো মেয়ে হবে। শুনে তাদের সেকি আনন্দ, সাথে সাথে নামও ঠিক করে ফেললেন আমাদের, শিবলী আর বাবলী। জন্মের পূর্বেই প্রত্যেকটা জিনিস ডাবল ডাবল করে এনে রাখলেন। ডাবল জুতা, ডাবল জামা, ডাবল খেলনা এমনকি সোনার গহনাও বানানো হল ডাবল করে।

সবকিছুই ঠিক ছিল কিন্তু জন্মানোর পর ছোট্ট একটা সমস্যা দেখা গেল। ডাক্তার জানালেন, তাদের দুটো মেয়ে হয়নি, হয়েছে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে। আমার বাবা মা অবশ্য তাতে খুশি হবার বদলে একটু মন খারাপই করলেন বলা যায়। কেননা তাদের সমস্ত কিছুর প্রস্তুতি ছিল মেয়ে বাচ্চার, হুট করে ছেলে হওয়ায় তারা যেন একটু অপ্রস্তুত হলেন।

তবে সমস্ত কিছু আগের মতোই চলল। ওর নাম রাখা হল শিবলী আর আমার নাম বাবলী। ছোটবেলায় ওকে বাচ্চা মেয়েদের পোষাক পরানো হল। একই রকম খেলনাও দেওয়া হল। আমরা একসাথে হাড়ি পাতিল খেলতাম আবার ফুটবলও। তবে সবচেয়ে বেশি যেটা খেলতাম সেটা হল রেসলিং, ডব্লিউ ডব্লিউ ই। তবে পার্থক্য ছিল এটাই যে আমাদের রেসলিং কোন পাতানো খেলা ছিল না। আমরা সত্যি সত্যি রেসলিংই খেলতাম।

পান থেকে চুন খসলেই দুই ভাই বোন দমাদম মারপিট শুরু করতাম। আব্বা আম্মা প্রথম প্রথম বকাবকি করতেন। কাজ না হওয়ায় মাঝে মাঝে হালকা পাতলা মারও দিতেন। তাতেও খুব একটা লাভ হতোনা। আমরা সমান তালেই মারপিট করতাম।

আর তমাল ইচ্ছে করেই আরও বেশি মারামারি করতে চাইতো। কারন ওর মনে হতো আব্বা আম্মা নাকি আমাকে বেশি আদর করে আর এই নিয়ে সারাদিন আমার পিছে লেগে থাকতো শয়তানটা।

আর একটু বড় হতেই সে আমাকে আমেরিকা রাশিয়ার মত তার আজীবনের শত্রু ঘোষণা করল। আরও ঘোষণা করল, আমার সাথে সম্পর্কিত কোন কিছুই নাকি ওর সাথে রাখবে না। তাই শিবলী নাম বদলে নিজেই নিজের নাম রাখলো তমাল। দেখাদেখি আমিও নাম পরিবর্তন করে ফেললাম, নাম রাখলাম তিথি। ওর সাথে মিল রেখে বাবলী থাকতে আমার বয়েই গেছে!

শুধু নাম পরিবর্তন করেই তমাল ক্ষান্ত হলো না। সবকিছুতেই আমার সাথে কমপিটিশন লাগিয়ে দিল। আমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, আমার চেয়ে ভালো গান পারতে হবে, এমনকি আমি টুকটাক রান্না করতে গেলে পরের দিনই সে অন্য কোন রান্না করে বসবে যেন সেটা আমার রান্নার চেয়েও ভালো হয়।

অবশ্য এসব দেখে আব্বা আম্মা তেমন বিরক্ত হতেন না, বিরক্ত হতেন আমাদের সারাদিন টম এন্ড জেরীর ঝগড়া নিয়ে। প্রতিদিনই কিছু না কিছু নিয়ে আমাদের লাগতোই।

তাই এসএসসি পরীক্ষার পর তমাল যেদিন পাড়ার ছিচকে মাস্তানদের হাতে মার খেয়ে এসেছিল, আমার চেয়ে বেশি খুশি বোধহয় কেউ হয়নি। খুশিতে ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছে হচ্ছিল আমার। মার তেমন ভয়ংকর ভাবে খায়নি তবে যে কারণে খেয়েছে সে কারনটা ভয়াবহ। পাড়ার ছিচকে কোন এক মাস্তানের বোনের সাথে প্রেম করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে, তাও একদম হাতে নাতে।

এটা হল তমালের একটা সমস্যা। সে প্রেমকুমার। স্কুলের একদম ছোট ক্লাস থেকেই প্রতিনিয়ত সে কোন না কোন মেয়ের প্রেমে পড়ে আর প্রতিবারই বলে, এটা সিরিয়াস কেস, আগের বারের মতো না, এই মেয়েকে ছাড়া সে বাঁচবে না। কিন্তু প্রতিবারই ছ্যাঁকা খেয়ে কিছুদিন বাপ্পারাজ মার্কা মুখ করে ঘুরে বেড়ায়। এরপর আবার নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ে। কাজেই ওর এসব দেখে দেখে আমার অভ্যাস হয়ে গেছে।

: কি রে, কি করিস?

: কিছু না।

: সেদিন না বললি, কয়েকটা ছবি তুলে দিতে, কাল সকালে তুলে দেব,

: লাগবে না।

: এরকম করিস কেন?

: ছবি দরকার নাই আর।

: আচ্ছা, নতুন কয়েকটা মুভি ডাউনলোড দিছি ভুতের, চল দেখি একসাথে।

আমি সরু চোখে তাকালাম। এতো ঘ্যানঘ্যান করেও ওকে দিয়ে কিছু করাতে পারিনা আর আজ সে নিজে থেকেই এতো কিছু করছে তাও আবার একটা মেয়ের জন্য, ভাবা যায়!

অবশ্য এসব না করে তেমন কোন উপায়ও ওর নেই। এবার যে মেয়ের প্রেমে তমাল পড়েছে তার সাথে আমারই যা একটু কথা হয়। এছাড়া অন্য কারও সাথে সে বলতে গেলে কথাই বলেনা।

সাজিয়া আপু, তিন মাস হল আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে এসেছে। বাবা মায়ের অতি আদরের মেয়ে। অতি আদরে মানুষ হয় অসামাজিক নয়তো বান্দর। উনি হয়েছেন প্রথমটা, কারও সাথেই মেশেন না। তবু আমার সাথে যে একটু কথা বলেছেন সেটাও অনেকটা বাধ্য হয়ে।

সেদিন আমি ছাদে গিয়েছি, দেখি উনিও একদিকের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে দেখে চলে যেতে চাচ্ছিলেন আর তাতেই বিপত্তিটা বাধলো। তারে ঝোলানো ক্লিপ গুলোর সাথে উনার চুল আটকে গেলো। আমি সাহায্য করতে দৌড়ে গেলাম, সেই ভদ্রতার খাতিরেই পরিচয়।

সাজিয়া আপু ব্যাপক সুন্দরী, দেখলেই মাথা ঘুরে পড়ে যাবার মত। সেদিক থেকে বিবেচনা করলে তমাল যে উনার প্রেমে পড়েছে, ভুল কিছু করেনি। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। সাজিয়া আপু আমাদের চেয়ে দুই বছরের বড়। আমরা অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ছি আর আপু আরও একবছর আগেই অনার্স পাশ করে ব্যাংকে জয়েন করেছেন। তার জন্য ছেলে খোঁজা হচ্ছে। ভালো ছেলে পেলেই পাত্রস্থ করা হবে। এই অবস্থায় কিনা তমাল ঝাঁপ দিয়ে উনার প্রেমে পড়ে গেল, কি আক্কেল ছেলেটার!

: আচ্ছা, তুই আমার বোন না?

: হুম তো?

: তো এমন করিস কেন! কি হয় একটু সাহায্য করলে, তুইই তো বলিস আমি সারাদিন এর তার পিছে সময় নষ্ট করি, এজন্য আমার জীবনে কিচ্ছু হবেনা।

: তা তো হবেই না।

: সেজন্যই তো গন্তব্য নির্দিষ্ট করতে চাচ্ছি...সাজিয়া আপু

: এহ্ তোর লজ্জা করে না, এখন সাহায্য চাইতে? আমার বেলায় কি করছিলি মনে আছে?

: কি করছিলাম!

: মনে করে দেখ।

শয়তানটা আকাশ পাতাল ভাবতে লাগলো আর আমি গ্যাট হয়ে বসে রইলাম। ফাজিলটা মনে করতে পারুক আর নাই পারুক আমার কিন্তু ঠিকই মনে আছে।

ইন্টারমিডিয়েটে থাকতে আমাদের এক ক্লাসমেট কে আমার খুব ভালো লেগেছিল। ছেলেটাও যে আমাকে পছন্দ করতো সেটা তার আড়ে আড়ে তাকানো, ব্যবহার দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম। অথচ তমাল যখন জানলো, সেদিন থেকেই ক্লাসের সবার সামনে চিৎকার দিয়ে আমাকে আপু ডাকা শুরু করলো আর অন্যদের কেও ডাকতে বাধ্য করল।

কয়েকদিনের মধ্যেই ব্যাপারটা এমন দাঁড়ালো যে ক্লাসের সবাই আমাকে আপু ডাকে। সেই ছেলেটাও দেখি একদিন কাঁচুমাচু করে এসে বলছে, "আপু তোমার ফিজিক্স খাতাটা দিবা, তমাল বলল তোমার কাছ থেকে নিতে"

একটু দূরেই তমাল দাঁত কেলিয়ে হাসছিল। বোঝাই যাচ্ছিল, আমাকে আপু ডাকানোর জন্যেই ওকে পাঠিয়েছে। এরপর থেকেই আমাদের আমেরিকা রাশিয়ার সম্পর্কে অবনতি হয়ে পাক ভারতের মতো দাঁড়িয়ে গেল, কথায় কথায় গোলাগুলি।

কাজেই তমাল কে পাত্তা না দিয়ে খুশি মনে ছাদে উঠে গেলাম। খানিকক্ষণ গান শুনে হাঁটাহাঁটি করব ভাবছিলাম কিন্তু উঠেই দেখি সাজিয়া আপু।

: কেমন আছো তিথি?

: জী ভালো, আপনি?

: আমিও ভালো, তোমার পড়াশোনা কেমন চলছে?

: এইতো যেমন চলে।

:ও, আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি, ঐযে কালো হ্যাংলা মতন একটা ছেলে তোমাদের বারান্দায় বসে থাকে ঐটা কি তোমার ভাই?

প্রশ্নটা শুনেই কেমন মেজাজ খারাপ হল, তমাল মোটেও কালো হ্যাংলা নয় বরং অত্যন্ত সুপুরুষ। আর তাকে কিনা কি বাজে করেই বলছে মেয়েটা...

: হ্যা, ওর নাম তমাল, কেন?

: না মানে ছেলেটা প্রতিদিন সকাল বিকাল বারান্দায় বসে থাকে, সেখান থেকে আমার রুমের বারান্দা সরাসরি দেখা যায়।

: তো?

: আমার খুব বিরক্ত লাগে, আমি বেশিরভাগ সময়ই বারান্দায় কাটাই তো, ঐ ছেলেটার জন্য

: তমাল

: হ্যা তমালের জন্য ঠিক মতো বসে থাকতে পারিনা, অস্বস্তি হয়। তুমি কি একটু বলে দেবে ও যেন সারাক্ষণ বারান্দায় বসে না থাকে?

আস্তে করে মাথা কাত করলেও মনে মনে গালি দিলাম। বদ মেয়ে, আমার ভাই আমাদের বারান্দায় বসে আছে তাতে তোর কি!

খুব দেমাগ না, দাঁড়া এই তোর সাথেই যদি আমার ভাইয়ের বিয়ে না দিছি তবে আমার নামও বাবলী থুক্কু তিথি নয়.. জাস্ট ওয়েট এন্ড সী মিস সাজিয়া, তুমি ঘুঘু দেখেছো কিন্তু ফাঁদ দেখোনি। নাও ইয়োর ফাঁদ ইজ কামিং, ভেরি সুন ...
 

Users who are viewing this thread

Back
Top