What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made পরকীয়ার পরের ক্রিয়া 💖💔💖💔💖💕 (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
::এক::
আমার এই ধরনের সাহসীকতার জন্যই বরং নিজেকে নিম্নস্তরের কাপুরুষ মনে হতে লাগলো। বিশ হাজার টাকা বেতনের চাকরি, অথচ পাঁচ বছর ধরে খুঁজে পাওয়া এই চাকরিটা ছেড়ে দিতেও আমার বিন্দুমাত্র চিন্তা হলো না। কি সাহসী হয়ে উঠেছি আমি!

ভালোবেসে বিয়ে করা কেয়াকে আর ভালোবাসাময়ী কোন নারী মনে হয় না এখন। ওকেও ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্তে আমার বিন্দুমাত্র ভাবাবেগ হয় না।

অথচ এমনও দিন ছিলো, যখন কেয়া কষ্ট পাবে এমন কোনো কথা বলারও কোনো সাহস আমার ছিলো না।
আর এখন?

আমার তিন বছরের মেয়ে টুম্পা, সন্ধ্যায় চাকরি থেকে বাসায় ফিরলেই বাবা বাবা করে মাথা খেয়ে ফেলে। প্রতিদিন ঘণ্টা খানেক প্রথমে রাগ করে থাকে। কথা বলে না। আমি কেন সারাদিন অফিসে থাকি? কেন ওর সাথে দিনের বেলা পান্না পান্না খেলি না? এই অভিমানে।
টুম্পা রান্নাবাটি খেলাকে বলে 'পান্না পান্না' খেলা। রাতে খাবার সময় প্লেট থেকে অল্প ভাত তুলে রাখে তার খেলনা হাড়িতে। রাতে ঘুমানোর আগে সেই ভাতওয়ালা হাড়ি নিয়ে এসে বলবে, "বাবা পান্না পান্না খেলবো"। আমি প্রতিদিন নিয়ম করে খেলি। ওর হাড়ির ভাত অতিথি হয়ে খাই।

সেই টুম্পার চিন্তাও আমাকে ব্যথিত করে না বিন্দুমাত্র। ওকে ছেড়ে থাকতেও আমার কষ্ট হবে না!
এতটাই সাহসী হয়ে গেলাম আমি।

::দুই::
কত রাত ভালোভাবে ঘুমাই না তার হিসাব নাই। সারা রাত শুধু চিন্তা, কী করে আমি সোনালীকে আমার করে পাবো। সোনালী অতিরিক্ত রোমান্টিকতা নিয়ে আমার ভ্রুতে দু'আঙুল বুলিয়ে কপাল টেপার সাথে ভালোবেসে কবে বলবে, "সামদানী, এই পৃথিবীতে আমি আর তুমি ছাড়া আর কেউ নেই"।
আহ ভালোবাসাগুলো এত অসভ্য আর সাহসী কেন হয়!

সারাজীবন শুনে এসেছি প্রেম-ভালোবাসা জীবনে একবার আসে। কথাটা একদম সত্য না। প্রেম-ভালোবাসা একাধিকবার আসতে পারে জীবনে। কেয়াকে ভালোবাসার কোন ঘাটতি কি কখনও আমার ছিলো? কেয়াও তো মুখ ফুটে কখনও আমাকে বলতে পারতো, "সামদানী, তুমি খুব বেখেয়াল, আমাকে ভালোবাসো না"?
পারতো না?

অথচ সোনালীর আবির্ভাব এসবই মিথ্যে করে দিলো। মস্তিষ্কের কোণায় কোণায় জমে থাকা সকল আবেগ এক হয়ে স্থির হয়ে গেলো সোনালীতে। কী ছিলো সোনালীর মধ্যে কে জানে। একটু বিশৃঙ্খল ভালোবাসা? কাছে টানার সম্মোহনী শক্তি? নাকি অন্য কিছু?

::তিন::
অফিসে আমি নতুন তখন। দুপুরে সবাই খাবারের বক্স নিয়ে চলে যেত ক্যান্টিনে। আমি বেছে বেছে কোণার দিকে বসতাম। আমার ইচ্ছা করত না কেয়ার রান্না করা তরকারি অন্যসবাই দেখে ফেলুক। রান্না সুস্বাদু হতো। এর জন্য আমার হীনমন্নতা ছিলো না। সমস্যা হলো প্রতিদিন আমি বাজার করতাম মিষ্টিকুমড়া, আলু, ঢেড়স, বেগুন, ছোট মাছ এইতো। লজ্জাবোধ এই কারণেই। কারণ অন্যরা প্রায় সবাই প্রতিযোগিতা করে খাবার আনতো সম্ভবত। তাছাড়া প্রতিদিন কবুতর, মুরগী, গরুর মাংস আনবে কেন?

আমি কতদিন বেফাঁস হাসি হেসে পাশের টেবিলের কলিগদের বলে ফেলেছি, মাংস ফাংস আমার একদম ভালো লাগে না। আমি ভেজিটেরিয়ান। কখনও কখনও মিথ্যাও বলতাম।

আমার ডেস্কের রিপন সাহেব কে একদিন কী মনে হতে বলে ফেললাম, "বাড়িওয়ালী বড়লোকি ভাব করে রান্না করে। আজ রেঁধেছে পোলাও, মাংসের ভুনা, ফ্রিজের ইলিশ। এগুলো একদম পছন্দ না ধুর। তাই সবজি রান্না করালাম।"

রিপন সাহেব হেসে ফেললেন। ইচ্ছা হলো লোকটার কলার ধরে একদিন বাড়িতে নিয়ে যাই। তারপর ইচ্ছা মত রান্না খাওয়াই।
প্রতি শুক্রবার কেয়া দামি খাবার রান্না করে। ভাগ্য খারাপ শুক্রবার আমার অফিস ছুটি।

এর মাঝে একদিন আমার কোণার টেবিলে সোনালী হাজির। বহু দিনের অধিকার আছে, এমন ভাব করে টিফিনের বক্স আমার সামনে নামিয়ে রেখে বলল,
"পোলাও-মাংস আছে। আজ আমি খাবো না। চুপচাপ খেয়ে ফেলুন। কোনো কথা বলবেন না।"

আমি অবাক হয়ে গেলাম। নিতান্ত অচেনা এক পুরুষের সাথে সেধে এমন ভাব জমানোর মানে কী?
কেউ শুনতে না পায় এমন স্বরে বললাম, "আপনাকে ধন্যবাদ। কিন্তু আমি তো পোলাও খাই না। প্লিজ নিয়ে যান।"

ভেবেছিলাম জোরাজোরি হবে এ নিয়ে কিছুক্ষণ। তার কিছুই হলো না। সোনালী চুপচাপ বক্স নিয়ে চলে গেলো।
আমার কেন জানি মনে হলো কাজটা আমি ঠিক করিনি। ওকে ছোটখাটো অপমান করা হয়েছে। আমি তখনই উঠে সোনালীর ডেক্সে গিয়ে মুখে শব্দহীন হাসি টেনে বললাম, "দিন খাবার দিন। খেতে ইচ্ছা করছে।"

::চার::
এমন সাদামাটাভাবে সোনালী আমার পরিপাটি শান্ত চেতনায় ওর ভিত্তি গড়ে তুললো। আমার বউ আছে, একটা মেয়ে আছে এটা নিয়ে ওর কোনো মাথা ব্যথা নেই। যেন ওর আগ্রহ বাড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কাজ করছে আমার বিবাহিত জীবন।
আমার মনে আছে একদিন প্রেম বিষয়ক কোনো একটা কথার উত্তরে আমি সোনালীকে বলেছিলাম, "এই বয়সে আর প্রেম! বউ আছে, বাচ্চা আছে।"

গহীন অর্থবোধক চাহনীতে সেদিন সোনালী বলেছিলো, "বিবাহিত তাতে কী! আমার তো বরং বিবাহিত ছেলেদেরই ভালো লাগে।"

আমি অবাক হয়ে শুনলাম।
আমার কেবলই মনে হতে লাগলো, ছিঃ! সোনালী এত খারাপ।

গত রোযার ঈদের আগে অফিস থেকে আমাদের ছয়দিনের ছুটি দিলো। অফিস ক্লোজ আওয়ারে সবাই সবার কাছ থেকে বিদায় নিলাম। ছয়দিন দেখা হবে না তাই। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় কোত্থেকে সোনালী প্রায় দৌঁড়ে আমার কাছে এলো। সাধারণ কথাবার্তার মাঝখানে সোনালী আমাকে চমকে দিয়ে আমার হাত ধরে ফেললো। ঘটনার আকস্মিকতায় আমি অবাক হওয়ার সীমা খুঁজে পেলাম না। যেন আমিই মেয়ে আর সোনালী ছেলে। আমি হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম, "কী হয়েছে? "

সোনালী অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,
"সামদানী সাহেব আপনার চোখ দুটো সার্জারি করে চাকমাদের মত বানিয়ে ফেলা যায় না?"

পরিবেশ হালকা হয়ে এলো এই কথায়। আমি হেসে ফেলে বললাম, "কেন কী হয়েছে বলেন তো?"

মুহূর্তে সোনালী যেন কেমন হয়ে গেলো। দূর থেকে ভেসে আসা আবৃত্তিময় কণ্ঠে সোনালী বলল,
"ছেলেদের চোখে এমন আবেদন থাকা পাপ সামদানী সাহেব। এ চোখের চাহনীর গভীরতা কোন পর্যায়ের আপনি জানেন? এ চোখের মায়া কাউকে কাউকে শৃঙ্খল থাকতে দেয় না আপনি জানেন না।"

আমি অবাক হয়ে লক্ষ করলাম সোনালীর চোখে জল চিকমিক করছে। কেন এমন হচ্ছে? সমস্যাটা কোথায়?

ঈদের ছুটি যখন দুদিন পার হচ্ছে, বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম আমি সোনালীকে মিস করছি। মেয়েটির সরলতা, চঞ্চলতা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমার বিচারে তার উচ্ছৃঙ্খলতাকে আমি খুব মিস করছি।

সিঁড়িতে বলা অসাধরণ কাব্যময় কথা গুলো প্রতিসময় আমার কানে বাজতে লাগলো। ঠিক কখন এই ধরনের কথা একটি মেয়ের মুখ থেকে বের হয়, ভাবলাম কতবার।

সেই সাথে ছোটমনের পরিচয় দিয়ে হিসেব করতে শুরু করলাম, কেয়া কি কোনদিন বলেছে এমন করে আমাকে, "সামদানী, একটু তাকাও। কেন এত সুন্দর তোমার চোখ!"।

না তো, বলেনি।
আমার তখন থেকেই কেমন লাগা শুরু হয়ে গেলো। প্রকৃতি ভালো জানে এমন লাগবার কারণ কী।

ঈদের দিন রাতে আর থাকতে পারলাম না। সোনালীর ফোন নাম্বার জোগাড় করে কল দিয়েই ফেললাম। আমাকে আরো একবার আশ্চর্য করে দিয়ে শুরু থেকেই সোনালী মন খারাপ করা গলায় কতক্ষণ কাঁদলো। আমি ঠিক তখনই বুঝতে পারলাম এই মেয়েটি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।

ঈদের পরদিন যখন সোনালীর সাথে দেখা করতে গেলাম তখন আরো বুঝতে পারলাম আমি খুব বড় একটা পাপ করে ফেলেছি। কেয়া নামক স্ত্রী, টুম্পা নামের ফুটফুটে একটি মেয়ে থাকার পরও বিবাহিত এই আমি সোনালীকে ভালোবেসে ফেলেছি।

::পাঁচ::
ভালোবাসা কাউকে হিসেবি করে তোলে, আবার কাউকে হয়ত বেহিসেবি করে তোলে। আমি কী হয়ে গেলাম জানি না, সারাক্ষণ চিন্তা করতাম কেয়ার থেকে বেশি আমাকে সোনালী ভালোবাসে। আমার প্রতি সোনালীই বেশি কেয়ারিং। মহাকাল সম্ভবত বর্তমানের মোড়কে অতীতের স্মৃতির বাক্সকে পাকাপোক্ত করে ঢেকে দেয়। বর্তমানের চকমকে র‍্যাপিং ভুলিয়ে দেয় অতীতের দৃষ্টান্তমূলক মমতাকে। তা না হলে সোনালীর রং কেন কেয়ার রঙে মরিচা ধরাবে? নাকি মহাকালের কোনো দোষ নেই? সকল কিছুর দায় ভালবাসার উপর। অথবা আমিই এসব কিছুর কালপ্রিট!

কেয়াকে বিয়ে করার পর সংসারে অভাব ছিলো সীমাহীন। মনে আছে আমি রাতে ফিরে যেন পেট ভরে ভাত খেতে পাই এজন্য কেয়া না খেয়ে বলতো সে খেয়েই শুয়েছিলো। আমাকে ভালোবাসার জন্যই তো। অথচ এই কেয়ার প্রতিই আমার আচরণ দিন দিন নিন্দার পর্যায়ে চলে গেলো।

সেদিন সকালে তরকারির রঙ একটু খারাপ হলো। এমন প্রায়ই হয়। এতে এর আগে আমার কোনো সমস্যা হয়নি। অথচ আমি সেদিন নির্লিপ্তভাবে তরকারির বাটিটা ছুড়ে ফেললাম। স্টিলের বাটিটা ঝনঝন করে বেজে উঠলো। সে শব্দে আমি চমকে গেলাম। আমার মনে হলো এই কাজটি করা আমার একদম উচিত হয়নি এবং কাজটি আমি ইচ্ছা করেই করেছি। যেন কেয়ার সাথে অপ্রতুল কারণে আমার ঝগড়া লেগে যায়।

অথচ কেয়া কিছুই বলল না। চুপচাপ ন্যাকড়া ভিজিয়ে মেঝে পরিষ্কার করতে লাগলো।
রাতে বাসায় ফেরার পরেও কেয়া কোনো কথা বলল না। আমি টেবিলে রাখা খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলাম। আমিও ওর সাথে তেমন কিছু কথা বললাম না। মাঝরাতে ঘুম ভেঙে দেখি বারান্দায় মোড়া পেতে কেয়া চুপচাপ বসে আছে। আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
আমি ওর কাছে গিয়ে আস্তে করে বললাম, "আমি খুবই লজ্জিত কেয়া। মাফ করে দেয়া যায় না?"

::ছয়::
মানসিক অবস্থা যতটা বিধ্বস্ত হলে একজন মানুষ পাগল হয়ে যেতে পারে, ঠিক ততটা বিধ্বস্ততা নিয়ে আমি সোনালীকে আমার করে পাওয়ার আশায় মরিয়া হয়ে গেলাম। পৃথিবীর কোনো শোভনতা আমার সামনে দাঁড়াতে পারলো না। আমি জানি আমি যথেষ্ট নিচে নেমে গিয়েছি। যথেষ্ট অশোভন কিছু করার জন্য পা বাড়িয়েছি। যে পা আটকে রাখার জন্য টুম্পার নিষ্পাপ মুখটাও আমার কাছে মূল্যহীন হতে লাগলো।

সোমবার রাতে খাওয়া শেষ করে চিন্তিত হয়ে শুয়ে আছি। সংসারের কিছুদিনের স্থবিরতায় সম্ভবত টুম্পার মনেও প্রভাব পড়েছিলো। টুম্পা সে রাতে আমাকে তার খেলনা হাড়ির ভাত খাওয়াতে আসলো না। খালি হাতে এসে আমার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে থাকলো কিছুক্ষণ। আমি কিছু বলছি না দেখে চলে যাচ্ছিলো তখন আমি ডাকলাম ওকে,
"মা এদিকে আসো।"
টুম্পা আসলো। আমি আবার বললাম,
"পান্না পান্না খেলবে, মা?"
"না বাবা। তোমার কি অসুখ?"
"হ্যাঁ মা অসুখ। আমি যদি মারা যাই তুমি কাঁদবে?"

টুম্পা দৌড়ে বসার রুমে চলে গেলো। আমি স্পষ্ট শুনলাম ও কাঁদতে কাঁদতে ওর মায়ের কাছে নালিশ দিচ্ছে যে বাবা কেনো মারা যাবে।

পরদিন অফিস শেষ করে সোনালীকে নিয়ে সিনেমা দেখতে গেলাম। সোনালী সারা সিনেমা আমার হাত ওর হাতের মুঠোয় নিয়ে রাখলো। কখনো আমার তর্জনী ওর ঠোটে ছোঁয়ালো। আর আমি সারাক্ষণ চিন্তা করলাম টুম্পার কথা। আমার এত খারাপ লাগলো।
তারপরেও এটুকু বুঝতে পারলাম পৃথিবীর কোনো কিছুই সম্ভবত সোনালীর প্রতি আমার যে সম্মোহনী শক্তি তার মৃত্যু ঘটাতে পারবে না।

যার কারণে আমি খুবই সাহস করে অথচ কাপুরুষের মত একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম সোনালীর অনুরোধে।
সোনালীকে বিয়ে করবো। এবং ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। এতে করে কেয়া, টুম্পাকে আমি ভুলে থাকতে পারবো। সবার থেকে দূরেও যেতে পারব। সোনালীর মামাতো ভাই নাকি আমার চাকরির ব্যবস্থা করবে। ও সব কিছু ঠিকঠাক করেই রেখেছে। এদিকে যেভাবেই হোক কেয়া ঠিকই একটা গতি করে নিবে।

আমি যে সহজ স্বাভাবিক আর অশিক্ষিতের মত সিদ্ধান্তটা নিলাম, এটা খুব বুঝতে পারলাম।
রাতের আঁধারে কাউকে না জানিয়ে কাপুরুষের মত পালাবো আমি আর সোনালী। এমন সিদ্ধান্ত সোনালীকে পাওয়ার জন্য আমি একশবার নিতে পারি।

::সাত::
শুক্রবার রাতে সোনালীকে নিয়ে চলে যাবো, সিদ্ধান্তটা এমনই ছিলো। অফিস, বাসায় এর কোনোরকম আভাস পাওয়া যায়, এমন কিছুই আমি আর সোনালী করিনি। সব প্রতিদিনের মতই থাকবে। আমি সোনালীর বাসার পাশের মোড় থেকে ওকে নিয়ে বারোটার ট্রেনে সোজা দিনাজপুরের দিকে চলে যাবো। সেখানে শনিবার আমাদের বিয়ে হবে। একবার বিয়ে হয়ে গেলে কিছু তো আর করার নাই। পরে কেয়া মেনে নিলে নিবে। না নিলে না।
জীবনটা আমার। সিদ্ধান্তটাও আমার।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে চেষ্টা করলাম কেয়ার সাথে রাগারাগি করবার জন্য। শত চেষ্টাতেও সফল হলাম না। প্রত্যেক ক্রিয়ার নাকি প্রতিক্রিয়া থাকে। কিন্তু কেয়ার দিক থেকে প্রতিক্রিয়ার কোনো লক্ষণ দেখলাম না। একা একা তো আর বিবাদ করা যায় না।
সন্ধ্যার দিকে কেয়াকে বললাম,
"আলমারির চাবিটা দাও তো।"
কেয়া বলল,
"কী দরকার বলো। আমি বের করে দিচ্ছি।"

ইচ্ছা করলেই ওর সাথে ঝগড়া বাঁধাতে পারতাম। ইচ্ছাটা করলো না। আমি চাবি নিয়ে আলমারি থেকে জমানো পঁচিশ হাজার টাকা সরিয়ে ব্যাগে ভরে নিজের কাছেই রেখে দিলাম চাবিটা।
রাতে ধীরস্থিরভাবে খাবার টেবিলে কেয়ার রান্না করা মাংস, খিচুড়ি, পায়েশ খেয়ে হাসিমুখে প্রশংসা করলাম।

খাওয়া শেষে আগ বাড়িয়ে টুম্পার সাথে পান্না পান্না খেললাম। কিছুক্ষণ ওকে কোলে নিয়ে আদর করলাম।
এই আদর থেকে ওকে আমি বঞ্চিত করবো, এ নিয়ে কতক্ষণ ভাবলাম। দোয়া করলাম আমার থেকে ভালো একটা বাবা যেন টুম্পা পেয়ে যায়।

::আট::
এগারোটা বাজার আগেই কেয়াকে বললাম টুম্পাকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়তে। কেয়া মুহূর্তে আমাকে সুযোগ করে দিতেই হয়ত ঘুমিয়ে পড়লো।
আমি একটা ব্যাগে দুচারটা প্যান্ট-শার্ট আর কিছু টাকা ভরে তৈরি হয়ে নিলাম। কী আশ্চর্য! এত কঠিমতম কাজটা এত সহজ লাগছে!
বের হওয়ার আগে ভাবলাম কেয়াকে একটা চিঠি অন্তত লিখে রাখা দরকার।
কাগজে খুব ছোট করে লিখলাম-

কেয়া,
তোমার সাথে আর সংসার করতে ইচ্ছা করছে না।
তাই দূরে কোথাও চলে যাচ্ছি।
আমি তোমার খুব জঘন্য স্বামী। তারপরও আমার জন্য তুমি দুটা কাজ করবে।
প্রথম কাজ, আমাকে তুমি মাফ করে দিও।
দ্বিতীয় কাজ, টুম্পাকে দেখে রেখো।
-সামদানী।

কী মনে হতে চিঠিটা টেবিলের উপর রাখতে গিয়েও রাখলাম না। ছিঁড়ে ফেললাম।

আমি যখন বের হবো তার আগে একবার উঁকি দিয়ে কেয়া আর টুম্পাকে দেখে আসলাম। কত নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে ওরা। আজকের রাতটি হতে যাচ্ছে আগামী রাতগুলোতে ঘুম না হওয়ার কারণ, এটা ওরা জানেই না।

হাতে ব্যাগ নিয়ে অন্ধকার রাতের নিস্তব্ধতায় আমি বেড়িয়ে এলাম রাস্তায়। ওদিকে আমার জন্য সোনালী অপেক্ষা করছে। ট্রেন ছাড়ার আর চল্লিশ মিনিট মত বাকি। আমি এগিয়ে যাচ্ছি। বারবার আমার চোখের সামনে ভেসে উঠছে অসহায় কেয়া আর টুম্পার মুখ।

একসময় লক্ষ করলাম অনন্ত কালের ক্লান্তি আমার দু'পায়ে ভর করেছে। আমি পা ফেলতে পারছি না। অন্ধকার যেন আমাকে জাপটে ধরে বলছে, তুমি এতটা কি নীচ হতে পারো সামদানী?

গতকাল থেকে কেয়ার পেটে ব্যথা করছে। পেট ব্যথা নিয়ে ও আজ আমার কতগুলো প্যান্ট শার্ট ধুয়েছে। আহারে। কী মায়াবতী লাগছিলো কেয়ার মুখ। আমি ওকে ছেড়ে কত যোজন দূরে চলে যাচ্ছি।

বসার ঘরে ঢুকে পাশে ব্যাগ রেখে স্থির হয়ে বসে রইলাম। পারলাম না শেষ পর্যন্ত কেয়া আর টুম্পাকে ছেড়ে যেতে। সোনালীর সাথে পরিচয় হওয়ার পর আজই আমার মনে হলো কেয়া আর টুম্পাকে ছাড়া আমি একটা দিন বেঁচে থাকতে পারবো না।
ফিরে আসলাম আমার আপন পৃথিবীতে।
বসার ঘরে লাইট জ্বলছে দেখেই হয়তো ঘুম ভেঙে কেয়া উঠে এলো। আমাকে এ অবস্থায় দেখে ও সম্ভবত অনেক চমকে গেলো। কাঁপা গলায় বলল,
"তোমার কী হয়েছে? কোথায় যাচ্ছো এত রাতে?"
আমি কেয়ার দিকে তাকিয়ে পাগলের প্রলাপ বকার মত বললাম,
"কেয়া সত্যি করে বলো তো আমার চোখ কেমন? তোমার কখনও ভালো লাগেনি আমার চোখ?"

আমি প্রায়ই এমন বাচ্চাদের মত কথা বলি। কেয়া এর উত্তর দিলো না। কারণ কেয়া আমার চোখের প্রশংসা এর আগে বহুবার করেছে। আমিই মনে রাখিনি তা।
কেয়া আমার গা ঘেঁষে বসে আমার পিঠে হাত রাখলো।
কেয়ার স্পর্শ আমার শরীরের গহীনে ঢুকে গেলো। অনুভব করলাম অজস্র মমতা আর ভালবাসা সে স্পর্শে।
আমি কেয়াকে জড়িয়ে ধরতে হাত বাড়িয়ে দিলাম।
যে হাতের মধ্যে মোবাইলে বারবার সোনালীর ফোনকলের আলো জ্বলছে আর নিভছে।::::


(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top