What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made জীবনের হিসাব (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
আগামীকাল আমার ছোট বোনের বিয়ে।আজ গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান ছিলো।হলুদের প্রোগ্রাম শেষে সবাই যখন বাসায় ফিরছিলাম। পার্টি সেন্টার থেকে।তখন আমার ছোট খালা গাড়িতে আম্মার পাশে বসে ছিলো।হঠাৎ খালাকে শুনলাম আস্তে আস্তে আম্মা কে বলছে। আপা তোমরা বড় মেয়েকে রেখে, ছোট মেয়েকে কেন আগে বিয়ে দিলে? এটা কিন্তু তোমরা ঠিক করলে না।আম্মা কি বলে শুনতে ইচ্ছে হলো।আম্মা ছোট খালাকে বলল। অনুর বিয়ে না হলেতো আর বিনুকে বসায়ে রাখা যায় না।মেয়ে তো দু' জনেরই বিয়ের বয়স হয়ে গেছে।আর ছেলে বিনুর পছন্দের। ওরা আর অপেক্ষা করতে চাইছিলো না।আমিও ভাবলাম বিনুর বিয়ে হয়ে গেলে একটা বিরাট কাজ শেষ। তখন অনুর জন্য ধীরে সুস্থে একটা বিয়ে ঠিক করা যাবে।

আমরা তিন ভাই - বোন। আমি সবার বড়।আমার পরে বিনু্।আমাদের একমাত্র ভাই অয়ন সবার ছোট।অয়ন পড়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের। আর বিনু পড়তো ইঞ্জিনিয়ারিং ওর পড়া শেষ। ওর যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সেই ছেলেও ওদের সাথে পড়তো।ছেলে উচ্চতর শিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে চলে যাবে। সেই কারনে বিয়ে নিয়ে এত হুলুস্থুল হলো।

আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী, তখন থেকে টিউশনি করে নিজের পড়ালেখার খরচ চালিয়েছি।ছোট ভাই - বোনদের ছোট - খাটো আবদার পূরণ করেছি।কখনো বন্ধুদের সাথে কোন আড্ডায় যেতাম না।এর অন্যতম কারন ছিলো টাকা পয়সা অযথা খরচের ভয়। আমি আমার কোন পছন্দের জিনিস কিনতাম না । শুধু মাত্র যে জিনিস গুলো না হলেই না তা কিনতাম। এত কিছুর পরেও আম্মা কখনো কখনো আমাকে বলতো। অনু তোর কাছে টাকা থাকলে দেতো।টাকা চাওয়ার কারন, মা অয়ন কে দেবে। অয়ন ওর বন্ধুর বসায় যাবে জন্মদিন খেতে।তার পর আরো খারাপ সময় আসলো আমাদের পরিবারে। আব্বা'র চাকুরী চলে গেছে। কারন আব্বাদের অফিসের বস ছিলো বর্তমান সরকারের বিপরীতে রাজনীতি করা লোক।সে তার দল, ক্ষমতায় থাকা কালিন যে সব দূর্নীতি করেছিলো। তার জন্য সাজা ভোগের ভয়ে দেশ থেকে পালিয়েছে।তার জন্য বড় সাহেবের কোন সমস্যা হয় নাই।সে উন্নত দেশে ভালো আছে।কারন তাদের টাকার পহাড়, তারা রাখেই দেশের বাহিরের সুইস ব্যাংকে।আর তাদের বাচ্চা'রা পড়াশোনা করে উন্নত দেশে।

এবার শুরু হলো আরেক কঠিন জীবন। চাকুরী নিলাম পড়া শেষ করার আগেই।আমার মেধা আর নিষ্ঠা আমাকে নিয়ে গেলো অনেক অনেক উপরে।আমার উন্নতির চাইতে বেশি উন্নতি হয়ে গেলো পরিবারের সবার।আমি হলাম টাকা ইনকাম করার মেশিন। ভাই- বোনের সব চাহিদা মেটাতে হয়।একটু এদিক ওদিক হলেই শুনতে হয় মায়ের হতাশা ভরা কন্ঠ। তোদের এত চাহিদা কি ভাবে আমি পূরণ করবো, তোর বাবাতো অন্যের ওপরে খায়। তোদের বাবা কি চাকুরী করে?
অবাক হয়ে ভাবি। আচ্ছা আব্বা যখন চাকুরী করতো, তখনও তো আমার টিউশনির টাকা আমি আম্মা কে দিতাম। সংসার খরচে কম পরতো বলে।এবং আমাকে আমার পড়ালেখা থেকে শুরু করে, সমস্ত খরচ আমাকেই বহন করতে হতো।আব্বা যদি এখন চাকরি করতেনও আমার বেতনের তিন ভাগের একভাগও আব্বার বেতন হতো না।আজ যদি আমার বড় একটা ভাই থাকতো। আর সে চাকুরী করতো। সে কি বিয়ে সাদি না করে তার চাকুরীর টাকায় সংসার পালতো?মার হাতে ইনকামের সব টাকা তুলে দিতো? মা'ই তো তার বান্ধবীদের ছেলের গল্প করে,এক একটা ছেলে তাদের বৌ নিয়ে এক বছরও বাবা- মায়ের সাথে থাকে নাই। আর টাকা পয়সা তো দূরের কথা।তবে কি আমি মেয়ে বলে আমার এই অবদানের কোন মূল্য নাই।

আমার চাকুরীর প্রথম প্রথম আমার জন্য অনেক বিয়ের প্রস্তাব আসতো।তখন বয়স অল্প, দেখতে সবার কাছেই খুব সুন্দর লাগতো।তখন সংসারের হাল ধরতে হয়েছে বলে। মা কে বলে দিয়েছিলাম মা আমি এখন বিয়ে করবো না।মা কিন্তু আমার এই সিদ্ধান্তে অখুশি হয় নাই বরং তার মুখ থেকে একটা চিন্তার ভার নেমে গিয়েছিল। আমার বন্ধু নোমান আমাকে বন্ধুর চাইতে একটু বেশি কিছু মনে করতো। ও একদিন বলেছিলো। শোন আমার জন্য মা মেয়ে দেখছে।আমি তখন বলেছিলাম বাহ্ খুবই ভালো কথা।তোর বিয়েেতে অনেক মজা করবো।ও তখন বলে ছিলো। মাকে তোর কথা বলবো? আমি শুধু বলেছিলাম না।ও একটাও কথা বারায় নাই শুধু বলেছিলো।যাদের কারনে সব বিসর্জন দিচ্ছিস তারা তোর মান রাখলেই হয়।

আজ কেন যে এত কথা মনে হচ্ছে। সব চাইতে দুঃখ পেয়েছিলাম সেই দিন।বাসায় কেউ নাই। আমার কিছু জরুরী কাগজ খুঁজে পাচ্ছিলাম না।মায়ের আলমারিরতে যখন খুঁজতে শুরু করি।অনেক কাগজপত্রের মধ্যে, আমার দরকারী জিনিস খুজতে গিয়ে পেলাম কিছু দলীল। আমার আম্মা প্রতি মাসে ব্যাংকে ডিপিএসের টাকা জমা দেয় পনেরো হাজার টাকা।এবং এর একটাও আমার নামে না।আর আম্মার নামে যে ডিপিএসটা চালায়, তার নমিনী হলো হলো অয়ন।এবং এই ডিপিএস এর কথা আমাকে কখনই বলে নাই।এখন বুঝতে পারছি কেন আম্মার মাঝে মাঝে সংসার চালানোর টাকার ঘাটতি হয়।আম্মা যখন আমার কাছে বারতি কোন টাকা চাইতে আসে আমি অবাক হতাম। পারলে আম্মা মাসে কতটুকু লবন কিনে তারও হিসাব দেওয়া শুরু করতো।আমি বিরক্ত হতাম।আর বলতাম, মা আমার চলার মতো টাকা রেখে, আমিতো সব টাকা তোমাকে দিয়ে দেই।আসলে আমার এখন মনে হয়, মা-ও হয়তো ভাবে আমি আমার বেতনের টাকা সব বাসায় দেই না।আমিও আমার জন্য ব্যাংকে টাকা জমাই।

বিনুর বিয়ের গহনা কি হবে, তাই নিয়ে চলল কয়দিন।মার কিছু গহনা ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি এটা অনুর,এটা বিনুর এটা অয়নের বৌকে দেবো।আর বিনুর বিয়ের জন্য মা, আমার জন্য রাখা গহনা, আর বিনুর গয়না মিলিয়ে আরো কিছু টাকা দিয়ে নতুন একসেট গহনা নিয়ে এলো।মা বলল, অনুর বিয়ের সময় গয়না কিনতেতো আর সমস্যা হবে না।মেয়ে আমার বড় চাকরি করে। বিনুকে আর কে দিবে। পুরাতন গহয়া ভেঙে বানিয়ে দিলাম। কোন রকমে একসেট গয়না।আমার ইদানীং এত বিরক্ত লাগে মায়ের এই কথা গুলো।

আসলে আমি অনেক দিন থেকে লক্ষ করেছি মা এক ধরনের নিরাপত্তা হীনতায় ভোগে।কারন এই সংসার চলে আমার চাকুরির টাকায়। বাবা কিছু করে না।তার ওপরে এখনও ছোট ভাইটার পড়ালেখা শেষ হয় নাই। আমার বিয়ে হয়ে গেলে কি ভাবে সংসার চলবে? আর আমার বেতন ভালো হওয়ায় সংসারে একটা সাচ্ছন্দ্য এসেছে। যেটা বাবার চাকরির টাকায় মা কখনই পায় নাই।মা আমার কোন বিয়ের প্রস্তাব আসলেই। বলতে থাকবে আমার এত যোগ্য মেয়েকে তো আমি এখানে বিয়ে দেবো না।আর আমার মেয়েও এখানে রাজি হবে না।মা আসলে আমাকে আমাদের সংসারের এবং আমার ভাই-বোনদের সুখের জন্য তার বড়ো মেয়ের জীবনের সুখ কোরবানি করেছে।

( সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top