ডিসির বাংলোর সামনে রিকশা থেকে নেমেই মনে কেমন ফুর্তি ফুর্তি একটা ভাব চলে এলো আমার। অনেক মানুষ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আড্ডা দিচ্ছে সিড়ি গুলোয়। আমরাও গিয়ে খুঁজে পেতে একটা সিঁড়িতে বসে পড়লাম।
: এই পিচ্চি, নাম কি তোমার?
: জে মামুন।
: আমাদেরকে দু'কাপ চা দাওতো মামুন।
: আইচ্ছা।
পিচ্চিটা চা দিয়ে চলে গেল। আমি চা খেতে খেতেই ঝালমুড়ি ওয়ালাকে ডাকলাম।
: তো আপনার এসব পছন্দ?
: হুম, কেন আপনার পছন্দ হচ্ছে না?
: না ঠিক তা নয়।
: তবে কি? আপনার স্ট্যান্ডার্ডের সাথে ঠিক যাচ্ছে না, তাই তো?
: না না, সেরকম কিছু না, ক্যাম্পাসে আমিও এরকমই ছিলাম তবে জব শুরু করার পর আর এসব করা হয়নি, এই যা।
: ও আচ্ছা তবে একটা ব্যাপার কি জানেন, আমি এসব পছন্দ করি, তাই আমি সবসময়ই চাই আমার লাইফ পার্টনারও আমার মতো হোক। একেবারে না মিললেও এটলিস্ট বাধা যেন না দেয়।
: আমি আপনাকে কোন কিছুতে বাধা দেব আপনার এমন মনে হয়!
কথাটা বলে এমন আবেগী দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল সাবিত, কোন কথাই মুখে আসেনি আমার। মাথা নিচু করে ফেলেছিলাম লজ্জায়। এখনও লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে তবে সেটা আমার না, সাবিতের।
অফিসের কোন পার্টিতে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় নিয়ে গেলেই আজকাল সাবিতের মাথা হেট হয়ে আসে। সবার বৌরা কেমন মুখে চিবিয়ে চিবিয়ে ইংরেজি বলে, কাটা চামুচ দিয়ে বীফ স্টেক বা চিকেন খেতে পারে সেখানে ওসব আমার মুখেই রোচে না। পুরোটা সময় শুধু খাবার নিয়ে মুখে একটা আলগা হাসি ধরে রাখি। কি বিরক্তটাই না আমার লাগে! তবু এতো কিছু করে কোন লাভ হয়না। বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই সাবিতের খোঁচা মার্কা কথা।
: যাও, এখন গামলায় ভাত নিয়ে বস, রিক্সাওয়ালার বৌয়ের মত মাটিতে আঁচল বিছায়েও বসতে পারো, ভালোই মানাবে তোমাকে।
আমি কোন উত্তর করিনা, সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন কাজেই কিচ্ছু বলিনা। সত্যি সত্যি গামলা ভর্তি ভাত নিয়ে বসি। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, আগে ক্ষুধা নিবারণ করা দরকার।
অথচ ভাবতেও অবাক লাগে যে, যেসব নিয়ে সাবিত এখন খ্যাচখ্যাচ করছে , একটা সময়ে এসবই সে অনেক পছন্দ করতো। আমার সাধারণ উচ্চারণের কথা, আমার সাধারণ পোষাক, সাধারণ খাবার এসব দেখেই সে বরং আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে বেশি। অথচ এখন! নিত্য নতুন ফ্যাশনের মেয়ে ছাড়া তার যেন চলেই না ।
এই যেমন তার অফিসের কলিগ, কি যেন নাম মেয়েটার..ওহ মনে পড়েছে, সুরাইয়া। অসম্ভব স্টাইলিস্ট। কি ঢলাঢলিই না করতো সাবিত মেয়েটার সাথে। আর মেয়েটাই বা কেমন, দেখছে বিবাহিত তবু তার সাথে এমন করতে হয়! না কেউ করে। অবশ্য অনেকে করতেও পারে হয়তো, সবাই তো আর একরকম নয়।
তবে আমি কিন্তু বুঝতাম কবে কবে সাবিত সুরাইয়ার কাছে যেতো। সাবিতের গায়ে পরনারীর গন্ধ আমি বেশ বুঝতে পারি তবু কিচ্ছুটি বলিনি, কিচ্ছু না। তবে একবার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল মেয়েটার ওপর। জেনে শুনেও এমন কাজ করছে বলে মেজাজ খারাপ করে আমিও একটা কাজ করে ফেলেছিলাম সেদিন।
সাবিত যেবার প্রথম অসুস্থ হয়ে অফিস মিস করল, আরও অনেকের সাথে সুরাইয়াও এসেছিল দেখতে। এসেই সেকি আহ্লাদ!
: সে কি ভাবী! সাবিত ভাইয়ের কি যত্ন নিচ্ছেন না ঠিকমতো, এই অবস্থা কেন? একদম শুকিয়ে গেছে বেচারা।
আমি তার উথলে ওঠা দরদে বিমোহিত হওয়া সাবিত কে দেখলাম। কোন উত্তর দিলাম না বরং সবার জন্য চা নাশতা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর চা দেবার সময়ে সাবিতের বিছানার পাশে বসে থাকা সুরাইয়ার গালের কাছে আস্তে করে সেটা ফেলে দিলাম।
কেউ সন্দেহ করলো না, এমনকি সাবিতও না। সবাই এটা দূর্ঘটনা বলেই ধরে নিলো। আর সাবিতের সন্দেহ করার তো কোন কারণই নেই, ও তো জানেই না আমি ওর আর সুরাইয়ার ব্যাপারটা জানি। তারওপর আমার মতো মেয়ে যার কিনা সাত চড়ে রা নেই, সে ইচ্ছে করে চা ঢেলে দেবে এটা চিন্তা করাও সাবিতের জন্য কঠিন। কাজেই বেঁচে গেলাম।
এরপর থেকে সুরাইয়ার সাথে সম্পর্কে বোধহয় ফাটল ধরল একটু। সুরাইয়া আমার দোষ দিচ্ছিল কিন্তু সাবিত মানতে নারাজ। এই নিয়েই একটু মনোমালিন্য হল। সাবিত খুব একটা গা করল না। সুরাইয়াকে এতো ত্যালানোর সময় সাবিতের আর নেই। চায়ে পুড়ে চামড়া উঠে আজকাল সুরাইয়াকে বড্ড বিস্রি দেখায় যে।
সেবার অসুস্থতার সময়ে খুব সেবা করলাম সাবিতের। একদম শাবানার মতো বলা যায়। তাতে অবশ্য একটা লাভ আমার হল, মারধরের পরিমাণটা একটু কমলো। আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে দুই তিনবার মার খেতাম, সেটা কমে গিয়ে হয়তো এক বা দুবারে দাঁড়ালো। আমি মনে মনে হাসলাম, এজন্যই বলে সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন।
অবশ্য পরের বার অসুস্থ হলে সেবা করার তেমন সুযোগ আমি পেলাম না। আমার শ্বাশুড়ি চলে এলেন। আমি কোন খেয়ালই রাখিনা, রাখলে তো আর এমন হতো না বলে শাপ শাপান্ত করতে লাগলেন। আমি কিছুই বললাম না।
সেবার আমার শ্বাশুড়ি টানা তিন মাস থাকলেন। আমি তার মন প্রায় জয় করেই ফেললাম বলা যায়। চুপচাপ কাজ করি, যা বলেন শুনি, উপরন্তু তার ছেলের মার খেয়েও চুপ করে থাকি, আজকালকার এমন বৌ হয়!
: একটু ধৈর্য ধর বৌমা, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন সময় দাও।
একটু আদর পেয়ে আমি গলে গেলাম। ভাবলাম সবকিছু খুলে বলি কিন্তু বলাটা ঠিক হবে কিনা ভেবে খুব সতর্কতায় কথা শুরু করলাম।
: আম্মু সাবিতের বোধহয় আমাকে পছন্দ নয়।
: তুমি কি করে জানো?
: না মনে হল আরকি।
বাসায় ফিরতে না ফিরতেই সেটা সাবিতের কানে গেল, আমি আরেক দফা বেদম মার খেলাম। যদিও আমার শ্বাশুড়ি বললেন, তিনি শুধু বোঝাতে চেয়েছিলেন কিন্তু সাবিত উল্টা বুঝেছে তবুও আমি শ্বাশুড়ির ওপর কোন রাগ দেখালাম না। বরং ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে টেবিলে খাবার দিলাম। আমার শ্বাশুড়ি মুগ্ধ না হয়ে পারলেন না, এই না হলে বৌ।
পরের দিন শুনি, ফোনেও কার কার সাথে খুব প্রশংসা করছেন আমার। খুব ভালো মেয়ে আমি, এরকমই নাকি মেয়েদের হওয়া দরকার। আমি গভীর আনন্দের নিঃশ্বাস ফেললাম। আসলেই সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন।
সাবিতের আজকাল কি যেন হয়েছে। কেমন জানি ডিপ্রেসড থাকে। কখনও কখনও হুট করেই রেগে যায় আবার একটু পরেই একদম স্বাভাবিক। কিছু তো বুঝি না। এরকম মুড সুইং মেয়েদের হয় জানতাম কিন্তু ছেলেদেরও যে হয়, জানতাম না। আবার কখন কি করে, করবে হুটহাট ভুলে যায়। এইতো সেদিন, সেতু নামের মেয়েটাকে একজোড়া নুপুর কিনে দিতে গিয়ে তাকে না দিয়েই পকেটে নিয়ে চলে এলো।
রাতে সেতুর অভিমানি মেসেজ।
: আমার নুপুর কোথায়?
: সরি, ভুল করে বাসায় নিয়ে এসেছি, কালই তোমার পায়ে পরিয়ে দেব কেমন।
: হুহ্ পায়ে পরিয়ে দেবে, মানুষজনের সামনে নিয়ে যেতেই ভয় পাও আরতো ....
: না না, সত্যি বলছি। কালকে অবশ্যই পায়ে পরিয়ে দেব, কেন যে ভুলে গেলাম, বুঝতে পারছি না।
: হুম তবে আজকাল তোমাকে কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগে, কেমন অস্হির অস্হির।
: তোমার প্রেমে পড়লে কি আর কেউ স্থির থাকতে পারে?
: দূর ...
মেয়েটা খুশিতে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে। আমিও খুশি হই, আনন্দে আমিও ফুলে ফুলেই উঠি। হাজার হলেও আমি পতিব্রতা নারী, স্বামীর সুখেই তো আমার সুখ নাকি! তবে সেই সুখও আমি প্রকাশ করিনা, কারন সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন বলে কথা যে!
: এই পিচ্চি, নাম কি তোমার?
: জে মামুন।
: আমাদেরকে দু'কাপ চা দাওতো মামুন।
: আইচ্ছা।
পিচ্চিটা চা দিয়ে চলে গেল। আমি চা খেতে খেতেই ঝালমুড়ি ওয়ালাকে ডাকলাম।
: তো আপনার এসব পছন্দ?
: হুম, কেন আপনার পছন্দ হচ্ছে না?
: না ঠিক তা নয়।
: তবে কি? আপনার স্ট্যান্ডার্ডের সাথে ঠিক যাচ্ছে না, তাই তো?
: না না, সেরকম কিছু না, ক্যাম্পাসে আমিও এরকমই ছিলাম তবে জব শুরু করার পর আর এসব করা হয়নি, এই যা।
: ও আচ্ছা তবে একটা ব্যাপার কি জানেন, আমি এসব পছন্দ করি, তাই আমি সবসময়ই চাই আমার লাইফ পার্টনারও আমার মতো হোক। একেবারে না মিললেও এটলিস্ট বাধা যেন না দেয়।
: আমি আপনাকে কোন কিছুতে বাধা দেব আপনার এমন মনে হয়!
কথাটা বলে এমন আবেগী দৃষ্টিতে তাকিয়েছিল সাবিত, কোন কথাই মুখে আসেনি আমার। মাথা নিচু করে ফেলেছিলাম লজ্জায়। এখনও লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে তবে সেটা আমার না, সাবিতের।
অফিসের কোন পার্টিতে অথবা বন্ধুদের আড্ডায় নিয়ে গেলেই আজকাল সাবিতের মাথা হেট হয়ে আসে। সবার বৌরা কেমন মুখে চিবিয়ে চিবিয়ে ইংরেজি বলে, কাটা চামুচ দিয়ে বীফ স্টেক বা চিকেন খেতে পারে সেখানে ওসব আমার মুখেই রোচে না। পুরোটা সময় শুধু খাবার নিয়ে মুখে একটা আলগা হাসি ধরে রাখি। কি বিরক্তটাই না আমার লাগে! তবু এতো কিছু করে কোন লাভ হয়না। বাড়ি ফিরতে না ফিরতেই সাবিতের খোঁচা মার্কা কথা।
: যাও, এখন গামলায় ভাত নিয়ে বস, রিক্সাওয়ালার বৌয়ের মত মাটিতে আঁচল বিছায়েও বসতে পারো, ভালোই মানাবে তোমাকে।
আমি কোন উত্তর করিনা, সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন কাজেই কিচ্ছু বলিনা। সত্যি সত্যি গামলা ভর্তি ভাত নিয়ে বসি। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, আগে ক্ষুধা নিবারণ করা দরকার।
অথচ ভাবতেও অবাক লাগে যে, যেসব নিয়ে সাবিত এখন খ্যাচখ্যাচ করছে , একটা সময়ে এসবই সে অনেক পছন্দ করতো। আমার সাধারণ উচ্চারণের কথা, আমার সাধারণ পোষাক, সাধারণ খাবার এসব দেখেই সে বরং আমার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে বেশি। অথচ এখন! নিত্য নতুন ফ্যাশনের মেয়ে ছাড়া তার যেন চলেই না ।
এই যেমন তার অফিসের কলিগ, কি যেন নাম মেয়েটার..ওহ মনে পড়েছে, সুরাইয়া। অসম্ভব স্টাইলিস্ট। কি ঢলাঢলিই না করতো সাবিত মেয়েটার সাথে। আর মেয়েটাই বা কেমন, দেখছে বিবাহিত তবু তার সাথে এমন করতে হয়! না কেউ করে। অবশ্য অনেকে করতেও পারে হয়তো, সবাই তো আর একরকম নয়।
তবে আমি কিন্তু বুঝতাম কবে কবে সাবিত সুরাইয়ার কাছে যেতো। সাবিতের গায়ে পরনারীর গন্ধ আমি বেশ বুঝতে পারি তবু কিচ্ছুটি বলিনি, কিচ্ছু না। তবে একবার প্রচন্ড রাগ হয়েছিল মেয়েটার ওপর। জেনে শুনেও এমন কাজ করছে বলে মেজাজ খারাপ করে আমিও একটা কাজ করে ফেলেছিলাম সেদিন।
সাবিত যেবার প্রথম অসুস্থ হয়ে অফিস মিস করল, আরও অনেকের সাথে সুরাইয়াও এসেছিল দেখতে। এসেই সেকি আহ্লাদ!
: সে কি ভাবী! সাবিত ভাইয়ের কি যত্ন নিচ্ছেন না ঠিকমতো, এই অবস্থা কেন? একদম শুকিয়ে গেছে বেচারা।
আমি তার উথলে ওঠা দরদে বিমোহিত হওয়া সাবিত কে দেখলাম। কোন উত্তর দিলাম না বরং সবার জন্য চা নাশতা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। আর চা দেবার সময়ে সাবিতের বিছানার পাশে বসে থাকা সুরাইয়ার গালের কাছে আস্তে করে সেটা ফেলে দিলাম।
কেউ সন্দেহ করলো না, এমনকি সাবিতও না। সবাই এটা দূর্ঘটনা বলেই ধরে নিলো। আর সাবিতের সন্দেহ করার তো কোন কারণই নেই, ও তো জানেই না আমি ওর আর সুরাইয়ার ব্যাপারটা জানি। তারওপর আমার মতো মেয়ে যার কিনা সাত চড়ে রা নেই, সে ইচ্ছে করে চা ঢেলে দেবে এটা চিন্তা করাও সাবিতের জন্য কঠিন। কাজেই বেঁচে গেলাম।
এরপর থেকে সুরাইয়ার সাথে সম্পর্কে বোধহয় ফাটল ধরল একটু। সুরাইয়া আমার দোষ দিচ্ছিল কিন্তু সাবিত মানতে নারাজ। এই নিয়েই একটু মনোমালিন্য হল। সাবিত খুব একটা গা করল না। সুরাইয়াকে এতো ত্যালানোর সময় সাবিতের আর নেই। চায়ে পুড়ে চামড়া উঠে আজকাল সুরাইয়াকে বড্ড বিস্রি দেখায় যে।
সেবার অসুস্থতার সময়ে খুব সেবা করলাম সাবিতের। একদম শাবানার মতো বলা যায়। তাতে অবশ্য একটা লাভ আমার হল, মারধরের পরিমাণটা একটু কমলো। আগে যেখানে প্রতি সপ্তাহে দুই তিনবার মার খেতাম, সেটা কমে গিয়ে হয়তো এক বা দুবারে দাঁড়ালো। আমি মনে মনে হাসলাম, এজন্যই বলে সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন।
অবশ্য পরের বার অসুস্থ হলে সেবা করার তেমন সুযোগ আমি পেলাম না। আমার শ্বাশুড়ি চলে এলেন। আমি কোন খেয়ালই রাখিনা, রাখলে তো আর এমন হতো না বলে শাপ শাপান্ত করতে লাগলেন। আমি কিছুই বললাম না।
সেবার আমার শ্বাশুড়ি টানা তিন মাস থাকলেন। আমি তার মন প্রায় জয় করেই ফেললাম বলা যায়। চুপচাপ কাজ করি, যা বলেন শুনি, উপরন্তু তার ছেলের মার খেয়েও চুপ করে থাকি, আজকালকার এমন বৌ হয়!
: একটু ধৈর্য ধর বৌমা, সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছুদিন সময় দাও।
একটু আদর পেয়ে আমি গলে গেলাম। ভাবলাম সবকিছু খুলে বলি কিন্তু বলাটা ঠিক হবে কিনা ভেবে খুব সতর্কতায় কথা শুরু করলাম।
: আম্মু সাবিতের বোধহয় আমাকে পছন্দ নয়।
: তুমি কি করে জানো?
: না মনে হল আরকি।
বাসায় ফিরতে না ফিরতেই সেটা সাবিতের কানে গেল, আমি আরেক দফা বেদম মার খেলাম। যদিও আমার শ্বাশুড়ি বললেন, তিনি শুধু বোঝাতে চেয়েছিলেন কিন্তু সাবিত উল্টা বুঝেছে তবুও আমি শ্বাশুড়ির ওপর কোন রাগ দেখালাম না। বরং ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি ঝুলিয়ে টেবিলে খাবার দিলাম। আমার শ্বাশুড়ি মুগ্ধ না হয়ে পারলেন না, এই না হলে বৌ।
পরের দিন শুনি, ফোনেও কার কার সাথে খুব প্রশংসা করছেন আমার। খুব ভালো মেয়ে আমি, এরকমই নাকি মেয়েদের হওয়া দরকার। আমি গভীর আনন্দের নিঃশ্বাস ফেললাম। আসলেই সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন।
সাবিতের আজকাল কি যেন হয়েছে। কেমন জানি ডিপ্রেসড থাকে। কখনও কখনও হুট করেই রেগে যায় আবার একটু পরেই একদম স্বাভাবিক। কিছু তো বুঝি না। এরকম মুড সুইং মেয়েদের হয় জানতাম কিন্তু ছেলেদেরও যে হয়, জানতাম না। আবার কখন কি করে, করবে হুটহাট ভুলে যায়। এইতো সেদিন, সেতু নামের মেয়েটাকে একজোড়া নুপুর কিনে দিতে গিয়ে তাকে না দিয়েই পকেটে নিয়ে চলে এলো।
রাতে সেতুর অভিমানি মেসেজ।
: আমার নুপুর কোথায়?
: সরি, ভুল করে বাসায় নিয়ে এসেছি, কালই তোমার পায়ে পরিয়ে দেব কেমন।
: হুহ্ পায়ে পরিয়ে দেবে, মানুষজনের সামনে নিয়ে যেতেই ভয় পাও আরতো ....
: না না, সত্যি বলছি। কালকে অবশ্যই পায়ে পরিয়ে দেব, কেন যে ভুলে গেলাম, বুঝতে পারছি না।
: হুম তবে আজকাল তোমাকে কেমন যেন অন্যমনস্ক লাগে, কেমন অস্হির অস্হির।
: তোমার প্রেমে পড়লে কি আর কেউ স্থির থাকতে পারে?
: দূর ...
মেয়েটা খুশিতে ফুলে ফুলে উঠতে থাকে। আমিও খুশি হই, আনন্দে আমিও ফুলে ফুলেই উঠি। হাজার হলেও আমি পতিব্রতা নারী, স্বামীর সুখেই তো আমার সুখ নাকি! তবে সেই সুখও আমি প্রকাশ করিনা, কারন সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন বলে কথা যে!