What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made শাস্তি (শেষ পর্ব) (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
৩/

এই দিকটায় সন্ধ্যায় একটু বৃষ্টি নামলেই হল, সবাই ঘরে ঘাপটি মেরে সন্ধ্যাটাকে ঘোর রাত্রি বানিয়ে দেয় !


এখন বাজে মোটে রাত ৯ টা, বৃষ্টি থেমেছে প্রায় এক ঘন্টা হল , কিন্তু চারদিকে সুনসান নিরবতা ।


বৃষ্টির জন্য বের হতে দেরী হয়েছে আজ রিয়ার, রিক্সাও পায়নি । তাই বাধ্য হয়ে শেয়ার অটোতে এসে মোড়ে নেমে পড়তে হয়েছে ।


এখন এই অন্ধকারে খুব সতর্কতার সাথে হাঁটছে সে! কয়েক হাত দূরে একটা বন্ধ দোকানের সামনে ময়লা কাঁথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে দুই জন, এই বৃষ্টিতে এটাই তাদের একমাত্র আশ্রয় !


রিয়া ওদের কে পাশ কাটিয়ে কয়েক কদম যাওয়ার পরই দেখতে পেল একটু দূরে চার-পাঁচ জন লোক রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে । রিয়ার মনে হল তার দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে আসছে তারা!


রিয়ার বুঝতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল যে এরা সেই ছেলে পেলের দল যারা তাকে ফলো করেছে এই কদিন !


বিপদ টের পেতে একটু দেরীই করে ফেলল রিয়া ! মাত্র কয়েক হাত দূরে তারা, এমন সময় উল্টো ঘুরে দৌড় দিল রিয়া । কিন্তু কয়েক কদম এগোতেই দেখলো এই পাশেও তার জন্য আরেক বিপদ দাঁড়িয়ে আছে!


মুখে গামছা এবং লুঙ্গি পড়া সেই বুড়ো লোকটা, পেছনে দুই হাতে কিছু ধরে আছে !


রিয়া আঁতকে উঠলো , কারণ সে জানে লোকটার পেছনে হাতে বড় সড় দা ধরা আছে !


রিয়া কোন রকমে তাকে পাশ কাটাতে চেষ্টা করে হুড়মুড় করে পড়ে গেল কাদা ভরা রাস্তায় !


উপুর হয়ে চিৎকার দিতে গিয়ে দেখে লোকটা নেই !পাশ ফিরে ওই ছেলেগুলোর দিকে তাকাতে গিয়ে ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো রিয়া ! দা হাতে লোকটা দৌড়ে দৌড়ে একের পর একটা ছেলেকে কুপিয়ে যাচ্ছে !!


রিয়া এই দৃশ্যটা আর বেশিক্ষণ নিতে পারলো না ! সব কিছু ঝাপসা হয়ে যাওয়ার আগে আগে দেখতে পেল দুই জন মানুষ এসে তার দিকে ঝুঁকে তাকে দেখছে ! কাথা বা চাদর মুড়ি দেয়া তারা ! সেই ফুটপাথের মানুষ দুই জন কি !?


৪/

"আপনি জানেন ?! আমি পুরো ঘটনার আই উইটনেস । আপনারা এই ঘটনা কোথায় পেলেন যে দুই গ্রুপের মারামারিতে ৪ জন মারা গেছে ? দুই গ্রুপ না, একজন বুড়ো মত খুনি আমার চোখের সামনে কুপিয়েছে ! আমি এইটা নিয়ে অবশ্যই রিপোর্ট করবো ! কিন্তু পেপারে দেখলাম আপনার রেফারেন্স দিয়ে বলতে যে এইটা দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের সংঘর্ষের ফল । তাই আপনার কাছে জানতে এসেছি ! এইসব কোত্থেকে পেলেন ?!"


কোতওয়ালী থানায় ইন্সপেক্টর সজীবের রুমে টেবিলের দুই পাশে মুখোমুখি বসে কথা বলছে রিয়া এবং ইন্সপেক্টর সজীব ।


রিয়ার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সজীব ! তারপর টেবিলের উপর রাখা পেপার ওয়েট টা ঘোরাতে ঘোরাতে বলল,


"বৃষ্টিতে ভিজে আপনার গলা বসে গেছে । হাঁসের মত ফ্যাসফ্যাসে শোনাচ্ছে, কথা বুঝতে কষ্ট হচ্ছে ! কিন্তু আমি বুঝতে পারছি ।"


এইটুকু বলে রিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিল সজীব । তারপর একটু সামনের দিকে ঝুঁকে বলল,


"তা জাঁদরেল সাংবাদিক এখন রেইপ কেসের আসামীর পক্ষে কলম ধরবে ?! বেশ তো ! লিখুন ।প্রমানাদি জোগাড় করা তো আপনার হাতের ময়লা । তবে একটা তথ্য দিতে ভুলবেন না কিন্তু, এই চার জন মোট ৭ তা রেইপ কেস থেকে খালাস পেয়েছে, সিথির রেইপ কেস এর আগেই । তার মাঝে ৪ বছরের এক কিন্ডারগার্ডেনের এক বাচ্চাও আছে ! "


রিয়া একটু কেঁপে উঠলো ! একটু তোতলাতে তোতলাতে বলল,


"তারা জঘন্য অপরাধী সেটা মানলাম । কিন্তু তাই বলে এই খুনটাকে তো জাস্টিফাই করা যায় না । আইন তাদের শাস্তি দিবে । রাস্তা ঘাটে একজন খুনি চারজন মানুষকে কুপিয়ে মারবে ?! সেই খুনির কিছু হবে না ?!"


সজীব একটু হাসল ।


"মিস রিয়া, বাংলা সিনেমার পার ভক্ত আপনি বোঝা যাচ্ছে । আমিও দেখতাম এক সময় প্রচুর । আপনার কথাগুলো শুনে নায়ক আলমগীর এর কথা মনে পড়ছে । পশ্চিম বাংলার রঞ্জিত মল্লিকও এই ডায়ালগ গুলো জমিয়ে দিত !"


সজীব আরেকবার হাসলো ।


"আচ্ছা এইভাবে ভাবছেন না কেন, আইন কোন একটা জায়গায় এসে থেমে যায় বলেই ওরা একের পর এক রেইপ করে যাচ্ছে , তাই না ?! এদের যারা সাপোর্ট দিচ্ছে তাদের হাত আইনের চেয়েও লম্বা হয়ত । এরা বেঁচে থাকলে কাল আরেকজন কে রেইপ করতে পারতো । কে জানে হয়ত আপনাকেই টার্গেট করে বসেছিল !"


এইবার সজোরে ঝাকুনি খেল রিয়া । কথা বেরুচ্ছে না মুখ দিয়ে ।


"আচ্ছা বলুন তো, আপনি যদি আই উইটনেসই হন, তবে ঘটনা ঘটল কাল আপনি আজ এই বিকেলে এলেন যে ?!"


"আমি ওই বিভৎস ঘটনা দেখে জ্ঞান হারাই ওইখানেই ! রাস্তায় ঘুমানো দুই জন আমাকে পাশের একটা ক্লিনিকে রেখে যায় ।"


"ও আচ্ছা ।তাদের কে চিনতে পেরেছেন ?!"


"না চিনি নাই ।"


সজীব কন্সটেবল হাবিব কে ডাকলো । হাবিব রুমে ঢুকে রিয়ার দিকে তাকিয়ে হাসল ।


"হাবিব, ম্যাডামের ব্যাগটা নিয়ে আস তো!"


হাবিব মাথা নেড়ে চলে গেল । মিনিট খানেক এর মাঝে চলে এল হাতে একটি ছোট ব্যাগ নিয়ে । রিয়ার হাতে ব্যাগটি দিয়ে হাবিব চলে গেল বাইরে ।


এই ছোট পার্সটা রিয়া তার কাঁধের ব্যাগ এই রাখে ।অটোর ভাড়া দেয়ার পর গতকাল রাতে পার্সটা আর ব্যাগে রাখা হয় নি । আর সে পড়ে যাওয়ার সময় পার্সটাও ছিটকে পড়ে গিয়েছিল ।


রিয়া তার ব্যাগ এর দিকে তাকিয়ে ভাবছিল কিছু ।তা দেখে সজীব নিজে থেকেই বলল,


" আপনার আইডি এর ভেতরেই আছে ! এইটা গতকাল স্পটে পড়েছিল ! সেই হিসেবে আপনাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি, বা এই ব্যাপারটাকে ওভারলুক করা হল কেন, সেইটা বলার আগে আপনাকে আমার প্রিয় একজন আসামীকে দেখাবো ! আসুন !"


বলতে বলতে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো ইন্সপেক্টর সজীব ।


রিয়া জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সজীবের দিকে ।


"শুনুন, হাসপাতালে ডিউটিরত ডাক্তারের একজন প্রিয় রোগী থাকে । একজন উকিলের প্রিয় মক্কেল, একজন বিজনেসম্যানের প্রিয় ক্লায়েন্ট থাকতে পারে ।আপনারও নিশ্চয় কোন প্রিয় কেইস আছে , আছে না ?! তেমনি আমারও প্রিয় আসামী থাকতেই পারে ।চলুন তার সাথে পরিচিত হবেন ।"


রিয়া ইন্সপেক্টর সজীবের পিছু পিছু বের হল রুম থেকে । করিডোর দিয়ে হেঁটে ভেতর দিকে একটা বিল্ডিং এর পেছন দিকে এল তারা । রিয়া লক্ষ করল কন্সটেবল হাবিবও তাদের সাথে সাথে হাঁটছে । বিল্ডিং টার পেছনে তারা একটা ছিমছাম সুন্দর গোছানো বাগানের সামনে এসে দাঁড়ালো ।


"কবির চাচা, আসেন তো এদিকে একটু !"


ইন্সপেক্টর সজীব কাউকে ইশারা করে ডাকলো । লোকটা একটা গোলাপ গাছের গোড়ায় পরিচর্যা করছিল ।


কবির মিয়া সামনে এসে দাঁড়িয়ে সালাম দিল । কবির মিয়াকে দেখে আঁতকে উঠলো রিয়া ।

এই তো সেই লোক ! সেই খুনি !


রিয়া দিশেহারা চোখে তাকাচ্ছে সজীবের দিকে ! হাতের ইশারায় কবির মিয়াকে চলে যেতে বলল সজীব । তারপর পাশে রাখা দুইটা চেয়ারের একটা চেয়ারে বসতে দিল রিয়াকে আরেকটায় সে বসল ।


"কবির মিয়া । বয়স ৫৮ বছর ।যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রাপ্ত আসামী ! অত্যন্ত অমায়িক, ভদ্র ব্যাবহারের জন্য থানায় মালীর চাকরী করে ।তার রান্নার হাতও কিন্তু বেশ ভাল ।"


সজীব একটু থেমে আবার বলতে লাগলো,


"কবির মিয়ার যাবজ্জীবন সাজা হয় খুনের অপরাধে ! এলাকার মাতব্বর কে কুপিয়ে খুন করে সে ! তারপর সেই রক্তাক্ত দা নিয়ে পুরো গ্রাম দৌড়ে উল্লাস করে ! কী ভয়ংকর ব্যাপার তাই না ?!

কিন্তু যাকে সে মেরেছিল সেই মাতবর এর চেয়ে ভয়ংকর কাজ করে যেত । এলাকার প্রাইমারী স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ছিল সে । সেই সুযোগে সেই স্কুলের বাচ্চা মেয়েদের কে যৌন নির্যাতন করে যেত সে !

অসহায় গরীব পরিবারগুলো তাদের শিশু সন্তানের নিগ্রহের ব্যাপারগুলো নিয়ে উচ্চবাচ্য করার সাহস পেত না । কারণ যারাই আইনের দারস্থ হয়েছে তারাই নিশ্চিহ্ন হয়েছে ।

সেই মাতবরের লালসার সর্বশেষ শিকার ছিল এই কবির মিয়ার নাতনী !

বাপ-মা মরা নাতনী ছিল কবির মিয়ার আত্মা , মাতবরের শিকারে ক্ষতবিক্ষত নাতনীকে বাঁচাতে পারেনি কবির মিয়া । তাই সে নিজের হাতে এর প্রতিশোধ নেয় ।"


একটানা কথাগুলো বলে থামে সজীব । রিয়ার চোখে জল । সে তাকিয়ে আছে দূরে কবির মিয়ার দিকে ।


"আপনি যা ভাবছেন সেটা ঠিকই । গত কালের খুনগুলো কবির মিয়াই করেছে । আসলে তাকে দিয়ে করানো হয়েছে বলাটা বেশি যুক্তিযুক্ত হবে । পুরো ঘটনার প্ল্যান আমার !


আপনার রিপোর্ট এর আগেই সিথি ধর্ষণ এবং খুনের প্রমাণাদি আমার কাছে আসে, কিন্তু তারও আগে উপর মহল থেকে আসে জামিল তরফদার গ্রুপকে যেন এই কেইসে না জড়াই সেই নির্দেশ !

আপনার রিপোর্টটা আমার কাজকে সহজ করে দেয় । জামিল তরফদার কে আমি নিয়মিত আপডেট দেয়ার উছিলায় আমার প্ল্যান সাজিয়ে নিই । এই যেমন ধরেন , তার ছেলেপেলে যেন আপাতত অস্ত্র সস্ত্র নিয়ে না ঘুরে সেই পরামর্শ আমারই ছিল। কারণ হিসেবে বলেছিলাম সাংবাদিক সহ তার এন্টি গ্রুপ তার পেছনে লেগে আছে যা তার সমস্যা আরও বাড়াবে । এই সব আর কি ।


"কিন্তু আপনি একটা একলা মানুষকে এতগুলো মানুষকে মারতে পাঠালেন !? তারা আপনার কথা না শুনে অস্ত্র রাখতেই পারতো । কবির মিয়ার লাশও হয়ত আপনারা তখন পেয়ে যেতেন!"


"ব্যাক আপ ছাড়া আমরা কোন অপারেশনে নামি না মিস রিয়া ! টানা তিন রাত ফুটপাথে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকা যে কী কষ্টের , কি বলব বলেন !ঠিক কিনা হাবিব !?"


সজীব হাবিবের দিকে তাকিয়ে হাসল ।


রিয়া অবাক হয়ে তাকাচ্ছে একবার সজীব আরেকবার হাবিবের দিকে ।


"কিন্তু সব কিছুর পরেও আইনের রক্ষক হয়ে সেই আইন ভংগ করে আপনি কত দিন এই সব বন্ধ করতে পারবেন ?!"


"এই হাবিব, সিনেমা হলে এখন কোন সিনেমা চলছে জান ?! হঠাত করে বাংলা সিনেমা দেখতে মন চাচ্ছে !"


সজীব হাসলো তারপর আবার যোগ করলো,


"ম্যাডাম, আইন আপাতত দিশেহারা হয়ে আছে । তাই এই বিকল্প ব্যাবস্থা আপাতত । আইন সুপথে আসলে এই বিকল্প উপায়ও বন্ধ হয়ে যাবে ! আর আইন হল রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য ! খুন ধর্ষণ করার পর সে রাষ্ট্রের নাগরিক হওয়ার যে ওয়াদা করে সেই ওয়াদাই তো বরখেলাপ করে ফেলল ! তাকে আইনের আওতাতেই শাস্তি না দিলে মহা ভারত অসুদ্ধ হওয়ার কথ না ! ঠিক কিনা ।


রিয়া দূরে কবির মিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখছে । গোলাপ গাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছে নিবিড় মনে ।

এই লোকটা কাল তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছে । শুধু তাকে না আরও কত মেয়ে, শিশুকে বাঁচিয়েছে সে কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন । গোলাপ ফুল গুলো পরিচর্যার পাশাপাশি আরও অসংখ্য ফুল পরিচর্যার দায়িত্ব নিয়েছে লোকটা !


বেঁচে থাক সব ফুল !

(সমাপ্ত)
 

Users who are viewing this thread

Back
Top