What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made শাস্তি (প্রথম পর্ব) (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
১/



"আচ্ছা কি যেন বলছিলেন ? কে রেইপড হইছে !?



মোবাইলটা কান থেকে নামিয়ে সামনের টেবিলে আলগোছে রেখে , টেবিলের অপর পাশে সামনে বসে থাকা তরুনীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিল ইন্সপেক্টর সজীব !



"রেইপড" শব্দটা শুনে প্রায় দৌড়ে রুমে ঢুকে তরুনীর চেয়ারের পাশে এসে দাঁড়ালো কন্সটেবল হাবিব !



চকচকে চোখ নিয়ে আপাদমস্তক দেখছে রিয়াকে আর তার থেকে চোখ না সরিয়েই ইন্সপেক্টর সজীব কে জিজ্ঞেস করলো, " স্যার, রেইপ কেস নাকী ? বাদী কে !?"



"হাবিব, তোমারে ডাকছি আমি ? ডাকছি !? এইনে কি ?! যাও বাইরে যাও !"

রীতিমত খেঁকিয়ে উঠলো ইন্সপেক্টর সজীব !



"না মানে মনে হইলো আপনার জন্য চা নাস্তা আনতে হইবো কিনা , তাই জিগাইতে আইলাম !"



মুখ কাঁচুমাচু করে আড়চোখে মেয়েটাকে দেখতে দেখতে মাথা নীচু করে অপরাধীর ভঙ্গীমায় বলল হাবিব !



"লাগবে না, কিচ্ছু লাগবে না! যাও, বিদায় হও ! দরজা লাগাই দিয়ে যাও, কাউরে ঢুকতে দিও না এখন !"



মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থেকেই হাবিব কে হাতের ইশারায় বাইরে যেতে নির্দেশ করলো ইন্সপেক্টর সজীব !



"হুম বলুন, আপনার পরিচয়টা বলুন আগে ! একটু আগে অন্য একটা ঝামেলা মাথায় ঘুরছিল, সেই জন্য আপনার কথা কিছুই কানে ঢোকে নাই ! আমি এক সাথে দুই কাজ করতে পারি না, আমার ক্যালিবার একটু কম ! বলেন, শুরু করেন !"



সামনে বসে থাকা রিয়া এতক্ষণ সব চুপচাপ দেখছিল ! এইবার মুখ খুলল আবার ! দৃঢ় কন্ঠ, এবং একটু বেশিই স্পষ্ট উচ্চারণ !



"ইন্সপেক্টর, আমি সাধারণ ডাইরি করতে এসেছি, জিডি ! তাড়াতাড়ি শেষ করে ফেলুন, চলে যাব !"



রিয়ার দৃপ্ত কথা শুনে একটু সোজা হয়ে বসল সজীব !



"অবশ্যই, পরিচয় দিন, কাহিনী বলুন, কেন ডাইরী করবেন, আর ওই রেইপ না কী যেন বলেছিলেন ?!"



"এক সাথে দুই কাজ করতে না পারলেও প্রয়োজনীয় শব্দ কিন্তু আপনার মগজ

ঠিকই ক্যাচ করে ফেলে, ইম্প্র্যাসিভ!"

নির্ভীক দৃষ্টিতে ইন্সপেক্টর সজীবের চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলছে রিয়া !



অট্টহাসি দিয়ে চেয়ারে গা এলিয়ে দিল সজীব !



"আমাদের কাজ কারবারই এইসব নিয়া । মার্ডার, রেইপ, আর চুরি-চামারী ! কাজের জিনিস ক্যাচ তো করবই!"



"হুম, বুঝলাম ! আচ্ছা, শুনুন ! আমি রিয়া সেন ! দৈনিক "সকালের খবর" এর ক্রাইম রিপোর্টার ! আমি আসলে এসেছিলাম...।"



রিয়ার কথার মাঝখানে থামিয়ে দিল সজীব!



"আরে দাঁড়ান, দাঁড়ান ! তাই তো বলি, আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে !আপনি রিয়া সেন ?! আপনার কত সিনেমা যে আমি দেখেছি জানেন !? ফাটিয়ে অভিনয় করেন আপনি !"



আকর্ণ বিসৃত হাসি ছড়িয়ে পড়লো সজীবের মুখে !



ভ্রু কুঁচকে ইন্সপেক্টর সজীবের দিকে তাকিয়ে রইলো রিয়া, চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ !



ইন্সপেক্টর সজীব বুঝতে পারলো খুব সস্তা একটা জোক্স ঝেড়ে দিয়েছে সে! একটা ঢোক গিলে কাগজ কলম সামনে টেনে নিয়ে একটু গম্ভীর গলায় বলার চেষ্টা করলো এবার ,



"পরিস্থিতি সহজ করার জন্য আমাদের অনেক কিছুই করতে হয় বুঝলেন ! আপনি যেন নার্ভাস না হন তাই একটু মজা করলাম আরকি !জ্বী বলুন ! আমি পয়েন্ট নোট করছি !"



"আমি সিথি হত্যা কেইসটা কাভার করছি ! গতকাল আমার লিখা একটা রিপোর্ট ছেপেছে আমার পত্রিকা ! তারপর থেকেই বিভিন্ন ভাবে হুমকি পাচ্ছি ! ফোনের হুমকি ধামকি আমি কখনই পাত্তা দেই না !

কিন্তু সমস্যা হল, ইদানিং কিছু ছেলে পেলে আমাকে ফলো করছে ! আমার বাসার গলির সামনে আশ পাশে এরা আড্ডাও দিচ্ছে ! তাই জিডি করতে এলাম ! "



"আচ্ছা, আপনিই তাহলে সেই রিপোর্টার ?!

আচ্ছা আপনারা সাংবাদিকরা এইসব কেন করেন বলেন তো ?! মেয়েটা করলো সুইসাইড, আপনি বানিয়ে দিলেন হত্যা ! তার উপর আবার রেইপ কেসের গপ্প ! আরিব্বাপরে ! সব কিছু নিয়ে গপ্প টপ্প না ফাঁদলে আপনাদের পোষায় না নাকি ?!"



ইন্সপেক্টর সাজীব তাচ্ছিল্যের সাথে কাগজ কলম পাশে সরিয়ে দিয়ে আবার চেয়ারে হেলান দিল ।



"দেখুন, আপনার কাছে আমি সিথির কেইস নিয়ে কথা বলতে আসিনি ! প্রশাসন দিয়ে যদি হতই তবে আমাকে সব প্রমাণাদি যোগার করতে নামতে হত না ! আপনাদের তো অনেক কাজ আছে, সেগুলো নিয়েই ব্যাস্ত থাকুন, আর আমার জিডি আমি লিখে নিয়েই এসেছি ! এই নিন !"



নিতান্তই সহজ ভঙ্গীমায় কথা বলছে রিয়া ।



কাগজ দুইটা নিয়ে এক ঝলকে দেখে নিল সজীব । একই এপ্লিকেশন এর দুই কপি ! সজীব জিডির বইয়ে নাম্বার লিপিবদ্ধ করে জিডি নাম্বার সহ একটা কপি ফিরিয়ে দিল রিয়া কে !



"রিয়া, আপনি কি তায়কোয়ান্ডো পারেন ? মানে বেল্ট টেল্ট আছে কিছু?!"

খুব উৎসুক ভাব নিয়ে প্রশ্ন করল ইন্সপেক্টর সজীব !



"না ! কেন ? জিডি করতে তায়কোয়ান্ডো লাগে ?!" বিরক্ত স্বরে প্রশ্ন ছুড়ল রিয়া ।



"আরে না না ! সেই জন্য না ! কারণ আমি এখন যা বলব,সেইটা শুনে আপনি যদি আবার দুই একটা পাঞ্চ মেরে দেন , আমি বিপদে পড়ে যাব ! হে হে হে!"



আবার অট্টোহাসি দিল সজীব । সেই হাসি খুব বিদ্ঘুটে শোনাচ্ছে রিয়ার কাছে ।



কিছুক্ষণ থেমে সজীব বলতে লাগলো ।



" শুনেন, সাংবাদিকরা হচ্ছে জানোয়ার টাইপ ! মানে হইতে হয় জানয়ার টাইপ , মানে বাঘ-সিংহের মত আর কি !

বুকে থাকতে হবে বেজায় সাহস, হুঙ্কার দিলে সমাজ কাঁইপা উঠবে ! আর থাবা যেখানে বসাবে সেইখানটা ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে যাবে !

আপনার থাবা ভালো মাশা আল্লাহ ! নইলে জামিল তরফদারের ছেলে পেলেরে নিয়ে মারদাঙ্গা রিপোর্ট পয়দা কইরা দিলেন, চাট্টিখানি কথা এইটা ?! বাপরে বাপ !!



কিন্তু বুকের ভেতরের সাহস হইলো আপনার চামচিকা টাইপ ! কয়েকজন ফলো করলো আর সুর সুর করে থানায় হাজির ! ধরেন, আপনি তো মাশা আল্লাহ দেখতে শুনতে সেই ! ওরা তো এমনও হইতে পারে সুন্দরী মেয়ে ভেবে একটু রোমিও হইতে চাইছে,হইতে পারে না !?"



"অফিসার, আপনাকে ধন্যবাদ ! আমি উঠছি !"



"শুনেন, কাগজটাতে আমার পার্সোনাল নাম্বার দিয়ে দিয়েছি ! জরুরী প্রয়োজনে কল দিয়েন ! আর আমি বলি কি কিছুদিন ওই কেইসটা নিয়ে ঘাটাঘাটি কইরেন না ! যে গেছে সে তো গেছেই ! নিজের ভাল একটু দেখা দরকার, তাই না ?!"



রিয়া একটু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সজীবের দিকে ! তারপর পিঠের ব্যাগটা পিঠে ঝুলিয়ে গটমট করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল !



রিয়া রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে ইন্সপেক্টর সজীব কন্সটেবল হাবিব কে ডাকলো ! ডাকার সাথে সাথেই রুমে দৌড়ে ঢুকলো হাবিব, দরজায় এতক্ষণ কান পেতেই ছিল বোঝা যায় !



"হাবিব, এই শহরের মানুষ বুঝলা শান্তি চায় না ! আরে বাবা তুই হইলি সাংবাদিক! কোথায় কোন জায়গায় সেলাই মেশিন দেয়া হচ্ছে, ধানের পোকা ধান খাচ্ছে কীনা সেইগুলা তুলে ধর ! সমাজের দিকে তাকা, সমাজের মানুষগুলোর উপকার কর !

তা না , উলটা পাল্টা কাজ কারবার ! নিজে বিপদে পড়বে, অন্যদেরও ফেলবে !"



সে যাই হোক, এই জিডি টা এক্সেপ্ট করতে হইছে ।

সাংবাদিক তো, না করা যাবে না ! তিল কে তাল বানাবে ! এই কপিটা রাখ, মেয়েটার এড্রেস টা লাগবে মনে হয় !"



হাবিব এর মুখে হাসি ! কাগজটা নিয়ে ভাজ করে পকেটে রাখলো সে!



"অবশ্যই কাজে লাগবে স্যার ! হে হে হে !"

হাবিব রুম থেকে চলে গেল !



হাবিব চলে যাওয়ার পর ইন্সপেক্টর সজীব টেবিল থেকে ফোনটা নিল ! তারপর ডায়াল লিস্ট থেকে একটা নাম্বারে ডায়াল করলো !



"স্লামালাইকুম তরফদার সাহেব !"



২/



চায়ের কাপটা টেবিলে রাখতে রাখতে ইন্সপেক্টর সজীব আক্ষেপের সুরে বলতে লাগলো,



"দেখুন রিয়া সেন ! মানুষের জন্য, সমাজের জন্য পুরো লাইফ তামা তামা করে দিচ্ছি! কিন্তু মানুষ কেন যেন দেখতে পায় না আমাদের ! এই যেমন ধরেন, আপনার বাসায় চা টাও চেয়ে খাইতে হইলো আমার! অথচ এত মজার চা বানান আপনি, আপনার তো উচিৎ প্রতিদিন রাস্তা থেকে দুই একজন কে ধরে এনে চা খাওয়ানো ! সওয়াব রাখার জায়গা খুঁজে পাবেন না ! বলেন পাবেন!? একদম পাবেন না !"



"ফ্লাস্ক" - সোফায় হেলান দেয়া অবস্থায় উত্তর দিল রিয়া !



"মানে ?!" চায়ের লাস্ট ঢোকটা গলায় আটকে খেক খেক করে কেশে উঠলো সজীব !



"চা টা আমি বানাই নি, ওই যে ওই ফ্লাস্ক থেকে ঢেলে দিয়েছি আপনাকে ! সামনে মোড়ের চায়ের দোকান থেকে আনিয়ে নেই প্রতি সন্ধ্যায় !"



ইন্সপেক্টর সজীব এর মুখটা একটু চুপসে গেল ! সামলে উঠে বলল,



"শুনলাম আপনি রাস্তা ঘাটে যার তার গায়ে হাত তুলছেন ! ? এইগুলা করলে তো আপনাকে পুলিশ প্রটেক্ট করতে পারবে না ! খালি জিডি করলেই তো হবে না , তাই না ?!"



"তাই তো বলি, হঠাৎ আমার বাসায় ইন্সপেক্টর সাহেব আমার খোঁজ খবর নিতে চলে আসলো, ব্যাপারটা কি ?! খবর তাহলে আপনার কানে পৌঁছে গেছে ?! ভালো ভালো ! উপর থেকে বিশাল দাবড়ানী খেয়েছেন নিশ্চয় ! তা উপর থেকে কি বলেছে আপনাকে যে আমি আসলে তাদের একজনকে থাপ্পর মারিনি , দুই জনকে মেরেছি ?!"



একটু রাগী স্বরেই বলে উঠলো রিয়া ! তার নাকের ডগা ফুলে ফুলে উঠছে !



সেই দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সজীব হেসে দিল,



"আপনার এই ব্যাপারটা ভাল লাগে জানেন ! আপনার আই কিউ ! কিউট লেভেলের আই কিউ ! যাই হোক, বাহাদুরী দেখাইছেন ভালো, এখন কোন বিপদে পড়লে কতটা সাহায্য করতে পারবো আমরা পুলিশ রা সেইটা বলতে পারবো না ! নিজের বিপদ নিজে ডাইকা আনছেন !"



"না না, অনেক কষ্ট করছেন আপনারা ! প্লিজ আর করবেন না কষ্ট ! সবার সামনে দুই তিনটা ছেলে আজে বাজে বললে আমি এইভাবে দুই একটা চড় তো দিতে পারবো, সেটাই অনেক ! আপনি বরং আপনার চাকরী বাঁচান ! আপনাদের কে বলে লাভ হয়েছে একটা , এখন শুধু ছেলে পেলে না, ফলো করার লোক আরেকটু বেড়েছে বৈকি !"



"মানে !?" আবার কে ফলো করলো আপনাকে ! " ইন্সপেক্টর সজীব অবাক এর সুরে বলল।



"ওমা এই খবরটা আপনাকে ওরা জানায়নি এখনও ?! একটা বুড়ো টাইপের লোক মুখে গামছা বেঁধে কোমরে দা গুজে আমার থেকে বিশ কদম দূরে হেঁটে বেড়ায় সেইটা আপনাকে তারা জানায়নি !? শুনুন, আমাকে মেরে ফেলবে তো ? ফেলুক ! আমার কিছু যায় আসে না ! কাউকে না কাউকে তো সত্যিটা আঁকড়ে থাকতে হবে ,তাই না ?! বোবা একটা মেয়েকে চার চার টা নরপশু খুবলে শেষ করলো ! তারপর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে দিলেই আত্ম হত্যা হয়ে গেল ? ! সব কন্ট্রোল করে ফেলবে ওরা , সব ?! "



রাগে ক্ষোভে ফুসছে রিয়া !



ইন্সপেক্টর সজীব কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো রিয়ার দিকে । তারপর উঠে দাঁড়ালো ।



"আপনার বিশ্রাম দরকার, আমি আসছি । একটা কথা বলে যাওয়া দরকার, আইন মেনে চলুন, রাস্তা ঘাটে মারামারি করলে আইন চুপচাপ থাকবে না । সমস্যা হলে ফোন দিতে পারতেন আপনি, নাম্বার তো দেয়াই ছিল । পুলিশ এসে সমস্যার সমাধান করতে পারতো । সে যাকগে, গুড নাইট !"



হন হন করে ইন্সপেক্টর সজীব বেরিয়ে গেল । পেছনে ধপ করে সোফায় বসে পড়লো রিয়া । প্রচন্ড রাগে শরীর কাঁপছে তার । নিজের অজান্তেই চোখ বেয়ে পানি ঝরছে ।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top