What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Self-Made গেম অফ থ্রোন্সের রাজনৈতিক শিক্ষা (1 Viewer)

Fahima

Senior Member
Joined
Apr 8, 2019
Threads
137
Messages
539
Credits
32,076
গেম অফ থ্রোন্সের রাজনৈতিক শিক্ষা


এইচবিওর জনপ্রিয় টিভি সিরিজ গেম অফ থ্রোনসকে একটি ফ্যান্টাসি সিরিজ হিসেবে উপভোগ করাটাই সবচেয়ে স্বাভাবিক। এই সিরিজে আকাশে ড্রাগন ওড়ে, দৈত্যাকার মানুষেরা অবলীলায় সাধারণ মানুষদের সাথে চলাফেরা করে, মৃত মানুষেরা জীবিত হয়ে ওঠে, বহু বছর পর পর আসা শীতকাল টানা কয়েক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় এবং হোয়াইট ওয়াকার নামের এক অদ্ভুত জাতি জীবিত মানুষকে ধরে ধরে হোয়াইট ওয়াকারে রূপান্তরিত করে।

কিন্তু বাস্তবে এগুলো গেম অফ থ্রোনসের মাত্র একটা দিক। যে জটিল সিংহাসনের খেলা নিয়ে সিরিজটির কাহিনী আবর্তিত হয়েছে, তাতে এটি কোনো অংশে বাস্তব রাজনীতির চেয়ে কম বৈচিত্র্যময় নয়। এর ফ্যান্টাসি অংশগুলোকে অগ্রাহ্য করলে কিংবা রূপক হিসেবে গ্রহণ করলে সহজেই একে বর্তমান বিশ্বে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহের সাথে তুলনা করা সম্ভব।

তাই সেই চেষ্টা অনেকেই করেছেন। কেউ একে তুলনা করেছেন আমেরিকার রাজনীতির সাথে, কেউ তুলনা করছেন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সাথে, কেউ আবার তুলনা করেছেন প্রাচীন মিসর অথবা আধুনিক লিবিয়ার রাজনীতির সাথে। কিন্তু নির্দিষ্ট কোনো এলাকার রাজনীতির সাথে তুলনা না করলেও গেম অফ থ্রোনসের প্রায় প্রতিটি ঘটনাতেই কিছু না কিছু মূল্যবান রাজনৈতিক শিক্ষা আছে।

এই রকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক শিক্ষা সম্পর্কে বলবো, যা গেম অফ থ্রোনস আমাদেরকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। তবে সাবধান, আপনি যদি গেম অফ থ্রোনস না দেখে থাকেন, তবে সামনে আপনার জন্য স্পয়লার আছে।


১. ক্ষমতা অর্জনের চেয়ে ক্ষমতা ধরে রাখা কঠিন:

চিরন্তন এ সত্যটি গেম অফ থ্রোনস আমাদেরকে আটটি সিজন জুড়ে বারবার মনে করিয়ে দিয়েছে। গেম অফ থ্রোনসের জগতে বিভিন্ন সময় অনেকেই বিভিন্ন রাজ্যের ক্ষমতায় বসেছে। কিন্তু যত সহজভাবে তারা রাজ্যের দখল পেয়েছে, তত সহজভাবে সেটা ধরে রাখতে পারেনি।

সবচেয়ে বড় উদাহরণ নিঃসন্দেহে ডেনেরিস টারগারিয়ান। ড্রাগনের কল্যাণে কিংস ল্যান্ডিংয়ের জয়টা তিনি তুলনামূলকভাবে সহজেই পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজ্য শাসন করার সৌভাগ্য তার হয়নি। যে সিংহাসনের জন্য এত ধ্বংসযজ্ঞ, সেটাতে বসার আগেই তাকে প্রাণ দিতে হয় তারই ভ্রাতুষ্পুত্র জন স্নো এর হাতে।

ডেনেরিসই অবশ্য একমাত্র উদাহরণ না। জন স্নো নিজেও যোগ্যতাবলেই নাইটস ওয়াচের লর্ড কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কিন্তু সাধারণ এক গার্ড থেকে ধীরে ধীরে লর্ড কমান্ডার হওয়াটাও যত সহজ ছিল, লর্ড কমান্ডার হিসেবে একইসাথে সবার মন যুগিয়ে চলা; আবার একইসাথে হোয়াইট ওয়াকারদেরকেও মোকাবেলা করা ততটা সহজ ছিল না। ফলে তাকেও প্রাণ দিতে হয়েছিল তারই অনুগত নাইটস ওয়াচদের হাতে।

রাজা রবার্ট ব্যারাথিয়নকে অবশ্য সে হিসেবে তুলনামূলকভাবে সফল বলা যায়। তিনি দীর্ঘ ১৭ বছর রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু যে বীরত্বের সাথে তিনি লড়াই করে টারগারিয়ানদেরকে পরাজিত করেছিলেন, সেরকম বীরত্ব বা সাফল্যের সাথে তিনি রাজ্য পরিচালনা করতে পারেননি। রাজ্য পরিচালনার চেয়ে তিনি বরং শিকার, মদ্যপান এবং গণিকালয়ে গমনেই বেশি আগ্রহী ছিলেন। তার অকাল মৃত্যুর পেছনে এগুলোও পরোক্ষভাবে দায়ী।

বাস্তব জীবনেও আমরা অহরহ এ ধরনের উদাহরণ দেখতে পাই। এর কারণটাও পরিষ্কার। রাজ্য জয় বা দখল করতে যে ধরনের দক্ষতা বা গুণাবলী লাগে, রাজ্য শাসন করার সময় তা কাজে আসে না। তখন প্রয়োজন হয় ভিন্ন গুণাবলীর এবং ভিন্ন বিষয়ের উপর দক্ষতার। ড্রাগন দিয়ে কিংবা মিসাইল হামলা চালিয়ে দেশ জয় করা যায়, কিন্তু সফলভাবে শাসন করা যায় না। এজন্যই আরব বসন্তের বিপ্লবের ফলে ক্ষমতায় এসেও মধ্যপ্রাচ্যের শাসকরা নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারছেন না। আবার অস্ত্রের জোরে আফগানিস্তান দখল করেও আমেরিকাকে এখন পালানোর পথ খুঁজতে হচ্ছে।


২. মিত্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতার পরিণাম অশুভ:

ক্ষমতায় থাকলে অনেকেই ধরাকে সরা জ্ঞান করে। মিত্রদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে, কিংবা পূর্বে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। অথচ তারা এটা ভেবে দেখে না যে, নতুন করে কোনো সংকট শুরু হলে এই মিত্ররাই পারবে তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করতে, অথবা শত্রুপক্ষের সাথে যোগ দিয়ে তাকে চিরতরে ধ্বংস করে দিতে।

গেম অফ থ্রোনসে অনেকেই এই শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু স্টার্ক পরিবারের মতো মূল্য কাউকে দিতে হয়নি। রব স্টার্ক যখন যুদ্ধে যাচ্ছিলেন, তখন তার সম্ভাব্য প্রতিটি মিত্রের সহযোগিতা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু সেই গুরুত্বপূর্ণ সময়েই তার মা ক্যাটলিন স্টার্ক জেইমি ল্যানিস্টারকে মুক্ত করে দিয়ে এক সময়ের শক্তিশালী মিত্র হাউজ কার্স্টার্কের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।

অন্যদিকে রব স্টার্ক নিজেও ওয়াল্ডার ফ্রের কন্যাকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তালিসা মাইগারকে বিয়ে করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত এবং যুদ্ধে জেতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হাউজ ফ্রের সাথে চরম বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। এই বিশ্বাসঘাতকতার ফলাফলই ছিল সেই কুখ্যাত রেড ওয়েডিং হত্যাকাণ্ড, যার মাধ্যমে তাকে এবং তার পুরো পরিবারকে চরম মূল্য দিতে হয়েছিল।

একই ভাবে মূল্য দিতে হয়েছিল জন স্নোকেও। তিনি সবার ভালোর জন্যই ওয়াইল্ডলিংদেরকে ওয়ালের দক্ষিণে আসার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তার নাইটস ওয়াচের সঙ্গীরা এটাকে তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলে পরবর্তীতে তাকে (জন স্নো) হত্যা করে তারা।

বিশ্ব রাজনীতিতেও আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাই। আফ্রিকার দরিদ্র কিছু রাষ্ট্র ছাড়া গাদ্দাফীর সেই অর্থে কোনো মিত্র ছিল না। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি পরাশক্তির সাথেই তার সম্পর্ক খারাপ ছিল। সেজন্য ২০১১ সালে তার পক্ষে দাঁড়ানোর মতো কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এমনকি একসময় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিল, কিন্তু পরে বিশ্বাসঘাতকতা করে তিনি ক্ষমতা থেকে দূরে সরিয়ে দেন, এরকম লিবিয়ান সামরিক কর্মকর্তারাও সে সময় তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য লিবিয়াতে ফিরে এসেছিল।

অন্যদিকে আরব বসন্তের বিশৃঙ্খলা থেকে যারা বেঁচে গেছে, তারা মূলত তাদের শক্তিশালী মিত্রদের কারণেই রক্ষা পেয়েছে। সিরিয়াকে রক্ষা করেছে রাশিয়া এবং ইরান। বাহরাইনকে রক্ষা করেছে সৌদি আরব। এমনকি যে আল জাজিরা প্রতিটি দেশের আন্দোলন দিন রাত ২৪ ঘণ্টা প্রচার করেছিল, তারাও বাহরাইনের আন্দোলন প্রথম কয়েকদিন প্রচার করেনি, যেহেতু বাহরাইন কাতারের মতোই গালফ কর্পোরেশন কাউন্সিলের সদস্য ছিল।


৩. সব মানুষই ভালো মন্দের মিশ্রণে গঠিত:

রূপকথার গল্পে বা সুপারহিরো কমিক্স জগতেই কেবল সকল প্রকার দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত শুদ্ধতম নায়ক এবং তার বিপরীতে সকল দোষে দুষ্ট খলনায়কের দেখা পাওয়া যায়। অধিকাংশ চলচ্চিত্র বা ধারাবাহিকেও প্রধান চরিত্রগুলোকে এভাবেই সরলীকরণ করা হয়। কিন্তু বাস্তব দুনিয়ার চরিত্রগুলো অনেক বেশি জটিল। এখানে ভালো মানুষের মধ্যেও অনেক খারাপ দোষ থাকে, আবার খারাপ মানুষের মধ্যেও অনেক ভালো গুণ থাকে।

গেম অফ থ্রোনসের জফ্রি ব্যারাথিওন এবং রামসি বোল্টনের মধ্যে হয়তো কোনো গুণ খুঁজে বের করা কঠিন হবে। কিন্তু এরা নিতান্তই ব্যতিক্রম। এদের বাইরে এখানকার অধিকাংশ চরিত্রই বাস্তব দুনিয়ার মানুষদের মতো অত্যন্ত জটিল। স্যান্ডর ক্লিগেন তথা হাউন্ড রুক্ষ স্বভাবের একটি চরিত্র। সে ঠাণ্ডা মাথায় আরিয়ার বন্ধুকে খুন করে। কিন্তু সেই আবার লোরাস টাইরেলের জীবন বাঁচায়, সানসাকে রক্ষা করে, আরিয়াকে সাহায্য করে।

বিপরীত দিকে আরিয়া সবার প্রিয় চরিত্র। কিন্তু হাউন্ডের কাছ থেকে ভালো ব্যবহার পাওয়ার পরেও সে তাকে ধীর, কষ্টদায়ক মৃত্যুের মুখে ফেলে চলে যায়। জন স্নো অত্যন্ত সৎ, কর্তব্যপরায়ণ। কিন্তু ডেনেরিস স্বৈরাচারী হয়ে উঠছে, গণহত্যা চালাতে যাচ্ছে বুঝতে পেরেও তিনি তাকে বাধা না দিয়ে সেই হত্যাকাণ্ডে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেন। ডেনেরিস মমতাময়ী মা, ব্রেকার অফ চেইন্স, কিন্তু তিনিও উন্মাদ হয়ে ওঠার আগেই ঠাণ্ডা মাথায় স্যামুয়েল টার্লির বাবা ও ভাইকে পুড়িয়ে হত্যা করেন।

গেম অফ থ্রোনসের আরো জটিল কয়েকটি চরিত্র হলো জেইমি ল্যানিস্টার, স্ট্যানিস ব্যারাথিয়ন এবং থিওন গ্রেজয়। জেইমি ব্র্যানকে হত্যা করতে চেয়েছিল, নেড স্টার্কের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেই আবার ব্রিয়েন অফ টার্থকে রক্ষা করেছিল, নাইট কিংয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য উইন্টারফেলে ছুটে এসেছিল। কিন্তু শেষে আবার সে ব্রিয়েনকে পরিত্যাগ করে সার্সির কাছেই ছুটে গিয়েছিল।

অন্যদিকে থিয়ন সারা জীবন স্টার্কদের ভালোবাসা পেয়েও তাদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল, কিন্তু পরে সেই আবার হোয়াইট ওয়াকারদের হাত থেকে ব্র্যানকে রক্ষা করেছিল। স্ট্যানিস ব্যারাথিয়ন একদিকে জনকে বাঁচিয়েছিল, কিন্তু অন্যদিকে নিজের স্ত্রী ও কন্যাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল। এখন জেইমি, স্ট্যানিস বা থিয়ন সম্পর্কে কেউ যদি এক কথায় বলে যে, তারা ভালো বা খারাপ, তাহলে সেটা তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

বাস্তব জীবনেও যারা ক্ষমতার লড়াই এ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, তাদেরকে এককথায় ভালো বা মন্দ হিসাবে চিহ্নিত করাটা কঠিন। সময়ের প্রয়োজনে তারা অনেক সময় অনেক অপ্রিয় সিদ্ধান্ত নেয়, অনেক অন্যায় করে, কিন্তু পরবর্তীতে আবার সেখান থেকে ফিরেও আসে। নির্বাচনে দু'টি দল দাঁড়ালে এক দলকে সবদিক থেকে ভালো, অন্য দলকে সবদিক থেকে খারাপ বলে প্রচার করাটা তাই অধিকাংশ সময়ই পক্ষপাতমূলক অবস্থান হয়।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও আমেরিকা খারাপ, রাশিয়া ভালো, অথবা রাশিয়া খারাপ, তুরস্ক ভালো; এরকম সিদ্ধান্ত বেশি সরলীকরণ হয়ে যায়। গাদ্দাফী, সাদ্দাম সহ এককালের জনপ্রিয় এবং পরবর্তীতে পতিত স্বৈরাচারদেরকেও এককথায় ভালো খারাপ উপাধি দেয়াটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়। গেম অফ থ্রোনসের চরিত্রগুলোর মতোই এরাও দীর্ঘ শাসনামলে প্রচুর ভালো কাজ করেছে, আবার প্রচুর খারাপ কাজও করেছে। যেটা প্রয়োজন, সেটা হলো এদের প্রত্যেকের জীবন এবং কর্মকাণ্ডের উপর বিস্তারিত আলোচনা এবং বিশ্লেষণ।


প্রথম অংশ পোস্ট করলাম। পরবর্তী অংশ Coming Soon.
 
Last edited by a moderator:

Users who are viewing this thread

Back
Top