What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

বিরিশিরি ভ্রমন কাহিনী (1 Viewer)

91prince

New Member
Joined
May 21, 2019
Threads
1
Messages
21
Credits
249
রাত দশটার পর(১৪ই জুলাই ২০১৮) ডিনার সেরে রুমমেটের সাথে গল্প করছিলাম। গল্পের ভিতর ঘুরতে যাওয়ার প্রসঙ্গ চলে আসলো। বলেই ফেললাম চলেন দাদা একদিনের জন্য কোথাও ঘুরতে যাই। দাদা রাজি হয়ে গেলেন, সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকাল ৫ টায় আমরা সুসংদুর্গাপুর ঘুরতে বের হবো। দাদা বুথ থেকে টাকা তুলতে গেলেন আর আমি ইন্টারনেট থেকে কিছু তথ্য নিচ্ছিলাম- কিভাবে নেত্রকোনার দুর্গাপূর যাবো। জানলাম আমাদের যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা লাগবে তাই সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম মানে আজ রাতেই বের হবো। দাদা ১১ টা ৪০ এ রুমে আসলেন। জানালাম সিদ্ধান্ত। তিনি রাজি হয়ে গেলেন এবং ১০ মিনিটের মধ্যেই রেডি হয়ে বের হলাম বাসা থেকে। গন্তব্য, যেখানের গাড়ী পাবো সেখানেই ঘুরতে যাবো। রাত সাড়ে বারোটায় মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে পৌছে গেলাম এবং সাথে সাথেই দুর্গাপুরের একটা বাস পেয়ে গেলাম। কি যে সৌভাগ্য!

যাত্রা শুরু হলো ১২ টা ৪০ মিনিটে। গাড়ী ভালোই চলছিলো প্রথম দুই ঘন্টা কিন্তু গাড়ী যখন মহাসড়ক থেকে বিরিসিড়ির রাস্তায় প্রবেশ করলো শুরু ভয়ংকর ঝাকুনি। বুকের হাড় ব্যথা হয়ে গেছিলো। এত কষ্টের পরও যখনই সুবহে সাদিকের পর উত্তর আকাশে তাকিয়ে সুউচ্চ পাহাড়ের হাতছানি দেখলাম সব কষ্ট ভুলে গেলাম। সত্যিই সকালটা জীবনের সেরা শুভ্র সকাল ছিলো! ভোর সাড়ে পাঁচটায় আমরা সুসংদুর্গাপূর নামলাম। মসজিদ ফেরা কিছু মুরব্বির কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য জেনে নিলাম। বাসস্ট্যান্ড থেকে একটু পশ্চিমে হেটেই দেখা পেলাম সোমেশ্বর নদীর, যে নদীকেই কেন্দ্র করে এই এলাকার মানুষের জীবন জীবিকা। পুরো দুর্গাপূর উপজেলাকে ঘিরে রেখেছে এই নদী। খেয়া নৌকায় পার হওয়ার সময় দেখলাম কেউ নদীর বালি পানি ছেকে কয়লা সংগ্রহ করছে আবার কেউ মহাসমারোহে পাহাড়ি ঢলে বয়ে আসা সিলিকা বালি উত্তলন করছে। সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে নদী থেকে পাথর এবং বালু উত্তলন করতে হয়। খেয়া পার হয়েই এক রসিক মোটর সাইকেল চালকের সাথে দেখা হয়ে গেলো, যিনি গাইড হিসেবে কাজ করেন। দরদাম করে ৬ ঘন্টার জন্য তাকে 500 টাকায় সাথে নিয়ে নিলাম। তিনি প্রথমেই আমাদের নিয়ে গেলেন সাদা মাটির পাহাড় আর সবুজাভ নীল পানির হ্রদে। ও আচ্ছা একটা কথা, 'ছুঁয়ে দিলে মন' সিনেমার পুরা দৃশ্যায়ন সুসংদুর্গাপূর এবং বিজয়পুরেই হয়েছিলো। ঘুরে ঘুরে চীনা বা সাদা মাটির পাহাড় দেখলাম, সবুজাভ নীল পানি নিয়ে খেলা করলাম! ভোরে দোকান পাট বন্ধ ছিলো বিধায় কিছু খেতে পারি নি। প্রাকৃতিক কাজকর্ম মসজিদের ওয়াশরুম থেকে সেরে বাজারের একটা হোটেল থেকে নাস্তা করলাম। খাঁটি দুধের চা টা খুব মজার ছিলো। এরপর আমরা ১৫ মিনিট বাইকে চড়ে চলে আসলাম কমলার বাগানে, যেটা একটা ছোট পাহাড়ের উপর। কমলার বাগানে অনলি 3 টা কমলা গাছ আর অসংখ্য পাম গাছ দেখেছি। সম্পূর্ণ এলাকা দেখার জন্য সেখানে বেশ উঁচু একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। উপরে উঠলে পাহাড় আর নদীর অপরুপ শোভা মন ভরে দেখা যায়। টাওয়ার নড়বড়ে ও ঝুঁকিপূর্ন তাই না ওঠাই ভালো। এরপর আমরা চলে আসলাম পাশের বিজিবি ক্যাম্পে। বিজিবি ক্যাম্পের নদীর ঘাটে আসলাম এবং স্বচ্ছ পানি দেখে গোসল করার লোভ সংবরন করতে পারলাম না। নদীতে নেমে প্রাণ ভরে গোসল করলাম।

গোসল শেষে গাইড আমদের নিয়ে আসলো রাণীখং গীর্জায়। ঢালু পথ বেয়ে টিলার উপরে সবুজ বনানীর মাঝে ফুলে পরিপূর্ণ গীর্জা! রানীখং' নামকরণের নেপথ্যেও রয়েছে নানা ইতিহাস। এটি মূলত পাহাড়ি টিলার নাম। কথিত আছে, এক সময় এই জঙ্গলাকীর্ণ অঞ্চলটিতে 'খংরানী' নামে এক রাক্ষুসী ছিল। গারো আদিবাসীরা তাকে পরাস্ত করে সেখানে জনবসতি গড়েন। খংরাণীর নামানুসারেই জায়গাটির নাম রাখা হয় রানীখং। তবে এই ইতিহাসের স্বপক্ষে যুক্তি নেই। নামকরণ যে ভাবে বা যে কারণেই হোক না কেন এর 'রাণী' শব্দটির প্রয়োগ যথার্থ ও স্বার্থক। কেননা এই অঞ্চল সত্যিই সৌন্দর্যের রানী। এখান থেকে উত্তরে তাকালে দেখা মিলবে মেঘালয় এবং গারো পাহাড়। সাদা মেঘ পাহাড়ের বুকে মিলিয়ে যাচ্ছে! চোখ ছাড়া ক্যামেরা দিয়ে যে সৌন্দর্য্য ধরে রাখা সম্ভব নয়! এখান থেকে পূর্ব দিকে তাকালে তারকাটার সীমান্ত দেখা মেলে। গারো পাহাড়ের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কোনো আগন্তুকের দৃষ্টি কেড়ে নেয়। পরিচয় করিয়ে দেয় নতুন এক পৃথিবীর সঙ্গে।

রানীখং মিশন ও ক্যাথলিক গীর্জা প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে। যদিও এর আগে ঊনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ময়মনসিংহ অঞ্চলে খ্রিস্টের বাণী প্রচারিত হতে থাকে। কিন্তু দুর্গাপুরে এর সূচনা হয় আরও অনেক পরে, বিশ শতকের শুরুতে। তখনও পর্যন্ত এ অঞ্চলের পাহাড়ি জনপদে বসবাসরত গারো-হাজংরা তাদের নিজস্ব ধর্মরীতি বিশ্বাস করত। জানা গেছে, ১৯০৯ খ্রিস্টাব্দে সুসং দুর্গাপুরের টাকশালপাড়া গ্রামের পাঁচ সদস্যের একটি আদিবাসী প্রতিনিধি দল ঢাকা ধর্মপ্রদেশের ধর্মপাল বিশপ হার্থের সঙ্গে দেখা করে তাদের এলাকায় মিশনারী যাজক পাঠানোর অনুরোধ জানান। বিশপ হার্থ ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা ত্যাগ করার সময় তাদের জন্য কিছু অর্থ বরাদ্দ ও গারো অঞ্চলে মিশনারী প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করেন। এরপর ধর্মপালের দায়িত্ব নেন লিনেবর্ণ। তিনি এডলফ্ ফ্রান্সিস নামে একজন ফাদারকে দুর্গাপুরের টাকশাল পাড়ায় যীশুর বাণী ও ধর্ম প্রচারের জন্য পাঠান। ১৯১১ খ্রিস্টাব্দের ১৯ মার্চ একদল গারো নারী-পুরুষকে বাপ্তিষ্ম প্রদানের মধ্য দিয়ে তিনি প্রচার কাজের সূচনা করেন। এরাই পৃথিবীর প্রথম ক্যাথলিক ধর্মে ধর্মান্তরিত গারো সম্প্রদায়। প্রথম চার বছর টাকশালপাড়া থেকেই অস্থায়ীভাবে ধর্ম প্রচারের কাজ চালানো হয়। এরপর ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে সুসং এর জমিদারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নিয়ে রানীখং টিলায় স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় মিশন ও ক্যাথলিক গীর্জা। এটিই 'সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী এ যেন স্বর্গপুরী!

ফেরার পথে সাগর দিঘী এবং বিরিশিরি এলাকায় অবস্থিত স্থানীয় আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র- ক্ষুদ্র ও নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক একাডেমি ঘুরে বাইকে করে ঝারিয়া ট্রেন স্টেশনে চলে আসলাম। দুপুরে খেলাম খাটি দুধের দই এবং রসমালাই! তারপর ট্রেনে চেপে সোজা ঢাকা।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top