আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। মাটি কী তা আমরা সকলেই জানি। ভূমির প্রাকৃতিক উপরি ভাগকে মাটি বলা হয়। আমরা মাটিকে পায়ের নিচে দেখতেই অভ্যস্ত। কিন্তু মাটি যখন উঠে আসে আমাদের ঘরে, সাজিয়ে তোলে অন্দরমহল, তখন মাটির স্থান আভিজাত্যে। মৃৎশিল্প এমন একটি মাধ্যম যা মাটিকে নিয়ে আসে মানুষের কাছাকাছি। মৃৎশিল্প বলতে মাটি দিয়ে তৈরি যাবতীয় ব্যবহার্য এবং শৌখিন শিল্পসামগ্রীকেই বোঝায়। শিল্প ও সংস্কৃতির বিভিন্ন মাধ্যমের মধ্যে মৃৎশিল্প অতি প্রাচীন। এটি লোকশিল্প ও লোকধর্মের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। মৃৎশিল্পের প্রধান উপাদান মাটি। তবে সব মাটির গঠন ক্ষমতা থাকে না। মৃৎশিল্পের জন্য যে মাটি ব্যবহার করা হয় তা একটু বিশেষ ধরনের। এ মাটি সাধারণত নদীর অববাহিকায় পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ যেহেতু একটু বদ্বীপ, তাই দেশের বিভিন্ন জায়গাতে কয়েক হাত মাটি খুঁড়লেই এই মাটির সন্ধান মেলে । কুমোররা মাটি সংগ্রহ তৈরি করেন নিত্য ব্যবহার্য ও শৌখিন নানা জিনিস তৈরির কাজে। বর্তমানে অ্যালুমিনিয়াম ও অন্যান্য উন্নতমানের টেকসই সামগ্রী আবিষ্কারের ফলে নিত্য ব্যবহার্য মৃৎশিল্প আজ পরাজিত। তবুও দেশের আনাচে-কানাচে মাটির জিনিসের ব্যবহার ও চাহিদা রয়েছে। সে তুলনায় শৌখিন মৃৎশিল্পের চাহিদা ও কদর সবখানেই। বিশেষ করে ঘর সাজানোতে মৃৎশিল্পের ব্যবহার করা হয় বেশ গুরুত্বের সাথেই। আসুন মাটি দিয়ে ঘর সাজিয়ে তুলি - পুতুল : মাটির পুতুল ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ হিসেবে ব্যবহার করা হয় অনেক আগে থেকেই। মাটির তৈরি বর-বউ, ভালুক, হাতি, ঘোড়া, মাছ, ব্যাঙ, বানর ইত্যাদি দিয়ে আপনার ঘর সাজিয়ে ঘরের পরিবেশ আনন্দময় করে তুলতে পারেন সহজেই। ফুলদানী : বাজারে বিভিন্ন ধরনের ও আকারের ফুলদানী কিনতে পাওয়া যায়। মাটির ফুলদানী ফুল বা পালক সাজিয়ে রাখতে পারেন। কলমদানী : পড়ার টেবিলে বা অফিসে কাজের টেবিলে রাখতে পারেন মাটির কলমদানী। খুব অল্প দামে পাওয়া যায় বলে ভেঙ্গে গেলেও খুব বেশি ক্ষতি নেই। ছাইদানী : ধূমপান যদিও স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর তবুও অনেকেই ধূমপান করে থাকেন। মাটির ছাইদানী রাখতে পারেন আপনার ধূমপান করার নির্দিষ্ট জায়গায়।
ফটোফ্রেম : ছবি তুলতে ভালোবাসেন অনেকেই। ইদানীং বাঁশ, বেত, কাঠ, কাগজ ইত্যাদি দেশীয় উপাদানের পাশাপাশি মাটি দিয়েও ফটোফ্রেম তৈরি হয়। বসার ঘরে ওয়াল সিরিজ হিসেবে মাটির ফটোফ্রেমে সাজিয়ে রাখতে পারেন আপনার ছবি। শোপিস : বিভিন্ন বিখ্যাত জিনিসের রেপ্লিকা বা ক্ষুদে সংস্করণ, যেমন - তাজমহল, শহীদ মিনার, স্মৃতিসৌধ, বিখ্যাত ব্যক্তিদের ভাস্কর্য ইত্যাদি দিয়ে ঘর সাজিয়ে বাড়িতে একটা শিক্ষামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারেন। দেয়ালসজ্জা : টেরাকোটা বা পোড়ামাটির ফলক, ওয়াল সিরিজ দিয়ে ঘরের দেয়াল সাজাতে পারেন। বর্তমানে মাটির তৈরি ক্যালেন্ডার ও দেয়ালঘড়ি কিনতে পাওয়া যায়, এগুলো দিয়েও দেয়ালসজ্জা করতে পারেন। টব : বিভিন্ন ধরনের এবং আকারের মাটির টব ব্যবহার করে বাড়ি সাজানো যায়। টবে ফুলগাছ, পাতাবাহার লাগিয়ে ঘরে ও বারান্দায় রাখতে পারেন। ছোট ছোট টবে ক্যাকটাস লাগিয়ে টেবিলে, ঘরের জানালায় রাখলে ঘরের নান্দনিকতা বেড়ে যায়। শিকায় টব ঝুলিয়েও তা ঘরে এবং বারান্দায় রাখতে পারেন। ল্যাম্পশেড : ঘর সাজাতে মাটির তৈরি ল্যাম্পও ব্যবহার করতে পারেন। পড়ার টেবিলে বা বেডসাইড টেবিলে অথবা ঘরের কোণে একটি মাটির ল্যাম্পশেড তৈরি করে এক অন্যরকম মাত্রা।
কোথায় পাবেন : আড়ং এবং আইডিয়াস তো মাটির শৌখিনসামগ্রীর জন্য জনপ্রিয়। এগুলোর পাশাপাশি মাটির জিনিস কিনতে পাবেন শাহবাগের নিচতলার বেশ কিছু দোকানে। ঢাকা কলেজ, দোয়েল চত্বর, ধানমন্ডি এবং কলাবাগান বাসট্যান্ডের ফুটপাতেও বেশ কিছু দোকান রয়েছে। এছাড়া আসাদগেট মসজিদসংলগ্ন মার্কেটেও রয়েছে মাটির জিনিসের বেশ কিছু দোকান। দামদর : কলমদানী ৮০-১২০ টাকা, ফুলদানী ৩০০-১৫০০ টাকা, ছাইদানী ৮০-২০০ টাকা, বিভিন্ন শোপিস ৫৫-৩৫৫ টাকা, দেয়ালঘড়ি ৩৫০-১৫০০ টাকা, ল্যাম্পশেড ৩৫০-১২০০ টাকা, টেরাকোটা ১৫০-৬৫০০ টাকা, মুখোশ ১০০-৫০০ টাকা, টব ২০-১২০০ টাকা।
নিছে কিছু মাটি দিয়ে তৈরি জিনিশ এর ছবি দেওয়া হলো।।