অপয়া
- LOVE doesn't mean Road of rose palettes feeling of respect compassion sometimes can sprout LOVE between the couples
- LOVE doesn't mean Road of rose palettes feeling of respect compassion sometimes can sprout LOVE between the couples
বিয়েবাড়ির সাজগোজ আর রঙ্গীন দামি জামাকাপড়ের ভিড়ে একদম বেমানান মেয়েটা। পোশাকটাও বেমানান বড্ড। কালো ফেডেড জিন্স আর ঢোলা কালো টিসার্ট। চুল গুলো উঁচু করে পনিটেল। পায়ে স্নিকার। পিঠে একটা ব্যাগপ্যাক। দেখতে কালোর মধ্যে বেশ মিষ্টি মেয়েটা। বর আসার সময় হয়ে গেছে। সবাই ব্যস্ত।
মেয়েটা সোজা শ্রেষ্ঠার বসার জায়গার দিকে এগিয়ে গেল। শ্রেষ্ঠাও হাসি মুখে উঠে দাঁড়িয়েছে। তাহলে কি ওর কোনো বন্ধু!! কিন্তু এমন পোশাকে বিয়ে বাড়ি। মুহূর্তে আমার ভুল ভেঙ্গে গেলো। মেয়েটার হাতে উঠে এসেছে দামী ক্যামেরা। ওর কথামত পোজ দিচ্ছে শ্রেষ্ঠা। সকাল থেকে যে ছেলে দুটো ছবি তুলছিল তারাও এই মেয়েটিকে লাইট, লেন্স এসব এগিয়ে দিয়ে সাহায্য করছে।
আমার থতমত চেহারা দেখে তনু এগিয়ে এসে বলল -"এ হল পিয়াল, এই হ্যাপি মোমেন্ট এর হেড। ওর টিম শ্রেষ্ঠার বিয়ের ফটো গুলো তুলছে। ঐ প্রি ওয়েডিং ভিডিওটাও ওদের করা।"
অবাক হওয়ার কিছুটা বাকি ছিল। প্রফেশনাল মেয়ে ক্যামেরাম্যান এই প্রথম দেখলাম আমি। মেয়েটা তিনটে দিন খুব মন দিয়ে কাজ করেছিল।
শ্রেষ্ঠার অনুরোধে ওদের ছোট্ট স্টুডিওটাতেও গেছিলাম দুবার ফটো বাছতে। এডিটিং পিয়াল নিজে হাতেই করত। খুব সুন্দর ভাবে গ্ৰাফিক্সের কাজ করেছিল। এর পর দু জন বন্ধুর বিয়েতে পিয়ালকে কাজ পাইয়ে দিয়েছিলাম আমি। এমন কাজ পাগল মেয়ে আমি দেখিনি। পুরো টিম ওর কথায় চলত।
তবে কাজের বাইরে খুব একটা কথা বলত না মেয়েটা। বন্ধুর বিয়ের ভিডিও এডিটিং এর ব্যপারে গেছিলাম ওর স্টুডিওতে। হঠাৎ লোডশেডিং , কাজ বন্ধ। ওর ছেলে দুটোও কোনো প্রি ওয়েডিং এসাইনমেন্টে বাইরে গেছিল। এদিকে তুমুল বৃষ্টি। একটা দুটো কথা বলতে বলতে জানলাম ও হাওড়ার মেয়ে। বাবার ফটোগ্ৰাফির ব্যবসা ছিল। সেই থেকে ও এ পথে এসেছে। বাড়িতে বিধবা মা আর দুটো ছোট ভাই রয়েছে। আরো অনেক গল্প হয়েছিল সেদিন। মাঝে মধ্যে ফোনেও কথা হত। যে বয়সে মেয়েরা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে মস্তি করে, রঙ্গীন স্বপ্ন দেখে সেই বয়সে ও একটা সংসার চালাচ্ছিল। ওর জীবনটা ছিল ধুসর মরুভূমির মত।
আমার ভেতর যে একটা অন্যরকম অনুভূতির জন্ম হচ্ছিল বুঝলেও প্রকাশ করতে পারিনি। মেয়েটা একটা শক্ত খোলসে নিজেকে মুরে রাখতো সবসময়। সেই আবরণ ভেদ করে ওর মনের ঠিকানায় পৌঁছনোর রাস্তা পাচ্ছিলাম না।
রমেনের বোনের বিয়ের কাজটা ওকেই পাইয়ে দিয়েছিলাম। ওর ফটো গুলো সত্যিই খুব সুন্দর প্রানবন্ত হত।
মালা বদলের পর বর কনে মন্ডপে বসেছে , পিয়াল যথা রীতি নানারকম আ্যঙ্গেল থেকে ফটো তুলছে। হঠাৎ এক মাঝবয়সী ভারী চেহারার মহিলা এসে ওকে আটকালো -"তুমি পিয়াল না!! অমরের মেয়ে , হাওড়ার পিয়াল ?"
ও একটু বিরক্ত হয়েই তাকিয়েছিল।
-"আমি ঠিক চিনেছি। তুমি এখানে কি করছ ? "মহিলার কথায় আরো কয়েকজন এগিয়ে এসেছে। উনি নাকি ছেলের পিসি। হাওড়ায় থাকেন। আমরাও কয়েকজন এগিয়ে গেছি।
পিয়াল একটু অপ্রস্তুত।
আমি বললাম -"ও আমাদের ফটোগ্ৰাফার , আমার বন্ধু...."
মহিলা তাচ্ছিলের ভঙ্গিতে আমায় একবার দেখে বলল -"ওকে দিয়ে এসব শুভ কাজের ফটো !! ওর সম্পর্কে কতটুকু জানো?"
আমার খুব রাগ হচ্ছিল। কিন্তু বর বেশে কাঞ্চন উঠে এসেছে ততক্ষনে। বরকর্তা ও উপস্থিত। রমেন হাত জোর করে বলল -"কি হয়েছে আমরা বুঝতে পারছি না। যদি খুলে বলেন ..."
-"এই মেয়েটি কে কাজ দেওয়ার আগে খোঁজ নিয়েছিলে ওর সম্পর্কে?" মহিলা উত্তেজনায় কাঁপছে।
পিয়ালের চোখ মুখ অপমানে লাল। রমেলের বোন রোমী অবাক হয়ে তাকাচ্ছে। রমেন আমার দিকে তাকাচ্ছে।
বললাম -"ওকে প্রায় এক বছর ধরে চিনি। ভালো ফটো তোলে, আমার বোনের বিয়ের ফটোগ্ৰাফি করেছে ......"
আমায় শেষ করতে না দিয়ে মহিলা বলে ওঠে-"ওর মত অপয়া কে দিয়ে আমার ভাইপোর বিয়ের ছবি !! কেনো? আর কি কারো ক্যামেরা নেই। ওর তো এসব অনুষ্ঠানে আসাই উচিত না। ও নিজের বিয়ের রাতে বরকে খেয়েছে। তার আগেও শুনেছি বয়ফ্রেন্ডকে খেয়েছে। " উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছিল মহিলা। চারপাশে গুঞ্জন। পিয়াল আর ওর টিমের দুটো ছেলে কে ঘিরে নানা রকম কথা ভেসে আসছে। রমেনের বাবা আর রমেন ওনাদের বোঝাতে ব্যস্ত। আমার কান মাথা গরমে ঝা ঝা করছে।
কিছুক্ষণ আলোচনার পর রমেনরা আমায় ডেকে বলল পিয়ালদের চলে যেতে বলতে। পেমেন্ট দিয়ে দেওয়া হবে। ছেলের বাড়ির লোকের কথাই শেষ কথা।
আমি কিছু বলার আগেই দেখলাম ওর ছেলেরা লাইট ক্যামেরা সব গোটাচ্ছে। ছেলের বাড়ির ক্যামেরাম্যান বাকিটা একাই কভার করবে শুনলাম।
পিয়ালের সাথে আমিও বেরিয়ে এলাম বাইরে। মেয়েটাকে ভীষণ অচেনা লাগছিল। খুব কষ্ট হচ্ছিল আমার। বললাম -"আমি পৌঁছে দিচ্ছি , দাঁড়াও।"
ও বলল -"দরকার নেই। চলে যাবো আমরা।" ওর ছেলেরা ততক্ষণে একটা ট্যাক্সি ধরে নিয়েছে । ও ফোন বার করে ওলা বুক করছিল। একাই হাওড়া যাবে |
আমি আবার বললাম -"আমার খুব খারাপ লাগছে, আমার জন্য তোমাদের ...."
-"খারাপ তো আমার লাগছে। আমার জন্য আপনার অপমান হল। বাদ দিন। আমি চলে যাবো। "
-"প্লিজ, যদি আমায় সুযোগ না দাও খারাপ লাগবে। দু মিনিট দাঁড়াও। গাড়িটা নিয়ে আসছি।" ওকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে গাড়ি নিয়ে এলাম।
ও একটু ইতস্তত করে উঠে বসল। করুন মুখটা দেখে খারাপ লাগছিল। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দুজনেই। কেমন গুমোট লাগছিল। সন্ধ্যা রাত সবে। বললাম -"একটু কফি খাবে ? আমার কিছুই খাওয়া হয়নি। "
-"আমার জন্য আপনার বিয়ে বাড়িটা নষ্ট হল।"
-"তাহলে একটু কফি খাই চল।" গাড়িটা বাইপাশের একটা কফিশপে দাঁড় করালাম।
ও অনেক্ষণ ধরে কফিটা নাড়ছে। বললাম -"এসব নিয়ে ভেবো না। ঐ মহিলা ..."
-"ঠিকই বলছিলেন উনি। আমি অপয়া। প্রসুন আমার জন্যই মারা গেছিল। কলেজে পড়তাম। ও পাগল ছিল আমার জন্য। আমি ওকে সে চোখে দেখিনি।একদিন কলেজের গেটে ঝগড়া হয়েছিল। ও রাগ করে রাস্তা পার হতে গিয়ে ..... চোখের সামনে গাড়িটা ওর উপর দিয়ে চলে গেলো। আমি কিছুই করতে পারিনি।
দু বছর পরের কথা, বাবা বিয়ে ঠিক করেছিল। বিয়ের সন্ধ্যায় বরযাত্রির গাড়ি আ্যক্সিডেন্ট। বর সহ চারজন স্পট..... সেই শোকে বাবার হার্ট এটাক.... সব আমার কপাল। সংসারটা আমার জন্য ভেসে গেল। " ঝর ঝর করে কাঁদছিল মেয়েটা।
ওর হাতের উপর আমার হাতটা রাখলাম। ও হাত সরিয়ে নিল। খুব ইচ্ছা করছিল ওকে জড়িয়ে ধরি। নিজের করে নেই। কিন্তু...।
ও চোখের জল মুছে কফিটা খেয়ে বলল -"আমার পথ চেয়ে মা আর ভাই দুটো বসে থাকে। আমায় শক্ত হতেই হবে।"
অনেক কিছু বলতে চাইছিলাম। বলতে পারলাম না। সমাজ নরম মাটিকেই আঘাত করে। এসব ক্ষেত্রে সমাজ ওকে মাথা তুলতে দেবে না এটাই নিয়ম। ওর হয়তো কিছুটা সময় দরকার। এই মুহূর্তে ওর একজন বন্ধু দরকার। সারা রাস্তা এসব নিয়ে আর কথা বলিনি।