What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected লাল জামা(পথ শিশুদের বৈশাখ) (1 Viewer)

Pegasus

Member
Joined
Mar 8, 2018
Threads
103
Messages
171
Credits
28,977
হোটেল থেকে কাজ সেরে বাসায় এসেছে
অভ্র
সাথে রাতের জন্য সামান্য কিছু খাবার
ছোট বোন নিশিকে নিয়ে খেতে বসেছে
ঠিক তখন
-- বাই কাইল তো পয়লা বৈশাখ আমারে একখান
নুতুন জামা কিইইন্না দিবা না? (নিশি)
নিশির কথা কানে যেতেই শুকনো ভাতের দলা
আটকে যায় অভ্রর গলায়
নিশি তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দেয়
অভ্র পানি টা পান করে নিশির দিকে তাকায়
দেখে নিশি উত্তরের জন্য অধীর আগ্রহ নিয়ে
তাকিয়ে আছে
-- কি জামা কিনমু ক? (অভ্র)
অভ্রর মুখে এমন কথা শুনে নিশির চোখে মুখে
আনন্দ বয়ে যায়
-- কাইল দেখামু নে তোমারে (নিশি)
-- আইচ্ছা তুই এখন ঘুম যা রাইত মেলা অইছে (অভ্র)
অভ্রর কথা শুনেই নিশি চুপচাপ চটের বস্তাটার
উপর শুয়ে পড়ে
আর অভ্র চিন্তায় পরে যায় কি করবে এখন ?
ছেঁড়া হাফ প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে
আজকের কাজ করা সব টাকা বের করে
তারপর রাস্তার পাশের সোডিয়াম লাইটের
নিচে বসে গুণতে শুরু করে
দুই........পাঁচ.........তেরো........বিশ সব মিলিয়ে
বিয়াল্লিশ টাকা অভ্রর কাছে
হতাশ হয় অভ্র
ছয় বছরের ছোট্ট বোনটা তার কখনই কোনকিছুর
আবদার করেনি আজ একটা জামা কিনে
চেয়েছে সেটাও কি দিতে পারবেনা?
ছোট্ট বোনটার দিকে তাকিয়ে দেখে সে
ঘুমের দেশে চলে গেছে
উপায় না পেয়ে অভ্র ছুটে যায় পথের দিকে
যেভাবেই হোক কিছুটাকা জোগাড় যে করতেই
হবে
বোনটার একটা আবদার যে পূরণ করতে হবে
অভ্র দেখে এখনো কয়েকটা হোটেল খোলা
আছে
ঢুকে যায় হোটেলে তারপর
--বাই আমারে একখান কাম দিবেন আইজ
রাইতের জন্য? (অভ্র)
-- ঐ বেটা তুই ভিতরে কি করে ঢুকলি যা বের হ
(রাগি কন্ঠে..... ম্যানেজার)
-- একখান কাম দেন না (অভ্র)
-- কোন কাম নাই যা ভাগ
বলেই অভ্রকে তাড়িয়ে দেয়
দিশেহারা অভ্র কি করবে ভেবে পায়না
তার যে এখন অনেক টাকার প্রয়োজন
এখানে ওখানে ঘুড়ে ঘুড়ে অবশেষে অভ্র একটা
হোটেলে পানি টানার কাজটা পায়
এতেই অভ্র খুব খুশি অন্তত কিছু টাকা তো পাবে
ছোট্ট বোনটার জন্য একটা জামা যে কিনতেই
হবে
খুশি মনে কাজ করে অভ্র
ছোট্ট বালকটির চোখে নিদ্রা আসে না
শেষ রাত পর্যন্ত মনোযোগ দিয়ে কাজ করে
তারপর থালাবাসন পরিষ্কার করে কাজ শেষ
করে হোটেল ম্যানেজার অভ্রর হাতে ২০
টাকার একটা নোট তুলে দেয়
অভ্র হয়ত প্রাপ্তির থেকে একটু বেশিই আশা
করেছিল তবে বেশি কথা বললে যে বাকিটাও
আর পাবেনা এটা অভ্রর অজানা নয়
টাকাটা নিয়ে দৌড় লাগায় অভ্র
রেল লাইনের কাছে গিয়ে দেখে ছোট্ট
বোনটা এখনো সেভাবেই ঘুমাচ্ছে
আস্তে করে বোনটার পাশে শুয়ে পড়ে অভ্র
চোখটা বুজে যায়........... আস্তে আস্তে ঘুমের
দেশে তলিয়ে যায় অভ্র
-- বাই...... ও বাই উঠ তাড়াতাড়ি
নিশির চেঁচামেচিতে ধরফড় করে উঠে বসে
অভ্র
-- কি হয়ছে তোর? (অভ্র)
-- ভাই আমারে নতুন জামা কিইন্না দিবা না?
( নিশি)
-- হ দিমু তো তয় এহন তো সকাল দোহান খুলতে
মেলা দেরি আছে তোর কাম নাই আইজ? (অভ্র)
-- খালাম্মা কইছে আইজ বাসায় থাকবো না
তাই কামে যাওন লাগবো না (নিশি)
-- আইচ্ছা তুই থাক আমি আইতাছি (অভ্র)
-- কই যাস বাই? (নিশি)
-- কইলাম না আইতাছি (অভ্র)
অভ্র দৌড়ে চলে যায়
রাস্তার পাশের চাপ কল থেকে হাতমুখ ধুয়ে
কাজের খোজে চলে যায়
আজ পথে এই সাত সকালে এত্ত মানুষ দেখে খুব
ভালো লাগে অভ্রর
সবাই নতুন জামা পরা মুখে কি যেন লেখা
মাথায় টুপির মতো কি যেন
অভ্র দেখে ওর বয়সি একটা ছেলে খুব সুন্দর একটা
পান্জাবি পড়ে আছে অভ্র ভাবে
-- ইশশশশ এই জামাটা যদি কিনবার পারতাম
বুকের ভিতর ধক করে ওঠে অভ্রর
ছোট্ট বোনটা তার জামার আবদার করেছে
ছোট্ট অভ্র নিজের ইচ্ছাটাকে পিচঢালা
রাস্তায় পিষে দিয়ে কাজ খুজতে চলে যায়
তবে ভাগ্যে আজ হয়ত কাজ নাই
কোথাও কাজ মেলেনা অভ্রর
সকাল ১১ টা..........
হতাশ হয়ে বোনের কাছে ফেরে অভ্র
দেখে ছোট্ট বোনটা তার পথের পাণে চেয়ে
আছে
ভাইকে দেখেই একদৌড়ে কাছে চলে আসে
নিশি
--বাই আমার জামা কিইইন্না দিবা না?
(নিশি)
-- হ দিমু চল (অভ্র)
নিশি ভাইয়ের আঙুলটা শক্ত করে ধরে রাস্তা
দিয়ে হেঁটে যায়
আর পথ দিয়ে যাওয়া ওর বয়সি ছোট্ট ছোট্ট
মেয়েদের দিকে তাকিয়ে ভাবে
-- ইশশশশ আমারো যদি ওদের মতো একখান জামা
থাকতো?
আজ বৈশাখের দিন........ প্রায় সব দোকানই বন্ধ
তবে ফুটাপাতের কয়েকটা দোকান খোলা
আছে
অভ্র নিশিকে নিয়ে সেদিকে ছোটে
-- কুন জামাডা নিবি দেখ? (অভ্র)
নিশি জামার দিকে তাকায় মনে ধরেনা
কোনটাই
অপরদোকানে যায়
হঠাৎই চিৎকার করে ওঠে নিশি
-- বাই ভাই ঐ লাল জামাটা আমার মেলা
বালা লাগছে (নিশি)
অভ্র তাকিয়ে দেখে মাথার উপরে একটা সুন্দর
কারুকাজ করা লাল ফ্রক
-- বাই আমারে এইহান কিইন্না দিবা? (নিশি)
-- চাচা ঐ লাল জামাডার দাম কত ? (অভ্র)
-- কুনডা ? (দোকানদার)
-- ঐ যে উপরেরডা (হাতের ইশারায় নিশি)
দোকানদার জামাটা নিচে নামায়
-- হ এইডা (নিশি)
-- এইডা খুব ভালা জামা (দোকানদার)
-- দাম কত? (অভ্র)
-- এইডা একদাম দুইশো রাখা যাইবো
(দোকানদার)
অভ্রর বুকটা ধক করে ওঠে....!
এহন এত ট্যেহা কই পাবো?
অনেকক্ষণ ভেবে নিশিকে বলে
-- বইন তুই এই দোকানডার পাশে বয় আমি আর কিছু
ট্যেহা নিয়ে আইতাছি
--আইচ্ছা বাই যাও (নিশি)
অভ্র একদৌড়ে সেখান থেকে চলে যায়
এতটাকা কই পাবে ভেবে পায়না অভ্র
তবে কি ভিক্ষা করবে ?
অভ্রর কেমন যেন লাগে
না খেয়ে থাকলেও কোনদিন হাত পাতেনি
তবে বোনটার এই একটা আবদার কি সে রাখতে
পারবেনা?
নাহ্ বোনডার জন্য আমার আইজ হাত পাতাই
লাগবো
নিজের কথা না ভেবে অবশেষে হাত পাতে
অভ্র
তবে মুখে কিছু বলতে পারেনা হয়ত লজ্জা হয়ত
আত্মসম্মানের জন্য
কারো দয়া হলে দিচ্ছে তবে বেশিরভাগই না
দুপুর গড়িয়ে গেছে.......
অভ্রর আর সহ্য হয়না ওদিকে বোনডারে সেই
সক্কালে বসাইয়া রেখে আসছে
দৌড়ে বোনডার কাছে চলে যায় অভ্র
দেখে ছোট্ট বোনডা তার হাটুর উপর মাথা
রেখে অধীর আগ্রহে তার পথ পাণেই চেয়ে
আছে
অভ্র নিশির হাতটা ধরে দোকানটার সামনে
আসে
-- চাচা ঐ জামাডা নামান তো (অভ্র)
-- জামা কি নিবা? (দোকানদার)
-- হ চাচা নিমু (অভ্র)
দোকানদার জামা টা নামায়
-- দাম কত? (অভ্র)
-- একদাম দুইশ ট্যেহা (দোকানদার)
-- কিছু কমান যায় না চাচা? (অভ্র)
-- কত দিবা তুমি কও (দোকানদার)
অভ্র ছেঁড়া হাফ প্যান্টের পকেট থেকে একমুঠ
খুচরা টাকা বের করে তারপর রাস্তায় রেখে
গুণতে শুরু করে
দশ...... পনের..... .তেইশ........ চল্লিশ....... সত্তর.........
একশো
এভাবে একশ তের টাকা হয়
অভ্র খুশি মনে দোকানদারকে বলে
-- চাচা একশ ট্যেহা দিবা এই জামাডা?
-- এত কম দামে দেওন যাইবো না আরো দাম কও
অভ্র কত বলবে ভেবে পায়না
-- চাচা একশ দশ ট্যেহা দিবেন এর বেশি আমি
আর পারুম না (অভ্র)
-- ধুর ব্যেটা এত কম দাম অয় নাকি আরো কও
(দোকানদার)
-- আমার কাছে মোট একশ তের ট্যেহাই আছে
(অভ্র)
-- ভাগ ব্যেটা ট্যেহা নাই জামা কিনতে
আইছে ফকিন্নি কোথাকার (দোকানদার)
-- চাচা দেননা জামাডা আমার বইনডার
মেলা পচন্দ অয়ছে জামাডা (অভ্র)
-- যা এহান থেইক্কা ট্যেহা নাই আবার জামা
কিনা লাগবো কে?(দোকানদার)
-- চাচা আফনে এই ট্যেহাডা রাহেন আমি পরে
শোধ করে দেবোনি তবুও জামাডা দেন (অভ্র)
-- ভাগ বলতেচি এহান থেকে
বলেই দোকানদার তাড়া করে অভ্রকে
ছোট্ট বোনটার হাত ধরে দৌড় দেয় অভ্র
-- বাই আমারে জামাডা কিইইইনা দিবা না?
(নিশি)
-- হ বইন দিমু তো
তুই একদম কষ্ট নেস না আমি তরে জামাডা
কিইইন্নাই দিমু
ছোট্ট নিশি ভাইটার কথায় স্বস্তি পায়
ভাবে ভাইটা ঠিক তারে ঐ লাল টুকটুকে
জামাটা কিইন্না দিবো
তবে ছোট্ট অভ্র জানে বাস্তবতা কি
তার বোনটার ছোট্ট একটা আবদার লাল
জামাটি হয়ত আর কখনোই কেনা হবেনা
অনেক চেষ্টা করেও অভ্র পারলোনা বোনটার
ছোট্ট ইচ্ছাটি পূরণ করতে
ছোট্ট নিশিটার ছোট্ট ইচ্ছাটি অপূর্ণ ই থেকে
গেল
ওদের গল্পটা শেষ হয়না....... এ গল্পের শেষ ও
হয়না....... পথশিশুদের গল্পের শেষ কখনোই হয়না
কারণ এরা এক একটা মহাকাব্য হয়
আচ্ছা অভ্র নিশিরা তো আমাদের মতোই মানুষ
আমাদের কারো ছেলেমেয়ের মতোই
তবে আমরা কি পারিনা এমন অভ্রর পাশে
দাড়াতে?
এমন নিশির ছোট্ট একটা আবদার পূরনের জন্য একটু
সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে?
আমরা অনেকেই এই একটা দিন পালনের জন্য
হাজার হাজার টাকার জামা কাপড় কিনেছি
যেগুলা আজ রাতের পর থেকেই বাতিল হয়ে
যাবে
কিন্তু সেই জামাটার দাম হয়ত হাজার টাকা
পরের বছর সেই জামাটা আমরা কেউই পরবো না
আর পথের ছোট্ট মেয়েটির লাল জামাটি কিছু
টাকার জন্য কেনা হলোনা
আমরা কি পারিনা ঐ মেয়েটাকে দুশো টাকা
দিয়ে জামা টা কিনে দিতে?
খুব কি বেশি টাকা?
খুব বেশি কিন্তু না
তবুও ঐ জামাটি পরে ছোট্ট নিশি যতটা খুশি
হতো হয়ত সেই খুশিটা পুরো পৃথিবী বেঁচলেও
হতো না
আচ্ছা আমরা অনেকেই তো আজ পরিবার বা
প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে বেড়াতে যাবো বলে
ঠিক করেছি
বাজেট টাও হয়ত করা হয়েগেছে
আচ্ছা সেই বাজেট থেকে কিছু টাকা কি
আমরা পথের সেই শিশুটাকে দিতে পারিনা
যে আজ দুই দিন না খাওয়া
আজকের একটা দিন প্রিয় মানুষটার সাথে পথের
একটা ছেলেকে একটা পোষাক কিনে দিন না
দেখবেন ওদের সেই হাসি কখন যে আপনার
হৃদয়টা ছুঁয়ে যাবে আপনি টের ও পাবেন না
আজ আমি আপনি একটা দিন পালন করতে হাজার
টাকা দামের ইলিশ মাছ কিনেছি
আমরা কি পারিনা সেই টাকা দিয়ে একটা
পথের পরিবারের একদিনের খাবার কিনে
দিতে
আপনি ভাবছেন,
একদিন দিলে কি হবে ওরা তো প্রতিদিনই না
খেয়ে থাকবে
আপনি বছরের একটা দিন হাসিখুশি কাটাতে
হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন
সেই টাকার কিছু অংশ দিয়ে ওদের সাথে সেই
খুশিটা ভাগ করে নিন না
ওরা হয়ত প্রতিদিন খেতে পাবে না তবে
আপনার জন্য যে ওরা একটা দিন খুব আনন্দে
কাটালো এটা সারাজীবনেও ভুলবে না
যে আনন্দটা আর কোথাও পাবেন না আপনি
মানুষ তো মানুষের জন্যই
আসুন না শুধু একটা দিন আমরা এই পথশিশুদের
পাশে দাড়াই
বৈশাখের আনন্দটা ওদের সাথে ভাগ করে নেই
অন্তত একটা বৈশাখ আমরা ওদের কে উপহার দেই
দেখবেন ওদের খুশিতে আপনি এই বৈশাখে
সবচেয়ে খুশি একজন হবেন
আসুন না একটা খুশির দিন আমরা পথশিশুদের
উপহার দেই........
"গল্পটা আমি সেই সব হাজারো পথশিশুদের জন্য
উৎস্বর্গ করলাম"

 

Users who are viewing this thread

Back
Top