#সংগ্রহিত ছোটগল্প
পলাশ আর মিতুর একটা ই মেয়ে, ফারাহ, চার বছর বয়স। পলাশ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর মিতু আপাতত গৃহিণী। আপাতত প্ল্যান ফারাহ কে এবছরে স্কুলে দিয়েই মিতু আবার চাকরি করবে। আগেই ইচ্ছে ছিলো,পারলোনা। ফারাহ টা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রথম দিকে খুব অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যেতো। আজ কানে ব্যথা তো কাল গলায়। টনসিলের ইনফেকশন তো লেগেই আছে। আবার মাসে একবার কাঁপিয়ে জ্বর,ডাক্তার বলতো ইউরিন ইনফেকশন।
প্রথমে ওরা শিশু চিকিৎসকের কাছেই যেতো। কিন্তু হাই ফিভারেও তিনি কোন এন্টিবায়োটিক দিলেন না। বললেন,শুধু প্যারাসিটামল খাইয়ে যেতে,সাথে শরীর মুছে দেওয়া। এটা ভাইরাল জ্বর,বাচ্চা যেহেতু হাসিখুশি..ভয় নেই।
রাতে বাচ্চার একবার লুজ মোশন হলো,দেড় বছর বয়স তখন।দুধ খেতে চাইছিলো না একদম ই,মিতু ধরেই নিলো এটা পেট খারাপের জন্য ই। রাতেই পলাশ কে ফার্মেসি তে পাঠালো..ফলাফল,ফ্লাজিল সিরাপ। কোন ওরস্যালাইন ই খাওয়ালোনা,পরদিন লুজ মোশন কন্ট্রোল হলো ঠিক ই,কিন্তু ফারাহ বিছানাতেই পড়ে রইলো সারাদিন।
এরপর থেকে ঠান্ডা লাগলেই নাক-কান-গলার ডাক্তার,ইউরিন ইনফেকশন হলে আরেক শিশু ডাক্তার। এন্টিবায়োটিকে একদিনে জ্বর না সারলেই,অন্য ডাক্তার!! এভাবেই চলছিলো..
পলাশ ব্যস্ত থাকলে মিতু আর যেতোনা ফারাহ কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে,আগের প্রেসক্রিপশন গুলো তো আছেই!! সেই ডাইরিয়া তে ফ্লাজিল সিরাপ,ঠান্ডা লাগলেই সেফিকজিম,সেফুরোক্সিম,কিংবা এজিথ্রোমাইসিন!
গেলো সপ্তাহে চার বছর হলো ফারাহর। পরশু রাত থেকে হাই ফিভার,মিতু-পলাশ এজিথ্রোমাইসিন সিরাপ দিচ্ছে প্রথম দিন থেকেই। এমনিতে ওর জ্বর কমে যায় পরদিন ই,এবার একদম ই কমছেনা। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে বারবার। রাতে ফার্মেসি তে গেলো পলাশ,দোকানদার সেফিক্সিম টাও এড করে দিলো। কিন্তু পরদিন ই জ্বর কমলোনা। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো ভোরে..
ভয়ে এবার ওরা কাছাকাছি যে প্রাইভেট ক্লিনিক আছে,সেখানে নিয়ে গেলো। ডিউটি ডাক্তার দেখলেন,বাচ্চার গায়ে র্যাশ..PICU লাগতে পারে। সাথে সাথে কাউন্সেলিং করলেন পলাশ-মিতু কে। সেপটিসেমিয়া..ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে। এখুনি বড় হাসপাতালে নিতে হবে,যেখানে ব্লাড টেস্ট করা যাবে,আর বাকি পরীক্ষাও!!
এম্বুলেন্সে ফারাহর হাত ধরে বসে আছে পলাশ। মিতু কাঁদছে!! বুঝতেই পারছেনা,দুদিনের জ্বরে কেন এমন হলো..
দেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হাসপাতালে ফারাহ কে ভর্তি করা হলো। IV antibiotic শুরু করা হলো। সব রকম পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হলো রক্ত,ইউরিন..কিছু রিপোর্ট এখন,কিছু কাল সকালে, কিছু তিন দিন পর।
ফারাহ কে দেখতে পরদিন এলেন,সেই শিশু বিশেষজ্ঞ ই,যিনি একদম প্রথমে ফারাহর চিকিৎসা করেছিলেন।
মিতু এগিয়ে গিয়ে বললো,ফারাহ ওনার আগের পেশেন্ট। উনি ড্রাগ হিস্ট্রি নিলেন। বারবার মাথা নাড়লেন ডানে,বামে..ফারাহর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
ডিউটি ডাক্তার কে ডেকে বললেন,
"I need culture reports as early as possible.আর এটা সেপটিসেমিয়া..broad spectrum antibiotic লাগবে।"
ডিউটি ডাক্তার জানালো..
"স্যার,অলরেডি দিয়েছি। কাজ হচ্ছেনা মে বি। "
"কালচার রিপোর্ট দেখে চেঞ্জ করো,সেনসেটিভ কোন এন্টিবায়োটিক, তারপর চেঞ্জ করো,আমাকে জানাবে তার আগে।"
ফারাহর অবস্থা পরের দুদিন একই রইলো। ডাক্তার রা তাদের আবার বুঝিয়ে গেলেন,কি সব DIC,septisemia..এত কিছু তারা তো বুঝতেও পারছেনা! ইউরিন আউটপুট বেশি না,শ্বাসকষ্ট টাও আছে।
পরদিন তাদের রুমে ডাকলেন স্যার..
"ফারাহর রিপোর্ট এসছে। ইউরিন এন্ড ব্লাড কালচার। ওর ইউরিন ইনফেকশন ছিলো,জীবাণুও ধরা পড়েছে। মোস্ট কমন কালপ্রিট জীবাণু টা দিয়েই..কিন্তু এবার আপনারা বলেন,আমি ওকে কোন এন্টিবায়োটিক টা দিবো?"
"মানে?"পলাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
"মানে,এখানে যতগুলো এন্টিবায়োটিক আছে,সব রেজিস্ট্যান্ট ওর শরীরে।মানে এগুলো কাজ করবেনা"
"কেন? এমন কেন হবে?"
"কারণ,আপনারা ওকে ইচ্ছে মতো এন্টিবায়োটিক দিয়েছেন। হয়তো কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন,কখনো ওষুধের দোকানদারের। "
কাঁদছে মিতু...
"সমস্যা কি জানেন,আমরা যার কাজ,সেটা তাকে করতে দেইনা। আজ আপনার অফিসের কাজ আমি করছিনা,আমাদের কাজ তো মানুষের জীবন নিয়ে,সেটা তো আমাদের করতে দিন। আর যদি শিক্ষিত হয়েও ডাক্তার আর ফার্মাসিস্টের পার্থক্য না বোঝেন,সরি..সেই শিক্ষা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে..
আমি আপনার মেয়ে কে বাঁচাতে চাইছি,কিন্তু তাকে তো আপনারাই মেরে ফেলছেন!! আমার হাতে কি ই বা রেখেছেন।যাই,চেষ্টা টুকু করি।
জানেন কিনা জানিনা,আমরা চিকিৎসক রা এত সহজে হার মেনে নেইনা"
পলাশ আর মিতুর একটা ই মেয়ে, ফারাহ, চার বছর বয়স। পলাশ পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার আর মিতু আপাতত গৃহিণী। আপাতত প্ল্যান ফারাহ কে এবছরে স্কুলে দিয়েই মিতু আবার চাকরি করবে। আগেই ইচ্ছে ছিলো,পারলোনা। ফারাহ টা প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
প্রথম দিকে খুব অল্পতেই ঠান্ডা লেগে যেতো। আজ কানে ব্যথা তো কাল গলায়। টনসিলের ইনফেকশন তো লেগেই আছে। আবার মাসে একবার কাঁপিয়ে জ্বর,ডাক্তার বলতো ইউরিন ইনফেকশন।
প্রথমে ওরা শিশু চিকিৎসকের কাছেই যেতো। কিন্তু হাই ফিভারেও তিনি কোন এন্টিবায়োটিক দিলেন না। বললেন,শুধু প্যারাসিটামল খাইয়ে যেতে,সাথে শরীর মুছে দেওয়া। এটা ভাইরাল জ্বর,বাচ্চা যেহেতু হাসিখুশি..ভয় নেই।
রাতে বাচ্চার একবার লুজ মোশন হলো,দেড় বছর বয়স তখন।দুধ খেতে চাইছিলো না একদম ই,মিতু ধরেই নিলো এটা পেট খারাপের জন্য ই। রাতেই পলাশ কে ফার্মেসি তে পাঠালো..ফলাফল,ফ্লাজিল সিরাপ। কোন ওরস্যালাইন ই খাওয়ালোনা,পরদিন লুজ মোশন কন্ট্রোল হলো ঠিক ই,কিন্তু ফারাহ বিছানাতেই পড়ে রইলো সারাদিন।
এরপর থেকে ঠান্ডা লাগলেই নাক-কান-গলার ডাক্তার,ইউরিন ইনফেকশন হলে আরেক শিশু ডাক্তার। এন্টিবায়োটিকে একদিনে জ্বর না সারলেই,অন্য ডাক্তার!! এভাবেই চলছিলো..
পলাশ ব্যস্ত থাকলে মিতু আর যেতোনা ফারাহ কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে,আগের প্রেসক্রিপশন গুলো তো আছেই!! সেই ডাইরিয়া তে ফ্লাজিল সিরাপ,ঠান্ডা লাগলেই সেফিকজিম,সেফুরোক্সিম,কিংবা এজিথ্রোমাইসিন!
গেলো সপ্তাহে চার বছর হলো ফারাহর। পরশু রাত থেকে হাই ফিভার,মিতু-পলাশ এজিথ্রোমাইসিন সিরাপ দিচ্ছে প্রথম দিন থেকেই। এমনিতে ওর জ্বর কমে যায় পরদিন ই,এবার একদম ই কমছেনা। কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসছে বারবার। রাতে ফার্মেসি তে গেলো পলাশ,দোকানদার সেফিক্সিম টাও এড করে দিলো। কিন্তু পরদিন ই জ্বর কমলোনা। শ্বাসকষ্ট শুরু হলো ভোরে..
ভয়ে এবার ওরা কাছাকাছি যে প্রাইভেট ক্লিনিক আছে,সেখানে নিয়ে গেলো। ডিউটি ডাক্তার দেখলেন,বাচ্চার গায়ে র্যাশ..PICU লাগতে পারে। সাথে সাথে কাউন্সেলিং করলেন পলাশ-মিতু কে। সেপটিসেমিয়া..ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়েছে। এখুনি বড় হাসপাতালে নিতে হবে,যেখানে ব্লাড টেস্ট করা যাবে,আর বাকি পরীক্ষাও!!
এম্বুলেন্সে ফারাহর হাত ধরে বসে আছে পলাশ। মিতু কাঁদছে!! বুঝতেই পারছেনা,দুদিনের জ্বরে কেন এমন হলো..
দেশের সবচেয়ে বড় প্রাইভেট হাসপাতালে ফারাহ কে ভর্তি করা হলো। IV antibiotic শুরু করা হলো। সব রকম পরীক্ষার জন্যে পাঠানো হলো রক্ত,ইউরিন..কিছু রিপোর্ট এখন,কিছু কাল সকালে, কিছু তিন দিন পর।
ফারাহ কে দেখতে পরদিন এলেন,সেই শিশু বিশেষজ্ঞ ই,যিনি একদম প্রথমে ফারাহর চিকিৎসা করেছিলেন।
মিতু এগিয়ে গিয়ে বললো,ফারাহ ওনার আগের পেশেন্ট। উনি ড্রাগ হিস্ট্রি নিলেন। বারবার মাথা নাড়লেন ডানে,বামে..ফারাহর দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন।
ডিউটি ডাক্তার কে ডেকে বললেন,
"I need culture reports as early as possible.আর এটা সেপটিসেমিয়া..broad spectrum antibiotic লাগবে।"
ডিউটি ডাক্তার জানালো..
"স্যার,অলরেডি দিয়েছি। কাজ হচ্ছেনা মে বি। "
"কালচার রিপোর্ট দেখে চেঞ্জ করো,সেনসেটিভ কোন এন্টিবায়োটিক, তারপর চেঞ্জ করো,আমাকে জানাবে তার আগে।"
ফারাহর অবস্থা পরের দুদিন একই রইলো। ডাক্তার রা তাদের আবার বুঝিয়ে গেলেন,কি সব DIC,septisemia..এত কিছু তারা তো বুঝতেও পারছেনা! ইউরিন আউটপুট বেশি না,শ্বাসকষ্ট টাও আছে।
পরদিন তাদের রুমে ডাকলেন স্যার..
"ফারাহর রিপোর্ট এসছে। ইউরিন এন্ড ব্লাড কালচার। ওর ইউরিন ইনফেকশন ছিলো,জীবাণুও ধরা পড়েছে। মোস্ট কমন কালপ্রিট জীবাণু টা দিয়েই..কিন্তু এবার আপনারা বলেন,আমি ওকে কোন এন্টিবায়োটিক টা দিবো?"
"মানে?"পলাশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
"মানে,এখানে যতগুলো এন্টিবায়োটিক আছে,সব রেজিস্ট্যান্ট ওর শরীরে।মানে এগুলো কাজ করবেনা"
"কেন? এমন কেন হবে?"
"কারণ,আপনারা ওকে ইচ্ছে মতো এন্টিবায়োটিক দিয়েছেন। হয়তো কখনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়েছেন,কখনো ওষুধের দোকানদারের। "
কাঁদছে মিতু...
"সমস্যা কি জানেন,আমরা যার কাজ,সেটা তাকে করতে দেইনা। আজ আপনার অফিসের কাজ আমি করছিনা,আমাদের কাজ তো মানুষের জীবন নিয়ে,সেটা তো আমাদের করতে দিন। আর যদি শিক্ষিত হয়েও ডাক্তার আর ফার্মাসিস্টের পার্থক্য না বোঝেন,সরি..সেই শিক্ষা নিয়ে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে..
আমি আপনার মেয়ে কে বাঁচাতে চাইছি,কিন্তু তাকে তো আপনারাই মেরে ফেলছেন!! আমার হাতে কি ই বা রেখেছেন।যাই,চেষ্টা টুকু করি।
জানেন কিনা জানিনা,আমরা চিকিৎসক রা এত সহজে হার মেনে নেইনা"