অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড বলা হয় মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ড এর শুরুর সময়কে যার স্থায়িত্ব ছিল ৫ম শতক থেকে ১১ শতক পর্যন্ত, রোমান ব্রিটেন এর পতন থেকে ১০৬৬ সালের নরম্যান কনকুয়েস্ট পর্যন্ত। অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্য বলতে সেই সময়কার সাহিত্যকে বুঝানো হয় যখন ব্রিটেনে ৬০০ বছর অ্যাংলো-স্যাক্সন যুগের রাজত্ব চলছিল। সাহিত্যের এই পর্যায়ে রচিত হয়েছিল মহাকাব্য, সাধুদের জীবনী, প্রচার বানী, বাইবেল এর অনুবাদ, আইন সম্পর্কিত রচনা, ইতিহাস, ধাঁধা এবং আরও অনেক ধরনের রচনা। আর এই সময়ের রচনাগুলোর মধ্যে প্রায় ৪০০ টি পুরাণ অক্ষত রয়েছে যা আগ্রহের এবং গবেষণার বিষয় হিসেবে জনপ্রিয়।
এই যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রচনার মধ্যে বেউলফ অন্যতম, যা ব্রিটেনের জাতীয় মহাকাব্য হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। অ্যাংলো-স্যাক্সন ক্রনিকাল হল ইংল্যান্ড এর প্রাচীন ইতিহাসের সংকলন এবং ৭ম শতকে রচিত ক্যাডমন্স হিম হল ইংরেজিতে রচিত লিখিত লিপির মধ্যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং অক্ষত লিপি। অ্যাংলো-স্যাক্সন সময়ে রচিত সাহিত্যগুলোর উপর ভিন্ন ভিন্ন সময়ে গবেষণা চালানো হয়েছে- ১৯ এবং ২০ শতকে গবেষণা ছিল ইংরেজিতে জার্মান ভাষার অস্তিত্বের উপর যা পরবর্তীতে সাহিত্যে ধাবিত হয়, আর বর্তমানে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিণত হয়েছে সে সময়ের প্রাচীন লিপি-বিজ্ঞান সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো, পাণ্ডুলিপির রচয়িতা, রচনার সময়, স্থান এবং এই পাণ্ডুলিপিগুলোর সাথে অ্যাংলো-স্যাক্সন সময়ের ও মধ্যযুগীয় ইংল্যান্ড এর কোন সংযোগ ছিল কিনা সে বিষয়গুলো।
বেউলফ এর প্রথম পৃষ্ঠা
অ্যাংলো-স্যাক্সন সময়ের যে সকল পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই লেখা হয়েছিল প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের শেষ তিন শতাব্দীতে (৯ম থেকে ১১তম শতাব্দী), যার মধ্যে প্রাচীন ইংরেজি এবং ল্যাটিন উভয় ভাষায় রচিত নমুনা পাওয়া যায়। প্রাচীন ইংরেজির লিখিত রূপ ব্যবহার করা শুরু হয়েছিল ডেনিশদের আক্রমণের পর প্রয়োজন হিসেবে। ল্যাটিন ভাষা চর্চার অভ্যাস কমে যাওয়ার কারণে চার্চের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লেখা কেউ পড়তে পারছিলনা। আর এই কারণে তাদের মধ্যে উদ্বিগ্নতা সৃষ্টি হয়েছিল। অনুরূপভাবে রাজা আলফ্রেড (৮৪৯ সাল-৮৯৯সাল) সচেষ্ট ছিলেন ইংরেজি সংস্কৃতির প্রসার এবং পুনরুদ্ধারে। রাজা আলফ্রেড উপলব্ধি করেছিলেন যে, খুব কম মানুষই ল্যাটিন ভাষায় পারদর্শী ছিল আর বেশিরভাগ মানুষ প্রাচীন ইংরেজিতে পড়তে পারত। তাই রাজা প্রস্তাব করলেন সকল শিক্ষার্থীদের প্রাচীন ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা প্রদানের জন্য আর ল্যাটিন ভাষা ছিল তাদের জন্য যারা সেই ভাষায় পারদর্শী ছিল।
একারণে প্রাচীন ইংরেজি ভাষার সেই লেখাগুলোই এখনও আছে যেগুলো শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।
প্রাচীন ইংরেজিতে লেখা প্রায় ৪০০ টি রচনার মধ্যে ১৮৯ টি রচনাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরে নেয়া হয়। এই রচনাগুলো তাদের ঐতিহাসিক মান এবং অনিন্দ্য রচনাশিল্পের কারণে ১৬শ শতাব্দী থেকেই সংগ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান। যদিও সবগুলো লেখাকে সাহিত্যের কাতারে ফেলা যায় না।
যে লেখাগুলোকে মোটামুটি সাহিত্য হিসেবে ধরে নেয়া যায় সেগুলো হল- ধর্মীয় উপদেশ; সাধুদের জীবনী; বাইবেলের অনুবাদ; চার্চের পুরোহিতদের ল্যাটিন থেকে প্রাচীন ইংরেজিতে অনুবাদ; অ্যাংলো-স্যাক্সন ইতিহাস; উইল এবং অন্যান্য আইন সংক্রান্ত লেখা; ব্যাকরণ, ভূগোল এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সংক্রান্ত লেখা; এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সে সময়ে রচিত কাব্য।
জুনিয়াস পাণ্ডুলিপির পৃষ্ঠায় অংকিত চিত্র
কয়েকজন ছাড়া প্রায় সকল অ্যাংলো-স্যাক্সন লেখকের নাম ইতিহাসে উল্লেখ করা নেই। বিংশ শতাব্দীতে গবেষণায় গুরুত্ব দেয়া হয়েছিল প্রাপ্ত পাণ্ডুলিপিগুলোর রচনাকাল এবং রচনা স্থল চিহ্নিত করার উপর। গবেষণায় প্রধান ৭ টি স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে সাহিত্যগুলো রচিত হয়েছিল-, এক্সটার, ওরচেস্টার, অ্যাবিংডন, ডুরহাম এবং ক্যানটারবারিতে অবস্থিত ক্রিস্ট চার্চ ও সেইন্ট আগস্টিন। যে পরিভাষাগুলো ব্যবহৃত হয়েছিল সেগুলো হল- নর্দামব্রিয়াম, মার্সিয়ান, কেন্টিস এবং ওয়েস্ট স্যাক্সন।
অ্যাংলো-স্যাক্সন কাব্য
অ্যাংলো-স্যাক্সন কবিতাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- হিরোয়িক জার্মানিক প্রি-ক্রিস্টিয়ান এবং ক্রিস্টিয়ান। খুঁজে পাওয়া প্রধান ৪ টি পাণ্ডুলিপির বেশিরভাগ অংশে প্রাচীন ইংরেজি কাব্যগুলো এখনও টিকে আছে। এই ৪ টি পাণ্ডুলিপিতে প্রাপ্ত প্রাচীন ইংরেজি কাব্য সমূহ নিম্নরূপ-
- জুনিয়াস পাণ্ডুলিপি
- এক্সিটার গ্রন্থ
- ভার্সেলি গ্রন্থ
- নোওয়েল কোডেক্স
জুনিয়াস পাণ্ডুলিপি অথবা কেডমন পাণ্ডুলিপিতে আছে বাইবেলের বিভিন্ন কাহিনীর সচিত্র পদ্য সংস্করণ, এক্সিটার গ্রন্থ হল ১১শ শতাব্দীতে এক্সিটার ক্যাথিড্রাল কে দান করা একটি কাব্য সংকলন, ভার্সেলি গ্রন্থ হল গদ্য এবং পদ্যের মিশ্র সংকলন (ভার্সেলিতে এই গ্রন্থের খুঁজে পাওয়ার ঘটনা এখনও অজানা এবং বিতর্কিত), এবং সর্বশেষ পাণ্ডুলিপি হল নোওয়েল কোডেক্স যা ভার্সেলি গ্রন্থের মতই আরেকটি গদ্য-পদ্য সংকলন।
প্রাচীন ইংরেজি কাব্য রচনায় বিশেষ কোন রীতি বা সিস্টেম অনুসরণ করার কোন তথ্য পাওয়া যায় নি, এবং এখন পর্যন্ত যা কিছু জানা গেছে তার সবই বের করা হয়েছে বর্তমান যুগের বিশ্লেষণের পরিপ্রেক্ষিতে। তবে সর্বপ্রথম যে তত্ত্ব সর্বস্তরে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে তা হল এডওয়ার্ড সিয়েভার এর তত্ত্ব যেখানে তিনি প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের ৫ টি ভিন্ন ভিন্ন নমুনার বিবরণ দেন। এই নমুনাগুলো প্রদত্ত হয় নমুনার ভাষা, অনুপ্রাস, স্বরবর্ণের ব্যবহার এবং পদাংশ বিভাজনের ভিত্তিতে। এই সিস্টেম অনুকরণ করা হয়েছিল প্রাচীন জার্মান ভাষায় প্রচলিত লেখনীর ধরন থেকে যার ফলে একে প্রাচীন জার্মান ভাষা সাহিত্যের অংশ হিসেবেও ধরা যায়।
প্রাচীন ইংরেজিতে সাহিত্য মূলত প্রচলিত ছিল মৌখিক শিল্প হিসেবে। আর এ কারণে যে লিখিত রূপ গুলো পাওয়া গেছে তার বেশিরভাগই অসম্পূর্ণ। কবিতাগুলো থেকে প্রাচীন ইংরেজি সাহিত্যের ব্যাপারে যে ধারণা পাওয়া যায় তা মূল অ্যাংলো-স্যাক্সন সাহিত্যের থেকে খুবই সামান্য। যেহেতু মৌখিকরূপের প্রচলন ছিল, সেহেতু অনেক মূল্যবান কিছু কাব্য সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি।