What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি' শ্লোগানে উৎসবের রং চারুকলায় (1 Viewer)

Status
Not open for further replies.

Nirjonmela

Administrator
Staff member
Administrator
Joined
Mar 1, 2018
Threads
2,763
Messages
23,288
Credits
826,885
Pistol
Crown
Thread Title Style (One)
Profile Music
9AQrSan.gif


মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা…। অগ্নিস্নানে শুচি হওয়ার সেই সময় আসন্ন প্রায়। যেটুকু বাকি, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে। আর তারপর পহেলা বৈশাখ। হ্যাঁ, অসাম্প্রদায়িক বাঙালির সবচেয়ে বড় আর বর্ণাঢ্য উৎসব পহেলা বৈশাখ। এ কারণে প্রস্তুতি পর্বটাও হয় দীর্ঘ। সারা দেশজুড়ে চলে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ শুরু করেছিল ১৯৮৯ সালে। এখান থেকেই পহেলা বৈশাখ সকালে বের করা হয় অত্যন্ত আকর্ষণীয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রাকে সামনে রেখে এবারো সরব হয়ে উঠেছে চারুকলার ক্যাম্পাস। প্রতি বছর যে সময়ে শোভাযাত্রা শুরু হয়, এবার তারও আগে। ছবি এঁকে প্রস্তুতি পর্বের উদ্বোধন করেন বরেণ্য শিল্পী রনবী ও মনিরুল ইসলাম। তখন থেকেই মুখরিত গোটা ক্যাম্পাস। হাসিরাশি আনন্দ হৈহুল্লোড় জানিয়ে দেয়, বৈশাখ আসন্ন।

গতকাল মঙ্গলবার চৈত্রের দুপুরে চারুকলা অনুষদে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গাছগুলো ঝিমুচ্ছে। কয়েক পা এগুতেই ভেতরে অন্য রকম উৎসব। ছবি আঁকাআঁকি। জয়নুল গ্যালারির সামনের খোলা জায়গাটি বেশ জমজমাট। এক পাশে বিক্রি হচ্ছে নানা শিল্পকর্ম। অন্য পাশে টেবিলে ছড়িয়ে আছে রং। শোভাযাত্রার ব্যয় মেটাতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা টেবিলে ছড়িয়ে দিয়েছে রংয়ের কৌটা। সেগুলো থেকে রং তুলে চলছিল চিত্রকর্ম সৃজন। বাম পাশের টেবিলে বিভিন্ন মাপের ক্যানভাসে কেউ আঁকছে প্রকৃতির রূপ, লাল-সবুজের পতাকা, কেউ আঁকছে রাজারানী, প্যাঁচা, নারীর মুখ, ফুল, পাখি, হাতি ইত্যাদি। এর দায়িত্বে রয়েছেন বিশতম ব্যাচের শিক্ষার্থী অন্তরা মেহেরুন আজাদ। তিনি ভোরের কাগজকে বলেন, এটা আমরা অনুশীলন হিসেবে নিচ্ছি। আঁকার অনুশীলন আমাদের সব সময়ে চলে। তবে বৈশাখ উপলক্ষে সবারই ইচ্ছা হয় নতুন ও আকর্ষণীয় কিছু আঁকতে। যেহেতু এটা শৈল্পিক বিষয়। তাই আগে থেকেই সময় নিয়ে শুরু করেছি। প্রতিবারের মতো এবারো মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে।

তিনি বলেন, উৎসবকে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে প্রাণের আনন্দে আমরা রং-তুলি হাতে এখানে দাঁড়িয়েছি। মূলত আমরা এক্রেলিক আর জল রং নিয়ে কাজ করছি। এই কদিনে প্রায় চারশ ছবি আঁকা হয়ে গেছে। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে, নতুন নতুন ছবিও এর সঙ্গে যোগ হচ্ছে। এসব ছবি ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রিলব্ধ টাকায় উৎসবের আয়োজনের খরচ মেটানো হচ্ছে।

আয়োজন উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ও বিশিষ্ট কার্টুনিস্ট শিশির ভট্টাচার্য বলেন, পহেলা বৈশাখ উদযাপন আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। সারা দেশেই এ উপলক্ষে উৎসবের আয়োজন করা হয়। চারুকলা অনুষদ প্রতি বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন করে। আমরা শিল্পীরা এর সঙ্গে বহুকাল ধরে একাত্ম হয়ে আছি। এক সময় এত বড় কাজ করতে হিমশিম খেতে হতো। এখন চারুকলার ছাত্র বেশি। শিক্ষক বেশি। কাজটি আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। এর পরও প্রচুর শ্রম ঘাম দিতে হয়। কিন্তু অনেকেই এ তথ্য জানেন না। তারা কেবল মঙ্গল শোভাযাত্রার বর্ণাঢ্য রূপটি দেখেন। কীভাবে এত বড় কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয় সে বিষয়ে জানলে সবাই আরো বিস্মিত হবেন। তিনি জানান, বরাবরের মতো বাংলার লোকজ সংস্কৃতির সব অনুষঙ্গই যুক্ত হবে নববর্ষ উদযাপনের এ আয়োজনে। তবে এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার শ্লোগান হচ্ছে 'মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি'।

আয়োজন সম্পর্কে চারুকলার ডিন ও শিল্পী নিসার হোসেন জানান, যতদিন যাচ্ছে আয়োজনটি তত বড় হচ্ছে। এ কারণেই সময় একটু এগিয়ে আনা হয়েছে। পহেলা বৈশাখের আগের রাত পর্যন্ত এখানে ৫ শতাধিক বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী কাজ করবে। ছাত্র-শিক্ষক সবাই মিলে ছবি আঁকবেন। সরাচিত্র হবে। মাটির পুতুল, পাখি, মুখোশ ইত্যাদিতে ভরে উঠবে চারুকলা। লোকজ ঐতিহ্যের স্মারকগুলো বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়েই আয়োজন করা হবে মঙ্গল শোভাযাত্রার।

এবারের আয়োজনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে চারুকলার ২০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। তাদেরই একজন ভাস্কর্য বিভাগের পাপন কর্মকার জানান, প্রথম দিনটি ছবি আঁকার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে সরাচিত্র, মুখোশ, স্ট্রাকচার বানানোর কাজ। সপ্তাহখানেকের মধ্যেই মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল অনুষঙ্গ স্ট্রাকচার নির্মাণ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে ইনস্টিটিউটে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, প্রস্তুতি কার্যক্রমের সঙ্গে আটটি বিভাগের শিক্ষার্থী কাজ করছেন। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরুর আগেই বৈশাখের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নববর্ষের মাসখানেক আগেই যেন এখানে হাজির হয়েছে পয়লা বৈশাখ। বাঙালির প্রাণের উৎসবকে বরণ করতে সচল হয়েছে শিল্পীর রং-তুলির আঁচড়। ছড়িয়েছে প্রাণে দোলা দেয়া ঢাক-ঢোল। এবারো অনুষদের চারুশিক্ষার্থী ও শিক্ষক শিল্পীদের নিবিড় প্রয়াসে বের হবে এই শোভাযাত্রা। অশুভকে হটিয়ে মঙ্গলালোকে সিক্ত হবে লাল-সবুজের বাংলাদেশ।

প্রসঙ্গত, বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া চারুকলা অনুষদের মঙ্গল শোভাযাত্রাটি প্রথম ১৯৮৯ সালে বের হয়। প্রথম বছরে নববর্ষ উৎসব উদযাপনকারীদের নজর কেড়ে নেয় এ আনন্দ শোভাযাত্রা। প্রথম শোভাযাত্রায় ঠাঁই পায় পাপেট, ঘোড়া ও হাতির শিল্পকাঠামো। পরের বছরে চারুকলার সামনে থেকে আনন্দ শোভাযাত্রা বের হয়। এ শোভাযাত্রায়ও নানা ধরনের শিল্পকর্মের প্রতিকৃতি স্থান পায়। এরপর থেকে এটা বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য অনুষঙ্গ হয়ে ওঠে। ১৯৯৬ সাল থেকে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রার নাম বদলে পরিণত হয় মঙ্গল শোভাযাত্রায়। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইউনেস্কো এ শোভাযাত্রাকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মর্যাদা দেয়।
 
Status
Not open for further replies.

Users who are viewing this thread

Back
Top