What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

কত্থক: গল্পের নৃত্য রূপ (2 Viewers)

Starling

Board Senior Member
Elite Leader
Joined
Mar 7, 2018
Threads
775
Messages
12,015
Credits
220,609
Recipe wine
Kaaba
Profile Music
Birthday Cake
JEvMSMF.jpg


"বিনোদন" মানব জীবনের এমন একটি চাহিদা বা চালনা শক্তি যাকে আমরা তেমন প্রাধান্য দেই না। কিন্তু আজ পর্যন্ত যতগুলো মানব সভ্যতার নিদর্শন আমরা পেয়েছি, তাদের সংস্কৃতির অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে পেয়েছি নিজ নিজ সভ্যতার বিনোদনের মাধ্যম। বিনোদনের প্রভাব হয়তো আমরা সবসময় প্রত্যক্ষ ভাবে দেখি না কিন্তু সূক্ষ এবং গভীর পরোক্ষ প্রভাব অস্বীকার করার মতন না। বিনোদনের ইতিহাস অনেক পুরাতন, আজ আমরা বিনোদনের যে বিকশিত রূপ দেখি এক সময় এমনটি ছিলনা। ইতিহাসের পাতায় গল্প বলাকেই দেখা যায় অন্যতম আদি এবং জনপ্রিয় বিনোদন মাধ্যম হিসেবে। আমাদের উপমহাদেশে এই গল্প বলার সাথে যুক্ত হয় নৃত্য কলা। নৃত্য আর গল্প এই দুই মিলে জন্মদেয় এক অনন্য নৃত্যের শাখা "কত্থক"।

6PqNfJZ.jpg


কত্থক শব্দটি এসেছে বৈদিক সংস্কৃত শব্দ কথা থেকে যার অর্থ "গল্প", এবং সংস্কৃততে কথাকার শব্দটির অর্থ হচ্ছে "যিনি গল্প বলেন" বা "গল্পের সাথে কাজ করা"। নৃত্যের চলে গল্প বলা হতো বলেই প্রারাচীন উপমহাদেশীয় কত্থক শিল্পীরা কথাকার নামেই পরিচিত ছিলেন। মেরি স্নোডগ্রাসের মতে, ভারতবর্ষের কত্থক নৃত্য কলার অস্তিত্ব ৪০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে পাওয়া যায়। কত্থক সম্পর্কে পাওয়া যায় প্রাচীন ভারতীয় লিপি "নাট্য শাস্ত্র"এ। তা ছাড়াও প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন সাহিত্য কর্মে কত্থকের উল্লেখ পাওয়া যায়।

ভারতের বেনারসে এই কত্থকে জন্ম বলে ধারনা করা হয়। ধীরে ধীরে গল্প বলার এই অভিনব কায়দা লখনোউ থেকে জয়পুর এবং উত্তর-পশ্চিম ভারত পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়। মধ্যযুগের শুরুর দিক পর্যন্ত কত্থক অধিকাংশে বন্দনা হিসেবেই ব্যবহৃত হতো। মধ্যযুগের অনন্য সাহিত্য নিদর্শন "শ্রী কৃষ্ণ কীর্তন" ব্যক্ত করার মাধ্যম ছিলো কত্থক। সেই সূত্র ধরেই আজো কত্থকে রাধা-কৃষ্ণের রাসলীলার প্রভাবের দেখা মিলে। তখন কত্থকে মেয়েদের পোষাক হিসেবে ছিলো ঘাগড়া-চোলি আর ঘোমটা দিয়ে ওড়না, আর ছেলেরা সাধারনত খালি গায়ে কেবল ধুতি পড়েই এই নাচ প্রদর্শন করতো। কেবল মাত্র বন্দনায় ব্যবহৃত হয়ার কারনে এই শিল্প ধিরে দিরে ম্লান হতে থাকে। কিন্তু এর সুন্দর্য এবং সাবলীল গল্প বলার ভঙ্গি ছিলো সর্বদা উজ্জ্বল।

D4BPiHr.jpg


চতুর্দশ শতকে মোঘল আমলে কত্থক প্রাণ ফিরে পায়। এতোকাল গল্প বলার এই কায়দা ধর্মীয় বন্দনার মাধ্যম রূপে চর্চা হয়ে আসছিল, মোঘল রাজ দর্বারে এর স্থান হয় বিনোদন মাধ্যম হিসেবে। ততকালীন নিন্ম আয়ের গোষ্টিরা রাজ দর্বারে কত্থক প্রদর্শন করতেন। এই সময়ে কত্থকে কিছুটা পরিবর্তন আসে। এ সময় কত্থক নৃত্যের উন্নতি সাধিত হয়। শিল্পীরা নতুন নতুন চিন্তায় কত্থক নৃত্যকে নব নব ভঙ্গি ও রসে বিকশিত করে তোলেন। প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞরা যেমন রাগসঙ্গীতকে সমৃদ্ধ করেছেন, তেমনি কত্থক শিল্পীরাও নতুন উদ্দীপনায় নৃত্যের আঙ্গিকে পরিবর্তন আনেন।

1MOJUFX.png


ড্রিড উইলিয়াম এর "Anthropology and the Dance" গ্রন্থ মতে আধুনিক কত্থকের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি অংশ ততকার, টুকরা এবং চক্কর মোঘল আমলেই কত্থকের সাথে যুক্ত হয়। ধিরে ধিরে কত্থক রাধা কৃষ্ণের রাসলীলা থেকে সরে এসে উচ্চাঙ্গসংগীত এবং বাদ্যযন্ত্র ভিত্তিক হতে থাকে। এসময় পোষাকেও আসে আমূল পরিবর্তন। পারস্য ধাচের পোশাকের ব্যবহার শুরু হয় এই সময়েই, এসময় ছেলেরা চুড়িদার পায়জামা এবং কুর্তা ব্যবহার শুরু করে এবং মেয়েরা চুড়িদারের সাথে বড় ঘেরের কামিজ আর মাথায় টুপি ব্যবহার শুরু করে। অনেক পরিবর্তন আসলেও আদি মুদ্রার ব্যবহার থাকে আগের মতই, কারন হাতের এবং চোখের ভঙ্গিমার দ্বারাই বিভিন্ন কাহিনী বর্ণনা করা হতো। যদিও বলা হয় এই আমলেই নৃত্যে কিছুটা যৌনতা যুক্ত হয়ে ছিলো, কিন্তু তার উপস্থিতি বর্তমান কত্থকে পাওয়া যায় না।

মোঘল আমলের পর কত্থকের বিকাশ কিছুটা থমকে গেলেও বর্তমানে কত্থকের নানা দিক উন্মোচিত হচ্ছে। এখন কত্থক রাসলীলায় সীমাবদ্ধ তো নাই বরং ছাড়িয়ে গিয়েছে উচ্চাঙ্গসংগীতের সীমাও। পাশ্চাত্য সংগীত, কন্টেম্প্ররারি নাচ কিংবা পপ সংগীতের সাথে নতুন ফিউশন করা হচ্ছে কত্থকের মুদ্রা, ততকার, টুকরা এবং চক্করের। ক্লাসিকাল কত্থক কি তাহলে হারিয়ে যাচ্ছে? না, ক্লাসিকাল কত্থকে কেন্দ্রে রেখেই করা হচ্ছে এসব ফিউশন। আর বিভিন্ন ফিউশনের কারনে রাশিয়া সহ বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে কত্থকের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ক্লাসিকাল কত্থকের স্বচ্ছ মুদ্রা, মোঘলীয় কত্থকের দ্রুত লয় এবং আধুনিক কত্থকের সময়সাপেক্ষ দৃষ্টিনান্দনিকতা এই জনপ্রিয়তার মূল কারন।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top