What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

Collected ঝরা পাতার কান্না (1 Viewer)

dukhopakhi

Global Moderator
Staff member
Global Mod
Joined
Mar 3, 2018
Threads
98
Messages
11,001
Credits
103,910
LittleRed Car
LittleRed Car
Camera photo
T-Shirt
Thermometer
Glasses sunglasses
"ঝরা পাতার কান্না"
মূল লেখকঃ জনাব আসিফ রহমান জয়


বৃহস্পতিবার দিন গড়িয়ে সন্ধ্যা হলেই রায়হানের মনটা এক ঝলক খুশীতে ভরে ওঠে! সারা সপ্তাহের অফিসের ব্যস্ততা, বসের প্রেশার, রাস্তায় যানজট, জনজট, শব্দজট-সব ছাপিয়ে মন জুড়ে আনন্দের মিউজিক বাজতে থাকে; কখনো সেটা "দ্যা বেস্ট অব মোজার্ট" কখনো বা "বিথোভেনের ফার এলিস"! কারন, আগামীকাল শুক্রবার লুবনার সাথে তার দেখা হবে!
শুক্রবার সকাল থেকেই সারা সপ্তাহের জমে থাকা বাসার কাজগুলো সে খুব দ্রুত শেষ করে। মা'র পুরো সপ্তাহের বাজার করে দেওয়া, বাবা'র অসুখ নিয়ে ডাক্তার চাচার সাথে ফোনে কথা বলা এবং সেই মোতাবেক ওষুধ কিনে দেওয়া, ছোট বোন পাপড়ি'র টুকটাক পড়া দেখিয়ে দিতে দিতে কিভাবে যেন দেয়াল ঘড়িটাতে এগারোটা বেজে যায়! তখন সে তাড়াহুড়া করে গোসল সেরে জুম্মা'র নামাযের জন্য রেডী হয়। নামায শেষ করে ওখান থেকেই সরাসরি লুবনার সাথে দেখা করতে যাবে। পুরুষ মানুষ হলেও, আয়নার সামনে যেয়ে কিছুক্ষনের জন্য থমকে যায় রায়হান! আজকে কি শার্ট পরবে? নাকি টি-শার্ট? নীল রঙের টি-শার্টটা লুবনার খুব পছন্দ! রায়হান আলমারী খুলে নীল রঙের টি-শার্ট খুঁজতে থাকে। নীল টি-শার্টের সাথে কি গ্যাবার্ডিনের প্যান্ট মানাবে?
রায়হান এই মূহুর্তে লুবনার জন্য অপেক্ষা করছে। লুবনার জন্য অপেক্ষা করতে কেন জানি রায়হানের প্রচন্ড ভালো লাগে! এই অপেক্ষার সময়টা সে নিজের মনে একা একা অনেক কিছুই ভাবে। আচ্ছা, লুবনা আজকে কি পরে আসবে? শাড়ি নাকি সালোয়ার-কামিজ? লুবনা শাড়ি খুব কমই পরে, যদিও শাড়িতে লুবনাকে দারুন মানায়! একটু কেমন যেন অচেনা-অচেনাও লাগে! আচ্ছা, ওকি চুল বেঁধে আসবে? নাকি চুল ছেড়ে আসবে? ওকি রায়হানের পছন্দের লাল রঙের সিল্কের জামাটা পড়ে আসবে? সাথে লাল চুড়ি আর লাল টিপ? রায়হান একা একাই এসব ভাবে আর মিটিমিটি হাসে!
মাথার ওপরে কৃষ্ণচূড়া, হিজল সহ আরো নাম না জানা বিশাল বিশাল সব গাছ! এখন বসন্তের সবে মাত্র শুরু, কিন্তু শীতের শিরশিরে ঠান্ডা হাওয়াটা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নেয়নি। হালকা ঝিরঝিরে ঠান্ডা হাওয়ার সাথে পাল্লা দিয়ে গাছ থেকে শুকনো পাতা ঝর ঝর করে ঝরে পড়ছে! রায়হান এখানে বসেই পাতার ওপর পাতা পড়ার শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে। লুবনা যেদিক থেকে আসবে, রায়হান ঠিক তার উল্টোদিকে ফিরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে-এটা তার একটা মজার খেলা! সে এভাবেই চোখ বন্ধ করে বসে থাকবে, আর লুবনা পিছন থেকে এসে হাত দিয়ে তার চোখ ঢেকে জিজ্ঞেস করবে-বলো তো আমি কে? যদিও লুবনার উপস্থিতি সে একটু দূর থেকেই টের পেয়ে যায়। ঝরা পাতার ওপর 'মরমর' আওয়াজ করে ওঠা লুবনার পায়ের শব্দ আর ওর গায়ের সুগন্ধিই ওর উপস্থিতি ঠিক জানিয়ে দেবে।
-দেরী করলাম?
রায়হান চোখ মেললো। লুবনা তার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আজকে সে লাল রঙের সিল্কের জামাটা পরেনি, সবুজ রঙ্গের একটা কূর্তি পরেছে। খোলা চুলের সাথে সবুজ কূর্তিতে তাকে ঠিক সবুজ পরীর মতো লাগছে!
রায়হান বললো-
-না তো, দেরী হলো বুঝি?
-অবশ্যই দেরী হলো! পুরো পয়ত্রিশ মিনিট লেট! আচ্ছা, তুমি এমন কেন? পৃথিবীর সব প্রেমিক অস্থির হয়ে তার প্রেমিকার জন্য অপেক্ষা করে, ঘন ঘন পায়চারী করে আর ঘড়ি দেখে। একমাত্র তোমাকেই দেখি চুপ করে বসে থাকো। আমি আরো আগে এসেছি, ওই গাছটার আড়ালে দাঁড়িয়ে এতোক্ষন চুপি চুপি তোমাকে দেখছিলাম। দেখছিলাম, তুমি কিভাবে অপেক্ষা করো।
রায়হান মৃদু হাসলো-
-কিভাবে অপেক্ষা করি?
-শান্ত, চুপচাপ, নিরুদ্বেগ। এমনকি একটু নড়া-চড়াও করো না। মূর্তির মতো বসে থাকো। একবারও ঘড়িতে সময় দেখো না...
-সময় দেখবো কেন? আমার সমস্ত সময় তো শুধু তোমারই জন্য।
লুবনা হাসলো। মুগ্ধ করা, নুপুরের আওয়াজ তোলা হাসি! রায়হানের মনে হলো, হাসি নিয়ে যদি কোন কম্পিটিশন আয়োজনের ব্যবস্থা থাকতো, লুবনা নিশ্চই সেই কম্পিটিশনে প্রথম হতো!
কিছুক্ষন দু'জনে চুপচাপ বসে রইলো। মাথার ওপরের গাছগুলো থেকে অবিরাম পাতা ঝরে পরছে। তারা দু'জনে চুপচাপ সেই ঝরা পাতার পরার আওয়াজ শুনছে। লুবনা আস্তে আস্তে রায়হানের কাধে মাথা রাখলো। রায়হান মৃদু গলায় বললো-
-পৃথিবীর সব প্রেমিকের কথা তুমি জানো কিভাবে? আমার আগে ক'টা প্রেম করেছিলে?
-হা হা হা... হুম! চেহারা যেহেতু সুন্দর, আশেপাশে দশ-বারো জন প্রেমিক-আশিক তো থাকবেই...তাই না? আচ্ছা, তুমি আমাকে দশের মধ্যে কতো দেবে?
-তোমার পয়েন্ট দশে কুলাবে না। মিনিমাম একশো হতে হবে। সুন্দরী মেয়ে হিসাবে তুমি কতো পয়েন্ট পাও, সেটা ইম্পরট্যান্ট না। আমার প্রেমিকা, আমার স্ত্রী হিসাবে তুমি সবসময়ই একশোর মধ্যে একশো আশি পাবে।
-যাহ... আর বিশ বাকী থাকে কেন? পুরো দুইশো'ই দিয়ে দাও। বাসায় নিয়ে যাই।
দু'জনে আবার একটু হাসলো। আবার কিছুক্ষন সব চুপচাপ। লুবনা হাত বাড়িয়ে রায়হানের হাতটা ওর হাতের মধ্যে নিলো।
-আমাকে ছাড়া একা একা তোমার অনেক কষ্ট হচ্ছে, তাই না?
-হুম!
-তুমি আরেকটা বিয়ে করো। তোমার তো পুরো জীবনটাই পরে রয়েছে, তাছাড়া তোমার বাবা-মা'র বয়স হয়েছে। তুমি...
রায়হান লুবনার হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে উঠে দাড়ালো-
-দেখো...আমি তোমাকে আগেও বলেছি, আবার বলছি, আমার বিয়ে নিয়ে তুমি কোন কথা বলবে না। আমি যেভাবে আছি, ভালো আছি। আমার তো কোন কমপ্লেইন নেই। তোমার প্রব্লেম কি? তুমি দেখা হলেই এসব কথা ওঠাও কেন?
-ওঠাই কারন, তোমার জন্য আমার কষ্ট হয়। তুমি বোঝ না যে, আমার কষ্ট হয়?
-আমি বিয়ে করলে তোমার কষ্ট আরাম হবে?
-কষ্ট আরাম হবে না...কিন্তু আমি তো জানবো যে, তুমি ভালো আছো?
-ওহ... আচ্ছা। আমি ভালো থাকবো? তোমাকে ছাড়া আমি ভালো থাকবো? কিভাবে?
-আহা... চিৎকার করছো কেন? আস্তে কথা বলো। লোকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে।
-দেখুক লোকজন। আমি লোকজনের পরোয়া করি? আমি আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলছি। আর আমার স্ত্রী বলছে যে, আমি বিয়ে করলে সে ভালো থাকবে-এইটা কোন কথা হলো?...
রাস্তার উল্টোদিকের তিনতলা হলুদ বিল্ডিঙ্গের নতুন ভাড়াটিয়া আলীমুজ্জামান সাহেব বাসায় ঢোকার সময় গেটের সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অবাক হয়ে কিছুক্ষন দৃশ্যটা দেখলেন।
কেয়ারটেকারকে ডাক দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন-
-মন্তাজ মিয়া, ওই ছেলেটা একা একা হাত নেড়ে নেড়ে কার সাথে কথা বলছে, বল তো? পাগল-টাগল নাকি?
-পাগল না স্যার, এমনিতে ভালা মানুষ। আমাগো ১২ নাম্বার রোডের শেষ মাথায় হেইযেন বড় ছয়তলা সাদা বাড়িটা দেহেন, ওই বাড়ির মালিকের ছেলে। গত বছরই বিয়া হইসিলো। কিন্তুক বিয়ার কয়েক মাসের মধ্যেই বউটা কেমনে জানি এক্সিডেন্টে মইরা গেলো গা। ওই যে কৃষ্ণচূড়া গাছটা দ্যাখতাসেন, হেই গাছের নীচেই বউটারে কবর দিসে। শুক্কুরবার অইলেই, ওই কবরটার দ্বারে আইস্যা বইস্যা থাহে। একা একা কি সব কথা কয়, চিতকুর পাইরা কান্দে, আবার মাঝে মাঝে জোরে জোরে হাসেও! কি যে সব করে! অন্য দিন এক্কেবারে ভালা মানুষ। শুধু শুক্কুরবার অইলেই...
আলীমুজ্জামান সাহেব এবারে একটু দুঃখের সাথেই রায়হানের দিকে তাকালেন। নাহ...ছেলেটাকে দেখলে কিছুতেই পাগল বলে মনে হয় না! কিন্তু...!
রায়হান এখন কাঁদছে! কৃষ্ণচূড়া গাছটার সামনে হাটু গেঁড়ে, আকাশের দিকে মুখ করে, ছেলেমানুষের মতো চিৎকার করে কাঁদছে! বাতাসে কৃষ্ণচূড়া গাছ থেকে ঝর ঝর করে পাতা ঝরে পরছে রায়হানের মাথায়, শরীরে! আলীমুজ্জামানের এক মূহুর্তের জন্য মনে হলো, কৃষ্ণচূড়া গাছটাও যেন রায়হানের সাথে কাঁদছে!
আলীমুজ্জামান একটা দীর্ঘশবাস চেপে মাথা নাড়লেন। নাহ, কবরস্থানের এতো কাছে বাড়ীভাড়া নেওয়াটা মোটেই উচিত হয়নি।
 

Users who are viewing this thread

Back
Top