ভুল চিকিৎসা উৎসাহিত করা, চিকিৎসা সেবা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ এবং সাংবাদিকদের চিকিৎসা সেবা না দেয়ার হুমকির দায়ে ডা. ফয়সাল ইকবালকে আওয়ামী লীগ ও বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) থেকে বহিষ্কারের দাবি জানিয়েছে চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন নাগরিকরা। গতকাল শনিবার বিকেলে জামালখানে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। অন্যদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খান ও রাইফার মা রুমানা খানমের আড়াই বছরের শিশু রাইফাকে চিকিৎসার জন্য গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মেহেদীবাগের ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। শিশুটি হাসপাতালের চিকিৎসক-নার্সদের অপচিকিৎসায় মা-বাবার কোলকে খালি করে চলে গেল না ফেরার দেশে। গত শুক্রবার গভীর রাতে নগরীর মেহেদীবাগে এ মর্মস্পর্শী মৃত্যুতে হাসপাতাল, থানা এবং গতকাল শনিবার নগরীর গরীব উল্লাহ শাহর মাজার প্রাঙ্গণে এক শোকবিহবল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। আর একমাত্র সন্তান রাইফাকে হারিয়ে তার বাবা সমকালের সিনিয়র রিপোর্টার রুবেল খান ও রাইফার মা রুমানা খানম এখন পাগলপ্রায়।
রাইফার বাবা রুবেল খান ভোরের কাগজকে বলেন, ঠান্ডাজনিত গলা ব্যথার কারণে রাইফাকে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাতে তাকে অ্যান্টিবায়টিক দেয়া হয়। এতে রাইফা অস্বস্তিবোধ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশু বিশেষজ্ঞ বিধান বড়ূয়াকে ডাকে। তিনিও একই ধরনের ওষুধ দেন। রাতে ওই ওষুধ দেয়ার পর থেকে রাইফার খিঁচুনি শুরু হয়। বিষয়টি দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. দেবাশীষ চৌধুরীকে জানানো হয়। তিনি বিধান বড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলে 'সেডিল' ইনজেকশন পুশ করেন। এরপর রাইফা নিস্তেজ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে মারা যায় রাইফা।
রাইফার মৃত্যুর খবর পেয়ে রাতেই হাসপাতালে ছুটে যান সাংবাদিকরা। তাদের প্রতিবাদের মুখে পুলিশ দায়িত্বরত চিকিৎসক ও নার্সকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে বিএমএ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল ইকবাল থানায় গিয়ে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ শুরু করেন। ফয়সাল ইকবালসহ বিএমএর কয়েকজন নেতা আটককৃতদের ছেড়ে দেয়ার জন্য পুলিশকে চাপ সৃষ্টি করে। অন্যথায় অনির্দিষ্টকালের জন্য সব হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়। চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম ও সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গেও বাদানুবাদে জড়ান তিনি। এমনকি কোনো সাংবাদিকের আর কোনো চিকিৎসা করা হবে না বলেও হুমকি দেন। পরে ভোরে থানায় পুলিশ, বিএমএ ও সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বৈঠক হয়। বৈঠকের পর আটক করা ডাক্তার ও নার্সদের থানা থেকে ছেড়ে দেয়া হয়।
এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ ও সচেতন সাধারণ জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ভুল চিকিৎসায় শিশু মৃত্যুর ঘটনায় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের বিচার দাবি এবং বিএমএ সাধারণ সম্পাদকের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদের শনিবার বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন শ্রেণি- পেশার ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে বক্তারা চিকিৎসার নামে এ ধরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী চিকিৎসক, সংশ্লিষ্ট ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। পাশাপাশি সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবালকে বরখাস্ত করার দাবি জানান হয়।
এদিকে শিশু মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে চট্টগ্রামের জেলা সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে), বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) প্রতিনিধি রয়েছেন। কমিটি পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে গতকাল জোহরের নামাজের পর নগরীর গরিবউল্লাহ শাহ মাজার প্রাঙ্গণে রাফিদা খান রাইফার জানাজা শেষে সেখানকার কবরস্থানে দাফন করা হয়। জানাজায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব এবং সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতারাসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।