রমজানকে ঘিরে দুই কৌশল নিয়ে মাঠে তৎপরতা চালাচ্ছে অজ্ঞান ও মলম পার্টির কয়েকশ সদস্য। চক্রের সদস্যরা যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠে প্রথমে পাশের যাত্রীর সঙ্গে সখ্য তৈরি করে। ইফতারের সময় নিজে এবং আশপাশে যাত্রীবেশে থাকা চক্রের অন্য সদস্যদের ইফতার খাইয়ে বিশ্বাস অর্জন করে। এরপর আগে থেকে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত ইফতারের খাবার (জুস, ডাব, পানি) টার্গেট ব্যক্তিকে খাইয়ে অজ্ঞান করে লুটে নেয় সর্বস্ব।
আবার ইফতারির সময় ফেরিওয়ালা সেজে নেশাজাতীয় দ্রব্য মিশ্রিত খাবার নিয়ে উঠে পড়ে বিভিন্ন যাত্রীবাহী যানবাহনে। প্রথমে খাবারগুলো সাধারণ যাত্রীদের কাছে তারা বিক্রি করে। বিশ্বাস স্থাপনের জন্য সাধারণ যাত্রীদের পাশে থাকা চক্রের অন্য সদস্যরা আগে খাবার কিনে এবং পাশে থাকা যাত্রীদেরও খাবার কিনতে আগ্রহী করে তোলে। টার্গেট ব্যক্তি খাবার কিনতে আগ্রহী হলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত খাবার দেয়া হয়। ওই খাবার খেয়ে সাধারণ যাত্রীরা অজ্ঞান হয়ে পড়লে সুযোগ বুঝে সর্বস্ব লুটে নেয় তারা।
আবার কখনো সিএনজি চালক সেজে গাড়িতে যাত্রী ওঠায়। এরপর কিছু দূরে গিয়ে পানি খাওয়ার কথা বলে গাড়ি থামায়। নিজে খাওয়ার পাশাপাশি যাত্রীকে খাওয়ার অনুরোধ করে। পরে যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে নির্জন কোনো স্থানে যাত্রীকে ফেলে দিয়ে মালামাল নিয়ে চম্পট দেয়। আর এ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পর থেকে রাতের সময়কে বেছে নেয় তারা।
রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, গাবতলী, ফার্মগেট, মহাখালী, আব্দুল্লাহপুর, টঙ্গীসহ প্রায় ২০টি স্পটে এ রকম কয়েকশ ভয়ঙ্কর প্রতারক তৎপর রয়েছে বলে জানতে পেরেছেন গোয়েন্দারা। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও বসে নেই। ডিএমপির বিভিন্ন থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের প্রায় সব ইউনিট ছিনতাইকারী, অজ্ঞান ও মলমপার্টির সদস্যদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাই ও অজ্ঞান পার্টির ৬১ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯২টি লেক্সোটেনিল ও ৪০টি লুজিকাম চেতনানাশক ট্যাবলেট এবং ২টি ঝান্ডুবামসহ একাধিক মলমের কৌটা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, সরল ও নিরীহ যাত্রীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে কৌশলে আলাপচারিতার মাধ্যমে ইফতারির খাদ্যদ্রব্যসহ চা, ডাব, পানি ও জুস ইত্যাদি বিভিন্ন খাবার খাওয়ার অনুরোধ করে। রাজি হলে যাত্রীদের চেতনানাশক ট্যাবলেট মিশ্রিত চা, ডাব, পানি ও জুস খাওয়ায়। খাবার খেয়ে যাত্রীরা অজ্ঞান হলে তাদের সঙ্গে থাকা টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে পালিয়ে যায়।
এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা যাত্রীদের এবং মার্কেটে আসা ক্রেতাদের কৌশলে ও সরলতার সুযোগে নাক, মুখ ও চোখে চেতনানাশক মলম লাগিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল, ব্যাগ ও স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পহেলা রমজান ১৮ মে থেকে
গতকাল রবিবার পর্যন্ত ১০ দিনে অজ্ঞান পার্টির খপ্পড়ে পড়ে ১৩ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পশ্চিম বিভাগ) অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার গোলাম মোস্তফা রাসেল গতকাল ভোরের কাগজকে বলেন, মূলত ৩টি কৌশলে টার্গেট ব্যক্তিকে অচেতন করে সবর্স্ব লুট করে নেয় তারা। তারা যাত্রীবেশে গাড়িতে উঠে পাশের যাত্রীকে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত খাবার খাইয়ে, ফেরিওয়ালা সেজে যাত্রী কিংবা পথচারীকে নেশাজাতীয় খাবার খাইয়ে এবং সিএনজি চালক সেজে গাড়িতে যাত্রী উঠিয়ে জুস বা খাবার খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এ ক্ষেত্রে সন্ধ্যার পরের সময়কে বেছে নেয় তারা। খাবারের সঙ্গে মায়োলাম, নকট্রিন, ইটামিন, লেক্সোটেনিল, লুজিকাম ইত্যাদি চেতনানাশক ওষুধ ব্যবহার করে থাকে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
রাজধানীতে ২০-২২টি স্পটে অজ্ঞান ও মলমপার্টির কয়েকশ সদস্য তৎপর রয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময় এদের গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। তারা জামিনে বের হয়ে আবার একই অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। একাধিকবার ধরা পড়েছে এরকম অনেককে আমরা ধরেছি।