নাসিরুদ্দিন হোজ্জার জন্ম তুরস্কে ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে। নানা চরিত্রে ও পেশায় তাঁকে তাঁর কয়েক শ গল্পে হাজির হতে দেখা যায়। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, হোজ্জা এখন আর তুরস্কের নন, সারা বিশ্বের। ইউনেসকো তাঁর গল্পগুলোকে বিশ্বসাহিত্যিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দিয়েছে। হোজ্জা অবশ্য একেক অঞ্চলে একেক নামে অভিহিত। যেমন উজবেকিস্তান ও চীনে তিনি আফেন্দি বা এফেন্দি। তাঁর গল্প কখনো নির্মল হাস্যকৌতুকে, কখনো বুদ্ধির ঝলকে, কখনো বা নৈতিক শিক্ষার দ্যুতিতে উজ্জ্বল। কখনো নিজেকে নিজেই ব্যঙ্গ করেছেন।
হোজ্জা তাঁর ছেলেসহ দূরের শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসছিলেন। ছেলেকে গাধার পিঠে চাপিয়ে তিনি হেঁটে চলছিলেন পাশে পাশে। পথে এক মহিলা তাঁদের পেরিয়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করল, ‘আজকালকার ছেলেদের বুদ্ধি দেখো। জোয়ান ছেলে গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছে, আর বুড়ো বাবা কিনা হেঁটে যাচ্ছে!’
হোজ্জার ছেলে খুব লজ্জা পেয়ে বাবাকে বলল, ‘বাবা, আপনি গাধায় চড়ুন। আমি বরং হেঁটে চলি।’
কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে এক বৃদ্ধের দেখা হলো। তিনি হোজ্জাকে বললেন, ‘ওহে বোকা বুড়ো, তোমার এত আরাম-আয়েশের সঙ্গে গাধার পিঠে চেপে যাওয়ার কী দরকার? তুমি তো এক পা কবরে দিয়েই রেখেছ। তুমি কি চাও যে কচি ছেলেটার হাড়হাড্ডি এখনই শুকিয়ে যাক। ওকে বরং একটু আরামের সঙ্গে গাধায় চড়ে যেতে দাও।’
এবার হোজ্জা তাঁর ছেলেকেও গাধার পিঠে তুলে নিলেন। দুজনে একসঙ্গেই গাধায় চড়ে এগোতে লাগলেন। এবার তাঁদের সঙ্গে একদল লোকের দেখা হলো। তারা বলে উঠল, ‘দেখো দেখো, এদের নিষ্ঠুরতা দেখো! দুজন মিলে একটা গাধার ওপর সওয়ার হয়েছে। গাধাটাকে তো এরা মেরে ফেলবে!’
এ কথা শুনে হোজ্জা ও তাঁর ছেলে গাধার পিঠ থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। এ সময় তাঁদের পাশ দিয়ে দুজন লোক যেতে যেতে বলল, ‘দেখো দেখো, কী বেকুব ধরনের লোক এরা! তাঁদেরই গাধা বোঝা ছাড়া তাঁদের সামনে এগিয়ে চলেছে, আর এই দুই বেকুব কিনা ঘেমে-নেয়ে গাধার পেছন পেছন হাঁটছে।’
হোজ্জা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দেখলে তো, সবাইকে কখনোই খুশি করা যায় না। তোমার কাজের সমালোচনা করার জন্য সব সময়ই কাউকে না কাউকে পাবে।’
* সংকলন ও সম্পাদনা: মুহাম্মদ লুৎফুল হক | প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার আরও ১০০ গল্প বই থেকে
হোজ্জা তাঁর ছেলেসহ দূরের শহর থেকে গ্রামে ফিরে আসছিলেন। ছেলেকে গাধার পিঠে চাপিয়ে তিনি হেঁটে চলছিলেন পাশে পাশে। পথে এক মহিলা তাঁদের পেরিয়ে যাওয়ার সময় মন্তব্য করল, ‘আজকালকার ছেলেদের বুদ্ধি দেখো। জোয়ান ছেলে গাধার পিঠে চড়ে যাচ্ছে, আর বুড়ো বাবা কিনা হেঁটে যাচ্ছে!’
হোজ্জার ছেলে খুব লজ্জা পেয়ে বাবাকে বলল, ‘বাবা, আপনি গাধায় চড়ুন। আমি বরং হেঁটে চলি।’
কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে এক বৃদ্ধের দেখা হলো। তিনি হোজ্জাকে বললেন, ‘ওহে বোকা বুড়ো, তোমার এত আরাম-আয়েশের সঙ্গে গাধার পিঠে চেপে যাওয়ার কী দরকার? তুমি তো এক পা কবরে দিয়েই রেখেছ। তুমি কি চাও যে কচি ছেলেটার হাড়হাড্ডি এখনই শুকিয়ে যাক। ওকে বরং একটু আরামের সঙ্গে গাধায় চড়ে যেতে দাও।’
এবার হোজ্জা তাঁর ছেলেকেও গাধার পিঠে তুলে নিলেন। দুজনে একসঙ্গেই গাধায় চড়ে এগোতে লাগলেন। এবার তাঁদের সঙ্গে একদল লোকের দেখা হলো। তারা বলে উঠল, ‘দেখো দেখো, এদের নিষ্ঠুরতা দেখো! দুজন মিলে একটা গাধার ওপর সওয়ার হয়েছে। গাধাটাকে তো এরা মেরে ফেলবে!’
এ কথা শুনে হোজ্জা ও তাঁর ছেলে গাধার পিঠ থেকে নেমে হাঁটা শুরু করলেন। এ সময় তাঁদের পাশ দিয়ে দুজন লোক যেতে যেতে বলল, ‘দেখো দেখো, কী বেকুব ধরনের লোক এরা! তাঁদেরই গাধা বোঝা ছাড়া তাঁদের সামনে এগিয়ে চলেছে, আর এই দুই বেকুব কিনা ঘেমে-নেয়ে গাধার পেছন পেছন হাঁটছে।’
হোজ্জা ছেলের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘দেখলে তো, সবাইকে কখনোই খুশি করা যায় না। তোমার কাজের সমালোচনা করার জন্য সব সময়ই কাউকে না কাউকে পাবে।’
* সংকলন ও সম্পাদনা: মুহাম্মদ লুৎফুল হক | প্রথমা প্রকাশনের নাসিরুদ্দিন হোজ্জার আরও ১০০ গল্প বই থেকে