যখন থামবে কোলাহল
Writer: মোহন চৌধুরী
হাসি আনন্দ ফুর্তিতে সবাই মেতে উঠে। মোহন এর এতে কোন মোহ নেই। নকর আলী আবারো ডাকলো, মোহন, আজকে একটা বিশেষ দিন। তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করো। সবাইকে আত্ম পরিচিতিটা তো অন্তত জানাতে হবে।
মোহনের হাতে অনেক কাজ। তারপরও, আজকে একটু বিশ্রামই নিতে ইচ্ছে করছে। কোলাহল ভালো লাগে না। তাই ডিনার পার্টিতে যাবেনা বলে উদ্যোক্তাকে আগেই জানিয়ে রেখেছিলো। নকর আলী তা জানে না। অদুদ এর সাথে দুপুর একটাতেই বৈঠকে বসার কথা ছিলো। অদুদও ব্যাস্ত। ঠিক অফিস ছুটির সময়, নকর আলী যখন মোহনকে ডিনার পার্টিতে যাবার তাড়াই করছিলো, তখন অদুদও মোহন এর ডেস্কে এসে উপস্থিত হয়েছিলো। মোহন ভালোই ছোতা পেলো। বললো, অদুদ সাহেবের সাথে বিশেষ বৈঠক আছে। বৈঠক শেষ হলে ভেবে দেখবো।
মোহনের বস রাগ করেই বললো, ঠিক আছে, বিশেষ অতিথিদের সেই কথাই বলবো। কাজ শেষ করে তাড়াতাড়ি ডিনার পার্টিতে এসো।
কনক চাপাও বিয়েথা করেনি। কাজ তার ভালো লাগে না। তারপরও, অফিসে অযথা সময় নষ্ট করে নিসংগতা কাটানোর জন্যে। পঞ্চাশোর্ধ বুড়ী একটা মহিলা। ডিপার্টমেন্টও ভিন্ন। মোহনের খুব পছন্দ নয়। তারপরও কলিগ হিসেবে কথা বিনিময় হয়। মোহনেরও কাজ প্রায় শেষ। অফিসেও কেউ নেই। কনক চাপা বললো, মোহন সাহেব, কি ব্যাপার, পার্টিতে যাননি?
মোহন বরাবরই হাসি খুশী। অতি কষ্টেও হাসে। বললো, বেতন নাই, পকেট খালি। একটা কানা কড়িও যদি বউ এর কাছে চাই, গালিগালাজ শুনতে হয়। পার্টিতে গিয়ে কি খাবার হজম হবে?
কনকা চাপা বললো, তারপরও তো গাধার মতো খাটো।
মোহনের মুখ থেকে কথা ফুটে না। কনক চাপাও অফিস থেকে বিদায় নেয়। চারিদিক নিস্তব্ধ হতে থাকে। মোহনেরও কাজে মন বসে না। মনটা ছুটে চলে অতীতে।
নাদিয়া। মোহন এর ভালোবাসার নাদিয়া। মোহনের রক্ত মাংসে প্রতি নিয়ত আঘাত করে নাদিয়া। নাদিয়ার স্মৃতিটুকু টিকিয়ে রাখার জন্যে সকাল বিকাল রাতে স্মরণ করে থাকে। যখন চারিদিকে কোলাহলগুলো থেমে যায়, তখন মোহনের মনে শুধু একটি নাম, নাদিয়া। সেই নাদিয়া এখন কোথায়, কে জানে? মোহন ও জানে না। জানার চেষ্টাও করে না। শুধু জানে নাদিয়াকে সে ভালোবাসে। কত্ত ভালোবাসে, তা বোধ হয় সে নিজেও জানেনা।
মোহন তার কম্পিউটার বন্ধ করতে থাকে। ড্রয়ার থেকে জ্যাকেটটা বেড় করে গায়ে পরে নেয়। হ্যাণ্ড ব্যাগটা হাতে নিয়ে অফিস থেকে বেড়িয়ে পরে। মদের দোকান থেকে এক বোতল মদ কিনে, ঢক ঢক করে গিলতে থাকে। অলস পায়ে হেঁটে চলে বাড়ীর পথে।
যৌবনটা বুঝি এমনই। শুধু অজশ্র মেয়েরাই পেছনে পেছনে ঘুরেনা, অজশ্র টাকাও ঘুর ঘুর করে। মোহনের এই দু হাত বয়েও অজশ্র টাকা বয়ে গেছে। তেমনি টাকা বয়ে যাওয়া হাতে, বউটাও ভালো ঘরের। টাকা হাতে ধরে রাখতে পারে। বউটাই কিছু টাকা জমিয়ে, কিছু টাকা মা বাবার কাছ থেকে ধার করে, ব্যাংক লোনে বাড়ীটাও কিনে ফেলেছিলো। মোহনের এই বাড়ীটার প্রতি কোন আকর্ষণই নেই। ব্যাংকের বাড়ী, মাসে মাসে ভাড়ার মতোই বেতনের অর্ধেক টাকা পরিশোধ করে। কখন নিজ বাড়ী হবে, সে নিজেও হাতে গুনে কুল পায় না। মদের বোতলটা হাতে নিয়ে সে বাড়ীতেই ঢুকে।
[Hidden content][Hidden content]
[Hidden content]