আমরা অনেকেই ইউএফও বা “আন-আইডেন্টিফাইড ফ্লাইং অব্জেক্ট” শব্দ দুটির সাথে পরিচিত। ইউএফও কে বলা হয় এমন একটি রহস্যময় আকাশ যান যা মানুষের তৈরি নয়, সচরাচর যাকে কোথাও দেখা যায় না এবং সনাক্ত করা যায় নি। মনে করা হয় ভিন গ্রহের প্রাণীরা প্রায়ই আমাদের পৃথিবীতে এইসব ইউএফও –তে চড়ে আসে।
ইউএফও দেখতে পাওয়াটা কি সত্যি না গুজব?
আমরা সবাই সেই শৈশব থেকে এই সকল ইউএফও এর গল্প শুনে আসছি, ইউএফও দেখতে অনেকটা গোলাকার চাকতির মত। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায়, এবং বেশিরভাগ সময় আমেরিকাতে UFO বেশি করে দেখতে পাওয়ার ঘটনা শোনা যায়। আপনারা যদি একটু ইন্টারনেট ঘাটেন তাহলে হাজার হাজার ইউএফও এর ছবি এবং ভিডিও পেয়ে যাবেন। বেশির ভাগ ছবি বা ভিডিও দেখবেন সাধারণ ক্যামেরা দিয়ে করা হয়েছে। সবজায়গায় সাধারণত যা দেখা যায় তা হচ্ছে পিরিচ এর মতো গোলাকার একটা চাকতি আকাশে উড়ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় এবং টিভি নিউজে এই UFO দেখার খবর পাওয়া যায়। অর্থাৎ যে সিদ্ধান্তে আসা যায় সেটা হচ্ছে, গোলাকার চাকতি আকৃতির কোন কিছু অবশ্যই প্রায়ই আকাশে উড়ে বেরায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন যায়গা থেকে অসংখ্য মানুষ ইতিমোধ্যে তা দেখেছে আর প্রমাণ স্বরূপ তার ছবি এবং ভিডিও করে রেখেছে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে – সাম্প্রতিক সময়ে এই ইউএফও এর ছবি বা ভিডিওর পেছনের একটা ব্যাখ্যা পাওয়া গিয়েছে। আজ সেই রহস্য উদ্ঘাটন করার চেষ্টা করবে।
আপনি কি লেন্টিকুলার মেঘ সম্পর্কে শুনেছেন?
যত ধরণের মেঘ আকাশে লক্ষ করা যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে দুর্লভ আকৃতির মেঘ হচ্ছে লেন্টিকুলার মেঘ। বায়ুমণ্ডলের টপোস্ফিয়ারে এই লেন্সের মত আকৃতির মেঘের দেখা কদাচিৎ মেলে। বিজ্ঞানীদের মতে, পৃথিবী পৃষ্ঠের উপর দিয়ে প্রবাহমান বাতাস উঁচু বিল্ডিং, গাছ, পাহাড় ইত্যাদির কারণে বাঁধা প্রাপ্ত হয়ে ঘূর্ণিবায়ুর সৃষ্টি করে। এই বায়ুতে আদ্রতার পরিমান বেশি থাকার কারণে কোন যেকোনো উঁচু স্থানের উপরিভাগে জমাট বেঁধে লেন্টিকুলার মেঘ সৃষ্টি হয়। তাই সাধারণত উঁচু কোন পাহাড়ের চুড়োয় লেন্টিকুলার মেঘ পরিলক্ষিত। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার আকাশে রহস্যময় এই লেন্টিকুলার মেঘের দেখা পাওয়া গিয়েছিল।
ইউএফও এর সাথে লেন্টিকুলার মেঘের সম্পর্ক কি?
ইউএফও এর সাথে লেন্টিকুলার মেঘের সম্পর্ক
লেন্টিকুলার মেঘ অবশ্য এক যায়গায় সারাক্ষন থাকে না। একটা লালচে রঙের লেন্সের আকৃতি ধারণ করে এই মেঘ অনেক দূর পর্যন্ত এগিয়ে চলে। একটা সময় পর অন্যান্য মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়। মজার ব্যাপার হচ্ছে মেঘের এই অদ্ভুত আকৃতির জন্য অনেকেই একে ইউএফও বা এলিয়েনদের স্পেশশিপ বলে ভুল করে থাকে। আপনারা এলিয়েন স্পেসশিপের অনেক ছবি বা ভিডিওতে যেমনটি দেখেন ঠিক তেমন দেখতে এই লেন্টিকুলার মেঘ। তারমানে দাঁড়াচ্ছে যে এইসব ছবির বেশিরভাগই সঠিক নয়। এগুলো মেঘের ছবি যা মানুষ ইউএফও বলে ভুল করেছে।
লেন্টিকুলার মেঘ নিঃসন্দেহে সৌন্দর্যপিয়াসু মানুষের কাছে দারুন বিস্ময়ের উপাদান। তবে মেঘের আকৃতি দেখতে যতই সুন্দর হোক না কেন, ক্ষেত্র বিশেষে এই মেঘ বিপদের কারণও হতে পারে! দ্রুত গতির বিমান নিয়ে আকাশ পথে চলার সময় পাইলটরা লেন্টিকুলার মেঘ এড়িয়ে চলেন। কারণ মেঘের চারিদিকের রোটোর আকৃতি বিমানের দৃষ্টি পথে বাঁধা সৃষ্টি করে। তবে গ্লাইডার পাইলটদের জন্য এই মেঘ আদর্শ। লেন্টিকুলার মেঘের চারিদিকে বায়ুর নিন্মচাপ কম অনুভূত হয় বলে গ্লাইডারদের জন্য ল্যান্ডিং করা সহজ হয়। জাপান, আইসল্যান্ড, কঙ্গো, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা, নেভাদা, ওয়াশিংটন, অরিগন, ডেট্রয়েট ইত্যাদি অঞ্চলে লেন্টিকুলার মেঘের দেখা অধিক পাওয়া যায়।
বিশ্বাস হচ্ছে না?
লেন্টিকুলার মেঘকে অনেকেই এলিয়েন স্পেসশিপ বলে ভুল করেন এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সত্যিকার অর্থে কিছু ভিডিও কিংবা ছবি দেখা যায়, যা খুবই বাস্তব এবং লেন্টিকুলার মেঘ বলে মনে হয় না! তাহলে সেগুলো আসলে কি? আমরা পরবর্তীতে সেসব ভিডিও এবং ছবির রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করবো। আর সেসব রহস্যের সমাধান পেতে নিয়মিত ভিসিত করুন।