যুক্তরাষ্ট্রে ও ইউরোপে করোনার টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের মাস্ক ছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে দেখা যাচ্ছে। একসঙ্গে জড়ো হয়ে স্টেডিয়ামে খেলা দেখছেন। প্রশ্ন হলো, দুই ডোজ টিকা নিলেই কি মাস্ককে বিদায় বলা যায়? উত্তর হলো ‘না’।
দেশে অনেকেই ইতিমধ্যে করোনাভাইরাসের দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। এরপরও মাস্ক পরা, ঘন ঘন হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো বিধিগুলো মেনে চলতে হবে। এর কারণ, টিকা শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারে না। দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন, এমন অনেকেরই করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। তবে টিকা নেওয়া ব্যক্তিদের গুরুতর অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি অনেক কম। আবার টিকা নেওয়া ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলেও তাঁদের মধ্যে উপসর্গ না–ও থাকতে পারে। কিন্তু তাঁরা ঠিকই অন্যদের সংক্রমিত করতে পারেন। মাস্ক না পরলে এবং সামাজিক দূরত্ব না মানলে সেই ঝুঁকি বাড়ে। সে ক্ষেত্রে আশপাশের টিকা না পাওয়া ব্যক্তিরা চরম বিপদে পড়তে পারেন। যখন দেশের ৭০-৮০ ভাগ মানুষের টিকাদান সম্পন্ন হবে, তখন স্বাস্থ্যবিধি শিথিলের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু বিশ্বে প্রায় শতভাগ টিকা দেওয়া দেশেও সংক্রমণ বাড়ছে। তাই এ নিয়ে আবার ভাবতে হবে। সংক্রমণ বাড়ার কারণে ফাইজার ইতিমধ্যেই বুস্টার ডোজের কথা ভাবছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) মতে, নিজের ও অন্যদের সুরক্ষার জন্য টিকা নেওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধিগুলো মেনে চললে তা হবে করোনা পরিস্থিতিতে সর্বোত্তম সুরক্ষা। টিকার চেয়ে সুরক্ষা বেশি দেয় মাস্ক। মাস্কই করোনার বিরুদ্ধে সেরা রক্ষাকবচ।
তার মানে টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ। টিকার সুফল ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। তবে টিকাগুলো কার্যকর হলেও যত দিন পর্যন্ত মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসছে, তত দিন মাস্ক পরা অব্যাহত রাখতে হবে। একজনের মাধ্যমে অন্যজনের শরীরে যাতে ভাইরাসটি ছড়াতে না পারে, সে জন্য সবাইকে মাস্ক পরতে হবে।
সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য টিকার দুটি ডোজই নেওয়া উচিত। টিকা গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গেই নয়; বরং দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার দুই সপ্তাহ পর থেকে শরীরে করোনা প্রতিরোধের ক্ষমতা তৈরি হয়। করোনার ধরন পাল্টাচ্ছে। নতুন ধরনগুলোর বিপরীতে টিকা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে গবেষণা চলছে। কিন্তু করোনার যে ধরনই আসুক না কেন, মাস্ক সব ধরনের সংক্রমণের জন্য কার্যকর। তাই আমাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সব সময় মাস্ক পরে চলতে হবে।
* অধ্যাপক মো. আজিজুর রহমান , মেডিসিন ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ