থ্যালাসেমিয়া রক্তের হিমোগ্লোবিন সম্বন্ধীয় জিনগত সমস্যা। এ রোগীদের হিমোগ্লোবিন কম উৎপাদিত হয় অথবা ত্রুটিপূর্ণ হিমোগ্লোবিন তৈরি হয়। ফলে রোগীর রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। এ থেকে দেখা দেয় আরও নানা জটিলতা।
থ্যালাসেমিয়া হাজার বছরের পুরোনো একটি রোগ। সারা বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৭ শতাংশ এ রোগের বাহক। প্রতিবছর বিশ্বে তিন থেকে পাঁচ লাখ শিশু থ্যালাসেমিয়া নিয়ে জন্মায়। বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে এখনো কাজ চলছে।
কীভাবে বুঝবেন
রক্তশূন্যতাই থ্যালাসেমিয়ার প্রধান লক্ষণ। জন্মের এক বছরের মধ্যেই শিশুর রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। কারও ক্ষেত্রে আরও পরে। তীব্রতা অনুযায়ী রোগের মাত্রা ভিন্ন হতে পারে। ২-৬ সপ্তাহ পরপর কারও কারও রক্ত সঞ্চালন করতে হয়। তা ছাড়া, নানা জটিলতা দেখা দেয়।
বাহক কারা
বাহক মানে, যে থ্যালাসেমিয়ার জিন বহন করে। এরা স্বাভাবিক মানুষের মতোই জীবন যাপন করে, রক্তশূন্যতা তেমন হয় না। হঠাৎ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায় তিনি একজন বাহক। তবে তাঁর নিজের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু একজন বাহক যদি অন্য কোনো বাহককে বিয়ে করেন, তবে অনাগত সন্তানের রোগাক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রতিরোধের উপায়
● দুজন বাহকের মধ্যে যেন বিয়ে না হয়, তা নিশ্চিত করা।
● যদি বিয়ে হয়েই যায়, তবে অনাগত সন্তান রোগাক্রান্ত কি না, গর্ভকালেই তা পরীক্ষা করা (অ্যান্টি নাটাল স্ক্রিনিং)।
● জনসচেতনতা তৈরি করা; যাতে সবাই রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিজেকে জানতে পারেন ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন। তবে একজন বাহকের আরেকজন স্বাভাবিক মানুষকে বিয়ে করতে বাধা নেই।
চিকিৎসা কী
● নিয়মিত রক্ত পরিসঞ্চালন। রক্তের আয়রন কমানোর ওষুধ প্রয়োগ। জটিলতা নির্ণয় ও নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
● প্লীহা বড় হলে সার্জারি করে ফেলে দেওয়া। ক্ষেত্রবিশেষে এই চিকিৎসার শরণাপন্ন হতে হয়।
● অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন পদ্ধতির মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়া রোগীর শরীর থেকে পুরোপুরি নির্মূল করা যায়।
● আপন ভাইবোন যদি সুস্থ/বাহক হয় আর তার সঙ্গে যদি শতভাগ এইচএলএ ম্যাচ হয়, তবে তার শরীরের স্টেম সেল নিয়ে রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে সফলতার সঙ্গে রোগমুক্ত করা যায়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের চারটি হাসপাতালে বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজকাল স্বাস্থ্যসম্বন্ধীয় বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হয়। থ্যালাসেমিয়াকে পাঠ্যক্রমের আওতায় এনে সচেতনতা বাড়ানো যায়। স্কুল কর্তৃপক্ষ চাইলে স্ক্রিনিং প্রকল্প চালু করতে পারে।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. মাফরুহা আক্তার, রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ, সহকারী অধ্যাপক, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট ইউনিট হেমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল