নিজের অঞ্চলের টানে অনেকেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন। আর সেটা যদি হয় খাবার, তাহলে তো কথাই নেই। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া—সারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের আছে বিশেষ বিশেষ খাবার। এসব খাবার যেমন মজার, তেমনি এগুলোতে জড়িয়ে আছে শিকড়ের টান। অঞ্চলভিত্তিক কিছু খাবারের রেসিপি থাকছে এখানে।
ছুরি শুঁটকি ও দেশি আলুর ঝোল, টেকনাফ
ছুরি শুঁটকি ও দেশি আলুর ঝোল
উপকরণ: ছুরি শুঁটকি ১টি (১০০-১২০ গ্রাম), দেশি আলু (মাঝারি আকারের) ২০টি, পেঁয়াজকুচি ২ টেবিল চামচ, রসুন মিহি কুচি ১ টেবিল চামচ, হলুদ ১ চা-চামচ, লাল মরিচের গুঁড়া ২ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, জিরার গুঁড়া আধা চা-চামচ, টমেটোকুচি ১টি, ধনেপাতাকুচি প্রয়োজনমতো, সয়াবিন তেল ২ টেবিল চামচ, পানি ঝোল হওয়ার মতো ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: প্রথমেই ছুরি শুঁটকি ছোট আকারে (প্রতি টুকরা প্রায় দেড় ইঞ্চি) কেটে গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। আলু একটি পাত্রে ডুবো পানিতে ১৫ থেকে ২০ মিনিট ভিজিয়ে রাখুন। খোসাসহ প্রতিটি আলু দুই ভাগ করে কেটে ভালোভাবে ধুয়ে নিন। এরপর শুঁটকি ও আলু একসঙ্গে একটি পাত্রে রেখে তাতে হলুদ, জিরা, ধনিয়া, লাল মরিচের গুঁড়া, লবণ, অল্প পানি দিয়ে মেখে রাখতে হবে।
এবার একটি পাত্র চুলায় বসিয়ে গরম হলে তেল দিয়ে দিতে হবে। তেল গরম হলে তাতে পেঁয়াজ ও রসুনকুচি দিয়ে দিতে হবে। পেঁয়াজ ও রসুনকুচি সামান্য ভেজে শুঁটকি ও আলুর মিশ্রণটি পাত্রে ঢেলে দিয়ে অল্প পানি দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন। একটু পর ঢাকনা তুলে টমেটোকুচি দিয়ে আবার কিছুক্ষণ রান্না করতে হবে। মাঝারি আঁচে পুরো রান্নাটি হবে। ৫ থেকে ৭ মিনিট রান্নার পর আরেকটু পানি দিয়ে আরও ৭-৮ মিনিট রান্না করতে হবে। সম্পূর্ণ রান্না শেষ হলে চুলাটি বন্ধ করে দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে ধনেপাতার কুচি দিয়ে দিন। গরম–গরম আতপ চালের ভাতের সঙ্গে এই খাবার টেকনাফের প্রায় সবারই প্রিয়।
রেসিপি: সৈয়দা তাহমিনা খানম, সহকারী শিক্ষক, টেকনাফ বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল
আখনি বিরিয়ানি, চট্টগ্রাম
আখনি বিরিয়ানি
উপকরণ: ৩ কাপ মোটা সেদ্ধ চাল, গরুর মাংস ১ কেজি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন আধা কাপ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ ১ কপি কুচি, জিরাগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জায়ফল ২টি, জয়ত্রী ৩ টুকরা, লং ৮-১০টি, কালো গোলমরিচ ১০টি, সবুজ এলাচি ৮টি, দারুচিনি ৩টি, কবাব চিনি ৮-১০টি, ঘি ২ টেবিল চামচ, তেল ১ কাপ, লবণ ২ টেবিল চামচ (স্বাদমতো), চিনি আধা চা-চামচ, শাহি জিরা আধা চা-চামচ, আলু ৪টি (মাঝারি আকারের), নারকেলের বাটা আধা কাপ, গাজর ১টি, লেটুসপাতা ৪টি, লেবু ১টি, কাঁচা মরিচ ৭টি, পানি পরিমাণমতো, তেজপাতা ৩টি, দুধ ১ কাপ ও কেওড়াজল ১ চা–চামচ।
প্রণালি: প্রথমে মাংস ছোট বা মাঝারি আকারে কেটে নিতে হবে। তারপর পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। এরপর একটি পাত্রে মাংস নিয়ে আদাবাটা, রসুনবাটা, লাল মরিচের গুঁড়া, হলুদগুঁড়া, লবণ, চিনি, জিরাগুঁড়া, ধনেগুঁড়া দিয়ে আধা ঘণ্টা মেখে রাখুন।
সবুজ এলাচি, কালো এলাচি, দারুচিনি, জায়ফল, জয়ত্রী, দারুচিনি, শাহি জিরা, কবাব চিনি—সব মসলা একসঙ্গে হালকা আঁচে টেলে নিয়ে ব্লেন্ড করে নিন। চুলায় একটি প্যান বসিয়ে সয়াবিন তেল দিতে হবে। সঙ্গে দারুচিনি, তেজপাতা, ৪টি ছোট এলাচি ও ১টি বড় এলাচি দিয়ে তেলে ভেজে নিন। এর সঙ্গে আধা পেঁয়াজকুচি ভেজে নিতে হবে। হালকা ভাজা হয়ে গেলে মাংসগুলো ঢেলে দিতে হবে। এরপর নাড়ুন কিছুক্ষণ, তবে ঢাকনা দিয়ে ঢাকবেন না। নাড়তে নাড়তে গুঁড়া করা মসলাগুলো সব দিয়ে দিন, সঙ্গে আধা কাপ নারকেলবাটা, যা আখনির স্বাদ বাড়াবে। বাদামবাটাও চাইলে দেওয়া যায় ১ টেবিল চামচ করে।
এরপর ৫ মিনিট ঢাকনা দিয়ে কষিয়ে নিন। তেল ওপরে উঠে এলে বুঝতে হবে, মাংস কিছুটা কষে গেছে। সঙ্গে আড়াই কাপ পানি দিয়ে ৪০ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে। মাংস ৯০ শতাংশ সেদ্ধ হলেই চলবে।
এরপর ৩ কাপ মোটা সেদ্ধ চাল ধুয়ে মাংসের সঙ্গে ভালো করে মেশান। লবণ ও সাড়ে ছয় কাপ পানি এবং আধা কাপ দুধ দিয়ে চুলার আঁচ বাড়িয়ে ৫ মিনিট সেদ্ধ করুন। এবার গাজর ও আলু ছোট ছোট টুকরা করে হলুদ, লবণ দিয়ে মেখে একটু ভেজে নিয়ে চালের সঙ্গে মিশিয়ে দিন। একই সঙ্গে আধা কাপ দুধ, ২ টেবিল চামচ ঘি, ১ চা-চামচ কেওড়াজল ও ৭টি কাঁচা মরিচ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে চুলার আঁচ কমিয়ে রান্না করতে হবে ৪০ মিনিট পর্যন্ত।
রেসিপি: সাহেলা আবেদীন, উদ্যোক্তা, চট্টগ্রাম
মেজবানি চনার ডাল, চট্টগ্রাম
মেজবানি চনার ডাল
উপকরণ: ছোলার ডাল ২ কাপ, হাড়সহ গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, শর্ষের তেল ১ কাপ, ছোট এলাচি ৪টি, বড় এলাচি ২টি, দারুচিনি ৩ টুকরা, লবঙ্গ ৮টি, বাদামবাটা ১ টেবিল চামচ, জায়ফলগুঁড়া আধা চা-চামচ, জয়ত্রীগুঁড়া আধা চা-চামচ, স্টার অ্যানিস (তারা মৌরি) ১টি, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ২ টেবিল চামচ, মৌরিবাটা ১ চা–চামচ, সাদা শর্ষেবাটা ১ চামচ, হলুদের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া ১ টেবিল চামচ, গরমমসলার গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৫-৬টি, কাঁচা মরিচ ১০-১২টি, লবণ পরিমাণমতো, তেজপাতা ৪টি, পেঁয়াজ বেরেস্তা সিকি কাপ ও ভাজা জিরার গুঁড়া আধা চা-চামচ।
প্রণালি: তেল, পেঁয়াজ, গোটা গরমমসলা, গোটা শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ বাদে বাকি সব মসলা দিয়ে মাংস মাখিয়ে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। এর আগে থেকে ভিজিয়ে রাখা ছোলার ডাল, লবণ ও সামান্য হলুদ দিয়ে ১০ মিনিট সেদ্ধ করে নিতে হবে। এবার চুলায় একটি হাঁড়ি বসিয়ে তাতে তেল দিয়ে শুকনা মরিচ আর গোটা গরমমসলার ফোঁড়ন দিয়ে পেঁয়াজ হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে তাতে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে ভালোভাবে কষিয়ে রান্না করে নিতে হবে। মাংস মোটামুটি সেদ্ধ হয়ে এলে তাতে ছোলার ডাল দিয়ে কিছুক্ষণ নেড়ে চেড়ে পরিমাণমতো পানি দিতে হবে ঝোলের জন্য। নামানোর আগে কাঁচা মরিচ দিয়ে হালকা আঁচে কিছুক্ষণ দমে রেখে নামিয়ে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে সুস্বাদু মেজবানি ডাল।
পেঁয়াজ বেরেস্তা ও ভাজা জিরার গুঁড়া ছিটিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি: সানজিদা ইসলাম, রান্নাবিদ, চট্টগ্রাম
নারকেলি পোলাও, ভোলা
নারকেলি পোলাও
উপকরণ: নারকেল ২টি, পোলাওয়ের চাল ১ কেজি, এলাচি ৪টি, দারুচিনি ১ টুকরা, তেজপাতা ৩টি, ঘরে তৈরি নারকেল তেল (সয়াবিনও হতে পারে) ১ কাপ, পেঁয়াজকুচি ২ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, কাঁচা মরিচ ৫-৬টি, ঘি ১ চা-চামচ ও লবণ পরিমাণমতো।
প্রণালি: দুটি নারকেল কুরে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে বা পাটায় বেটে হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে দুই কেজি পরিমাণ দুধ তৈরি করতে হবে। উনুন জ্বালিয়ে হাঁড়িতে তেল দিন। গরম হলে পেঁয়াজকুচি ভেজে নিন। এক–তৃতীয়াংশ পেঁয়াজ তুলে রাখুন। পরে তেলের সঙ্গে ঘি ঢেলে একই সঙ্গে এলাচি, দারুচিনি, তেজপাতা, আদাবাটা, কাঁচা মরিচ ছিঁড়ে ছেড়ে দিয়ে সামান্য ভাজতে হবে। তারপরই পানি ঝরানো ধোয়া চাল হাঁড়িতে ছেড়ে ভাজতে হবে। চাল হালকা বাদামি রঙে ভাজা হলে দুধ দিতে হবে। দুধ দেওয়ার পরে একটু নাড়াচাড়া করে ঢাকনিতে হাঁড়ি ঢেকে দিতে হবে। ভাত উথলে উঠলে বা বলক এলে উনুনের জ্বাল কমিয়ে আনতে হবে। মাঝেমধ্যে নাড়তে হবে, যেন নিচে পুড়ে না যায়। ভাতের মাড় শুকিয়ে গেলে প্লেটে বেড়ে ভাজা পেঁয়াজ বা বেরেস্তা ছিটিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
রেসিপি: সানজিদা জাহান, গৃহিণী, ভোলা
চুইঝালে আচারি মাংস
চুইঝালে আচারি মাংস
উপকরণ: গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, পেঁপেবাটা ১ টেবিল চামচ, শর্ষের তেল পৌনে এক কাপ, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, শুকনা মরিচ ৬টি (আস্ত), শুকনা মরিচকুচি ৩টি, গোলমরিচের গুঁড়া ১ চা-চামচ, বিরিয়ানি মসলা আধা প্যাকেট, পাঁচফোড়নের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মেথিগুঁড়া ১ চা-চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা-চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া দেড় চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, জিরাবাটা ১ টেবিল চামচ, টক দই ৩ টেবিল চামচ, চুইঝাল ১৫০ গ্রাম (ছোট করে কাটা), আস্ত রসুন ৬টি, আদাকুচি ১ চা-চামচ, রসুনকুচি ১ চা-চামচ, শর্ষেবাটা ১ চা-চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: ভালোভাবে পরিষ্কার করা গরুর মাংস একটি পাত্রে নিতে হবে। তাতে পেঁপেবাটা, আদাবাটা, রসুনবাটা, জিরাবাটা, রাঁধুনি বিরিয়ানি মসলা, গোলমরিচের গুঁড়া, মেথিগুঁড়া, হলুদগুঁড়া, মরিচগুঁড়া, ধনেগুঁড়া, পাঁচফোড়নের গুঁড়া, টক দই ও স্বাদমতো লবণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে আধা ঘণ্টা রেখে দিন। এরপর কড়াইয়ে আধা কাপ শর্ষের তেল নিতে হবে। তেল গরম হলে তাতে পৌনে ১ কাপ পেঁয়াজ, আস্ত শুকনা মরিচ দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিতে হবে। ভাজা হয়ে গেলে তাতে ম্যারিনেট করা মাংস দিয়ে দিতে হবে। তারপর আধা কাপ পানি নিয়ে ভালো করে নেড়ে ঢেকে দিতে হবে।
পানি একটু টেনে এলে চুইঝাল টুকরা, আস্ত রসুন ও শর্ষেবাটা দিন। ভালোভাবে নেড়ে আবার এক কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
এদিকে বাগাড় দেওয়ার জন্য অন্য একটি ফ্রাইপ্যানে সিকি কাপ শর্ষের তেল দিতে হবে। তেল গরম হলে তাতে বাকি পেঁয়াজকুচি, রসুনকুচি ও আদাকুচি দিয়ে বাদামি করে ভেজে নিন। ভাজা হয়ে গেলে মাংসের মধ্যে ঢেলে দিয়ে ভালোভাবে নেড়ে চুলা মাঝারি আঁচে দিয়ে আরও ১০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে। ১০ মিনিট পর দেখা যাবে, মাংসটা একেবারে কষা কষা হয়ে গেছে। এবার নামিয়ে নিন।
রেসিপি: সৈয়দা আনোয়ারা রহমান, গৃহিণী, খুলনা
রাজহাঁসের মাংস
রাজহাঁসের মাংস
উপকরণ: রাজহাঁস ১টি (২ থেকে ৩ কেজি), সয়াবিন তেল ২৫০ মিলিলিটার, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, রসুন ২ টেবিল চামচ, আদা ২ টেবিল চামচ, ধনেগুঁড়া ২ টেবিল চামচ, ভাজা জিরার গুঁড়া ২ টেবিল চামচ, এলাচি, লবঙ্গ ও গোলমরিচ ১০টি করে, দারুচিনি কয়েক টুকরা, হলুদ ও লবণ পরিমাণমতো, কবাব চিনি ১০টি, শাহি জিরা ১ চিমটি, জয়ত্রী ও জায়ফল অর্ধেক করে, স্টার অ্যানিস (তারা মৌরি) ১টি, তেজপাতা ২টি, শুকনা মরিচগুঁড়া ২ চামচ, কাঁচা মরিচ ৮টি, নারকেলের দুধ আধা লিটার এবং চুইঝাল ২০০ গ্রাম।
প্রণালি: মাংসের সঙ্গে তেল ও সব মসলা মেখে ৩০ মিনিট রাখতে (ম্যারিনেট) হবে। তারপর কড়াই বা হাঁড়িতে নিয়ে হালকা আঁচে চুলায় দিন। পানি ছাড়াই নাড়াচাড়া করতে হবে ১৫ মিনিট। মাংসের পানি কমে এলে নারকেলের দুধ দিন। এবার আধা ইঞ্চি লম্বা করে কেটে রাখা চুইঝাল মেশাতে হবে। আরও ১০ থেকে ১৫ মিনিট চুলায় জ্বালিয়ে নামাতে হবে। হয়ে যাবে যশোরের ঐতিহ্যবাহী রাজহাঁসের মাংস। ছিটা রুটির সঙ্গে গরম–গরম পরিবেশন করুন।
রেসিপি: মো. তৈমুম রহমান, ব্যাংকার, যশোর
সাবিত্রী মিষ্টি
সাবিত্রী মিষ্টি
উপকরণ: দুধ ৬ লিটার, পানি ১ কাপ, চিনি ২০০ গ্রাম ও ছানা ২৫০ গ্রাম।
প্রণালি: একটি পাত্রে ৬ কেজি দুধ ও ২০০ গ্রাম চিনি ঢেলে হালকা আগুনে জ্বাল দিতে হবে ২৫ মিনিট ধরে, যাতে দুধ ঘন হয়। এরপর নামিয়ে দুধের পাত্রটি ১ ঘণ্টা ধরে ঠান্ডা করতে হবে। ঠান্ডা হয়ে গেলে ছানা ও ঘন দুধ একটির সঙ্গে আরেকটি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। পরে সেগুলো হাতের তালুতে নিয়ে সাবিত্রী ছাঁচে ফেলে চাপ দিয়ে একটি একটি করে তৈরি করতে হবে।
রেসিপি: বিকাশ কুমার সাহা, স্বত্বাধিকারী, বাসুদেব অ্যান্ড গ্র্যান্ড সন্স, মেহেরপুর
নকশি পিঠা
নকশি পিঠা
উপকরণ: আতপ চালের গুঁড়া ১ কেজি, তেল ১ লিটার, গুড় ৫০০ গ্রাম, তেজপাতা ১টি, খেজুর কাঁটা ও ছাঁচ অথবা কাটা এক টুকরা টিন নকশার জন্য।
প্রণালি: আতপ চাল বেশ কিছুক্ষণ ভিজিয়ে পানি ঝরিয়ে নিয়ে গুঁড়া করতে হবে। একটি পাত্রে পানি গরম করুন। এতে পরিমাণমতো লবণ দিতে হবে। পানি ভালো গরম হলে চালের গুঁড়া দিয়ে খামির করে নিতে হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর খামিরটি ভালো করে মথে নিন। একটি শুকনা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে খামিরের ওপর রাখতে হবে যেন খামিরটি শক্ত হয়ে না যায়।
এবার খামির থেকে ছোট ছোট গোলা করতে হবে রুটির জন্য। কিন্তু রুটির মতো পাতলা হবে না একটু মোটা হবে। গোল করে বেলে খেজুর কাঁটা আর টিনসিল (নকশা কাটা টিন) দিয়ে নকশা এঁকে নিন।
কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে পিঠাগুলো ভেজে (সোনালি রং) গুড়ের শিরায় ছেড়ে দিন। শিরার জন্য ৫০০ গ্রাম খেজুরের গুড়ে ২ কাপ পানি ও ১টি তেজপাতা অল্প আঁচে চুলায় নাড়তে হবে। দুই আঙুলের মাঝে নিয়ে দেখতে হবে, আঠালো হয়েছে কি না। তবে বেশি আঠালো করা যাবে না।
রেসিপি: তাসলিমা মুজিব, উদ্যোক্তা, লিম’স ফুড, গাজীপুর
রোট পিঠা
রোট পিঠা
উপকরণ: রান্না করা গরুর মাংস আধা কেজি, চালের গুঁড়া ১ কেজি, রসুনবাটা ২ চা-চামচ, পেঁয়াজবাটা ৩ চা-চামচ, কাঁচা মরিচবাটা ২ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া ১ চামচ, জিরাগুঁড়া ১ চা-চামচ, শর্ষের তেল ২ টেবিল চামচ ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: চালের গুঁড়া শুকনা খোলায় ভেজে নিন। রান্না করা মাংসের সঙ্গে বাকি সব উপকরণ মিশিয়ে চালের গুঁড়া ঢেলে মেখে নিন। এবার জ্বলন্ত চুলায় কড়াই দিয়ে ১ টেবিল চামচ শর্ষের তেল দিন। হালকা গরম হলে মাখানো গোলা কড়াইয়ে ঢেলে ৫ মিনিট হালকা জ্বাল দিন। ওপরে এক টুকরা কলাপাতা দিয়ে ঢেকে দিন। চুলা থেকে কয়লার আগুন তুলে পাতার ওপর রাখুন। এভাবে ২ ঘণ্টা রেখে দিন। চুলা জ্বলবে হালকা আঁচে। ২ ঘণ্টা পর নামিয়ে কেটে পরিবেশন করুন।
রেসিপি: হালিমা খন্দকার, সহকারী শিক্ষক, আনেহলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ঘাটাইল, টাঙ্গাইল
চ্যাপা শুঁটকির পুলি
চ্যাপা শুঁটকির পুলি
উপকরণ: চ্যাপা শুঁটকি ৭টি, পেঁয়াজকুচি আধা কাপ, রসুনকুচি আধা কাপ, মরিচ ৫-৭টি, হলুদ ও ধনেগুঁড়া স্বাদমতো, আস্ত কাঁচা মরিচ কয়েকটি, শর্ষের তেল পরিমাণমতো, কুমড়াপাতা ১৪টি ও লবণ স্বাদমতো।
প্রণালি: প্রথমে চ্যাপা শুঁটকি ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। পেঁয়াজ-রসুন কেটে টুকরা করে রাখতে হবে। তাওয়ায় অল্প তেল দিয়ে চ্যাপা শুঁটকি হালকা ভেজে নিতে হবে। তারপর অল্প তেল দিয়ে পেঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ ও ধনেগুঁড়া ভুনা করে নিন। গুঁড়া মসলা যাতে পুড়ে না যায়, সে জন্য অল্প পানিও দেওয়া যেতে পারে। পরে সবকিছু তুলে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে মাখাতে হবে। এটা হলো ভর্তা। এবার কুমড়াপাতা ধুয়ে ভালো করে মুছে তার ভেতর এই ভর্তা দিয়ে মুড়িয়ে সেঁকা তেলে ভাজতে হবে।
এরপর লেবু ও কাঁচামরিচ দিয়ে পরিবেশন করুন চ্যাপা শুঁটকির পুলি।
রেসিপি: ফাতেমাতুজ জোহরা, গৃহিণী, কিশোরগঞ্জ
হাঁস-বাঁশ
হাঁস-বাঁশ
উপকরণ: হাঁসের মাংস ১ কেজি, ছোট ছোট টুকরা করে নেওয়া বাঁশের কোড়ল ২০০ গ্রাম, পেঁয়াজকুচি ১ কাপ, আদাবাটা ১ চা-চামচ, রসুনবাটা ১ চা-চামুচ, পেঁয়াজবাটা ২ চা-চামুচ, লবণ পরিমাণমতো, হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ, মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ, ধনেগুঁড়া ১ চা-চামুচ, জিরাগুঁড়া দেড় চা-চামচ, আস্ত জিরা আধা চা-চামচ, পাঁচফোড়ন আধা চা-চামচ, শর্ষের তেল ১ কাপ, গরমমসলা পরিমাণমতো ও আস্ত কাঁচা মরিচ ৪টি।
প্রণালি: হাঁসের মাংস পরিষ্কার করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে। বাঁশের কোড়ল ছোট ছোট টুকরা করে সামান্য পানি ও সামান্য লবণ দিয়ে ১৫ মিনিট সেদ্ধ করুন।
এখন চুলায় কড়াই গরম করে শর্ষের তেল দিন। তেল ভালোমতো গরম হলে আস্ত জিরার ফোড়ন দিতে হবে। এক কাপ পেঁয়াজকুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভেজে নিতে হবে। পেঁয়াজ বাদামি হয়ে এলে এর মধ্যে এক টুকরা দারুচিনি, তিন-চারটি এলাচ, দুটি তেজপাতা, তিনটি লবঙ্গ, তিন-চারটি কালো গোলমরিচ দিয়ে সুন্দর ঘ্রাণ বের হওয়া পর্যন্ত ভাজতে হবে। এরপর সামান্য পানি আর লবণ দিয়ে বাকি মসলাগুলো একে একে তেলের মধ্যে দিন।
মসলায় তেল উঠে এলে মসলা কষানো হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে হাঁসের মাংস ও বাঁশ কোড়লের টুকরাগুলো দিয়ে ভালোমতো মিশিয়ে নিতে হবে। মেশানো হয়ে গেলে ঢাকনা দিয়ে চুলায় মধ্যম আঁচে রেখে দেব ১০ মিনিট। এরপর ঢাকনা খুলে মাংস নেড়েচেড়ে দিতে হবে। এই সময়ের মধ্যে মাংস থেকে পানি বের হয়ে যাবে। মাংস ভালোমতো সেদ্ধ হওয়ার জন্য দুই কাপ পানি দিয়ে আবার ঢাকনা দিয়ে রাখব। পানি শুকিয়ে হাঁস আর বাঁশ সেদ্ধ হয়ে গেলে কাঁচা মরিচ ছটিয়ে দিয়ে চুলা থেকে নামিয়ে ফেলতে হবে।
রেসিপি: নাহিমা সুমি, পরিচালক, ঘরগিন্নি, সিলেট
ছানার পায়েস
ছানার পায়েস
উপকরণ: দুধ ২ লিটার, ভিনেগার ১ টেবিল চামচ, ময়দা সামান্য, এলাচি ৫টি ও চিনি স্বাদমতো।
প্রণালি: প্রথমে পুরো দুধ জ্বাল দিতে হবে। সেখান থেকে অর্ধেক পরিমাণ দুধ আলাদা করে ছানা তৈরির জন্য ভিনেগার মেশান। ছানা তৈরি হলে ছেঁকে নিন। এবার ছানায় সামান্য পরিমাণ ময়দা মিশিয়ে ছোট ছোট গুটি করে নিতে হবে। অবশিষ্ট দুধ উচ্চ তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ঘন ক্ষীর করতে হবে। এরপর ছানার গুটিগুলো চিনির শিরায় ভিজিয়ে আগে তৈরি করা ক্ষীরের মধ্যে ছেড়ে অল্প আঁচে জ্বাল দিন। কয়েকটি এলাচি দিন। ঠান্ডা হলে পরিবেশন করুন।
রেসিপি: রিপন চন্দ্র ভদ্র, মিষ্টি কারিগর, দুর্গাচরণ মিষ্টান্ন ভান্ডার, শেরপুর
নদীর মাছ, হাগরাই আলু আর করলার চচ্চড়ি
নদীর মাছ, হাগরাই আলু আর করলার চচ্চড়ি
উপকরণ: সতেজ করলা ৩০০ গ্রাম, হাগরাই আলু ২৫০ গ্রাম, নদীর গোলসা মাছ ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ১০টি, কাঁচা মরিচ ২০টি, হলুদগুঁড়া পরিমাণমতো, লবণ স্বাদমতো, জিরাবাটা ১ চা-চামচ, সয়াবিন তেল ১ কাপ ও ধনেপাতা পরিমাণমতো।
প্রণালি: গোলসা মাছ কেটে ভালো করে পরিষ্কার করে বাটিতে নিন। এরপর করলা ও হাগরাই আলু আলাদা বাটিতে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। একটি প্যানে পেঁয়াজকুচি, কাঁচা মরিচ, জিরাবাটা, লবণ, সয়াবিন তেল, হলুদের গুঁড়ার সঙ্গে কুচি করা করলা, হাগরাই আলু ভালোভাবে মাখিয়ে নিতে হবে।
এবার মাছ প্যানে ঢেলে আলতোভাবে মাখিয়ে নিয়ে পরিমাণমতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। প্রথমে চুলার আঁচ বেশি থাকবে। কিছুক্ষণ পর অল্প তাপে জ্বাল দিতে হবে। ২০ মিনিট পর মাছ থেকে তেল বের হয়ে ওপরে হালকা ভেসে উঠবে। তখন ধনেপাতাকুচি ছিটিয়ে দিতে হবে। ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মৃদু আঁচে ৫ থেকে ১০ মিনিট চুলায় রেখে নামিয়ে নিন।
রেসিপি: শেলী আহমেদ, গৃহিণী, বগুড়া
শোলকা
শোলকা
উপকরণ: পাটশাক একমুঠো, কচুপাতা ৪–৫টি, কচি শজনেপাতা একমুঠো, কুমড়াশাক ৪–৫টি (পাতা গুছিয়ে হাতের মুঠো ভর্তি করে নিয়ে কুচি কুচি করে কাটতে হবে), লবণ পরিমাণমতো, কাঁচা মরিচ ১০০ গ্রাম, রসুন ১০০ গ্রাম ও খাবার সোডা ১ চা–চামচ।
প্রণালি: প্রথমে অল্প পানি গরম করে সেখানে পরিমাণমতো লবণ, কাঁচা মরিচ, রসুন দিতে হবে। এগুলো সেদ্ধ হওয়ার পর ফুটন্ত পানিতে কুচি কুচি করে কাটা শাকগুলো ছেড়ে দিতে হবে। এরপর হাঁড়িটি ঢেকে দিন। অল্প কয়েক মিনিট গরম পানির মধ্যে শাকগুলো গলে গেলে শোলকাকে পিচ্ছিল করার জন্য এক চিমটি খাবার সোডা দিন। ১০-১২ মিনিট হালকা আঁচে নাড়তে হবে। এটি বানাতে কোনো ভোজ্যতেল, পেঁয়াজের প্রয়োজন হয় না। কাঁঠালের মৌসুমের সময় শোলকার মধ্যে কাঁঠালের সেদ্ধ করা বিচিও দেওয়া যায়। এতে স্বাদ হয় অসাধারণ।
রেসিপি: তামিমা আখতার,গৃহিণী, উত্তর কেল্লাবন্দ, রংপুর
রাসা বা ছ্যাকা
রাসা বা ছ্যাকা
উপকরণ: কচুর মুড়া বা মুখী আধা কেজি, লবণ, খাবার সোডা ১ টেবিল চামচ, আদাবাটা ১ টেবিল চামচ, রসুনবাটা ১ টেবিল চামচ, মরিচগুঁড়া দেড় টেবিল চামচ, হলুদগুঁড়া আধা টেবিল চামচ ও পানি।
প্রণালি: প্রথমে কচুর মুখী পরিষ্কার পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। এরপর ডেকচি বা কড়াইয়ে আধা কেজি কচুর মুখী নিন। এবার আদাবাটা, রসুনবাটা, হলুদগুঁড়া, মড়িচগুঁড়া, খাবার সোডা এবং পরিমাণমতো লবণ দিয়ে নেড়ে নিন। এবার পরিমাণমতো পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিতে হবে। হাঁড়ির তলায় যাতে লেগে না যায়, এ জন্য মাঝেমধ্যে নাড়তে হবে। একপর্যায়ে স্যুপের মতো রান্না হলে নামিয়ে নিন। রাসা রান্নার পর হালকা খয়েরি বা লালচে রং ধারণ করবে।
রেসিপি: রুবি বেগম, গৃহিণী, তেঁতুলিয়া, পঞ্চগড়