মস্তিষ্কের রক্ত সরবরাহ কোনো কারণে বিঘ্নিত হলে মস্তিষ্কের কিছু কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিংবা নষ্ট হয়—এটাই হলো ব্রেন স্ট্রোক। বিশেষ করে রক্তনালি বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গেলে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। এতে ব্রেনে পর্যাপ্ত পরিমাণ রক্ত ও পুষ্টি পৌঁছাতে পারে না, কারণ রক্তের মাধ্যমে এসব উপাদান ব্রেনে পৌঁছে থাকে। এতে অক্সিজেনের অভাবে ব্রেন টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার রক্তনালি ছিঁড়ে রক্তপাত হলেও স্ট্রোক হয়। এ ক্ষেত্রে ব্রেনে রক্ত জমে থাকে।
স্ট্রোক-পরবর্তী অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরীরের এক পাশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় এবং কারও কারও কথা বলতে সমস্যা হয়। খাবার গিলতে সমস্যা হতে পারে। কিছু কিছু মানুষের চোখেও সমস্যা দেখা দেয়। ব্রেনের ক্ষতিগ্রস্ত অংশের ওপর নির্ভর করে শরীরে সমস্যা দেখা দেয়। কারণ, ব্রেনের একেক অংশ শরীরের একেক অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
আমাদের ব্রেনের ডান দিকের অংশ শরীরের বাঁ দিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে ও বাঁ দিকের অংশ শরীরের ডান দিকের অংশকে নিয়ন্ত্রণ করে। সুতরাং কারও যদি ব্রেনের ডান দিকে স্ট্রোক হয়, তাহলে শরীরের বাঁ পাশের হাত-পায়ে প্যারালাইসিস হবে। যেহেতু আমাদের কথা বলা নিয়ন্ত্রণ করে ব্রেনের বাঁ অংশ, সেহেতু কারও যদি বাঁ পাশে স্ট্রোক হয়, তাহলে ডান হাত-পায়ে প্যারালাইসিস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কথা বলতেও সমস্যা হতে পারে।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
ত্বরিত চিকিৎসা ও বিভিন্ন ওষুধ রোগীর জীবন বাঁচানোসহ স্থিতিশীল করতে পারলেও তাঁর শরীরের স্বাভাবিক কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনতে দীর্ঘদিন লেগে যায়। এই ক্ষেত্রেই শুরু ফিজিওথেরাপি। একজন ফিজিওথেরাপিস্টের মূল লক্ষ্যই হলো স্ট্রোক-পরবর্তী সমস্যাগুলো নির্ণয় করে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা ফিরিয়ে নিয়ে আসা। এর জন্য দরকার সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা। তাই কেউ স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে অতি দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাবেন এবং রোগী কিছুটা স্ট্যাবল হলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করবেন। মনে রাখবেন স্ট্রোকের পর যত তাড়াতাড়ি ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা যাবে, রোগীর কার্যক্ষমতা ফিরে আসার সম্ভাবনা তত বেশি থাকে।
ভুল ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা রোগীর জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। বর্তমানে অত্যাধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
যথাযথ ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে পক্ষাঘাতগ্রস্ত অঙ্গের নড়াচড়া, মুখ বেঁকে যাওয়া ও গিলতে পারার সমস্যা দূর করা হয়। ফিজিওথেরাপি না করা হলে ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গ শক্ত হয়ে যেতে পারে। স্পিচ থেরাপির মাধ্যমে কথা বলার ক্ষমতা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।
[FA]pen[/FA] লেখক: এম ইয়াছিন আলী, ফিজিওথেরাপিস্ট, চিফ কনসালট্যান্ট, ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল