পেগাসাস স্পাইওয়্যারের কারণে ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ তাঁর মুঠোফোন ও নম্বর বদলেছেন বলে জানানো হয়েছে একাধিক প্রতিবেদনে, এএফপি
রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের স্মার্টফোনে আড়ি পাততে পেগাসাস নামের স্পাইওয়্যার ব্যবহার করা হয়। ১৭টি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে একযোগে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে সে খবর সামনে আসে।
ইসরায়েলের এনএসও গ্রুপের তৈরি পেগাসাস স্পাইওয়্যার বেশ আলোচিত বলে খবরটি সবার নজরে এসেছে। তবে স্পাইওয়্যার বা অন্যান্য ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে সাইবার হামলার চেষ্টা কিন্তু থেমে নেই। খুব বড় ঘটনা না হলে কিংবা ভুক্তভোগী কম হলে, সেসব খবর আলোচনায় থাকে না।
শুরুতে পেগাসাস স্পাইওয়্যারের স্মার্টফোনে প্রবেশ করার প্রক্রিয়াটি খুব একটা জটিল ছিল না। এসএমএস বা আই মেসেজের মাধ্যমে ফোনে একটি ওয়েব পেজের লিংক পাঠানো হয়। প্রাপক তাতে ক্লিক করলে ফোনে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে ব্যবহারকারীর তথ্য হ্যাকারের কাছে পাঠিয়ে দেয়।
সংবাদমাধ্যমে আমরা অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমের স্মার্টফোনের তুলনায় আইফোনের মাধ্যমে পেগাসাস ছড়িয়ে পড়ার খবর বেশি দেখেছি। তবে কোনো ডিভাইসই শতভাগ নিরাপদ নয়। এখন প্রশ্ন হলো, কীভাবে স্পাইওয়্যারের আক্রমণ থেকে আপনার ফোন নিরাপদ রাখবেন।
দূরের ওই ভবনেই এনএসও গ্রুপের প্রধান কার্যালয়, এএফপি
পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তৈরি হয়নি। সেদিক থেকে দেখলে, বেশির ভাগ মানুষের ফোনেই তা পাওয়া যাবে না। তবে আরও অনেক ধরনের ম্যালওয়্যার তৈরির উদ্দেশ্যই থাকে যত বেশি সম্ভব স্মার্টফোনে তা ছড়িয়ে দেওয়া। আর সব ক্ষেত্রেই নিরাপদ থাকার প্রক্রিয়ার সিংহভাগ হলো নিজে সচেতন হওয়া। সে জন্য আপনি যা যা করতে পারেন—
১. মুঠোফোনে যেকোনো ধরনের বার্তায় কোনো লিংক এলে দুটি জিনিস দেখুন। এক. যিনি পাঠিয়েছেন, তাঁকে আপনি বিশ্বাস করেন কি না। দুই. যে লিংক এসেছে, সেটি নির্ভরযোগ্য কোনো ওয়েবসাইটের কি না। পেগাসাস ছড়িয়েছে আই মেসেজে আসা ওয়েব লিংকের মাধ্যমে। বেশির ভাগ সাইবার অপরাধীরা কিন্তু এই পদ্ধতি ব্যবহারের চেষ্টা করেন।
২. আপনার ফোনের অপারেটিং সিস্টেম থেকে শুরু করে সব অ্যাপ সর্বশেষ সংস্করণে হালনাগাদ রাখুন। এ কথা আপনি হয়তো শতবার শুনেছেন। তবে সফটওয়্যারের সর্বশেষ হালনাগাদে নিরাপত্তার সর্বশেষ কৌশলও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
৩. ম্যালওয়্যার তৈরিতে সময়, শ্রম ও অর্থের খরচ কম হয় না। এরপর সেটি ব্যবহারকারীর স্মার্টফোনে ছড়িয়ে দিতে পারলে তবেই নজর রাখার সুযোগ পায় হ্যাকার। এটা তো গেল ভার্চ্যুয়াল দিক। ‘ফিজিক্যাল’ দিকটাও মাথায় রাখুন। যে কেউ যেন আপনার ফোন ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য পিন কোড, ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস লকের মতো অপশন সচল রাখতে ভুলবেন না।
৪. ফ্রি পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার না করাই ভালো। বিশেষ করে যখন গোপনীয় তথ্য ব্যবহার করছেন। আর ব্যবহার যদি করতেই হয়, তবে ভিপিএন একটি ভালো সমাধান হতে পারে।
৫. সম্ভব হলে স্মার্টফোনে থাকা সংবেদনশীল তথ্য এনক্রিপ্ট করে রাখুন। আর যে ক্ষেত্রে দূর থেকে তথ্য মুছে ফেলার সুবিধা রিমোট ওয়াইপ আছে, সে সব ক্ষেত্রে সেটি সচল রাখুন। এতে আপনার ফোনটি হারিয়ে গেলে বা চুরি হলে অন্তত হাতে একটা অপশন থাকবে।