শিশুরা সব বিষয়েই প্রশ্ন করে। মা–বাবার উচিত শিশুর উপযোগী করে তাকে সত্য ও সঠিকভাবে বিষয়টি বোঝানো। নাহলে পরে শিশু যখন সঠিক বিষয়টি জানবে, থখন পরিবারের প্রতি অনাস্থা তৈরি হবে। একই সঙ্গে নানা জায়গা থেকে শিশু নানা ধরনের উত্তর থেকে সঠিক বিষয়টি বুঝতে ভুল পথে যেতে পারে। শিশুরা প্রায়ই করে এমন ৫টি প্রশ্ন ও তার উত্তর এখানে দেওয়া হলো। সেই সঙ্গে কী বলা যাবে না, সেটাও জেনে নিন।
প্রশ্ন: স্কুলে কেন যেতে হবে?
সন্তানকে বলুন, স্কুলে বন্ধু তৈরি হয়
যা বলবেন: স্কুলে আমরা পড়ালেখা শিখতে যাই। স্কুল খুব মজার জায়গা। সেখানে এমন অনেক কিছুই জানা যায়, যেটা আর অন্য কোথাও জানার সুযোগ নেই। দিনে কেন সূর্য থাকে আর রাতে কোথায় যায়, এটা তোমার জানতে ইচ্ছে করে না? স্কুলে গেলে জানতে পারবে। স্কুলে যাওয়ার আরও অনেক সুবিধা আছে। স্কুলে বন্ধু তৈরি হয়। স্কুল থেকে আমরা শিখি কীভাবে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে হয়। স্কুলে খেলাধুলা করি, যা আমাদের শরীরের জন্য ভালো। স্কুল আমাদের পড়ালেখার পাশাপাশি নিয়মানুবর্তিতা, বন্ধুত্ব ও সামাজিকতা শেখায়, যা ভবিষ্যতে আমাদের সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে।
যা বলা যাবে না: ‘স্কুলে না গেলে তোমাকে সবাই খারাপ বলবে।’ অথবা ‘তোমার অনেক টাকা হবে না।’ এ ধরনের কথা বলা ঠিক নয়।
প্রশ্ন: আমি কি মরে যাব? বা তোমরা কি মারা যাবে?
যা বলবেন: পৃথিবীতে প্রত্যেক প্রাণীই মারা যাবে। তবে সেটা কবে হবে, তা কেউ জানে না। সুস্থতা আমাদের দীর্ঘজীবী করতে পারে। সুস্থ থাকার জন্য শরীর ও মনের যত্ন নিতে হবে। শরীরের জন্য ক্ষতিকর খাবার খাওয়া যাবে না। নিয়ম মেনে ঘুমাতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
যা বলবেন না: ‘দুষ্টুমি না করলে তুমি মারা যাবে না।’ কিংবা কোনো কাজ দিয়ে বললেন, ‘এটা করলে তোমার মৃত্যু হবে না।’ এ ধরনের কথা শিশুকে কখনোই বলবেন না।
প্রশ্ন: আমাকে ঘুমাতে হবে কেন?
ঘুম শরীরের জন্য উপকারী, একথা শিশুকে বলতে পারেন। মডেল: জোয়েনা ও আফসানা
যা বলবেন: সারা দিন তুমি যে পড়ালেখা করো, খেলাধুলা করো, তাতে তোমার শরীরের শক্তি ক্ষয় হয়। কেবল খেয়ে সেই শক্তি পূরণ করা সম্ভব নয়। ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় আর সেই ক্ষয় হওয়া শক্তিকে পূরণ করতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন ঠিকমতো পড়ালেখা আর খেলাধুলা করে নিজেকে সতেজ ও সবল রাখার জন্য তোমাকে ঘুমাতেই হবে। তবে বিশেষ করে মনে রাখতে হবে যে ঘুমটা যেন রাতে হয়। রাতে জেগে থাকা আর দিনে অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুম—শরীর ও মনের জন্য ক্ষতিকর।
যা বলবেন না: রাতে না ঘুমালে তোমাকে ভুত এসে ধরে নিয়ে যাবে। এমন কথা বলবেন না।
প্রশ্ন: পোশাক কেন পরতে হবে?
যত বেশি পারা যায় শিশুর সঙ্গে মিশতে হবে, কথা বলতে হবে। মডেল: তুষ্টি ও অহনা
যা বলবেন: আমদের দেহের বেশ কিছু অংশ আছে, যা ঢেকে রাখা অত্যন্ত জরুরি। পোশাক আমাদের সেই অংশকে ঢেকে রাখে। যদি তুমি প্যান্ট না পরো, তখন সবাই মনে করবে তুমি বড় হওনি, তোমার যথেষ্ট বুদ্ধি হয়নি। তুমি যদি প্যান্ট না পরো, তাহলে তোমাকে দেখে অন্যরাও লজ্জা পাবে, বিরক্ত হবে, তোমার সম্পর্কে খারাপ ধারণা করবে। আর প্যান্ট না পরলে দেখবে তোমারও লজ্জা লাগছে। প্যান্ট পরলে তোমাকে দেখতে ভালো লাগবে, তোমার শীত করবে না। এসব কারণে তোমাকে অবশ্যই প্যান্ট পরতে হবে।
যা বলবেন না: শিশুর যৌনাঙ্গ নিয়ে কোনো ধরনের ভয়ভীতিকর কথা বলবেন না।
প্রশ্ন: না খেলে কী হয়?
শিশুকে বোঝাতে হবে, খাবার কেন জরুরি
যা বলবেন: বেঁচে থাকার জন্য মানুষকে খেতেই হয়। না খেলে বেঁচে থাকা যাবে না। খাওয়াদাওয়া আমাদের শক্তি দেয়, পুষ্টি জোগায়। আমাদের দেহ ও মনকে সচল রাখে। আবার যেকোনো খাবার খেলেই কিন্তু হবে না। পুষ্টিকর, সুষম আর নিরাপদ খাবার খেতে হবে। আর খাবার অবশ্যই নিয়ম মেনে সময়মতো পরিবারের সবাই একসঙ্গে বসে খেতে হবে। টিভি, মুঠোফোন বা কার্টুন দেখে দেখে খাওয়া যাবে না।
যা বলবেন না: না খেলে তোমাকে বাইরে ফেলে দেব। তুমি এই বাড়িতে থাকতে পারবে না। তোমাকে সবাই খারাপ বলবে। এসব কথা বলে শিশুকে ভয় দেখাবেন না।
[FA]pen[/FA] লেখক: ডা. আহমেদ হেলাল | মনোচিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপক, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা