What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

সৌরভ by cuck son (1 Viewer)

Ochena_Manush

Special Member
Elite Leader
Joined
Aug 12, 2022
Threads
516
Messages
29,170
Credits
550,684
LittleRed Car
Automobile
Strawberry
Audio speakers
বাঁ হাতের কাঁপন টা আজকাল বেশ ঘন ঘন হচ্ছে, এই যেমন এখন হচ্ছে , আর এ জন্যই সকাল সকাল ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। দ্রুত ডাক্তার দেখানো দরকার কিন্তু ডাক্তার দেখাতে ইচ্ছে হয় না। কারন ডাক্তার এর কাছে গেলেই মন খারাপ হয়ে যায় , এবং সেই মন খারাপ অনেকদিন স্থায়ী হয় । এমনিতে বেশ আছি , খাচ্ছি দাচ্ছি, ঘুরছি ফিরছি , ঐ বিশ্রী রোগটার কথা খুব একটা মনে পরে না । কিন্তু ডাক্তার এর কাছে গেলেই ডাক্তার পই পই করে সব মনে করিয়ে দেয় । জেনো আমাকে কে মনে করিয়ে দিয়ে বেশ মজা পায় ডাক্তার বাবু । তাই ঠিক করেছি কিছুতেই আর ঐ ডাক্তার এর কাছে যাবো না । মাঝে মাঝে অবশ্য মনে হয় একটা মেয়ে ডাক্তার হলে ভালো হতো , মেয়ে ডাক্তারদের নিশ্চয়ই মনে মায়া দয়া বেশি থাকবে । খারাপ রোগের কথা বলার সময় ও মমতা মিশিয়ে বলবে ।


মশারির নিচে শুয়ে শুয়েই এসব ভাবছিলাম , কিন্তু আর বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারবো বলে মনে হচ্ছে না , কারন কলিং বেল বাজছে, একাধারে বেজেই চলছে । এরকম নাছোড় বান্দা একজন ই আসে আমার এর কাছে , সেটা হচ্ছে মতিন । আমার ছোট বেলার বন্ধু । ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট ছিলো , ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর কি হলো , বাড়ির পাশের বস্তির এক মেয়ে কে বিয়ে করে ফেলল । সেই থেকে বাড়ি ছাড়া , ওর বাবা ওকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলো । আমি নিজেও ব্যাপারটা জানতাম না , মতিন এর ক্লাসে আসা বন্ধ দেখে মনে করেছিলাম হয়ত কোথাও ঘুরতে গেছে । কিন্তু একদিন হঠাত সন্ধার সময় মতিন বাড়ি এসে হাজির । তখন আমি একাই থাকি , বাবা মারা জাওয়র পর ছোট বোন সুমি কে ওর বড় খালা নিয়ে গিয়েছিলো , বিয়ের চেষ্টা করা হচ্ছিলো ওর ।

“ দোস্ত একটা উপকার করতে হবে , যদি করিস সারাজিবন তোর কেনা গোলাম হয়ে থাকবো” প্রায় ঘণ্টা খানেক অন্য কথা বলার পর বলেছিলো মতিন । আমি তেমন অবাক হইনি , কারন এই ধরনের কথা প্রায় বলত মতিন । “ কি উপকার? টাকা নাই , টাকা দিতে পারবো না” নির্লিপ্ত ভাবে বলেছিলাম আমি ।

“ না দোস্ত টাকা না , আশ্রয় দিতে হবে” আকুল হয়ে বলেছিলো মতিন ।

“ ক্যান তোর বাড়িতে কি হয়েছে?”

“ বের করে দিসে”

“ কেনো?”

“ সেটা একটু পরে বলছি , আগে বল আশ্রয় দিবি”

“ আরে এমন করে বলছিস কেনো থাক না যতদিন ইচ্ছা” বেশ অবাক হয়েছিলাম ওর আচরনে ।

আমার অনুমতি পেয়েই ঘর থেকে দৌরে বেড়িয়ে গিয়েছিলো মতিন । ফিরে এসেছিলো মিনিট পনেরো পর , সাথে ১৪-১৫ এর একটা মেয়ে , গায়ে সস্তা চকমকে রঙ এর একটা সারি । মাথায় বড় করে ঘোমটা দেয়া । ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যদিও বাড়িতে আমি একাই থাকি , অভিবাবক কেউ নেই যে কৈফিয়ত দিতে হবে , কিন্তু তখনো আমি এই স্বাধীন জীবনে সম্পূর্ণ অভ্যস্ত হয়ে উথিনি
“ তোর ভাবি হয়” হাঁসি মুখে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো মতিন । রাজ্যের প্রস্ন ঘুরপাক খেলেও মুখে কিছুই বলতে পারিনি ।
“ খুব ভালো চা করতে পারে তোর ভাবি” বউ কে দার করিয়ে রেখেই বিছানায় হেলান দিয়ে বসে বলেছিলো মতিন। তারপর বৌয়ের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো “যাও চট করে চা করে নিয়ে আসো , চা খাইয়ে দেবর এর মন জয় করে নাও… হা হা হা”


ক্রিইইইন ক্রিইইইইন , হ্যা মতিন ছাড়া আর কেউ না , । তাই ডান হাত দিয়ে মশারি আলগা করে , অনেকটা হেঁচোর পেচর করে বিছানা থেকে উঠে পরি । মতিন এর বউ আর এখন নেই । ঐ মেয়ে ওকে ফেলে চলে গেছে। ঠিক মতো ভাত কাপড় দেয়ার মুরদ যে মতিন এর নেই সেটা ওইটুকু মেয়ে বুঝে গিয়েছিলো । মেয়েটার নাম যে কি ছিলো মনে করার চেষ্টা করলাম কিন্তু মনে আসছে না । মন্ডা , বা মন্ডি এই টাইপ কিছু ছিলো । মাস খানেক এ বাড়িতে থাকার পর , মেয়েটি আমার সাথে অনেক ফ্রি হয়ে গিয়েছিলো । এটা সত্যি ছিলো যে মেয়েটি দারুন চা বানাতে পারত , জিজ্ঞাস করলে বলত “ চা ওলার মাইয়া চা বানাইতে পারুম না তো কি পারুম? নাইস দিতে?” আর খিল খিক করে হাসত । মেয়েটা নাচ কে নাইস বলত , আমি অবাক হয়ে দেখতাম মেয়েটিকে । যেমন দেখতে সুন্দর ছিলো তেমন সুন্দর হাঁসি ছিলো । টাকা ওয়ালা বাবার ঘরে জম্ন হলে মেয়েটির ভাগ্য হয়ত অন্নরকম হতো ।

মেয়েটি আমাকে প্রায় বলত , “ আপনারে আমার আপন ভাইয়ের মতন মনে হয় । আপ্নের উপর বইয়া বইয়া খাইতাসি , এইটা আমার ভালা লাগে না”

আমি বলতাম “ ভাই বলছো আবার বলছ আমার উপর বসে বসে খাচ্ছো এমন বলছো কেনো”

“ আমি নাইলে আপ্নের বইন , কিন্তু ঐ মতিন্নারে আপ্নে খাওয়াইবেন ক্যান” রেগে গিয়ে বলত মেয়েটি

“ কি করবো ?”

“ ঘাড় ধইরা বাইর কইরা দেন” নির্লিপ্ত ভাবে বলত মেয়েটি , আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করতাম

“তোমার কি হবে?”

“ আমাগো আবার কি হইবো , আমারা হাত চালাইয়া খাইতে জানি , আপনের বন্ধুর মতন নিষ্কর্মা না , খাওন পিদ্দন এর অভাব হইবো না”

তবে মতিন কে আমার ঘাড় ধরে বের করতে হয়নি , একদিন সকালে উঠে দেখি মেয়েটি নেই , সাথে আমার ছোট বোন এর কিছু জামা কাপড় আর কিছু জিনিস পত্র ও গায়েব। অবাক হয়েছিলাম খুব , তবে তারচেয়ে বেশি অবাক হয়েছিলো মতিন এর আচরন দেখে , কিছুই হয়নি এমন ভাব করে ছিলো মতিন । এর পর প্রায় এক সপ্তার মতো মতিন আমার বাড়িতে ছিলো দিনের বেলা স্বাভাবিক থাকতো আর রাতে বালিসে মুখ গুজে কাঁদত ।


“ কিরে সালা দরজা খুলতে এত সময় লাগে?”

যা ভেবে ছিলাম তাই , মতিন এসেছে , ওকে দেখলে আমার নিজেকে খুব বয়স্ক মনে হয় । মাথায় চুল নেই , মুখের চামড়া কুচকে গেছে কয়েক যায়গায়, দেখে মনেই হয় না ওর বয়স মাত্র ৩২ । পরনে একটা পুরাতন সাফারি কোট , এই কোট এর আবার বিশাল ইতিহাস , ওর কোন এক স্যার নাকি খুব সখ করে এটা নিজের জন্য বানিয়েছিলো , বউ এর পছন্দ হয়নি শুনে রাগে দুক্ষে মতিন কে দিয়ে দিয়েছিলো ।


“ এত সকালে কি মনে করে এলি” আমি উল্টো প্রশ্ন করাল্ম , বা হাত টা এখন আর টের পাচ্ছি না , মনে হচ্ছে আমার হাত নেই ।

“ আছে বন্ধু , আছে , আগে চা খাওয়াও তারপর বলছি” খুব রহস্য করে বলল মতিন , আমার কাছে অবশ্য এটা কোন রহস্য না , আমি জানি হয়ত নতুন কোন স্কিম এর সন্ধান পেয়েছে । আমার কাছে টাকা চাইতে এসেছে । এক বছরে টাকা পাচ গুন হবে , আর সেই লাভের টাকা অর্ধেক ওর অর্ধেক আমার । মতিন কে আমি কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারি না যে আমার কাছে টাকা নেই।

“ টাকা নেই” আমি সোজা বলে দিলাম । এক হাত নেই এমন অনুভূতিটা আমাকে বেশ তাড়িত করে রেখছে । মতিন এর মুখ দেখে মনে হলো খুব আহত হয়েছে , কিন্তু নিমেষেই সেই ভাব দূর করে ফেলল।

“ স্কিম টা খুব ভালো , আর এর জন্য তোকে বাড়িটা বিক্রিও করতে হবে না , ওরা তোর যায়গায় এই পুরনো বিল্ডিং ভেঙ্গে নতুন হাইরাইজ বিল্ডিং করে দেবে , অর্ধেক ফ্লাট তোর অর্ধেক ওদের , আমি সুধু দালালি পাবো আর একটা ফ্লাট”

হ্যা ইদানিং এই জিনিসটা খুব শুরু হয়েছে । তবে ফ্রড আছে প্রচুর এই লাইনে , এসব নিয়ে নাটক সিনেমা ও হচ্ছে ।

“ আমি একা মানুষ এত ফ্লাট দিয়ে কি করবো “ আমি বললাম

“ একা থাকবি ক্যান , বিয়ে থা করবি , আমার এক চাচা আছে গ্রামে , ওনার মেয়ে , নাম নিলুফার , যেমন সুন্দরী , তেমন গুনবতি” মতিন দিগুন উৎসাহ নিয়ে বলল ।
“ তুই জানিস আমার অবস্থা” আমি কাতর গলায় বললাম , কেউ যখন আমার অবস্থা জেনেও আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখায় তাহলে আমার খুব কষ্ট হয় ।

“ ধুর , বা হাত কাঁপে তো কি হয়েছে , নিলুফার এর মতো মেয়ে পেলে সব ঠিক হয়ে যাবে” মতিন আমার কথা কানেই দিলো না।

“ চাচার গ্রামে বিশাল সম্পদ , বাড়িতে পুকুর , বিশাল গেরস্থি , তোকে একদিন নিয়ে যাবো” এসব আরও নানা ধরনের বকর বকর করা শেষে , আগামি সপ্তায় বাড়ির দলিল ঠিক রাখতে বলে বিদায় নিলো মতিন ।
 
[HIDE]


আমি একা ঘরে বসে রইলাম , বা হাতের অস্তিত্ব ফিরে এসেছে , তবে সাথে করে অসহ্য ব্যাথা নিয়ে এসেছে , আমার কপাল ঘামছে , হয়ত আমি অজ্ঞান হয়ে যাবো এখন । মনে মনে ভাবলাম মতিন আরও কিছুক্ষন থাকলে ভালো হতো । হয়ত অজ্ঞান হওয়া থেকে রক্ষা পেতাম । কিন্তু একা ঘরে সেটা সম্ভব না , আমার শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসছে , চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে । কিন্তু অন্ধকার হচ্ছে না আমার সামনে , কেমন জানি গারো সবুজ একটা আলো , তার পর ধিরে ধিরে সেটা গ্রাম্য মেঠো পথে পরিনত হলো । পথের দুই ধারের সবুজ ঘাস গুলি ভেজা হয়ায় ওদের সবুঝ রঙ অনেক সতেজ মনে হচ্ছে । হয়ত একটু আগেই বৃষ্টি হয়েছে । হ্যা তাই হবে , কারন আমার পায়ের পাতা ভেজা ভেজা লাগছে , আমি সামনে তাকালাম , মেঠো পথের শেষে একটা পুকুর ওয়ালা বাড়ি , পুকুরের চারিদিকে সারি সারি নারকেল গাছ । একটা গাছের নিচে একটা মেয়ে দাড়িয়ে , শ্যামলা গায়ের রঙ নীল একটি ওড়না দিয়ে মাথায় ঘোমটা দেয়া , মেয়েটির ডাগর চোখে রাজ্যের মায়া ।

আমি হঠাত করে মেয়েটির সামনে এসে দারালাম । মেয়েটি আমাকে দেখে খিল খিক করে হেঁসে উঠলো , কি চমৎকার সেই হাঁসি , একদম মতিন এর বউ এর মতো , হাসির কারনে মাথার ঘোমটা পরে গেছে । মাথা ভর্তি কালো কোঁকড়ানো চুল । আমি বললাম
“ নিলুফার হাসো কেনো?”

“ আপনাকে দেখে হাঁসি “

“ আমি হাসির কি করলাম”

“ এই যে কেমন চোখ মুখ কুচকে আছেন , তাই দেখে হাঁসি”

“ আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে , তাই এমন করে আছি , মানুষের কষ্ট দেখে কি হাঁসতে হয়?”

“ হয় , আপনার কষ্ট দেখে আমার হাঁসতে ইচ্ছা হয়”

“ কেনো”

“ কারন আপনি খালি খালি কষ্ট পাচ্ছেন , আপনি যদি এখন হাত বাড়িয়ে আমার হাতটা ধরেন তাহলে আপনার কষ্ট দূর হয়ে যাবে , কিন্তু আপনি সেটা করবেন না”

“ আমি করবো , আমাকে তোমার হাত দাও নিলুফার”

“ উহু এত সহজে না” এই বলে নিলুফার আরও জোড়ে জোড়ে হাঁসতে লাগলো । আর আমার চোখের সামনের সুবুজভাব আলো দূর হয়ে একটা লাল আলো দেখা দিলো , ধিরে ধিরে সেই লাল আলো পরিনত হলো সাদা আলোয় , আমি নিজেকে আবিস্কার করলাম , আমার ঘরের মেঝেতে । সারা শরীর ঘেমে একাকার হয়ে আছে ।



[/HIDE]
[HIDE]

আজকে টিউশনি টা চলে গেলো , মনটা একটু খারাপ হয়ে আছে । নাহ টাকার জন্য নয় , মেয়েটা বেশ ব্রিলিয়ান্ট ছিলো , ভালো রেজাল্ট যে হতো তাতে কোন সন্দেহ ছিলো না । কিন্তু মেয়েটির নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে । মেয়ের মা আজকে একটা খাম ধরিয়ে দিলো , সাথে বিয়ের দাওয়াত ও দিয়ে দিলো । আমি বেশ কয়েকবার বঝানোর চেষ্টা করলাম , শেষের দিকে মেয়ের মা যে একটু সন্দেহর দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে সেটা বুঝতে পেরে আর সাহস হলো না । অবশ্য সন্দেহ হওয়ার ই কথা , আমার কেন মেয়ের পরালেখা নিয়ে এক্ত টেনশন , আমি এদের কে হৈ । শেষে এক প্রকার কড়া স্বরেই বলে দিলো , “ না বাপু , মেয়ে মানুষ কখন কি ভুল করে বসে , যত তাঁরা তারি সম্ভব একটা হিল্লে করে দি , এর পর জামাই এর ইচ্ছে হলে পড়াবে”


আচ্ছা , মেয়েটাকি ভুল করে ফেলেছে ? আমার কেন জানি সন্দেহ হচ্ছে । নাহলে আজ সারাক্ষণ চোখের পানি কেনো ফেলল ? হালকা একটু অভিমান কি ছিলো ? যখন বলল “ স্যার আজ শেষবারএর জন্য একটু পড়িয়ে যান”। হয়ত ছিলো , হয়ত ছিলো না , কিন্তু আমি আর শেষ বারের জন্য পাড়ানোর ঝুকি নেইনি , চলে এসেছি । আমার বুকের বাম পাশে হালকা চাপ বোধ করছিলাম। মনে হচ্ছিলো বুকের ঐ দিকটায় বেশ অনেকটা বাস্প জমা হয়ে ছিলো , ঐ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সাথে সাথেই সেই বাস্প নেমে গেছে ।

বছর খানেক আগে এক বন্ধুর মাধ্যমে এই টিউশন টি পেয়েছিলাম । লাজুক মিষ্টি দেখতে একটি মেয়ে , লম্বাটে মুখ , টানা টানা চোখ , সব সময় কাজল এঁকে রাখত । কালো মেয়ে কাজল দিলে এত সুন্দর দেখায় আমার আগে জানা ছিলো না । অবশ্য ধিরে ধিরে মেয়েটি লাজুক খোলস ভেঙ্গে বেড়িয়ে এসেছিলো । পড়ার ফাকে নানা ধরনের আলাপ করতো । নিজে গিয়ে নাস্তা নিয়ে আসতো । এবং আমাকে সেই নাস্তা সব খেতে হতো । মেয়েটির সাথে আলাপ করতে আমার বেশ লাগত , বীথির যে খুব বুদ্ধি এটা ওর আচার আচরনে , কথা বার্তায় প্রকাশ পেত । আদিখ্যেতা ছিলো না কিছুতেই , মার্জিত , সংযমী আচরন । অথচ কি আশ্চর্যের ব্যাপার অভিভাবক রা এই মেয়েটিকে সন্দেহ করছে !!!

একদিন কথার ছলে জানতে পারলো আমার প্রিয় রঙ নীল , তারপর দিন একটা নীল রঙ এর জামা পরে এসেছিলো , সেদিন ওর মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয়নি । বার বার সুধু লাজুক চোখে তাকাচ্ছিলো আর মুচকি হাসছিলো । অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো বিথিকে , কালো মেয়েদের নীল জামাতে মানানোর কথা না , কিন্তু কি চমৎকার না লাগছিলো ওকে । আমি তো একবার মুখ ফস্কে বলেই ফেলছিলাম । কিন্তু নিজেকে সামলে নিয়েছি , কি না কি মনে করে , হয়তবা কেদেই ফেলত , এই মেয়ের চোখ দেখলে মনে হয় সব সময় কন্নার জন্য প্রস্তুত , টলমটল করে পানিতে সবসময় । তবে আমি যখন পড়ানো শেষে চলে আসছিলাম , সেদিন আমাকে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে বলেছিলো “ স্যার আপনি একটু বোকা আছেন” সেদিনি বীথির মুক্তর মতো দাত প্রথম দেখছিলাম । আগে ভাবতাম দাতে মনে হয় সমস্যা আছে তাই দাত বের করে হাসে না । কিন্তু সত্যি বীথির মাঝে কোন খুঁৎ নেই। যদি আমাকে বলা হয় নিখুঁত সুন্দর কোন মেয়ের নাম বলতে তাহলে বীথির নাম সবার আগে আসবে ।

বুকের বাম পাশের চাপ আবারো অনুভব হচ্ছে , সেই হাসিটি আর দেখতে পারবো না , ভাবতেই কেমন জানি লাগছে। ইচ্ছে হচ্ছে আবার যাই , গিয়ে বলি , “বিথি তোমার বোকা স্যার এর জন্য কি আর একবার হাসবে?”

রিক্সা নিলাম না , হেটেই বাড়ির দিকে রউনা দিলাম । মনে হচ্ছে বাড়িতে যাওয়া এখন ঠিক হবে না , অবশ্য সরাসরি বাসায় যাবো না , প্রথমে যাবো , মায়ের দোয়া হোটেলে । সেখানে আমার মাস কাবারি করা আছে , একা মানুষ রান্না করে খাওয়ার ইচ্ছে হয় না। তবে হোটেল এর ব্যাবস্থা ভালো । হোটেল মালিক রজব আমাকে বেশ খাতির করে । পরিস্কার টেবিলে বসতে দেয় , মাছ মাংস যেটাই হোক ভালো একটা পিস আমার জন্য তুলে রাখে । মাঝে মাঝে তো বাড়ির খাবার এনে খাওয়ায় , এইতো কদিন আগে হাঁসের মাংস আর চালের রুটি এনে খাওয়ালো ।

খাবারের পরিমান দেখে তো আমি অবাক , দেখে মনে হচ্ছিলো আস্ত হাসটাই আমার জন্য নিয়ে এসেছে । আমি জিজ্ঞাস করতেই বলল “স্যার এইটা হোটেল এর খাওন না , এইটা আপনের ভাবি পাকাইসে , আপনের ভাবির হাতের হাঁস খুব ভালো হয় , অনেক দিন ইচ্ছা আসিলো আপনেরে খাওয়ামু , কিন্তু মন মতন হাস পাইতাসিলাম না , বাজারে তো ভালো হাস পাওয়াই যায় না , এইটা বরিসাইল্লা হাঁস , দেখসেন নি স্যার কেমন চর্বি হইসে , ধান খাইয়া চর্বি হইসে”

যদিও আমি হাঁসের মাংস খাই না কিন্তু সেদিন রজব কে না করতে পারিনি । হাঁসের মাংস আমার গন্ধ লাগে , তবুও নাক বন্ধ করে মুখে গুজে দিয়েছিলাম , কিন্তু মুখে দেয়ার সাথে সাথে এই হাঁসের মাংস সম্পর্কে আমার ধারনা সম্পূর্ণ রুপে পালটে গিয়েছিলো । মনে হচ্ছিলো মুখের ভেতর আগুন জ্বেলে দিয়েছে কেউ । ঝাল খাওয়ার অভ্যাস কোনদিন ছিলো না , আসলে খাবার নিয়ে বেশি আগ্রহ কোনদিন ই ছিলো না । কিন্তু সেদিন মনে হচ্ছিলো এত মজাদার জ্বালা পোড়া জীবনেও অনুভব করিনি । চোখ লাল হয়ে গিয়েছিলো , নাক চোখ দুটো দিয়েই এক সাথে অঝোর ধারায় পানি ঝরছিলো , কিন্তু আমি সম্পূর্ণ হাঁসের মাংস শেষ করে তবেই উঠেছিলাম । সাথে রজব এর বকবকানি শুনছিলাম , কেমন করে এই বরিশালের হাঁসের সন্ধান ও পেলো , কি করে ওর বউ রান্না করলো , এবং ভবিষ্যতেও আমাকে এমন হাঁস আরও খাওয়াবে ।




[/HIDE]
 
[HIDE]

আজো মায়ের দোয়া হোটেলের ভেতর পা দিয়ে মনে হলো রজব আমার জন্য বাড়তি কিছু একটা করেছে । ওর মুখের চওড়া হাঁসি সেটা বলে দিচ্ছে , রজব এর বয়স আমার সমান ই হবে , অথবা দুই এক বছর এদিক সেদিক । অথচ আমাদের দুজনের মাঝে কি বিস্তর ব্যাবধান । রজব হচ্ছে কর্ম চঞ্চল , সম্পূর্ণ সাংসারিক একজন মানুষ , খাওয়া দাওয়া নিয়ে ওর বিশাল চিন্তাভাবনা । বিয়ে করেছে অনেক আগে , মোট পাচ ছেলে মেয়ে , বড় মেয়ের বয়স ১৪ , এখনি নাকি বিয়ের সম্বন্ধ চলছে । ভাবতেই কেমন জানি লাগে । এদিকে আমি , ছন্নছাড়া জীবন , নাহ ঠিক ছন্নছাড়া বলা যাবে না । যদি সত্যি সত্যি ছন্নছাড়া হতে পারতাম তাহলে হয়ত খুব ভালো হতো । আমার জীবন দুই নৌকায় পা দেয়া জীবন । সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে সন্ন্যাস ও নিতে পারছি না আবার পুরোপুরি গেরস্ত ও হতে পারছি না ।

“ আহেন স্যার , আহেন” আমাকে দেখেই ক্যাশ কাউন্টার ছেড়ে উঠে এলো রজব । বেয়ারার কাছ থেকে ন্যাকড়া নিয়ে নিজেই একটা টেবিল মুছে দিলো ,

“ স্যার এর মুখটা এমন দেহায় ক্যান? স্যার এর কি শরীর খারাপ করসে নি?”

“ না রজব মিয়া মনটা ভালো না” আমি বসতে বসতে বললাম, জানি যে রজব বেশি ঘাঁটাবে না , আমার দেখা বাচাল টাইপ মানুষের মাঝে রজব অন্য রকম , সে প্রচুর কথা বলে , কিন্তু সেসব কথা হয় নিজেকে নিয়ে অথবা ওর পরিবার কে নিয়ে , অন্য কারো ব্যাপারে অহেতুক আগ্রহ দেখায় না। রজব কে ভালো লাগার এই একটা কারন ।

“ স্যার আপনের মন ভালা কইরা দেই , একটা খুশির খবর আছে , আমার বড় মাইয়ার বিয়া ঠিক হইসে , পাত্র চাকরি করে , সরকারী চাকরি , ভুমি অফিসের পিওন”

“ বলো কি রজব , এটুকু মেয়ে!!!!” আজকে এই নিয়ে দুটো বিয়ের খবর পেলাম , তবে একটাতেও খুশি হতে পারলাম না।

“ দিন কাল ভালা না স্যার কহন কি আকাম হইয়া যায়”

“ তাই বলে এত কম বয়সে বিয়ে দিয়ে দেবে?” আমি আরও অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম

“ স্যার মাইয়া হইলো আমানত , এই আমানত এর জানি খেয়ানত না হয় এর লইগা যত তারাতারি আসল মালিক এর কাছে দিয়া দেওন যায় , তত ভালা” এই বলে রজব আসে পাশে একবার দেখে নিয়ে , গলা নিচু করে বলল “ স্যার বিয়া কি সাধে দেই , বাড়ির সামনে ভাদাইম্মা পোলাপান এর ঘুরাঘুরি শুরু হইয়া গেসে”

“ তাই বলে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে?” আমি একটু রেগে গিয়ে বললাম , হয়ত বীথির মায়ের উপরের রাগ এসে পড়ছে রজব এর উপর ।

“ স্যার আমরা গরিব মানুষ , একটা কেলেঙ্কারি হইলে সারাজীবন ভুগতে হইবো”

আমি আর কিছু বললাম না , আসলে কিছু বলার ও নেই , রজব এর মেয়ের কেলেঙ্কারি না হওয়ার গেরান্টি তো আমি দিতে পারবো না , তাই এই বিয়ের বিরুদ্ধে কিছু বলার অধিকার ও আমার নেই ।

“ স্যার আজকা খুশিতে আপনের লইগা আপনের ভাবি একটা দারুন জিনিস পাকাইসে”
“ সেটা আবার কি?” আমি একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললাম , “ দাও তোমার বিশেষ জিনিস , বরং সেটাই খাই”

এক গামলা মাংস নিয়ে এলো রজব , “ স্যার এইটা হইলো খুলনার খাওন , চুই ঝালে মাংস”

আমি কোনদিন এই নাম শুনিনি , ভাবলাম হয়ত অনেক ঝাল করে রান্না করা মাংস , কিন্তু সেরকম কিছুই না । খেতে খেতে জানতে পারলাম , চুই হচ্ছে একটা বিশেষ গুল্ম জাতীও গাছ , এর কাণ্ড দিয়ে মাংস রান্না করা হয় । আমার কাছে বিশেষ তেমন স্বাদ লাগলো না যদিও । হয়ত বিথি আর রজব এর মেয়ের বিয়ে নিয়ে মনটা বিষিয়ে থাকার কারনে ।

খাওয়া দাওয়া শেষে , আমি বাড়ি চলে এলাম । রাতে আমি বিথি কে স্বপ্নে দেখলাম । মেয়েটি নীল রঙের একটি সারি পরে আছে । আমি গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম “ এই বিথি তুমি বিয়েতে নীল সারি পরেছো কেনো?”

আমার প্রশ্ন শুনে , বিথি দ্বিতীয় বারের মতো ওর সুন্দর দাঁত গুলি বের করে হাসল । বলল “ স্যার আপনি বোকাই রয়ে গেলেন , এখন থেকে আর বোকা থাকা চলবে না বুঝেছেন”

“ কেনো?” আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করলাম ।

“ কারন আমি বোকা জামাই পছন্দ করি না… হি হি


[/HIDE]
[HIDE]


হাতের সমস্যাটা অনেকদিন হচ্ছে নিজের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে না । একটাকে অবশ্য ভালো খবর বলা যায় না , কারন বেশি বিরতির পর , বেশ জোড়াল ভাবে হয় , এমন হয়েছে প্রায় দুই দিনের মতো আমার বাঁ পাশ অবশ ছিলো । তাই বাড়ি থেকে ইদানিং তেমন বের হচ্ছি না , বাড়ি টু মায়ের দোয়া হটেল , আবার সেখান থেকে বাড়ি । বলা যায় এক ধরনের অপেক্ষা করছি কখন ঐ বিশ্রী ব্যাপারটা শুরু হবে ।


এই অপেক্ষা করতে গিয়ে একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ্য করলাম , সেটা হচ্ছে । অপেক্ষা জিনিসটা বড্ড খারাপ , এইজে আমার রোগ , এই রোগের জন্য অপেক্ষা করতে গিয়েও হাঁপিয়ে উঠেছি আমি । মনে হচ্ছে , আসছে না কেনো , আসছে না কেনো। আর যারা আপন জনের জন্য অপেক্ষা করে , তাদের না জনি কি হাল হয় । আমার অবশ্য অপেক্ষা করার মতো আপনজন নেই। তাই এই অপেক্ষা জনিত বিড়ম্বনা থেকে আমি মুক্ত ছিলাম এতদিন । তাই হয়ত আমার অসুখ আমাকে এবার সেই স্বাদ দিচ্ছে ।

আমি সত্যি সত্যি আপনজনের মতো করে আমার অসুখ এর ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করছি । একদম আটঘাট বেধে অপেক্ষা । হাতের কাছে ঔষধ নিয়ে ঘুরছি , জেখানেই জাচ্ছি সাথে করে ঔষধ রাখছি । জেনো জামাই এর জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে এলেই শরবৎ দেয়া হবে হা হা হা ।

এই অপেক্ষার প্রহর গুলিতে আপনজন নিয়ে বেশ ভালো রকম এর চিন্তা ভাবনা এসেছে আমার মাথায় । অনেক ভেবে দেখলাম “আপনজন” এই শব্দটা একটা তকমা এর মতো , অনেকটা প্রধান অতিথির গায়ে যেমন লাগানো থাকে । মানুষ এর জীবনের নানা পর্যায়ে এই তকমা বিশেষ কারো গায়ে লাগানো থাকে । তখন সেই বিশেষ মানুষ টি হয়ে যায় প্রধান অথিতি ,

যেমন আমি যখন খুব ছোট ছিলাম , আমার জীবনের প্রধান অতিথি ছিলো আমার বাবা । বাবার জন্য সব সময় অপেক্ষা করে থাকতাম । যত রাত হোক বাবা না ফেরা পর্যন্ত কিছুই খেতাম না । বাবা ফিরলে তবেই খেতে বসতাম । তখন বুঝতাম না , সারাদিন খাটুনির শেষে বাবা কতটা ক্লান্ত থাকতো । ধিরে ধিরে বয়স বাড়তে লাগলো , বাবার প্রতি সমিহ বাড়তে লাগলো , সাথে বাড়তে লাগলো দূরত্ব ।

তখন আমার জীবনের প্রধান অতিথি হয়ে উঠলো আমার বড় দুই বোন । ওরা দুজনে যাই করতো আমি মুগ্ধ হয়ে দেখতাম। খেলাধুলা করার সময় ওরা যখন আমাকে দলে নিত তখন আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হতো না । সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন ওরা স্কুল থেকে বাড়ি ফিরবে ।

বয়স আরও একটু বাড়ল , আমি বুঝতে শিখলাম যে আমার স্বাধীনতা আমার বড় দুই বোন এর চেয়ে বেশি । তখন ওদের জীবন টাকে আমার কাছে পানসে মনে হতে লাগলো । আমার জীবনের প্রধান অথিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলো , তখন বন্ধুদের মনে হতে এদের চেয়ে আপন আমার আর কেউ নেই । সারাক্ষণ বন্ধুদের সাথে সময় কাটাতে ইচ্ছে হতো ।




[/HIDE]
 
[HIDE]

ক্লাস ফাকি দিয়ে আড্ডা দেয়া , সিনেমা দেখতে যাওয়া । বন্ধুদের আবদার মেটাতে বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি , মায়ের কাছে বাড়তি টাকার জন্য অন্যায় আব্দার । সবচেয়ে বড় হট্টগোল বেধেছিলো যেবার বন্ধুরা মিলে বেরাতে যাওয়ার প্রোগ্রাম হলো। বাবা কিছুতেই রাজি ছিলেন না । ওনার মতে একা বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়ার জন্য আমার বয়স তখন কম । কিন্তু আমি নাছোড় বান্দার মতো গো ধরে ছিলাম । কিছুতেই আমি অতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না । তিন দিন সুধু আমারা বন্ধুরা , সেখানে কেউ শাসন করার মতো থাকবে না । ১৬ বছর বয়সি আমি তখন জেনো হাওয়ায় উড়ছিলাম । তাই আমার সাথে কেউ পেরে ওঠেনি , বাবার শাসন , মায়ের অনুরধ সব উপেক্ষা করে সেবার আমি গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ।

এর পর কলেজে উঠলাম , তখন আমার মাঝে নতুন আকাঙ্ক্ষা তৈরি হলো । আমি দেখলাম সুধু বন্ধুদের সহচারজ আমাকে আর আগের মতো তৃপ্তি দিচ্ছে না , আরও বেশি কিছু চাইছে মন । আমাদের ক্লাসের সেই চশমা পরা মেয়েটি , রোজ এসে তৃতীয় বেঞ্চে বসতো । সেই মেয়েটির প্রতি আগ্রহ বোধ করতে লাগলাম । মেয়েটি যে কখন আমার অজান্তেই আমার জীবনের নতুন প্রধান অতিথি হয়ে উঠেছিলো বুঝে উঠতে পারিনি । রোজ কলেজে এসে সেই বিশেষ স্থানে দাড়িয়ে থাকতাম । মেয়েটি একটি সাদা টয়োটা কারে করে আসতো । রোজ একি যায়গায় এসে পার্ক করতো গাড়িটি , আমি দাড়িয়ে থাকতাম হাত দশেক দূরে হিজল তলায় । কিছুই বলতাম না সুধু দেখতাম , এক পলক দেখার মাঝে এতো ভাললাগা এতো তৃপ্তি কোথা হতে যে আসতো কে জানে।

“ এখানে কিচ্ছু হবে না বন্ধু সময় নষ্ট করছিস”
সুজয় নামের একটা বন্ধু ছিলো আমার , একদিন হঠাত বলল আমাকে । ভাব করেছিলাম কিছুই বুঝতে পারিনি , বোকার মতো জিজ্ঞাস করেছিলাম “ কিসের কথা বলছিস , কিসের সময়”

সুজয় একটু মুচকি হেসেছিলো , গম্ভির ভাবে বলেছিলো “হয় , হয় নতুন নতুন গজালে এমন হয়” । তারপর সিরিয়াস হয়ে জিজ্ঞাস করেছিলো “ তুই এই মেয়ের নাম জানিস”

“না” উত্তর দিয়েছিলাম , আসলে কোনদিন নাম জিজ্ঞাস করার ইচ্ছা হয়নি , হিজল তলায় দাড়িয়ে থাকাতে এতই ডুবে ছিলাম যে কোনদিন সামনে দাড়িয়ে নাম জিজ্ঞাস করা অথবা দুটো কথা বলার ইচ্ছাই কোনদিন তৈরি হয়নি ।

“ এই মেয়ের নাম সু-নয়না” নামটি বলে সুজয় আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তে তাকালো ,

“ বাহ খুব সুন্দর নাম তো” সত্যি নামের সার্থকতা ছিলো , চশমা পরা মেয়েদের চোখ সুন্দর না অসুন্দর সেটা বোঝা মুস্কিল , কিন্তু এই মেয়ের চোখের গভিরতা চশমার মোটা কাচ একটুও ঢাকতে পারেনি । পাওয়ার ওয়ালা কাচের ভেতর থেকে মায়াময় দুই চোখ নিজের সব গল্প যেন খোলা বইয়ের মতো মেলে ধরে থাকে ।

“ সু-নয়না সেন” শেষের সেন শব্দটি অনেক গুরুত্বের সাথে বলেছিলো সুজয় , কিন্তু আমি তৎক্ষণাৎ সেই সেন শব্দের তাৎপর্য বুঝতে পারিনি । যখন বুঝতে পেরেছিলাম আমার কাছে সেই সেন শব্দের মতো মহত্ত্ব ধরা পরেনি । দুই বছর আমি সকাল সোয়া আটটায় সেই হিজল গাছের নিচে দাড়িয়ে থেকেছি । একটি বারের জন্য মনে হয়নি যে সামনে গিয়ে দুটো কথা বলি , অথবা সেন নামের কোন মেয়ের জন্য দাড়িয়ে থাকা সময়ের অপচয় । কেনই বাঁ হবে আমি তো আর নাম জানতে চাইনি , তাই নামের কোন তাৎপর্য ও আমার কাছে নেই ।

সমাপনি দিন সু-নয়না এসেছিলো , বলে ছিলো “তুমি কি কিছু বলবে?”

“ নাহ” ছোট করে উত্তর দিয়েছিলাম আমি , আসলে বলার মতো কিছুই ছিলো না আমার । তবে এখন মনে হয় যদি বলতাম “ তোমার নাম সু-নয়না না হয়ে সু-কন্ঠি হলেও মন্দ হতো না” তাহলে কেমন হতো ।
এর পর আমার জীবনে আরও আপনজন এসেছে , লীলা , এবার আর এক তরফা ছিলো না বোধহয় ব্যাপারটা । হয়ত আমি ডেস্পারেট ছিলাম । বাবা মা ততদিনে চলে গেছে , বোনদের সব বিয়ে হয়ে গেছে , বন্ধুরা সব নিজ কাজে ব্যাস্ত । তখন একজন আপঞ্জনের বড় প্রয়োজন ছিলো । লীলা সেই অবাভ পুরন করেছিলো ।

বড় জেদি মেয়ে ছিলো , ব্যাগ পত্তর গুছিয়ে চলে এসেছিলো । এক পরকার জোড় করেই আমি দিয়ে এসেছিলাম । কারন ততদিনে লীলার চেয়েও বড় আপনজন আমার জীবনে চলে এসেছে , আমার অসুখ , আজ যার জন্য আমি অধির আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছি । কবে সে পুরোপুরি আমাকে দখল করে নেবে আমরা দুজনে দুজনার হয়ে যাবো । ডাক্তার বলেছে অসুখটি যখন পুরোপুরি আমাকে কাবু করে নেবে তখন আমার বাঁ পাশ সম্পূর্ণ অচল হয়ে যেতে পারে ।
আমি ধরে নিয়েছি হয়ে যাবে , ডাক্তার রা অমন একটু আধটু বলেই , ওরা সরাসরি কখনো বলে না যে হবে , ওরা বলে হতে পারে । এতে রোগীর ইচ্ছা শক্তি বজায় থাকে । তবে আমি তেমন হতাশ নই , আমার মতে যেহেতু আমি চাই বাঁ না চাই , এই অসুখটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় বিষয় , তাই এঁকে নিয়েই আমাকে থাকতে হবে । যখন আমার বাঁ পাশ অবশ হয়ে যাবে তখন আমি বরং খুশিই হবো , তখন আমার আর নিজেকে একলা লাগবে না , মনে হবে আমার সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে আপনজন , আমার জীবনের প্রধান অতিথি আছে ।

তবে মাঝে মাঝে মনটা একটু চঞ্চল হয়ে ওঠে , মনে প্রশ্ন জাগে , স্বপ্ন কি সত্যি হয়? আর যদি সত্যি হয় তাহলে কি নিলুফার এর মতো কেউ এসে যদি পরম মমতায় আমার হাত ধরে তাহলে কি অসুখটা চলে যাবে ?

তখন এই অসুখটাকে বিদায় করে দিয়ে সেই মমতাময়ী হয়ে যাবে আমার জীবনের প্রধান অতিথি । যেমন লীলা কে সরিয়ে অসুখটা আমাকে দখল করে নিয়ছিলো । হোক না , হলে মন্দ কি , ভারত বর্ষের মতো আমিও না হয় কখনো এর অধিন তো কখনো ওর অধিন হয়ে থাকলাম । চলুক না আমাকে নিয়ে যুদ্ধ , নিজেকে আমার বেশ দামি মনে হবে ।


[/HIDE]
[HIDE]
অনেকদিন পর আজ সুমি ওর স্বামী সহ বাড়িতে এসেছিলো । সুমি অনেক দূরে থাকে , তাই সচরাচর আসে না , যা আসার মেজ আপুই আসে । বড় আপুর স্বামী ছেলে মেয়ে নিয়ে বড় সংসার তাই ওনার ফুসরত কম। সুমি কে দেখে একটু অবাক ই হলাম , বেশ স্বাস্থ্য হয়েছে , আগেত একদম চিকন কাঠির মতো ছিলো । বড় খালার নাকি খুব কষ্ট হয়েছে ওকে বিয়ে দিতে । একের পর এক পাত্র পক্ষ আসতো আর যেত , সবার নাকি এক কথা মেয়ে দেখতে ভালো কিন্তু শুকনা । আমার উপর দিয়ে এই ঝামেলা যায়নি সেদিক দিয়ে বেঁচে গেছি । বাবা মা মারা যাওয়ার পর বড় খালা নিজে বাড়িতে রেখে বিয়ে দিয়েছে ওকে । কিন্তু যখন বড় খালা আমাকে এসব বলতো তখন খুব মেজাজ খারাপ হতো । মেয়ে চিকন তো কি হয়েছে , দুনিয়ায় কি চিকন মানুষ থাকবে না, আর চিকন মানুষদের কি বিয়ে হবে না । আর উপরের দেখাটাই কি আসল? সুমি আমাদের মাঝে সবচেয়ে টেলেন্টেড ছিলো , সুধু পড়ালেখায় নয় , ভালো গান গাইতে পারত । বাবা এসব তেমন পছন্দ করতো না , তাই কোনদিন আমাদের বাড়ি গানের টিচার আসেনি ওর জন্য । স্কুল থেকেই যা শিখেছে , কিন্তু অসাধারন গলা ছিলো ওর ।


আমিও ব্যাপারটা জানতাম না , আসলে ,আমরা দুজন পিঠাপিঠি হলেও আমার মাঝে তেমন সম্পর্ক ছিলো না । শুনেছি পিঠাপিঠি ভাই বোন দের মাঝে বন্ধুর মতো সম্পর্ক হয় । কিন্তু অরকম কিছুই আমাদের মাঝে ছিলো না । সুমি আমার ১৩মাসের ছোট । যদিও বাবা মা মুখ ফুটে কোনদিন বলেনি , তবুও কয়েকবার আত্মীয়দের মাঝে ফিসফিসানি শুনে যা বুঝেছি সেটা হচ্ছে , সুমি এক্সিডেন্টাল চাইল্ড । আমার পরে বাবা মায়ের আর সন্তান নেয়ার ইচ্ছা ছিলো না । দুই মেয়ের পর এক ছেলে তাদের কাম্য ছিলো । সেটা পেয়ে যাওয়ার পর , পরিবার আর বড় করার ইচ্ছা ছিলো না । কিন্তু সুমি এসে পরলো , আর আমার বাবা মা ভ্রূ হত্যার মতো পাপ করতে চায় নি । তাই সুমির জন্ম , মাঝে মাঝে সুমির জন্য আমার মায়া হয় , মেয়েটার জম্ন একটা করুনা থেকে , আকাঙ্ক্ষা থেকে নয় ।






[/HIDE]
 
[HIDE]

ওহ সুমির গানের কথা বলছিলাম , তখন আমি সবে কলেজে উঠছি , মাঝে মাঝে দুই একটা সিগারেট খাই । নাহ নেশা আমার কোনদিন ছিলো না । মাঝে মাঝে এমনি খেতাম , সেদিন ছিলো বন্ধের দিন , বাসায় খিচুরি রান্না হয়েছিলো , দুপুরে খাওয়ার পর খুব ইচ্ছা হচ্ছিলো একটা সিগারেট খাই , তাই ছাঁদে চলে গিয়েছিলাম । দুটো সিগারেট সব সময় আমার কাছে থাকতো । কিন্তু ছাঁদে উঠতে গিয়ে থেমে গিয়েছিলাম , আমাদের এক তলা বাড়ি , দাদুর রেখে যাওয়া , আসে পাশে তখন সব বাড়ি আমাদের চেয়ে উচু। ছাঁদে তেমন যাওয়া হতো না , মাঝে মাঝে সুমিই যেত , ওর কিছু ফুলের গাচ ছিলো , সেগুলির দেখাসুনা করতো ।
আমি সিঁড়ি ঘরে এসে থমকে গেলাম , কে যেন গান গাইছে ছাঁদে , মিষ্টি স্বর , একটা নজরুল সঙ্গিত , কত দিন দেখিনি তোমায়… খুব দরদ দিয়ে গাইছে । ভাবলাম হয়ত আসে পাশের ছাদ থেকে কেউ গাইছে , আমাদের বাড়িতে তো গান গাওয়ার মতো কেউ নেই । এমন কি গান শোনাও হয় না তেমন , মাঝে মাঝে টিভিতে সিনেমা চললে সেই সিনেমার গান হয় । তবুও সন্দেহ হচ্ছিলো , কারন বেশ পরিস্কার শোনা যাচ্ছিলো , পাশের ছাদ হলে এতো পরিস্কার শোনা যেত না । আমি উকি দিলাম , দেখলাম সুমি , ওর গোলাপ গাছে নিড়ানি দিচ্ছে আর গান গাচ্ছে আপন মনে । আমি আর ছাঁদে জাইনি , তবে সিঁড়িতে দাড়িয়ে পুরোটা গান শুনেছিলাম। সুমির গলার মিষ্টতা আর যে আবেগ নিয়ে গাইছিলো তাতে সুরে যদি কোন ভুলচুক হয়েও থকে , ওই গানটি জতজনের কণ্ঠে শুনেছিলাম তাদের মাঝে সুমিই সেরা বলে মনে হয়েছিলো । গানটা শুনে আমার দু চোখ ঝাপসা হয়ে এসেছিলো, সিগারেট না খেয়েই চলে এসেছিলাম ।

কোনদিন অবশ্য সুমি কে জিজ্ঞাস করিনি ওর গান গাওয়া নিয়ে । তবে স্কুল প্রতিযোগিতায় যে সেকেন্ড প্রাইজ পেয়েছিলো সেটা জানতাম । আমার মনে হয় সুমি কে ঠিক মতো পরিচর্যা করলে ও দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হতে পারত । আমাদের পরিবারের অন্য কারো মাঝে আমি কোনদিন এরকম কোন প্রতিভার সন্ধান পাইনি । কে জানে হয়তবা ছিলো , দৃষ্টির অন্তরালে নষ্ট হয়ে গেছে ।

দুপুরে আজ সুমিই রান্না করলো , অনেকদিন পর ঘরে রান্না হলো , সাদিক বাজার করে এনেছে । সাদিক ছেলে হিসেবে বেশ ভালো , বড় খালা সুমির ভালো একটি বিয়ে দিয়েছে । হয়ত সুমির স্বনামধন্য শিল্পী হয়ে ওঠা হয়নি , কিন্তু প্রেমময় একটা সংসার পেয়েছে । কি ভাবে জানলাম , ওদের দুজন কে দেখলেই বোঝা যায় , বিয়ের আগে সাদিকের সংসার বলতে কিছু ছিলো না , এতিম ছেলে , নিজের চেষ্টায় বড় হয়েছে । বিয়ের পর ওদের দুজন কে যে গুটি কয়েকবার দেখছি তাতে ওদের আচরনে প্রকাশ পেয়েছে ওরা দুজন দুজন কে বেশ ভালবাসে । যার আজ বিয়ের প্রায় ১১ বছর পর ও কমেনি । এই যে সুমি রান্না করলো , পুরোটা সময় সাদিক ওর সাথেই ছিলো দুজনে গুটুর গুটুর করে কি এতো কথা বলল ওরাই জানে । আবার কিছুক্ষন পর পর হাসির শব্দ , আর সুমির মৃদু অভিমান ,” ভাইয়া পাশের ঘরে” “তোমার লজ্জা করে না” এই টাইপ । এক সময় তো আমাকে উঠে বারান্দায় চলে আসতে হয়েছিলো ।

দুপুরে খাওয়া দাওয়া শেষে , ওদের আগমন এর আসল ঘটনা জানতে পারলাম । সাদিক এর বিজনেস তেমন ভালো যাচ্ছে না। টাকার দরকার । আমি বললাম “আমার কাছে তো টাকা নেই রে সুমি , কিভাবে দেবো”

“ না না ভাইয়া তুমি ভুল বুঝছো , তোমার কাছে টাকা আসবে কিভাবে, সাদিক সমসসার সমাধান করে ফেলেছে”

“ তাই নাকি?” আমি অবাক হয়ে বললাম “তাহলে আমার কাছে কি জন্য?”

“ আসলে ভাইয়া , তোমার অনুমতি ছাড়া সাদিক কিছুই করবে না”


আমি বেশ অবাক হলাম , আমার অনুমতি লাগবে কেনো সেটাই বুঝতে পারছি না , সাদিক এর বিজনেস , সাদিকের টাকা লাগবে, আবার সাদিক নিজেই সমাধান বের করে ফেলেছে , এখানে আমার অনুমতি দেয়া না দেয়ার কি আছে । এটা বলতেই দেখলাম সুমি লজ্জা পাচ্ছে , আমি সুমির দিকে ভালো করে দেখলাম , সাস্থের উন্নতি হয়াতে ওকে অন্যরকম লাগছে , আগে ওর বড় বড় চোখ গুলিকে বেশি বড় মনে হতো , এখন মুখ ভরাট হওয়ায় সেগুলিকে আর বেশি বড় মনে হচ্ছে না । এই চোখ দেখেই হয়ত কবি রা কবিতা লেখে । এছাড়া গায়ের রঙ ও এক্ত খুলেছে মনে হয় , আগে সুমি একটু চাপা শ্যামলা ছিলো , কালই বলা যায় , কিন্তু এখন গায়ের রঙ উজ্জ্বল হয়েছে অনেক , লজ্জা পাওয়ায় গালে লালচে আভা দেখা যাচ্ছে , কালো মেয়েদের এমন দেখা যায় না।

“লজ্জা পাচ্ছিস কেনো? বলে ফেল” আমি সুমি কে সহজ করার জন্য বললাম

“ আসলে ভাইয়া কি করে বলি ……” আমতা আমতা করতে লাগলো সুমি

“ আহা বলে ফেল , তুই তো জানিস আমি অসুস্থ মানুষ এতো টেনশন আমি নিতে পারি না”

“ ভাইয়া আমাদের বেবি হবে” বলেই সুমি মাথা নিচু করে ফেলল , মাথা নিচু রেখেই বলল “ আমি চাইছিলাম সাদিক বলুক , কিন্তু ও আরও বেশি লজ্জা পায়”

আমি উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠলাম , এটা বলতে এতো লজ্জা পাচ্ছে , এটা তো খুশির সংবাদ , সুমির সংসারে আর সব ছিলো , কিন্তু এই একটা জিনিস এর অভাব ছিলো । ছেলে পুলে হচ্ছিলো না ওদের । এ নিয়ে অবশ্য আমি ওদের দুজন কে কোনদিন দুঃখ করতে শুনিনি । কিন্তু মনে মনে নিশ্চয়ই দুঃখ ছিলো । যাক খুশি হলাম আমি , অন্য কারো খুশি দেখলে আমার খুব ভালো লাগে, হয়ত আমার নিজের জীবনটা ফাঁকা বলে অন্যের খুশিতে বেশি খুশি হই । সুমির স্বাস্থ্য ভালো হওয়ার কারন বুঝতে পারলাম , হয়ত অনেকদিন হয়ে গেছে । হয়ত লজ্জায় বলেনি আমার কাছে , হয়ত আমি ওদের লাইফে ইনভল্বড নই বলে বলেনি । এই নিয়ে আমার দুঃখ নেই ।

“ কিন্তু পাগলী এর সাথে টাকার কি সম্পর্ক” আমি হাঁসি মুখে জানতে চাইলাম ।

“ এখন যেহেতু বেবি হবে তাই সাদিক চাচ্ছে ওর বিজনেস বড় করতে , আর সেটা করতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছে”

“ আমাকে কি করতে হবে সেটা বল তো , যতটুকু সম্ভব আমি করবো”

“ বাড়িটা বিল্ডার এর হাতে দিলে , নগদ কিছু টাকা পাওয়া যাবে …… এটা বলতেই সাদিক খুব লজ্জা পাচ্ছে”

এবার আমি বুঝলাম , আসলে এই বাড়ির অর্ধেক এর মালিক সুমি , মানে সম্পদ ভাগের সময় , আমার বাকি দুই বোন , তাদের অংশ সাদিক এর কাছে বিক্রি করে দিয়েছে । সাদিক সেটা সুমির নামে কিনে নিয়েছে । তাই এই বাড়ির অর্ধেক এর মালিক আমি আর বাকি অর্ধেক এর মালিক সুমি । কিন্তু সুমি আমাকে এই বাড়ি পুরোটা ভোগ করতে দিয়েছে এতো বছর । তাই এখন চাইতে লজ্জা পাচ্ছে ।

“ আরে লজ্জার কি আছে , তোরা তোর এর অর্ধেক মালিক , তোরা যা ইচ্ছা করতে পারিস”
“ সাদিক তো তোমাকে ব্যাবহার করতে দিয়েছিলো , তার উপর শ্বশুর বাড়ির সম্পদ , তাই লজ্জা পাচ্ছে” সুমির লজ্জা একটু কেটে গেছে ,

“ আচ্ছা বুঝলাম সাদিক লজ্জা পাচ্ছে , কিন্তু তুই লজ্জা পাচ্ছিস কেনো, তোর তো বাবার বাড়ির সম্পদ” আমি মস্করা করে বললাম , আসলে এই প্রথম সুমির সাথে আমার এতো কথা হচ্ছে ,

সুমি বলল “ ওর জন্য তো লজ্জার”

হা হা হা করে হেঁসে ফেললাম , অনেক দিন পর এতো হাসছি , স্বামীর লজ্জায় নিজে লজ্জা পাচ্ছে । যাক ওরা সুখেই আছে । হঠাত আমার মনে হলো আচ্ছা সুমি কি সাদিক কে গান শুনায় , নিশ্চয়ই শোনায় । তবে জিজ্ঞাস করলাম না , মেয়েটি এমনিতেই লজ্জায় মড়ে যাচ্ছে । আচ্ছা কোনটা বলতে বেশি লজ্জা পাচ্ছিলো সুমি ? বেবি হওয়ার কথা , নাকি বাড়ি বিল্ডার এর কাছে দেয়ার কথা । সে যাই হোক সুমি কে আর আটকে রাখতে মায়া হলো , খুব লজ্জা পাচ্ছে ,

আমি বললাম “ডাক সাদিক কে”

সাদিক নিজেও এলো মুচকি হাঁসতে হসাতে , আমি বললাম “দেখো সাদিক , দুটোর একটা লজ্জার বিষয় না , একটা তো অনেক আনন্দের সংবাদ , এতদিন পরে তোমাদের ঘরে সন্তান আসবে , আর দ্বিতীয়টাও লজ্জার বিষয় না , আমরা তোমার শ্বশুর বাড়ি মানুষ হলেও তোমাকে আপন বলেই জানি (যদিও কথাটা কতটা সত্যি তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে)”

“তা ঠিক ভাইয়া” সাদিক নত মস্তকে বলল ,

একটা ব্যাপার আমার অস্বস্তি আছে , সাদিক আমার চেয়ে প্রায় ১২ বছরের বড় , কিন্তু আমাকে আপনি করে ডাকে , আর ভাইয়া ডাকে । অনেক চেষ্টা করেও এটা বন্ধ করতে পারিনি ।

“ আমার এক বন্ধু আমাকে এক বিল্ডার এর কথা বলেছিলো” আমি মতিন এর কথা বললাম

কিন্তু দেখা গেলো সাদিক সব ঠিক করে ফেলেছে , ৫০ লক্ষ্য নগদ , আর ৬০/৪০ ফ্লাট । বেশ ভালো ডিল , কিন্তু আমার মতিন এর জন্য মন খারাপ হলো । অবশ্য মতিন কে দিয়ে ভরসা নাই , সেই যে বলে গেছে আর যোগাযোগ করেনি । হয়ত ও নিজেই আর ওই কাজ করছে না , কিছুদিন পর অন্য কোন স্কিম নিয়ে হাজির হবে ।

“ শুরু করে দাও সাদিক “ আমি নিজের মতামত দিয়ে দিলাম ,
সেদিন রাতের খাবার খেয়েই সাদিক আর সুমি বিদায় হলো । ওদের চলে যাওয়া দেখতে দেখতে আমার মনে অনেদিন পুষে রাখা একটা অপরাধ বোধ কেটে গেলো , আমি ভাবতাম সুমির গান গাওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে আমার হয়ত কিছু করার ছিলো , কিন্তু আমি সেটা করিনি । কিন্তু আজ মনে হচ্ছে , সুমির সেই বিষয় নিয়ে তেমন কোন দুঃখ নেই , বড় সিঙ্গার না হতে পারুক , আমি দোয়া করি ভালো একজন মা হবে , সুখি মা ।

আমার বাম হাত অবশ হতে শুরু করেছে , আমি দ্রুত ঘরের ভেতর চলে গেলাম , ঔষধ এর বাক্স খুঁজছি , সব সময় চোখের সামনে রাখতে চেষ্টা করি , কিন্তু সময় মতো পাই না , আজ অনেকদিন পর হচ্ছে , খুব জোড়ে সোরে হবে মনে হয় । কোথাও খুজে পেলাম না ঔষধ , বিছানায় শুয়ে পড়লাম , আসুক , এসে আমাকে দখল করে নিক । আমার আপনজন, সুমির যেমন সাদিক আছে আমার আছে এই অসুখ । আমরা এখন একে অপরের সাথে খুনসুটি করবো
[/HIDE]
 
[HIDE]


মেজো আপার বাড়ি দাওয়াত, আসতেই হল , অন্য কেউ হলে আমি এড়িয়ে যেতাম , কিন্তু এখানে সম্ভব নয় । মেজো আপা নাছোড় বান্দা টাইপ মানুষ । সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে আসছি , ওর যেটা চাই সেটা চাইই চাই । বাবাও ওনর সাথে লাগতে যেতেন না । একবার মা চেষ্টা করেছিলো , নাজেহাল হতে হয়েছে , মায়ের এক খালাতো বোন এর ছেলে , বাউন্ডুলে টাইপ। তবে দেখতে খুব ভালো ছিলো , একবার এক বিয়েতে ছেলেটি মেজো আপার সাথে একটু ভাব করার চেষ্টা করছিলো । সেদিন ছিলো গায়ে হলুদ , মা ব্যাপারটা খেয়াল করে মেজো আপা কে বাসায় পাঠিয়ে দিতে চাইলো । তুমুল ঝগড়া দুজনে , আমার তখন ১২ বছর বয়স , তাই ঘটনাটা আমার মনে আছে ।


একসময় মা যখন একটু অন্যদিকে গেলো , তখন মেজো আপা আমাকে ডেকে একটা কাগজ ধরিয়ে দিলো , বলল “যা তো ওই ছেলেটাকে দিয়ে আয়” আমি বিনা প্রস্নে রাজি হয়ে গেলাম । ছেলেটিকে কাগজ টি দিতেই ছেলেটি সেটা পড়ল । পরার পর একটা হাঁসি ফুটে উঠলো ছেলেটির মুখে । আমাকে বলল “যাও গিয়ে বলো ওকে” আমি চলে আসছিলাম , ছেলেটি আমাকে ডাকল আবার বলল “বাবু তুমি এটা রাখো” পরে দেখছি , ১০০ টাকার নোট । ওই সময় ১০০ টাকা আমার কাছে আসমানের চাঁদ । আমি মেজো আপা কে গিয়ে বললাম ।

সেদিন রাতে মা সারা রাত কেঁদেছে , মেজো আপার হাতে পায়ে ধরা সুধু বাকি ছিলো । মেজো আপা কে দেখে মনে হচ্ছিলো সে খুব মজা পাচ্ছিলো মায়ের এই অবস্থা দেখে। এমন জেদি ছিলো মেজো আপা , এখন অবশ্য সেই জেদ নেই । জেদ এর জায়গা দখল করেছে , প্যানপ্যানানি , ও প্যানপ্যান করতে করতে মানুষ মেরে ফেলতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস ।

আমাদের ভাই বোনের মাঝে মেজো আপা সবচেয়ে সুন্দরী । মায়ের মতো গায়ের রং যা আমরা বাকি ভাই বোন কেউ পাইনি। একেবারে কাঁচা সোনার মতো রং । অনেকে আছে রং সুন্দর হলে চেহারা সুন্দর হয় না । আপার তেমন ছিলো না , বড় আপার জন্য যখন পাত্র দেখা হচ্ছিলো , তখন মেজো আপা কে পাত্র পক্ষের সামনে যেতে দেয়াও হতো না। আসলে আপার সৌন্দর্য বর্ণনা করা আমার কাজ নয় । এক কথায় বলতে গেলে দম বন্ধকরা সুন্দরী । যে সব সুন্দরী মেয়েদের সামনে গেলে দম বন্ধ বন্ধ লাগে , তাদের নাম আমি দিয়েছি দম বন্ধ সুন্দরী ।
ছোট বেলায় এই জন্যই আমি মেজো আপার ভক্ত ছিলাম । যখন একেবারে ছোট ছিলাম , তখন আমি বলতাম আমি বড় হয়ে মেজো আপা কে বিয়ে করবো । একবার এই নিয়ে বিশাল ঝগড়া , মনের কথা এক বন্ধুকে বলে দিয়েছিলাম , সেই বিশ্বাসঘাতক সবাইকে বলে দেয় , সবাই খুব হাসাহাসি , সবাই ক্ষেপায় বলে বোন কে বিয়ে করতে চায় । আমি তখন দুনিয়ার নিয়ম কানুন সম্পর্কে জানি না । লেগে গিয়েছিলো তুমুল মারামারি , ওটাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম আর শেষ মারামারি । মনে পড়লে এখনো হাঁসি পায় জীবনে মারামারি করেছিলাম , তাও ভালবাসার জন্য হা হা হা ।


বাসায় বিচার এলো , জিজ্ঞাসাবাদ চলল , জেরাকারী হচ্ছেন মা । ছোট বেলায় বাবার নেওটা ছিলাম বলে বাবা আমাকে শাসন করতো না তেমন । কিছুতেই আমার মুখ থেকে বের হয় না আসল কারন । অনেক জেরা আর চড় থাপ্পর এর পর আমি মাথা নিচু করে বলেছিলাম “ইমন বলে আমি মেজো আপা কে বিয়ে করতে পারবো না” শুনে মা মুখে আচল চাপা দিয়েছিলো । রাগ ভেঙ্গে গেছে আমি যেন বুঝতে না পারি । মেজো আপা সামনেই ছিলো , উনি এসে আমাকে প্রায় কোলে তুলে নিয়েছিলো , আমার চেয়ে ছয় বছরের বড় মেজো আপার তখন মাত্র ১২ বছর বয়স। গালে চুমু খেয়ে বলেছিলো “আমি তোকেই বিয়ে করবো” কি যে লজ্জা হয়েছিলো , কতদিন পর্যন্ত মেজো আপার সামনে যেতে পারতাম না । গেলেই মেজো আপা দুষ্টুমি করতো , “স্বামী কেমন আছেন” এই টাইপ কথা বলতো । ধিরে ধিরে বয়স হয়েছে , সমাজ এর রিতিনিতি বুঝতে সিখেছি , তারপর ওই ব্যাপার ভুলে গেছি । তবে মেজো আপার প্রতি একটা টান এখনো আমার আছে । আমার অন্য বোন দের তুলনায় ওর সাথে বেশি সম্পর্ক আমার । হয়ত মেজো আপাই এক মাত্র যে আমার বাসায় নিয়মিত যায় বলে ।

মেজো দুলাভাই এর আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয় , কিন্তু পার্টির ব্যাপারে উনি বেশ সিরিয়াস , আমি আসতেই বলল “কিরে সৌরভ তোর শরীর কেমন”

“ ভালো দুলাভাই” আমি আমার সাভাবসিদ্ধ উত্তর দিয়েছিলাম , ভালো না হলেও ভালো বলা আমার অভ্যাস

“ তাহলে রাতে থাকবি , ভালো হুইস্কি আছে , স্কচ , ব্লু লেভেল , খেয়ে জাবি”

লোকটার সম্পর্কে অনেক বাজে কথা প্রচলিত আছে , তবে মেজো আপা আমাকে বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছে যে এসব ই মিত্থা। লোকে হিংসা করে বলে এসব বলে । আমি অবশ্য লোকের হিংসা করার মতো কিছুই পাই না । অবশ্য মেজো আপার ইংগিত কার দিকে সেটা স্পষ্ট , উনি বড় আপাকে উদ্দেশ্য করে বলেন এটা । মেজো দুলাভাই প্রথমে দেখতে এসেছিলেন বড় আপা কে , কিন্তু উনি মেজো আপাকে পছন্দ করে ফেলেন । মেজো আপার কথা বলতে বাবা কিহুতেই রাজি হন নি । পরে দুই বছর পর ফিরে এসে মেজো আপা কে বিয়ে করেছেন । এই বিয়েতে বড় আপা রাজি ছিলেন না , এমন কি উনি সুধু বিয়ের দিন এসে খেয়ে চলে গিয়েছিলেন ।

সবাই মনে করতো এতো পছন্দের বিয়ে , খুব সুখের হবে সংসার । তেমন হয়নি , মাঝে মাঝে মেজো আপার শরীরে দাগ দেখা যায় । মা আর আপার গোপন মিটিং ও আমি কান পেতে শুনেছি কয়েকবার । আমার খুব রাগ হতো , একবার তো জীবনে দ্বিতীয়বার মারামারির হয়েই গিয়েছিলো প্রায় । বাবা মা মারা যাওয়ার পরের ঘটনা সেটা ।

একদিন রাতে আমি শুয়ে আছি , হঠাত দরজায় টোকা । রাত তখন শোয়া এগারো , এত রাতে কে আসবে । আমি ভেবেছিলাম মতিন । দরজার কাছা কাছি আসতেই শুনি চাপা গলার গর্জন “ আবার দে , আবার দে মাগি” ভেবে পাচ্ছিলাম না কি হয়েছে , কে এসেছে যে এমন করে কথা বলতে পারে । দরজার হোলে চোখ রেখে দেখি মেজো আপা হাতে ধরা মেয়ে তিতলি , মুখে আচল দেয়া , আর দুলাভাই প্রায় দৌরে চলে যাচ্ছে ।
দ্রুত দরজা খুলে জিজ্ঞাস করলাম “কিরে আপা তুই”

“মামা মামা , আব্বু আর আম্মু মারামারি করেছে” ছোট তিতলি পাংসু মুখে বলেছিলো ।

কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল মেজো আপা , মুখে চাপা দেয়া আচল খসে পড়ল , ঠোঁট থেতলে গেছে , গালে কালশিটে পরে আছে , কিছুক্ষন আমি বোকার মতো দাড়িয়ে ছিলাম , আমি কোন ভাবেই ওই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না । কেউ আমার পরিবারের কারো উপর এভাবে হাত তুলতে পারে সেটা কোনদিন মাথায় আসেনি । ভাবতাম আমরা সবাই সেইফ এন্ড সাউন্ড আছি । কিছুক্ষন আমার মস্তিস্ক ফ্রিজ হয়ে রইলো , একটু ধাতস্ত হতেই আপা কে ভেতরে নিয়ে এলাম । ফ্রিজ থেকে বরফ বের করে একটা কাপড়ে জড়িয়ে দিলাম ওর হাতে । ঠোঁট দুটো বাঁ পাশে ভালো রকম থেতলে ছিলো ।

[/HIDE]
 
[HIDE]

সময় গড়ানোর সাথে সাথে , আমার রাগ বাড়তে লাগলো , রাগ এতো চরম সিমায় গিয়ে পৌঁছেছিলো যে ইচ্ছা হচ্ছিলো চুপি চুপি রান্না ঘরের চাকু নিয়ে বেড়িয়ে পরি , বাসায় গিয়ে রাতের অন্ধকারে খুন করে চলে আসি , একটা কথাও বলব না , একবার ও জিজ্ঞাস করবো না কেনো করেছে এরকম ।

মনে ওই চিন্তা এসেছিলো ঠিক ই কিন্তু আমি নিজেও জানতাম এসব আমার দ্বারা সম্ভব নয় । তবে আমি বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম , সেদিন একটা হেস্ত নেস্ত করার ইচ্ছা নিয়ে । কিন্তু মেজো আপা কিছুতেই বের হতে দিল না । ওর আচরনে বেশ অবাক হয়েছিলাম , প্রচণ্ড রাগে আমি তখন বেশ উগ্র , শরীরে তখনো অসুখ বাসা বাধেনি , মেজো আপার বার বার নিষেধ সত্ত্বেও যখন বেড়িয়ে জাচ্ছিলাম । তখন মেজো আপা আমাকে বেশ শক্ত করেই বলল “ আমার সংসার আমাকে বুঝতে দে , তুই নাক গলাতে যাস কেনো , তোর বাড়িতে এসেছি বলে , এই এখন চলে জাচ্ছি” এই বলে সত্যি সত্যি মেজো আপা তিতলির হাত ধরে বেড়িয়ে যাচ্ছিলো ।
তখন আমার নিজের রাগ ভুলে ওকে থামানোর চেষ্টা করতে হচ্ছিলো , কিছুতেই থাকবে না , কোথায় থাকবে জিজ্ঞাস করতে বলে “যার কাছ থেকে এসেছি তার কাছে ফিরে যাবো।“ এখন নাকি ওটাই ওর জীবন , এই নিয়েই ওকে থাকতে হবে ।

সেদিন বুঝেছিলাম মেজো আপা , আর আগের সেই জেদি মেজো আপা নেই । যদি মেজো আপাকে মাটির সাথে তুলনা করা হয় তাহলে , কৈশোরে ও ছিলো পাথুরে মাটি , বড় শক্ত এই মাটি , কারো কথা শোনে না । এই মাটিতে চলাচল করা খুব কষ্টের , এই মাটিতে চাষ করা যায় না । কিন্তু বিয়ের পর সেই পাথুরে মাটির পাথর একটি একটি করে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে , তৈরি হয়েছে উর্বর নরম মাটি । আর এর কারিগর আমাদের মা , মায়ের সাথে গোপন মিটিং গুলোতে মা এই কাজ খুব যত্নের সাথে করেছেন ।

আমি আর কিছুই বলিনি ,এর পর কিছুই বলা যায় না , যদিও আমার বোন , কিন্তু তার আগে ও একজনের স্ত্রি , ওই একজনকেই ও নিজের সবচেয়ে আপন আর কাছের করে নিয়েছে । তার দোষ ত্রুটি ও মানুষের কাছে লুকিয়ে রাখে , রাখার কারন আগে বুঝতে না পারলেও এখন অনেকটা বুঝতে পারি । কারন হচ্ছে ওই একজনের অপমান কে ও নিজের অপমান হিসেবে দেখে ।

মেনে নিতে না পারলেও সেদিন আমি আর কিছু বলিনি , ওদের মাঝে আমার অনধিকার চর্চা ঠিক হতো না । মেজো আপা নিজে যতদিন সাহায্য না চাইবে ততদিন আমি কে ওদের মাঝে আসার । সেদিন ই আমি প্রথম অনুভব করেছিলাম আমার ও এমন একজন দরকার , নইলে বড় একলা হয়ে যাবো । প্রকিতির নিয়ম ই এটা , মা বাবা ভাই বোন সবাই একদিন দূরে চলে যাবে , শূন্য স্থান পুরনের জন্য এমন কাউকে লাগবে যে সুধু তোমার একার ।

ঠিক এক সপ্তা পর এসেছিলো মেজো দুলাভাই , ওনাকে দেখেও না দেখার ভান করে ছিলাম , কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার উনার আচরন দেখে মনে হয়েছিলো কোন কিছুই ঘটেনি , উনি এক সপ্তা আগে স্বাভাবিক ভাবে স্ত্রি কে বাপের বাড়ি রেখে গিয়েছিলেন , এখন আবার নিতে এসেছেন । আমাকে ডেকে হালচাল জিজ্ঞাস করলেন । তারপর বললেন “যা তো একটা ডাব নিয়ে আয় , আসার সময় রাস্তায় ডাব দেখে এসেছি”

মেজো আপা কি এভাবে সুখি আছে? হয়ত আছে , অন্তত দেখে তাই মনে হচ্ছে । এই যে মেয়ের জম্নদিনে ছুটাছুটী করছে , ওর মুখে তো আমি তৃপ্তি দেখতে পাচ্ছি । কি করে সম্ভব সেটা অবশ্য বুঝতে পারছি না । বোঝার দরকার ও নেই আমার , আমাকে এসব এর ভেতর দিয়ে যেতে হবে না।

“ এই সৌরভ হাঁদার মতো দাড়িয়ে আচিস কেনো ? একটু সাহায্য কর” একটু আগে একবার বলে গেলো আমাকে , দম ফেলার সময় নেই ওর । মুখের পুরু মেকআপ ঘামে লেপ্তে আছে , বেশ বড় আয়োজন , পুরোটা একাই সাম্লাচ্ছে । দুলাভাই তেমন কাজে আসছেন না , উনি কথায় পটু কাজে নয় । আমি কথায় ও পটু না কাজেও না ।

একটু পর দেখলাম দুলাভাই একটা মেয়ের পাশে বসে, কম বয়সি মেয়ে , প্রথমে এমি দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম । একটা মেয়ের পাশে বসা খুব খারাপ কিছু না কিন্তু উনি যেভাবে বসেছেন সেটা আমার কাছে শালীন মনে হচ্ছে না । উনি নিচু হয়ে মেয়েটিকে কি যেন জিজ্ঞাস করছেন , আর মেয়েটি কুঁকড়ে যাচ্ছে । আমি আর দাঁড়ালাম না , এই ভরা মজলিশ এ এসব সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না।

বারান্দায় এসে পড়লাম , অনেকদিন পর একটা সিগারেট এর ইচ্ছা হচ্ছিলো । বেশ কিছুক্ষন বারান্দায় থাকার পর টের পেলাম কেউ একজন আসছে । ঘুরে তাকিয়ে দেখি সেই মেয়েটি , একটু বিব্রত হলাম । যার সাথে নিজের বোনের হাসবেন্ড কে একটু আগে দেখে এসেছি তার সামনে স্বাভাবিক হওয়া সহজ নয় ।

“ আমি যদি এখানে একটু দাড়াই , আপনার সমস্যা আছে”

“ না না আপনি আসুন,আমি চলে জাচ্ছি”

“ আপনিও দাঁড়ান , এখানে অনেক জায়গা আছে , আর আমাকে আপনি করে বলবেন না আমি তিতলির বান্ধবি, আপনি তো তিতলির মামা হন”

কিছুক্ষনের জন্য আমি চুপ হয়ে গেলাম , আসলে কি বলবো বুঝতে পারছি না , দুলাভাই তিতলির বান্ধবির সাথে !!! লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে গেলো ।


“ আপনি দেখছেন , তাই না?”

কি দেখার কথা জিজ্ঞাস করছে সেটা বুঝতে আমার এক সেকেন্ড ও সময় লাগলো না , কিন্তু ভাবলাম কথাটা কাটিয়ে দেই । এই বিষয় নিয়ে যত কথা বলবো মন তত তিক্ত হবে। তা ছাড়া মেয়েটির জন্য ও নিশ্চয়ই এই আলোচনা সুখকর হবে না । তাই বললাম “ কি দেখছি?”

“তিতলির বাবার সাথে”

“ দেখ তোমার কথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না” তিতলির বান্ধবি শোনার পর আপনা থেকেই তুমি চলে এলো ।

“ আপনি কি তিতলির মার কাছে বলে দেবেন?”

এবার আমার রাগ হলো , নিশ্চয়ই দুলাভাই পাঠিয়েছে , আর মেয়েটাকে আমি এতক্ষণ নিস্পাপ মনে করেছিলাম , এখন মনে হচ্ছে সেও এর সাথে জড়িত , আমি রাগের সাথেই বললাম “ বলে দিলে কি খুব অন্যায় হবে?”

“ না না অন্যায় হবে না , আমার কোন আপত্তি ও নেই , তবে উনি জানেন”

এমন একটা কথা মেয়েটি এতো স্বাভাবিক ভাবে বলল যে এটা কোন বিষয় ই না। কি বলবো ভেবে ওঠার আগেই মেয়টি আবার বলল “ উনার কাছে বললে সুধু সুধু ওনার কষ্ট বাড়বে”

“এই মেয়ে তোমার বয়স কত , এই বয়সে এতো বড় ফাজিল হয়ে উথেছো তুমি” রাগে গজ গজ করেতে করতে বললাম আমি

“তিতলির মাও এমন ই বলেছিলো”

শেষের কথাটি বুঝতে আমার অনেক সময় লাগলো , এর মানে মেয়েটি মেজো আপার কাছে এসব বলেছিলো । আর মেজো আপা মেয়েটির উপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছে । স্বামীর দোষ ঢাকার জন্য মেজো আপা বহুদুর পর্যন্ত যেতে পারে , এটা আমার আগেই জানা আছে , ওর বিয়ের বছর দুই পরে একবার বড় আপার সাথে কি নিয়ে জানি ঝগড়া হয় ওর , বড় আপা মেজো দুলাভাই সম্পর্কে কিছু একটা বলেছিলো , আর অমনি বড় আপার নামে একশোটা মিত্থা কথা এমন কি বড় আপা মনে মনে মেজো দুলাভাই কে কামনা করে এমন মারাত্মক মিত্থা বলতেও ওর বাধেনি । তাই বলে একটা কিশোরী মেয়ে যে কিনা মলেস্টিং এর স্বীকার হচ্ছে তাঁকে সাপোর্ট করবে না ? মেজো আপার উপর প্রচণ্ড রাগ হলো ।



[/HIDE]
 
[HIDE]



“ তুমি বলেছিলে আপার কাছে “ আমার গলার স্বর আগের থেকে একটু নমনীয় হয়ে এলো , মেয়েটিকে একটু আগে ভুল বুঝেছিলাম । মেয়েটি মুখে কিছু বলল না , তবে মাথা উপর নিচ করে হ্যাঁ সুচক উত্তর দিলো । “তারপর ও তুমি এ বাড়িতে কেনো আসো”

“ তিতলি আমার সবচেয়ে ভালো বান্ধবি তাই”

“ও…” কি বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না , একটু ভেবে বললাম ,”তোমার মা বাবার কাছে বলেছো , এসব নিয়ে মুখ বুজে থাকতে নেই” মেয়েটির জন্য সত্যি কিছুটা মায়া লাগছে , বাচ্চা একটা মেয়ে কত বয়স হবে ১৪ , এই বয়সে মেয়েটিকে কত বড় একটি ব্যাপার বুকের মাঝে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হচ্ছে । এই বয়সে আমরা তো খাওয়া দাওয়া খেলাধুলা আর পড়াশুনা ছাড়া কিছুই ভাবতাম না। আমাদের সবচেয়ে বড় দুশ্চিন্তা ছিলো স্কুলের হুজুর স্যার এর বেত্রাঘাত ।

“আমার তো মা নেই”

“ বাবা?”

“ বাবা আছেন , তবে বাবার কাছে বলা যাবে না”

“ কেনো … এসব জিনিস লুকিয়ে রাখতে নেই , লজ্জা পাওয়ার ও কিছু নেই” মেয়েটিকে বোঝানর জন্য বললাম ,

“ আমার বাবাও একি দোষে দুষ্ট , তাই আমার মনে হয় না তার জানার অধিকার আছে যে তার মেয়ের সাথেও এমন হচ্ছে”

একটা ধাক্কার মতো খেলাম , বাচ্চা একটা মেয়ের মুখে এমন কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না , মেয়েটির দিকে ভালো করে তাকালাম , বারান্দার গ্রিল এর পাশে দাড়িয়ে থাকায় , বাইরের আলোয় গ্রিলের ছায়া এসে পড়েছে ওর এক পাশে । আমার কাছে মনে হলো এই আলো ছায়া মিলে মেয়েটির অবস্থা একেবারে নির্ভুল ভাবে তুলে ধরেছে । মেজো আপার বাসার বারান্দার গ্রিল গুলো জেলের গারদ এর মত লম্বা লম্বা , আর এই লম্বা গ্রিল এর ছায়া মেয়েটিকে বন্দিনি রাজকন্যায় রুপদান করেছে । বন্দিনি রাজকন্যার জন্য মনটা খারাপ হয়ে গেলো । ইচ্ছা হচ্ছে কিছু করি , কিন্তু কি করবো , দুলাভাই এর কলার চেপে ধরে শাসিয়ে দেবো , সে শক্তি আমার নেই, মনে হয় ইচ্ছা ও নেই ।

“ আপনি কি ভাবছেন সেটা আমি শুনতে পাচ্ছি” হঠাত মেয়েটি হেঁসে উঠলো , আমি অবাক হয়ে তাকালাম , এখন আর বন্দিনি রাজকন্যার মতো লাগছে না ওকে । স্বাভাবিক কিশোরীর মতো দেখাচ্ছে ।

“মানে?”

“ মানে আমি মানুষের চিন্তা ভাবনা মাঝে মাঝে শুনতে পাই”

ভ্রূ কুচকে তাকালাম , কি বলতে চাইছে মেয়েটি বোঝার চেষ্টা করছি । ও কি সত্যি বলছে নাকি , গুমট ভাবটা দূর করার চেষ্টা করছে ।

“ শুনতে চান?” কিশোরীর উচ্ছলতা প্রকাশ পাচ্ছে ওর মাঝে , ব্যাপারটা ভালো লাগলো , আমার কাছে সব কিছু স্বাভাবিক ই ভালো লাগে, তাই মেয়েটার মন খুশি করতেই বললাম

“ বলো তো শুনি”

“ আপনি আমার জন্য কিছু একটা করতে চাইছেন , কিন্তু আপনার ইচ্ছা হচ্ছে না” এই বলে হেঁসে উঠলো , আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম , এই মেয়ের কি সত্যি সত্যি এই ক্ষমতা আছে ? নাকি অন্য কিছু ।

“ অবাক হলেন , ভাবছেন আমার ক্ষমতা আছে কিনা সত্যি সত্যি” এবার আমি চমকে উঠলাম , আর এই চমকে ওঠা আমার শরীরী ভাষায় ও প্রকাশ পেলো । মেয়েটা এখন প্রচণ্ড হাসছে , মনে হচ্ছে হাঁসতে হাঁসতে ওর চোখে পানি চলে এসেছে । আমি কিছু না বলে বোকার মতো দাড়িয়ে রইলাম । মানুষের যে বাড়তি কোন ক্ষমতা থাকতে পারে এটা আমি কোনদিন বিশ্বাস করিনি।

ছোট বেলায় একবার আমাদের এলাকায় বেদে এসেছিলো , সাপের খেলা দেখায় আরও নানা রকম জাদু দেখায় । একটা জাদু ছিলো , একটা পাখি কে মুঠি করে ধরে রাখে তারপরে সেই পাখি কথা বলে । ওই জাদু দেখে সবাই অভিবুত আমি নিজেও অভিভূত , এতই অভিভূত হয়েছিলাম যে নিজে দেখতে চাইছিলাম কেমন করে এই কাজ হয়ে । লোকটা যখন অন্য জাদু দেখাতে ব্যাস্ত ছিলো আমি চুপি চুপি ঝোলা থেকে সেই পাখির বাক্স বের করি , একটা মড়া শালিক পাখির ঠোঁট আর নকল পশম লাগানো খাঁচা । কোন কিছু দেখে প্রচণ্ড অভিভূত হওয়ার পর যদি দেখা যায় সেটা সম্পূর্ণ ভাওতা তাহলে এই সম্পূর্ণ জিনিসটার উপর থেকে বিশ্বাস উঠে যায় । আমার ও তেমন , কোথাও যদি শুনি অমুক লোকের তমুক পাওয়ার আছে আমি বিশ্বাস করি না । তাই আমার অসুখের জন্য কোন পীর ফকির অথবা তিবিজ কবজ নেই নি । তবে এই মেয়েটি আমাকে ভাবিয়ে তুলছে । তবে এর পেছনে নিশ্চয়ই কোন রহস্য আছে । কি সেটা আমি এখনো বুঝে উঠতে পারছি না ।

অবশেষে মেয়েটির হাঁসি থামল , তবে হাসির রেষ এখনো কাটেনি , বলল “ আসলে আপনার সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি আমি তাই বলতে পেরেছি , আমার কোন পাওয়ার টাওয়ার নেই বুঝেছেন”
“ তুমি কি করে আমার সম্পর্কে জানলে?” বেশ অবাক হলাম আমি ,

“ তিতলির সবচেয়ে ভালো বন্ধু আমি , আমারা দুজনে অনেক কথা বলি” কিশোরী সুলভ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলল মেয়েটি

আমার ভাগ্নি তিতলি , আমাকে নিয়ে ওর বান্ধবির সাথে কথা বলে সেটা আমার জানা ছিলো না । আসলে আমার কোন ভাগ্নে ভাগ্নির সাথেই তেমন সম্পর্ক নেই , সাধারণত ভাগ্নে ভাগ্নি দের সাথে মামাদের বন্ধুত্বপূর্ণ আদরের সম্পর্ক হয় । কিন্তু আমার কোন ভাগ্নে ভাগ্নি আমার সামনে তেমন আসে না । তাই তিতলির আমার সম্পর্কে তেমন কিছু জানার কথা না ।

“ কিন্তু তিতলি নিজেই তো আমাকে ঠিক মতো জানে না , তুমি এমন কি তিতলির কাছে শুনলে যে আমার মনে কি চিন্তা চলছে বুঝে ফেললে” আমার কৌতূহল এখনো কমেনি , তাই বিষয়টা আরও ভালো করে বোঝার জন্য বললাম ।

“ শুনলে আপনি রাগ করবেন” মেয়েটি বলল ওর চোখে এখনো হাঁসি খেলা করছে। কত দ্রুত মেয়েটি নিজের মনের অবস্থা পরিবর্তন করতে পারে দেখে বেশ অবাক হলাম , ভালো ও লাগছে । হয়ত কৈশোর এর চপলতা এক মুডে বেশিক্ষণ থাকতে দেয় না ওদের ।

“আচ্ছা শুনুন , তিতলি বলে আপনি নাকি ভ্যাবলা মার্কা লোক , কোন কিছুই আপনি করেন না , সুধু বসে বসে ভাবেন, আপনার নাকি কোন কিছুতে ইচ্ছা নেই । এমন কি আপনি তিতলির জন্য কোনদিন কিছু আনেন না , এই জন্মদিনেও কিছু গিফট করেনি”

আমা ভাগ্নি আমার সম্পর্কে এমন ধারনা রাখে শুনে একটু আহত হলেও , মেনে নিতে হলো , কারন ভুল কিছুই বলেনি ও , আমার কি উচিৎ ছিলো তিতলি অথবা বড় আপার ছেলে মেয়ের সাথে ভালো একটা সম্পর্ক তৈরি করা । ভাবনায় ছেঁদ পরলো মেয়েটি যখন একটি প্রশ্ন করলো , খুব বেক্তিগত প্রশ্ন , এই ধরনের প্রশ্ন সচরাচর ভাগ্নির বান্ধবির কাছ থেকে আশা করি না ।

“ আচ্ছা আপনি বিয়ে করেন না কেনো?” দেখলাম প্রশ্নটি করে মেয়েটি মুখ চেপে হাসছে , বুঝতে পারলাম এই ব্যাপারেও তিতলির কোন থিওরি আছে , একবার চিন্তা করলাম জানার দরকার কি , পরে ভাবলাম আমি হয়ত না জানতে চাইলেও এই মেয়ে আমাকে জানাবে , ওর চোখ তাই বলছে , সে নিজেও জানতে চায় ।

“ কানো তিতলি কিছু বলেনি”

“ বলেছে তো , আসলেই কি ওটা সত্যি কিনা জানতে চাইছি”

“ কি বলেছে ও ?”
“ বলেছে , ওর কাছে মনে হয় আপনার গোপন রোগ আছে” মেয়েটির এখন বেশ কষ্ট হচ্ছে হাঁসি চেপে রাখতে ,

“রোগ তো একটা আছে , সেটা সবাই জানে” আমি সরল মনে বললাম , বলেই বুঝলাম ভুল হয়েছে , মেয়েটি পেটে হাত চাপা দিয়ে হাসছে ,

লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে গেলো , “গোপন রোগ” বলতে কি বোঝাতে চাইছে সেটা আমি এখন বুঝতে পারছি । আমার ভাগ্নি আমার সম্পর্কে এমন কথা বলে এটা বেশ লজ্জার বিষয় আর অনুচিত ও । পরক্ষনেই আমার মনে পরে গেলো কদু ভাইয়ের কথা , ভাল নাম ছিলো কুদ্দুস , আমাদের এলাকার , বিয়ে করেনি অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিলো , আমারা বন্ধুরা মিলে ওনাকে নিয়েও এসব বলতাম । তিতিলি ই সেই এক বয়সে এই আছে , হয়ত নতুন নতুন সব কিছু জানতে পারছে , এসব নিয়ে কথা বলবে বন্ধুদের সাথে এটাই তো স্বাভাবিক ।


“ এই তুই এখানে , তোকে………” মেজো আপা এইটুকু বলে থমকে গেলেন , চোখ সরু করে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে । মেয়েটি ও হাঁসি থামিয়ে দিয়েছে ।

“ কিরে আপা?” আমি জানতে চাইলাম

“ কেক কাটা হবে চল …… এই তুমি ও আসো , তিতলি তোমাকে খুঁজছে”

সবার আগে মেয়েটি বেড়িয়ে গেলো , মেয়েটি বেড়িয়ে যেতেই মেজো আপা গলা নিচু করে বলল ,” এই মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাকিস , এক নম্বর বজ্জাত”

কেক কাটার সময় দেখলাম দুলাভাই একেবারে ওই মেয়েটির পেছনে দাঁড়িয়েছে । মেয়েটির মুখে আর হাঁসি নেই , কেমন জানি একটু উশখুশ করছে । আর একজনের মুখেও হাঁসি নেই সে হচ্ছে মেজো আপা । ও নিশ্চয়ই বুঝতে পারছে কি হচ্ছে , দুলাভাই যখন খুব স্বাভাবিক ভাবে মেয়েটিকে কেক খাইয়ে দিচ্ছিলো তখন তো মেজো আপা কেঁদেই ফেলে প্রায় ।

আমি আর থাকলাম না চুপ চাপ বেড়িয়ে এলাম । বেশ রাত হয়েছে , রাস্তা ফাঁকা , আমি হাঁটছি । মেজো আপা আর তিতলির বান্ধবির কথা মনে পড়ছে সুধু । মেয়েটিকে এক ফাঁকে জিজ্ঞাস করেছিলাম তিতলি এসব জানে কিনা , উত্তরে বলেছিলো “না… কোন মেয়ের ই তার বাবার কুচ্ছিত চেহারা দেখা উচিৎনয় , অনেক কষ্ট হয়”

মেজো আপা আর ওই মেয়েটি দুজনার কত তফাৎ কিন্তু একটি জায়গায় দুজনের কত মিল । এই যাহ মেয়েটির নাম জিজ্ঞাস করা হয়নি ।




[/HIDE]
 
[HIDE]
কয়েকদিন মায়ের দোয়া হোটেল বন্ধ , নিজের রান্না করে খেতে হচ্ছে , অন্য হোটেল এর খাবার মুখে রুচলেও পেটে সয় না। রজব এর দোকানের খাবার যে খুব উন্নত মানের এমন নয় , হয়ত পেটে সয়ে গেছে । রান্না নিয়ে বেশি ঝামেলা করিনি , ইন্সটেন্ট নুডোলস , পাউরুটি এসব দিয়ে চালিয়ে দিচ্ছি । বাসার নিচে একটা ডিমের দোকান আছে , সেখান থেকে মাঝে মাঝে সেদ্ধ ডিম নিয়ে আসি । অবশ্য খাওয়ার দুশ্চিন্তার চেয়ে রজব এর জন্য বেশি চিন্তা হচ্ছে , রজব কর্মঠ মানুষ । খুব বড় কিছু না হলে রজব দোকান বন্ধ রাখার লোক না । কিন্তু খবর নেয়ার কোন উপায় জানা নেই , আমি মোবাইল ফোন ব্যাবহার করি না । এছাড়া রজব এর বাড়ি ও আমি চিনি না । রজব বেশ কয়েকবার নিয়ে যাবে বলেও নিয়ে যায়নি ।


কিছুদিনের মাঝে বাড়ির কাজ শুরু হবে , আমাকে মাসে ১৫ হাজার করে টাকা দেয়া হবে অন্য বাসা ভাড়া বাবদ । মন্দ নয় ব্যাপারটা । আমার অবশ্য বাসা ভাড়া করতে হবে না , মেজো আপার বাসায় বন্দোবস্ত হয়েছে । আমি অবশ্য না করেছিলাম , অনেকদিন একা একা থকার ফলে আমাকে একলা রোগে ধরেছে । বেশি মানুষ জন দেখলে কেমন জানি দম বন্ধ লাগে । সেদিন গিয়েছিলাম বাড়ির টাকা বুঝে আনতে , ফেরার সময় যখন বাস স্ট্যান্ড এ দাড়িয়ে আছি । প্রচুর মানুষের ভির , হঠাত আমি খেয়াল করলাম আমি ভয় পাচ্ছি , মনে হচ্ছে আমি কোথায় সেটা মনে করতে পারছি না । মনে হচ্ছে এই মানুষের ভির আমাকে পদদলিত করে মেরে ফেলবে । কোন রকম ভির ঠেলে বেড়িয়ে এসেছি । একটা অটো নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলাম । এর পর থেকে দিনের বেলা বাসা থেকে বের হচ্ছি না ।

টাকাটা আমাকে আনতে যেতে হয়েছিলো কারন টাকার প্রতি এখন আর সাদিক এর তেমন টান নেই । সুমির বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেছে । খুব মুষড়ে পড়েছে সাদিক আর সুমি , আমাকে দেখে হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো সুমি , হতবিহবল আমি তেমন সান্তনা দিতে পারিনি । তবে আশ্চর্যের বিষয় আমার তেমন দুঃখ হয়নি । যতটুকু দুঃখ হয়ে ছিলো সেটা সুমি আর সাদিক এর জন্য । একটা জীবন দুনিয়ার মুখ দেখতে দেখতেও দেখতে পেলো না , নিঃসন্দেহে এটা দুঃখের একটি ব্যাপার । এছাড়া ভূমিষ্ঠ হওয়া মানুষের মৃত্যুর চেয়ে এটা কোন অংশে কম নয় । কিন্তু একজন পাষাণ হৃদয় এর অধিকারীর মতো আমার মনে সেই ভূমিষ্ঠ না হওয়া মানুষটির জন্য একটুও মায়া অথবা দুঃখ হয়নি । অথচ সুমি আর সাদিক এমন ভাবে কাদছিলো যেন মৃত ভ্রুন টি ওদের সাথে কোনদিন বসবাস করেছে ।

একটু ভুল বললাম মৃত ভ্রূণটি অবশ্যই সুমির সাথে বসবাস করেছে । গত পাঁচ মাস যাবত সুমির পুরোটা সত্ত্বা জুড়েই ছিলো সেই অসম্পূর্ণ মানুষ টি । কোথায় যেন একবার পড়েছিলাম একজন মা পেটে বাচ্চা আসার সাথে সাথে মা হয়ে যায় , কিন্তু পিতার পিতা হয়ে ওঠা হয় যখন সে সন্তান কে প্রথমবার কোলে নেয় । আমার দুঃখ না লাগার কারন আমি তখন বুঝতে পেরেছিলাম। আসলে দুনিয়ায় মায়ের মতো আর কেউ নেই , আমার তো মনে হয় , একজন মেয়ে জন্ম থেকেই মা হয়ে জন্ম নেয় , মা হওয়ার জন্য তার গর্ভে সন্তান আসার দরকার হয় না ।

সাদিক এর অনিচ্ছার কারনে তাই আমাকেই সব দায়িত্ব নিতে হয়েছে । আর তখনি মেজো আপার আগমন , সাথে দুলাভাই ।
“সৌরভ তুই এমন একটা কাজ করতে পারলি” এসেই প্রথম এই কথাটা বলছিলো মেজো আপা , দুলাভাই কিছু না বললেও ওনার মুখের অভিবেক্তি দেখে মনে হচ্ছে আমি যাই করে থাকি না কেনো উনিও সেটা মেনে নিতে পাড়ছেন না । অবশ্য আমার কিছু জিজ্ঞাস করতে হলো না , মেজো আপা নিজেই আমার সেই গুরতর অপরাধ এর কথা তুলে ধরলেন “ বাড়িটা বিল্ডার দের দিয়ে দিলি কাউকে কিছু জিজ্ঞাস ও করলি না , হতে পারে আমারা আমাদের ভাগ সুমির কাছে বিক্রি করে দিয়েছি , কিন্তু বাপের বাড়ি তো , সুমি না বললে তো শেষ দেখাটাও দেখা হতো না”

“ আমি এতো কিছু চিন্তা করিনি রে আপা , আর সুমি তো বলেছে ই , এখন দেখ” কিন্তু মেজো আপা কে থামানো যায় না , অনেক কিছু বলার পর শেষে আসল পয়েন্টে এলো , বলল “তোর দুলাভাই এর সাথে একবার আলাপ তো করে নিবি”

এর পর দুলাভাই মুখ খুললেন , উনি এর জন্যই অপেক্ষা করছিলেন , “ কত দিচ্ছে ওরা?” ওনার স্বভাব সুলভ চালিয়াতি দৃষ্টি আমার দিকে তাক করলেন , আমি টাকার অঙ্ক বলতেই ওনার চোখ কপালে উঠলো , তারপর আপার দিকে তাকিয়ে বললেন “ দেখেছো আমি বলেছিলাম , একেবারে ঠকিয়েছে”

“ হু কোম্পানি ঠকিয়েছে না কে ঠকিয়েছে গিয়ে দেখো?” মেজ আপার ইংগিত আমি বুঝতে পারলাম , তবে আমি জানি সাদিক এমন করার মানুষ না । “ হুম্মম্মম্ম” সব্জান্তার ভাব এসে ভর করলো দুলাভাই এর উপর । তারপর জিজ্ঞাস করলেন “ফ্লাট কেমন দিচ্ছে?”

“৬০/৪০”

“ হুম্মম……… এটা ঠিক আছে , তবে টাকায় খুব ঠকিয়েছে তোকে”

“সুনলাম টাকা নাকি সব দিয়ে দিচ্ছিস সুমির জামাই কে?” মেজো আপা দ্রুত জিজ্ঞাস করলেন ,

“ সাদিক এর টাকার দরকার , আমি টাকা দিয়ে কি করবো”

“ তোর আর দুনিয়ায় কেউ নাই বুঝি? এই যে ভাগ্নি একটা বড় হচ্ছে , ওকেও তো কিছু দিতে পারতি”

এই প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা ছিলো না ,

তবে মনে মনে ঠিক করলাম , আমি যে ছটা ফ্ল্যাট পাবো তার মাঝে একটা তিতলির নামে আর দুটো বড় আপার দুই ছেলে মেয়ের নামে করে দেবো । বাকি তিনটা দিয়ে কি করবো কে জানে । সেদিন রাতে মেজো আপা থেকে সত্যি সত্যি থেকে গেলো । দুলাভাই অবশ্য থাকলো না , তিতলি বাড়িতে একা থাকবে এই জন্য । হোটেল এর খাবার আপা খাবে না , তাই বাজার করতে হলো , আপা সেই বাজার রান্না করে দুলাভাই কে খাইয়ে দিলো , আর তিতলির জন্য দিয়ে দিলো বাটি করে ।

রাতে আপা অনেক্ষন ধরে হিন্দি সিরিয়াল দেখলো , সাথে আমাকেও বসে থাকতে হলো । একা একা সিরিয়াল ও দেখতে পারে না, সিরিয়ালে একটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ ঘটনা ঘটে আর আপা আমাকে এর পেছনের কারন খুলে বলে । রাত শোয়া এগারটা পর্যন্ত সিরিয়াল দেখে সেদিন ঘুমাতে গেলাম । ততক্ষনে আমার ঘুম চলে গেছে । আমি দশটায় ঘুমানোর লোক । দশটা যদি কোন রকমে সাড়ে দশটা হয় সে রাতে ঘুম হয় না ।

সেদিন ও ঘুম আসছিলো না , বিছানায় শুয়ে এপাশ , ওপাশ করছিলাম । হঠাত দেখি উঠানে কে জানি হাঁটছে । আমার ঘর যেটা এক সময় বাবা মায়ের ঘর ছিলো , আগুন্তুক এদিকেই এগিয়ে আসছে । একটু পরে আওয়াজ আরও স্পষ্ট হলো , ভাবলাম চোর টোর হবে , তাই সিদ্ধান্ত নিলাম শুয়ে থাকবো মটকা মেরে যা হওয়ার হোক । কিন্তু কৌতূহল বড় শক্ত জিনিস , কিশোর বয়সে অতি প্রাকিত কিছু দেখার বাসনা আমার ছিলো , চেষ্টাও করেছিলাম, দেখা মেলেনি কোনদিন । একটা মৃদু সম্ভাবনা সেদিন আবার সেই ইচ্ছা আমার ভেতর জাগিয়ে তুলেছিলো , জানালার পর্দা সরিয়ে উঁকি দিতেই আমার হৃদ পিণ্ড ধক করে উঠেছিলো , কয়েক সেকেন্ড এর জন্য মনে হয়েছিলো সত্যি অতি প্রাকিত কিছু দেখেছি । একজন মহিলা , এলো করে সাড়ি পরা , হাঁটছে , ঠিক এলো মেলো হাটা নয় , তার নির্দিষ্ট গন্তব্য আছে বলে মনে হলো । আমাদের বাড়ির একেবারে শেষের কোন হচ্ছে তার গন্তব্য ।

ভেবেছিলাম হতেই পারে , বাড়িটা ভেঙ্গে ফেলা হবে তাই হয়ত এই বাড়ির সাথে জড়িত অশরীর কেউ এসেছেন , শেষ কটা দিন এর জন্য । প্রাথমে ভাবলাম আমার দাদি হবেন , এই বাড়ির প্রতি অগাধ টান ছিলো ওনার , ছোট বেলায় দেখেছি কোথাও গিয়ে দুটো দিন থাকতে চাইতেন না । স্বামীর ভিটে স্বামীর ভিটে বলে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইতেন । কিন্তু সম্ভাবনা নাকচ করে দিলাম, কারন আমার দাদি ছিলো বেটে খাটো মহিলা । ভাবলাম মা নয়ত ? একদম মায়ের মতো কাপড় পড়েছে , কিন্তু মায়ের তো এই বাড়ির জন্য তেমন কোন বাড়তি টান দেখিনি যে শেষ বার দেখতে আসবেন, বরং মাঝে মাঝে মনে হতো মা এই বাড়ি থেকে দুদিন এর জন্য অন্য কোথাও গেলে খুব খুশি হতেন। একবার আমরা সবাই মিলে কক্সবাজার গিয়েছিলাম , সেবার মা ভীষণ খুশি হয়েছিলো। আমার মনে আছে , বিচে বসে বাবার সাথে এমন করে কথা বলছিলো যেন নতুন বিয়ে হয়েছে দুজনের, তখন বুঝতে পারিনি তবে অনেক পরে যখন সেই দৃশ্য আনমনে চোখে ভেসে উঠেছিলো তখন এমনটাই মনে হয়েছিলো। তাই মায়ের আসার কথা নয় । কিন্তু ওই হাঁটার ভঙ্গি , ওই এক রকম দৈহিক গঠন।

ভয় আমি পাইনি , তবে আমার মস্তিস্ক ডাবল টাইম কাজ করছিলো , কে হতে পারে এই মহিলা , কিছুতেই মিলাতে পারছিলাম না। অনেক সময় মস্তিস্ক অতিরিক্ত কাজ করলে শরীর ঘেমে ওঠে আমার একটু ঘাম হয়েছিলো । রহসসময় সেই নারীর গন্তব্বে আমার জানালার পাশ দিয়েই যেত হতো , তাই যখন আরও কাছে চলে এলো , তখন আমার মস্তিস্ক একটু সময় এর জন্য শান্ত হলো , কারন ওই নারী আর কেউ নয় , মেজো আপা , একদম মায়ের মতই লাগছিলো ওকে । কিন্তু এতো রাতে মেজো আপা এখান দিয়ে যাচ্ছে কেনো ? ওর তো পোকার ভয় অনেক , আর বাড়ির পেছনের এই জায়গাটা পরিস্কার করা হয় না অনেক বছর , পোকা মাকড় তো থাকবেই , সাপ থাকলেও অবাক হওয়ার কিছু নেই । আর সেই পথেই কিনা আপা এমন করে হেঁটে যাচ্ছে তাও রাত দুপুরে ।

আপার কি সত্যি বাড়িটার জন্য এতো মায়া!!! , কই কোনদিন তো মনে হয়নি । আমার অন্য বোনদের তুলনায় মেজো আপা কেই আমি সবচেয়ে বেশি জানি , কোনদিন আমার মনে হয়নি এই বাড়ির প্রতি ওর টান আছে । উল্টো বাড়িটার প্রতি ওর অভিযোগ ছিলো প্রচুর , দেয়াল স্যাঁতসেঁতে , হাই কমোড নেই (তখন ছিলো না)। ভুত আছে এই বাড়িতে এসব কত কথা বলতো । আসলে মানুষের মন বোঝা বড় দায় , কেউ যদি বলে আমি একজন মানুষ কে খুব ভালভাবে বুঝতে পেরেছি , তাহলে সে ডাহা মিত্থা বলছে এতে কোন সন্দেহ নেই । কেউ কোনদিন চিন্তাই করতে পারবে না মেজো আপা রাত বিরাতে জুঙ্গুলে এই বাড়ির পেছন রাস্তা দিয়ে হাঁটছে ।

আমার অনুমান সত্যি করে দিয়ে মেজো আপা বাড়ির শেষ কোনায় গিয়ে দাড়িয়ে পড়ল , তারপর এদিক ওদিক একবার তাকিয়ে নিয়ে উবু হলো । আমি আগ্রহ হাড়িয়ে ফেলেছিলাম , কিন্তু মেজো আপার কর্ম কলাপ আমাকে আবারো আগ্রহি করে তুলল। আসলে আমি একটু লজ্জা ও পাচ্ছিলাম , কারো গোপন কাজ দেখা আমার স্বভাব নয় । কিন্তু সেদিন আমার কৌতূহল আমাকে ভালো ভাবেই কুপোকাত করেছিলো ।


কিছুক্ষন খোঁড়াখুঁড়ির পর মেজো আপা একটা প্লাস্টিকের ময়লা ব্যাগ বের করে আনলো । কি আছে সেই ব্যাগে , আর এই জিনিস মেজো আপা কতদিন আগে রেখেছিলো এই যায়গায় ? প্রচণ্ড কৌতূহল সে রাতে আমাকে মেজো আপার উপর সাপাইং করতে বাধ্য করেছিলো । ঘরের ভেতর ঢুকে মেজো আপা যখন সোজা রান্না ঘোরে গিয়ে চুলা জ্বালাল আমি চুপি চুপি তখন রান্না ঘোরে উঁকি দিয়ে । সেই ছোট বেলার মতো মেজো আপা পড়তে বসেছে আমি চোরা চোখে ওকে দেখছি আর ভাবছি একে আমি বিয়ে করবো । মেজো আপার হাতে কিছু খাম , একটা পেন্সিল বক্স , একটা সুকিয়ে যাওয়া গোলাপ ফুলের ডাঁটা , কিছু ভেঙ্গে যাওয়া চুড়ি । মেজো আপা কিছুক্ষন সেই জিনিস গুলির দিকে তাকিয়ে রইলো , তারপর একটা পাতিল নিয়ে সগুলি সেখানে রেখে আগুন ধরিয়ে দিলো । এদের শেষ ঠিকানা এখন হুমকির মুখে তাই এদের অস্তিত্ব ও আর থাকবে না । মেজো আপার না জানি কত দিনের লুকিয়ে রাখা সেই অপ্রয়োজনীয় সম্পদ গুলি নিজেদের আশ্রয় হাড়িয়ে চিতায় পুরতে লাগলো ।

আমি আর দাড়াই নি চলে এসেছিলাম , শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম , একটা বাড়ি না জানি কত মানুষের কত গোপন আড়াল করে রাখে । না জানি কত সৃতি নিজের গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে রাখে । আচ্ছা আমার কি এমন কোন সৃতি লুকায়িত আছে? প্রশ্ন এসেছিলো আমার মনে , অনেক চিন্তা করেও কিছু বের করতে পারিনি ।

[/HIDE]
 
নিরব ভাই এই ফোরামে কি পাইভেট ভাবে কথা বলার অপশন আছে ? থাকলে আপনার সাথে কথা ছিলো
 

Users who are viewing this thread

Back
Top