ব্লাউজের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় বেশি দিনের না হলেও এর বিকল্পও বের করে নিয়েছেন হালের ট্রেন্ডি তরুণেরা। শাড়ির স্মার্ট আর বৈচিত্র্যময় উপস্থাপনায় ব্লাউজের পরিবর্তে অনায়াসেই সঙ্গী এখন ক্রপ টপ, শার্ট বা টি-শার্ট।
ব্লাউজের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় বেশি দিনের না হলেও এই অল্প সময়ে শাড়ির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে। আগে ব্লাউজ কেবল শাড়ির সঙ্গে পরার একটি পোশাক হিসেবে ব্যবহার হতো। সময় বদলে ব্লাউজের কাট, কাপ এবং স্টাইলিংয়ে এসেছে নানা পরিবর্তন।
মহারানি ভিক্টোরিয়াকে বলা হয় ব্লাউজের উদ্ভাবক। ১৮৭০ খ্রিষ্টাব্দে রানি ভিক্টোরিয়া শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে সাধারণ ব্লাউজের তুলনায় ধরনের একটি ব্লাউজ ডিজাইন করেন। ওই বছরই এটি মেয়েদের আনুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে নির্ধারণ করা হয়; এই ব্লাউজ দ্রুত জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠে অভিজাত নারীদের আনুষ্ঠানিক পোশাক হিসেবে। ১৮৯০ সাল থেকে ধীরে ধীরে নারীদের ফ্যাশন এলিমেন্ট হিসেবে ব্লাউজের চাহিদা বাড়তে থাকে।
তবে বাঙালি নারীদের ব্লাউজের সঙ্গে পরিচিত করানোর কৃতিত্বটা কিন্তু ঠাকুরবাড়ির বড় বউ জ্ঞানদানন্দিনী দেবীর। আইসিএস স্বামী সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে তাঁর কর্মস্থল বোম্বে (বর্তমানের মুম্বাই) যাওয়ার জন্য তিনি তাঁর মতো করে যে পোশাকটি শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য পার্সি দরজিকে দিয়ে তৈরি করিয়ে নিয়েছিলেন, সেটাই পরে ব্লাউজে পরিগণিত হয়।
ওয়্যারহাউসের ক্রপ টপ শাড়ির সঙ্গে
বর্তমানে সব নারীর পোশাক তালিকায় আছে নানা রকম ব্লাউজ। এসবই মূলত কাট আর প্যাটার্নের রকমফেরে নানা নাম হয়েছে। তবে হাল ফ্যাশনে এখন ব্লাউজের বিকল্প হিসেবে ক্রপ টপ, টপস কিংবা শার্টের কদর বাড়ছে।
প্রতিবছর আবহাওয়া, ফ্যাশন, ট্রেন্ড ইত্যাদির সঙ্গে তাল মিলিয়ে ব্লাউজের ডিজাইনে ভিন্নতা দেখা যায়। বর্তমান প্রজন্মের তরুণীরা আবার শাড়ি পরার ধরনকে ট্রেন্ডি করতে ব্লাউজের পরিবর্তে বেছে নিচ্ছেন ক্রপ টপ কিংবা শার্ট। এগুলো ওয়েস্টার্ন আউটফিট হলেও তাঁরা প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের স্টাইলের সমন্বয় করে দারুণ স্টাইল স্টেটমেন্ট তৈরি করে নিচ্ছেন। উভয় সংস্কৃতির মিশেলে শাড়ির লুকে যেমন আসে নতুনত্ব, তেমনি দুটো ভিন্ন সংস্কৃতির পোশাকের ফিউশনে তৈরি হয় ফ্যাশনের নতুন ধারাও। ক্রপ টপ এবং শার্ট মাল্টি স্টাইলিং ফ্রেন্ডলি হওয়ায় শাড়ির সঙ্গে মানিয়ে যায় সুন্দরভাবে।
ফিট নিয়ে সমস্যা হয়না
অন্যদিকে এগুলোর ফিট নিয়েও অত বিপাকে পড়তে হয় না। সব ধরনের বডি শেপের সঙ্গে মানিয়েও যায় সাবলীলভাবে। যেহেতু এসব টপের কাট ব্লাউজের চিরাচরিত কাটের বাইরে এবং আলাদা, তাই শাড়িকে নানানভাবে স্টাইল করে পরা যায়; একই সঙ্গে ব্লাউজকে (শার্ট বা ক্রপ টপ) হাইলাইট করাও যায়; আর এই প্রবণতাও বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে তরুণীরা শার্ট কিংবা ক্রপ টপ এক রঙা শাড়ির সঙ্গে কন্ট্রাস্ট হিসেবে পরে থাকেন। আবার শাড়ি একটু ভারী হলে ব্লাউজের ক্ষেত্রে একদম সাদামাটা কিছু বেছে নেন।
এই স্টাইলে মেলে একাধিক সুবিধা। এক. এতে বানানোর ঝামেলা নেই; ফলে খরচও বাঁচে। দুই. মিক্স অ্যান্ড ম্যাচ করে পরা যায়। তিন. গরমে পরতেও আরাম মেলে। আবার যেকোনো ঋতুতেই পরা যায়; চার. ইউনিভার্সিটিতে পড়া তরুণীদের প্রায়শই নানা প্রেজেন্টেশনে শাড়ি পরতে হলে ব্লাউজের জন্য আলাদাভাবে ভাবতে হয় না। পাঁচ. সবচেয়ে বড় কথা হলো, পোশাকের পুনর্ব্যবহারকে এভাবে উৎসাহিত করে ফ্যাশনকে টেকসই করা যায়। ফলে কমে ফ্যাশনবর্জ্য। কমে দূষণ।
ব্লাউজের বিকল্প পোলো শার্ট
আজকাল সবার ক্লোজেটেই শার্ট কিংবা ক্রপ টপস থাকায় এর সঙ্গে শাড়ি পেঁচিয়ে নিলে কোনো ঝক্কি ছাড়াই আসে স্মার্ট লুক। ফ্যাশন ডিজাইনাররা প্রতিনিয়তই ব্লাউজের ডিজাইনে ভিন্নতা নিয়ে আসছেন। আবহাওয়ার কথা মাথায় রেখে হাল ফ্যাশনে এখন ঢিলেঢালা, আরামদায়ক ব্লাউজেরই চাহিদা বেশি।
এ ক্ষেত্রে ফ্যাশন হাউস ওয়্যারহাউজের স্বত্বাধিকারী তাসনিম ফেরদৌস বলেন, ‘ক্রপ টপগুলো নরমাল ব্লাউজের তুলনায় একটু বড় এবং ঢিলেঢালা হওয়ায় আমাদের দেশের আবহাওয়ার সঙ্গে সুন্দরভাবে মানিয়ে যায়। এ ছাড়া ক্রপ টপ দিয়ে শাড়িকে নানা স্টাইলে পরা যায়। নানাভাবে ব্যবহার করা যায় বলেই এটি ফ্যাশনে দ্রুত সময়ে অধিক জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
একটু বড় এবং ঢিলেঢালা হওয়ায় আরামদায়ক
ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে সুতি, জর্জেট, সিল্ক ইত্যাদি তুলনায় বেশি আরামদায়ক। তাই তিনি ক্রপ টপগুলো ডিজাইনের ক্ষেত্রে সুতি কাপড়কে প্রাধান্য বেশি দিয়েছেন তিনি।
এ নিয়ে বেশ কয়েকজন তরুণীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তাঁদের মনোভাব। ক্রপ টপগুলো ফ্যাশন–ফ্রেন্ডলি এবং আরামদায়ক হওয়ায় নানা স্টাইলে শাড়ির সঙ্গে পরতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তাঁরা। লাইফস্টাইল ব্লগার আশফি অনাদি শাড়ির সঙ্গে ক্রপ টপ আর শার্ট পরতেই বেশি পছন্দ করেন। এভাবে স্টাইলিং করার ফলে একই আউটফিটকে অনেক রকমভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়। আমাদের শাড়িতে আসে ওয়েস্টার্ন লুক; যা খুবই ফ্যাশনেবল।
বাজারে নানা ধরনের ক্রপ টপ পাওয়া যায়। ঢাকা কলেজের উল্টো পাশে (ওডিসি) নিটের ক্রপ টপ পেয়ে যাবেন ১৫০-৩০০ টাকার মধ্যে। আর কাপড় ও ডিজাইন ভেদে শার্ট মিলবে নানান দামের। অনলাইন ফ্যাশন হাউসগুলোতেও এখন নানা ধরনের ক্রপ টপ কিংবা শার্ট স্টাইলের ব্লাউজ পাওয়া যাচ্ছে। এতে আলাদাভাবে টেইলরের কাছে দৌড়াদৌড়ির প্রয়োজন পড়ে না; আবার গরমে মার্কেট ঘুরে ম্যাচ করে কেনার ঝামেলাও থাকে না।
ফুলহাতা টি-শার্টও হতে পারে ব্লাউজের বিকল্প
সবচেয়ে বড় কথা হলো, করোনার সময় বাসায় বসেই কেনা যাবে অনলাইনে অর্ডার করে। মনের মতো ক্রপ টপ ব্লাউজ বা শার্ট পাওয়া যাবে বিবিআনা, ওয়্যার হাউজ, তায়সা ইত্যাদি নানা অনলাইন ব্র্যান্ডগুলোয়।