khub valo lagche golpo tiমাধবীলতানাম মাধবী হলেও, মামা আদর করে মাধবীলতা বলে ডাকত। শৈশবে পিতৃহারা মাধবী ওর মামার কাছে মানুষ। ভাল ঘর-বর দেখে মামা ধুমধাম করে ভাগ্নীর বিয়ে দিয়েছিল। বিয়েতে বর-কনেকে আশীর্বাদ করে বলেছিল, “মেয়েরা হল লতার মত, স্বামী হল তার খুটি। খুটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকবি, খুটিটা মজবুত করবি... দেখবি শত ঝড়ঝাপটা তদের ক্ষতি করতে পারবেনা… মামার এই কথাটা মনে রাখবি, তদের মঙ্গল হবে”।
মাধবীর স্বামী সদানন্দ লোকটা সাদাসিধা, দেখতে শুনতেও ভাল। বছর দশেক আগে, মাঝপথে পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বাবার হাত ধরে জমিদারবাড়িতে পুরুতগিরির কাজে ঢুকেছিল। তখন সারা বছর পুজো পার্বন লেগে থাকত। উপার্জন মন্দ হত না, তা থেকে কিচ্ছু জায়গা-জমিও হয়েছিল।
প্রথম দিকে শ্বশুরবাড়িতে মাধবী আদরযত্নের কোন ঘাটতি ছিলনা। কিন্তু দুর্ভাগ্য তখনও ওর পিছু ছাড়েনি। বিয়ের বছর ঘুরতে না ঘুরতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে শ্বশুরের অকাল মৃত্যু এবং সংসারে আয়েও কমতে শুরু করে।
ঋনের জালে জড়িয়ে জমিদারীতে আর্থিক অনটনের সুচনা আগেই হয়েছিল। ক্রমশ অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষে মামলায় হেরে জমিদার দেউলিয়া হতে সদানন্দ আয়ের রাস্তাও বন্ধ হয়ে যায়। বাবার কাছে শেখা এই ঘন্টা-নাড়া ছাড়া রোজগারের অন্য কোন উপায় সদানন্দের জানা ছিলনা। গ্রামের আসেপাশে কয়েক ঘরে যজমানি করে চাল-কলার সংস্থান হলেও প্রনামীতে কেউ এক-দু আনার বেশি ঠেকাত না। মাস ছয়েকের মধ্যেই সদানন্দের ভাঁড়ে মা ভবানী অবস্থা।
সুন্দরী সুলক্ষণা মেয়ে দেখে ছেলের বিয়ে দিয়েছিল, বিয়ের পরপরই সোনার সংসারে ছাড়খার হয়ে যাবার জন্য নতুন বৌমাকে দায়ী করতে মাধবীর শ্বশুরী দেরি করেনি। সংসারের যাবতীয় কাজ করেও দিনরাত শ্বশুরীর গঞ্জনা বিদ্রুপ সব… মাধবী মুখ বুজে সহ্য করত। সদানন্দ বৌকে ভালবাসলেও, মায়ের মুখের ওপর কথা বলার ক্ষমতা ওর ছিলনা।
উল্টে সদানন্দ বৌকে বোঝাত, “বাবার শোকে মায়ের মাথাটা একটু ইয়ে হয়ে গেছে বুঝলেনা। আমি কর্তাবাবুদের বলে রেখেছি, শহরে একটা কাজ ঠিক জুটিয়ে দেবে, ততদিন মায়ের সঙ্গে একটু মানিয়ে গুছিয়ে চল। আমি তো চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখছিনা”। অসহায় সদানন্দের কথায় রাগ, দুঃখ হলেও মাধবী স্বামীর উপর ভরসা রেখেছিল।
গ্রামের সম্পর্কে এক পিসি, সদানন্দকে একটা কাজের খবর দেয়। ওর স্বামী কলিকাতার প্রসিদ্ধ মহাশশ্মানের কালী মন্দিরের সেবাইত, ওনার এক সহকারীর অতিসম্প্রতি মৃত্যু হওয়ায় একটি পদ খালি হয়েছে। বাধা মাহিনার চাকরী, সঙ্গে উপরিও যথেষ্ঠ। পিসেমশাই ভাষায়, “নিজেরলোক ছাড়া যাকে-তাকে তো কাজে নিতে পারিনা, মেলাই কাঁচা পয়সার কারবার। তোমার মত সৎসংসারী ছেলেই খুঁজছিলাম। বাজে খরচ না করলে, উপরি টাকাতেই তোমার সংসার খরচ চলে যাবে। আর একটা দরকারি কথা, শহরের ছল-চাতুরীতে ভুলবেনা... চোখ কান খোলা রেখে সাবধানে চলবে”
সদানন্দ এই সুযোগ হাতছাড়া করেনি। মাধবীও ইচ্ছে কলিকাতায় থাকার। অনেক আশা নিয়ে ওরা কলিকাতায় রওনা হয়।