Mashruhan Eshita
Expert Member
বাবার এক বন্ধু ছিল, নাম তার আজিজুর রহমান খান, আজিজ আংকেল বলেই ডাকতাম। আজিজ আংকেল একজন লেখক ছিলেন, কম্পিউটারের উপর তার হরেক রকম বই আজও স্কুল-কলেজের আইসিটি সাবজেক্টের জন্য ব্যাপক জনপ্রিয়। তখন বোধহয় ক্লাস সেভেন বা সিক্সে পড়ি, সময়টা ২০০৬ সাল। আজিজ আংকেলের একটা বই ছিলো বাসায়, বইটি তখন আপুর পাঠ্যবই ছিলো। খুব কৌতূহলবশত একটি বইয়ের পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে আমি সর্বপ্রথম কম্পিউটারের ভাইরাস সম্পর্কে জানতে পারি। ট্রোজান হর্স থেকে শুরু করে হাজারো ম্যালওয়ারের কথা চিন্তা করেই ভয় লাগছিলো। কীভাবে ভাইরাস আমাদের কম্পিউটারের দরকারি সব ফাইলকে ওলটপালট করে দেয়, কীভাবে আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ছিনিয়ে নেয়- এসকল প্রশ্নের উত্তরগুলো খুব গোছানো ছিল বইটির পাতায়।
সত্যি বলতে কী, ২০১৯ এ এসে আমাদের খুব একটা সময় নেই এইসব ভাইরাস নিয়ে মাথা ঘামানোর। কেননা, বর্তমানের কম্পিউটার অপারেটিং সিস্টেমগুলো এতই শক্তিশালী হয়েছে যে এইসব ভাইরাস তেমন কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আজকাল তো উইন্ডোজ ডিফেন্ডার (মাইক্রোসফট উইন্ডোজের নিজস্ব নিরাপত্তাব্যবস্থা) দিয়েও দিব্যি কাটিয়ে দেয়া যায় ভাইরাসের চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই। আর একটা কথা সত্যি যে, অনেকের কম্পিউটার কিংবা ল্যাপটপেই ছোটখাটো ভাইরাস থাকতে পারে, যেগুলো মূলত রসায়নের পর্যায় সারণির ১৮ নাম্বার গ্রুপের মৌলগুলোর মতই নিষ্ক্রিয়।
সমস্যাটা শুরু হয় ২০১৪-১৫ সাল নাগাদ। সে সময়টায় সাইবার জগতে একটি সমস্যার আবির্ভাব ঘটে, নাম তার "র্যানসমওয়্যার (Ransomware)।" র্যানসমওয়্যার কী বা এর ধরণ সম্পর্কে বলার আগে আরো কিছু তথ্য জানিয়ে রাখা উচিত। ২০১৭ সালের মে মাসে পুরো পৃথিবীজুড়ে বিশাল আকারের একটি সাইবার অ্যাটাক হয়, যার মূল হোতা এই র্যানসমওয়্যার। ওয়ানাক্রাই (WannaCry) নামের এক কুৎসিত ম্যালওয়ারের সাহায্যে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ ব্যক্তিগত কম্পিউটার আক্রান্ত হয়ে পড়েছিলো। এমনকি পৃথিবীর বড় বড় অনেক কোম্পানির সাইবার নিরাপত্তাব্যবস্থাও রীতিমত ভেঙ্গে পড়েছিলো। সাম্প্রতিক সময়ের এইরকম র্যানসমওয়্যার আক্রমণ পুরো পৃথিবীবাসীকেই সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে দ্বিতীয়বার ভাবার স্থান তৈরি করে দেয়।