পুতুল বাড়ি হচ্ছে কলকাতার সবচেয়ে রহস্যময় ভুতুড়ে স্থান। কলকাতার পৌরাণিক ইতিহাসে বহু প্যারানরমাল ঘটনা খুঁজে পাওয়া যায়। কালে কালে পেরিয়ে গেছে অনেক সময়, অথচ এখনও এই শহরে বহু স্থানে অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া যায়।
ইদানীং গণেশ টকিজ এলাকায় দেখা যাচ্ছে কোনো আগন্তুক স্থানীয়দের কাছে পানি চাইছেন! প্রবল গরমে পানি চাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পানি দিতে গিয়েই হুঁশ ফেরে মানুষের, চোখের পলকে আগন্তুক উধাও! দু-একজন নয়, এরকম অভিজ্ঞতা হয়েছে অনেকেরই। এখানেই শেষ নয়! ধরুন, ট্যাক্সিতে উঠেছেন একজন যাত্রী। কিছুটা এগোতেই চালক পেছন ফিরে দেখেন খালি ট্যাক্সি; প্যাসেঞ্জার সিট ফাঁকা! তাহলে একটু আগে ওঠা যাত্রী গেল কোথায়? এমন কিছু কি সত্যিই হচ্ছে? ঘটনার সত্যতা নিয়ে বাড়ছে রহস্য। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রোজই এরকম কিছু না কিছু শুনছেন তারা। স্থানীয় বাসিন্দাদের অনেকেই বেশি রাত করে বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন। তাই রহস্যের শেকড় বাড়ছে। ঘটনাটি এখন আর গণেশ টকিজ এলাকায় আটকে নেই। মেট্রো, ট্রেন, বাস হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে শহর তলিতে। যাই হোক, আজ গণেশ টকিজ নয়, কথা বলব কলকাতার এক ঐতিহাসিক ভুতুড়ে বাড়ি নিয়ে। এই বাড়ির নাম পুতুল বাড়ি। থ্রিলার মাস্টার এর সাথেই থাকুন!
পুতুল বাড়ি এর ইতিকথা:
কলকাতার ভূতের বাড়ি বলতেই পুতুল বাড়ি এর কথা মনে আসে। আহরিটোলার বিশাল রোমান স্থাপত্যের নির্দশন এই পুতুলবাড়ি। এই বাড়ির উপরের তলায় নাকি ঘুরে বেড়ায় অতৃপ্ত পেত্নিরা। এই বাড়িতে শুধু মাত্র নিচতলাতে মানুষ থাকে। তারা নাকি সন্ধ্যার পর দোতলা বা তিনতলায় ওঠার সাহস পান না। পুতুলরূপী মহিলা অতৃপ্ত আত্মা ঘুরে বেড়ায় এ বাড়ির আনাচে-কানাচে।
তবে এই বাড়ির ভূতের গল্পের সঙ্গে মিশে আছে বঞ্চনার ইতিহাসও। গুজব রয়েছে এই বাড়িতে নাকি আগেকার দিনে বাবুরা মহিলাদের নিয়ে এসে শারীরিক নির্যাতন চালাতেন। এক বিত্তশালী জমিদার এ বাড়িতে মহিলাদের উপর নারকীয় অত্যাচার চালাতেন। অনেক সময় তাঁদের খুনও করা হতো। বাড়ির বারান্দায়, উপরের তলার কুঠুরিতে তাঁদের আত্মারাই এখন ঘোরাফেরা করে।
এখানেই কিন্তু শেষ নয়! মেয়েদের উপর নির্যাতনের ইতিহাস আরও আছে। পরবর্তী সময়ে এই বাড়িটিতে এক বড়লোক মনিব বাস করতেন। বাড়ি দেখাশোনায় কয়েকজন দাসীও কাজ করত। মনিব দাসীদের সঙ্গে জোরপূর্বক যৌনসম্পর্ক করতেন। কিছু দাসী মনিবের এ অত্যাচারের প্রতিবাদ করায় তাদের হত্যা করা হয়। হত্যার পর বাড়ির পেছনে তাদের লাশ মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল। তবে এক সময় রাজাদের হস্তক্ষেপে বন্ধ হয় নারী নির্যাতন। কিন্তু নির্যাতিত ও খুন হওয়া মেয়েদের আহাজারিতে যায়গাটা একটা অভিশপ্ত বাড়িতে রুপান্তারিত হয়। পরবর্তীকালে যারাই এই বাড়িতে থেকেছেন তারা রাতের বেলা অচেনা নারীর কণ্ঠস্বর, হাসির শব্দ, চিৎকার কিংবা কান্নার আওয়াজ পেয়েছেন। অনেকেই বাড়ির বিভিন্ন স্থানে সাদা পোশাক পড়া নারীর ছায়া দেখতে পেয়েছেন।
জমিদারের ইতিহাসের পর কতকাল পার হলো কিন্তু আজ অবধি মাঝে মাঝে রাতে মেয়েলি কণ্ঠের অশরীরীদের কান্নার শব্দ শোনা যায়। স্থানীয়দের ধারণা মনিবের এ পাপের কারণে এখনো পুতুলবাড়ীতে অশরীরী আত্মার আনাগোনা । ভয়ংকর এই পুতুলবাড়ি নিয়ে রহস্য আজও সবার মুখে মুখে। বাংলা সাহিত্যে পুতুলের বাড়িটি নিয়ে সত্যজিৎ রায় ও লিলা মজুমদারের কিছু ভয়ঙ্কর গল্প রয়েছে। এটা কলকাতা শহরের সবচেয়ে রহস্যজনক স্থান। গভীর রাতে তো বটেই এমনকি ভরদুপুরেও কিছু অশরীরীর উপদ্রব রয়েছে এখানে।
এই ছিল আমাদের আজকের প্রতিবেদন। সবশেষে একটু সাবধান করে দিচ্ছি সবাইকে। কলকাতায় যারা যাবেন, চেষ্টা করবেন এই ভয়ংকর বাড়িটিতে এড়িয়ে চলার। ধন্যবাদ।