দেশে অনেকেই করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁদের একাংশ নতুন করে আবার কোভিডে আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে কিছু প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে, যে প্রশ্নের কিছু জন্ম হয়েছে টিকা নিয়ে অজ্ঞতাবশত এবং কিছু হয়েছে অপপ্রচারের জন্য।
টিকার উদ্দেশ্য কী?
এই টিকা দেওয়ার উদ্দেশ্য কোভিডের বিস্তার রোধ করা এবং তীব্র কোভিড থেকে সুরক্ষা দেওয়া। সর্বোপরি করোনা মহামারিকে নিয়ন্ত্রণে এনে জীবনযাত্রা যথাসম্ভব স্বাভাবিক করা। টিকা দেওয়ার অর্থ এই নয় যে কারও আর কখনো কোভিড হবে না। তার ওপর আবার একটি ডোজ নিয়েই তা আশা করা যায় না! অথচ প্রথম ডোজ নিয়েই অনেকে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া চলাচল শুরু করেছেন এবং আক্রান্ত হয়েছেন।
টিকার পুরো সুফল কি প্রথম ডোজ থেকেই পাব?
এর উত্তর হচ্ছে, না! প্রথম ডোজের দুই কি তিন সপ্তাহ পর শরীরে কিছু অ্যান্টিবডি তৈরি হবে, যা থেকে আমরা আংশিক সুরক্ষা পেতে পারি। দ্বিতীয় ডোজের পর এর পুরো সুফল পেতে আরও দুই কি তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে। এখানেও আবার ‘কিন্তু’ আছে। দুটি ডোজ নেওয়ার পরও শতভাগ মানুষ কিন্তু এর থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষা পাবেন না।
গবেষণায় দেখা গেছে, অক্সফোর্ডের এই টিকা ৭৬ থেকে ৭৯ শতাংশ ক্ষেত্রে সুরক্ষা দেবে। তার মানে, দুই ডোজ টিকা নেওয়ার পরও ২১ থেকে ২৪ শতাংশ মানুষ সুরক্ষা পাবেন না। তাঁরা যেকোনো সময় কোভিডে আক্রান্ত হতে পারেন। সে জন্যই টিকা নেওয়ার পরও কিছুদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে, যাঁরা টিকা নিয়েছেন করোনা হলেও তাঁদের রোগের জটিলতা বা তীব্রতা কমে যাচ্ছে। এভাবেই হয়তো সিংহভাগ মানুষ টিকা নেওয়ার পর আমরা সুফল পেতে শুরু করব। টিকা পরিবেশ বা সমাজে ভাইরাসের চলাচলকে নিয়ন্ত্রণ করতে শুরু করেছে অনেক দেশে। সেভাবেও আমরা সুফল দেখতে পাব আরও অনেক মানুষ টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নেওয়ার পর।
দ্বিতীয় ডোজের কথা
এখন সমস্যা হচ্ছে, যাঁদের প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পরও কোভিড সংক্রমণ হচ্ছে, তাঁরা কি দ্বিতীয় ডোজটি নেবেন? যদি নেন, তবে তা কি আগের সময়সূচি (শিডিউল) মতোই নেবেন?
এ ক্ষেত্রে আমরা এঁদের তিনটি ভাগে ভাগ করে নিতে পারি—
১. যাঁরা কোভিড পজিটিভ কিন্তু কোনো উপসর্গ নেই, তাঁরা পজিটিভ হওয়ার ১৪ দিন পরেই কোয়ারেন্টাইন শেষ হলে দ্বিতীয় ডোজের সময় হলে টিকা নিতে পারবেন।
২. যাঁদের মৃদু উপসর্গ থাকবে তাঁদের ক্ষেত্রে এই সময়সীমা হবে পজিটিভ হওয়া থেকে ২৮ দিন পর। মানে যেদিন তিনি কোভিড পজিটিভ হয়েছেন সেদিন থেকে ২৮ দিনের আগে দ্বিতীয় ডোজ নেবেন না। এর মধ্যে পূর্বনির্ধারিত শিডিউল পার হয়ে গেলে তা পিছিয়ে নিতে হবে।
৩. যাঁদের ক্ষেত্রে মাঝারি থেকে তীব্র সংক্রমণ হবে অথবা হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে অথবা যাঁরা কনভালেসেন্ট প্লাজমা বা মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি পাবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে ৯০ দিন অপেক্ষা করতে হবে দ্বিতীয় ডোজের জন্য। এ ক্ষেত্রে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা যেতে পারে। করোনার পর প্রাকৃতিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয় এবং বেশ কিছুদিন শরীরে থাকে। অ্যান্টিবডি ভালো থাকলে আরও কিছু সময় পরও দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া যেতে পারে।
টিকা অবশ্যই নেবেন
টিকার প্রথম ডোজ নিয়েও যাঁরা কোভিড পজিটিভ হলেন তাঁরা হতাশ হয়ে ভাবছেন তাহলে আর টিকা নেবই–বা কেন? অবশ্যই নেবেন। কারণ, করোনা রি-ইনফেকশন বা আবার হবে না, এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। আর টিকা নেওয়ার উদ্দেশ্য অতিমারিকে প্রতিহত করা, সবাই টিকা না নিলে তা কখনোই সম্ভব হবে না।
তবে সব কথার শেষ কথা হলো, কোনো টিকাই যেহেতু শতভাগ সুরক্ষা দিতে পারবে না, কোভিড নির্মূল হওয়ার আগপর্যন্ত তাই পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরার কোনো বিকল্প নেই।
* ডা. রাশেদুল হাসান কনক, সহকারী অধ্যাপক, গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।