ধৃতিমান দেবশ্রীকে নিবিড় করে জড়িয়ে কামঘন গোলায় জিজ্ঞেস করে, “আরেক বার হবে নাকি, সোনা?”
প্রেমঘন সঙ্গম সহবাসের শেষে ধৃতিমানের প্রশস্ত বুকের উপরে মাথা রেখে কামতৃপ্ত, প্রেমসিক্ত দেবশ্রী শান্তির ঘুমে ঢলে যায়। ধৃতিমান অনেক রাত অবধি দেবশ্রীর মাথা বুকের উপরে রেখে লম্বা চুলে আঙুল ডুবিয়ে আদর করে। ঘুমন্ত দেবশ্রীকে দেখে ধৃতিমানের সব আশা সব ভালোবাসার উত্তর পেয়ে যায়।
সারারাত ধৃতিমান জেগে বসে থাকে দেবশ্রীর পাশে, মাঝে মাঝে মুখের উপরে চুল চলে এলে আঙুল দিয়ে সরিয়ে দেয়। খুব ইচ্ছে হয় ওর গোলাপি নরম ঠোঁটে চুমু এঁকে দিতে। ভোর হয় হয়, ধৃতিমান নিজের হৃদয় কেটে দেবশ্রীকে জাগিয়ে বলে, সকাল হবার আগে নিজের কামরায় চলে যেতে। নব বিবাহিতা প্রেমিকার মতন ঘুমঘুম চোখ খুলে ধৃতিমানকে টেনে বিছানায় ফেলে জড়িয়ে ধরে দেবশ্রী। ধৃতিমান নিজেকে সামলে রাখতে পারে না। ভোরের আলোয় চুম্বনে চুম্বনে উত্তেজিত করে তোলে সুন্দরী রমণীকে, ভালোবাসার শেষ রেশটুকু নিঃশেষ না হওয়া পর্যন্ত দুজনে মেতে ওঠে পরস্পরে সাথে প্রেম বিনিময়ের জন্য।
ধৃতিমানের বুকের উপরে মাথা রেখে দেবশ্রী প্রেমঘন কণ্ঠে বলে, “জানো আজ অনেক দিন পরে বড় ভালো লাগছে।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর চুলে আঁচড় কাটতে কাটতে বলে, “তুমি একটা পাগলি মেয়ে। সারারাত আমাকে জাগিয়ে রেখেছিলে।”
দেবশ্রী অবাক চোখে ধৃতিমানের দিকে তাকিয়ে বলে, “কেন ঘুমালে না? আমাকে ছেড়ে কোথায় গেছিলে?”
ধৃতিমানঃ “আরে না রে পাগলি। তুমি যখন ঘুমিয়ে ছিলে, তখন তোমার ওই সুন্দর মুখখানি দেখছিলাম। কবে আবার দেখা পাবো তাই দুই চোখ ভরে সেই দেখছিলাম।”
প্রেমের বারিধারা ছলকে ওঠে দেবশ্রীর দুই চোখে, “কাল তোমার কথা ভাবলাম, জানো। আমার ছেলে হয়তো মানা করবে না। দেবায়ন অনেক বড় হয়ে গেছে, মায়ের চাহিদা, মায়ের ভালোবাসা আশা করি বুঝতে পারবে। তাই ভাবছি ঘুরতে গিয়ে ওর সাথে কথা বলবো। তুমি চলে এসো মুসৌরি, সেখানে আমাদের দেখা হবে।”
সেই কথা শুনে আনন্দে ধৃতিমান দেবশ্রীকে জড়িয়ে বুকের সাথে মিলিয়ে বলে, “সত্যি বলছো তুমি? আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না।”
দেবশ্রী লাজুক চোখে মাথা নাড়িয়ে বলে, “হ্যাঁ ধৃতি, আমি ভাবছি ছেলেকে জানাবো। আশা করি আমাদের সম্পর্কের একটা সুস্থ পরিনাম আসবে। তবে ধৃতি, ছেলের ফাইনাল ইয়ার, ওর পরীক্ষা শেষ হোক, আমি ভাবছি দিল্লীর অফার নিয়ে নেব।”
ধৃতিমান দেবশ্রীর কপালে ঠোঁট চেপে বলে, “আমি জানি, দেবশ্রী। তোমার ছেলের প্রতি তোমার স্নেহ, ভালোবাসা আমি জানি। আমি তোমার জন্য পৃথিবীর শেষ প্রান্তে গিয়ে অপেক্ষা করতে রাজি আছি, দেবশ্রী। তোমার ঠোঁটে এই ভালোবাসার পরিনাম শুনে আনন্দে বুক ফেটে যাচ্ছে।”
দেবশ্রী ধৃতিমানের চোখে চোখ রেখে বলে, “আরো একটা কথা আছে, তুমি মল্লিকার সাথে আগে কথা বলো। মল্লিকাকে সব কিছু জানাবে, কথা দাও, তুমি তারপরে নিজের সিদ্ধান্ত নেবে। আমি চাই না, আমাদের এই পদক্ষেপ আমাদের সন্তানের উপরে কোন কালো মেঘ নিয়ে আসুক।”
ধৃতিমান কিছুক্ষণ ভেবে বলে, “ঠিক আছে দেবশ্রী, আমি মলির সাথে কথা বলে নেব।”
দেবশ্রী ধৃতিমানের বুকের উপরে কিল মেরে উঠে বলে, “সকাল সকাল, দুষ্টুমি করে আবার মাতিয়ে দিলে আমাকে। এবারে ছাড়ো, আমি যাই নিজের রুমে।”
দেবশ্রী বিছানা ছেড়ে উঠে, কাপড় পড়ে ধৃতিমানের কপালে চুমু খেয়ে বেরিয়ে যায়। গতরাতের চরম কামকেলির পরে ভোরের মিষ্টি আলোয় প্রেমঘন আলিঙ্গন ছেড়ে কিছুতেই উঠতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু চক্ষু লজ্জার ভয়ে, সন্তর্পণে নিজের কামরায় ঢুকে যায়। মনের ভেতরে যেন এক ময়ুর পেখম তুলে নেচে ওঠে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের চেহারা পর্যবেক্ষণ করে নিজেই লজ্জিত হয়ে পড়ে। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফেলে, দেবায়নকে এবারে ফোন করতে হবে। খুব বড় চমক দেবে ছেলেকে। দেবায়ন কোনদিন প্লেনে চাপেনি, সেটা একটা বড় চমক হবে ছেলের কাছে। স্নান সেরে দেবায়নের ফোনে ফোন করে, ফোনের রিং অনেকক্ষণ ধরে বেজে যায়, কেউ তোলে না। দেবশ্রী ঘড়ি দেখে, সকাল আটটা, এতক্ষণে দেবায়নের উঠে যাওয়ার কথা, ব্যায়াম সেরে দৌড়ে আসার কথা। কাজের লোক কিছু পরে বাড়িতে আসবে। একটু চিন্তিত হয়ে পড়ে, তারপরে ভাবে যে একা ছেলে, একটু না হয় ঘুমাচ্ছে, পরে ফোন করবে।
ধৃতিমানকে নিয়ে নিচে প্রাতরাশের টেবিলে যায়। সেখানে বাকিদের সাথে দেখা হয়। শান্তনু দেবশ্রীকে জানায় দিল্লীর টিকিট কাটা হয়ে গেছে, সেইসাথে দেবায়নের কোলকাতা থেকে দিল্লীর টিকিট কাটা হয়ে গেছে। পি.এন.আর নাম্বার দিয়ে দেয় দেবশ্রীকে। শান্তনু জানায় যে শেষ মুহূর্তে দেবশ্রীর দিল্লীর টিকিট কাটা হয়েছে তাই এক ফ্লাইটে টিকিট পায়নি। সেই শুনে দেবশ্রী আর ধৃতিমান একটু ব্যাথা পায় মনে। পরস্পরের দিকে চোখের ইশারায় সেই ব্যাথা ব্যাক্ত করে। শান্তনু বলে যে রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছে, সেই সাথে শনিবার সকালে একটা স্করপিও গাড়ি আসবে। সে গাড়িতে করে ওরা মুসৌরির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারে। রেসিডেন্সি ম্যানরে তিন রাতের জন্য একটা রুম বুক করা হয়ে গেছে, শনিবার থেকে সোমবার, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যে চেক আউট করে দিল্লীতে ফিরে আসা। দিল্লীতে ফিরতে রাত হলে যেন আগে থেকে জানিয়ে দেয় তাহলে ওর জন্য হোটেল বুক করে দেবে। সব কথা শুনে দেবশ্রী বেশ খুশি হয়। ধৃতিমানের দিকে চোখ টিপে ইশারায় জানায় যেন ধৃতিমান তৈরি থাকে মুসৌরি যাবার জন্য। ধৃতিমান সবার অলক্ষ্যে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানিয়ে দেয়। খাবার পরে নিজের রুমে এসে দেবশ্রী আবার দেবায়নের ফোনে ফোন করে। বেশ কয়েকবার ফোনের রিং বেজে যায়, কেউ উঠায় না। দেবশ্রী চিন্তিত হয়ে পড়ে, ছেলের কি হলো। অনুপমার বাড়িতে আবার গেছে নাকি? সেই ভেবে অনুপমাকে ফোন করে দেবশ্রী। অনুপমা সকাল সকাল দেবশ্রীর ফোন পেয়ে আশ্চর্য হয়ে যায়।
অনুপমা দেবশ্রীকে জিজ্ঞেস করে, “মামনি, কেমন আছো? এতো সকালে ফোন করলে, কি ব্যাপার? আজকে কখন ফ্লাইট।”
অনুপমার মুখে 'মামনি' ডাক শুনে বড় ভালো লাগে দেবশ্রীর। স্নেহ জড়ানো কণ্ঠে বলে, “তুই কেমন আছিস, মা?”
অনুপমাঃ “আমি ভালো আছি। তুমি আজকে কখন ফিরবে, তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে, মামনি।”
দেবশ্রীর বুকে মায়ের মমতা জেগে ওঠে, “কেন রে?”
অনুপমাঃ “এমনি মামনি। তোমাকে অনেকদিন দেখিনি মনে হচ্ছে।”
দেবশ্রী জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁ রে, বাঁদরটা কি তোর বাড়িতে?”
অনুপমাঃ “কই না তো? কি হয়েছে? ফোনে পাচ্ছো না?”