রাজা নবকৃষ্ণ প্রথম ওড়িয়া পালকি-বেহারাদের কলকাতা শহরে নিয়ে আসেন।
১৭৯৪ সালে প্রথম আইন করে পালকি ভাড়া ঠিক করে দিল সরকার।
পাঁচজন ঠিকা বেহারার একদিনের ভাড়া ছিল এক টাকা। অর্ধদিবসে আট আনা। কলকাতার বাইরে পাঁচ মাইল পর্যন্ত যেতে পালকি ভাড়া হতো চার আনা হিসেবে। এক ঘণ্টার কম সময়ের জন্য যাত্রীরা এক আনা হিসেবে ভাড়া দিত।
আস্তে আস্তে বেহারারা অতিরিক্ত ভাড়া নিতে থাকে।সাহেবদের প্রায়শই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে নানা কাজে যেতে হত।পালকি বেহারারা অত্যাধিক ভাড়া দাবি করায় সাহেবরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৩ বছর পর ১৮২৭ সালে কোম্পানি এক নিয়ম লাগু করে১২ মে । ঘোষণা হল -
১: পালকি বেহারাদের লাইসেন্স নিতে হবে, মানে পুলিশের খাতায় নাম তুলতে হবে।
২: ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেবে সরকার। এক মাইল পর্যন্ত ভাড়া হবে তিন আনা। আরও যেতে হলে মাইল প্রতি তিন আনা করে বেশ ভাড়া দিতে হবে।
৩: পুলিশের দেওয়া ব্যাজ পড়ে কাজ করতে হবে।
৪: আজকের গাড়ির নম্বর প্লেটের মতো পালকির নম্বর থাকবে।
কোম্পানির ফতোয়া মানতে রাজি ছিল না তারা। তাদের ধারণা ছিল হাতে ব্যাজ পরা মানে জাত খোয়ানো। এর ফলে তারা সমাজে অপাঙক্তেয় হয়ে যাবে। উপরন্তু ব্যাজের জন্য কোম্পানিকে কোনও অর্থ দিতেও রাজি ছিলনা পালকি বেহারারা।
এ'ছাড়াও বেহারাদের কাছে ঘড়ি নেই - ঘড়ি দেখতেও পারে না । ঘড়িটা থাকল আরোহীর হাতে, আর আরোহী যদি দেড় ঘণ্টা পালকি চড়ে সময় কমিয়ে এক ঘণ্টার মজুরি দেয়, তাহলে বেহারার আর কিছু বলার থাকবে না।
প্রায় ১২০০০ পালকি বেয়ারা এই আইনের বিরুদ্ধে
একত্রে জড়ো হয়ে সভা ডাকল। সেই সভায় পালকিবাহক পাঁচু সুর ছিলেন সভাপতি, আর প্রধান বক্তা ছিলেন গঙ্গাহরি।
ধর্মের নামে ঘট স্থাপন করে, ঘট ছুঁয়ে তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেন - আইন বাতিল না করলে কেউই পালকি কাঁধে নেবেন না।
এটাই ভারতবর্ষের ইতিহাসে '"প্রথম ধর্মঘট।"
সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এলো এই ঘটনা।
পালকিবাহকদের ধর্মঘট প্রায় ১ মাস স্থায়ী হয়েছিল।একদল মানুষ পালকি বেয়ারাদের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন।
ধর্মঘট ওঠার পেছনে চমকপ্রদ কাহিনি রয়েছে। ধর্মঘটে যে পালকি বেহারারা গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন ওড়িয়া। এই ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে কলকাতায় প্রবেশ ঘটে বিহারের হিন্দুস্হানী রাউনিদের। এরা এসে ওড়িয়া বেয়ারাদের না ছোঁয়া পালকি
কাঁধে তুলে নিয়েছিল।
পালকির অভাবে তিনদিন ধরে বাড়িতে বসে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ব্রাউন লো নামের সাহেব।
তিনি মিস্ত্রী ডাকিয়ে একটা পাল্কির হাতলগুলো খুলিয়ে ফেললেন ও তলায় দু'টো চাকা লাগিয়ে দিলেন এবং সামনে জুড়ে দিলেন ঘোড়া। কলকাতার রাস্তায় চালু হলো ঘোড়ার গাড়ি। সাধারণ লোকেরা বলতো "পালকি গাড়ি"।
সাহেবদের কাছে 'ব্রাউনবেরি' গাড়ি।
পালকি ধর্মঘটে কোলকাতা পালকির সাথে ঘোড়া জুড়ে দিয়ে গতির যুগে প্রবেশ করল। নববাবুরা সেই গাড়িতে ঘুরতে লাগলেন। বাড়ি ফিরে বৈঠকখানার দরজার সামনে নেমে হেঁটে ঢুকতে হতো। পুরানোবাবুদের পালকি ঠিকই অন্দমহলে প্রবেশ করত। এই বেহারারা হেঁটা করে বলতো - " ঘোড়াবাবুরা রাস্তার বাবু ...।রোদে পোড়া - জলে ভেজা ....!"
ঘোড়াবাবুদের সম্মানে লাগলো। ঘোড়ার গাড়ির মাথা ঢাকা হলো। বাড়ির বারান্দা এগিয়ে এলো। যেখানে গাড়িটি দাঁড়াবে , আর তাঁরা টুপ করে নেমে অন্দরমহলে প্রবেশ করবেন ...!
এই বারান্দার নাম হয়ে গেল " গাড়ি বারান্দা" ।
মিউনিসিপ্যালিটি এই গাড়ি বারান্দাগুলোর জন্য রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হল।
১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে আইন পাশ করা হল,
নতুন করে আর কোনো গাড়ি বারান্দা তৈরী করা যাবে না।
তথ্য: কোলকাতার গাড়ি বারান্দা।
হরিপদ ভৌমিক।
১৭৯৪ সালে প্রথম আইন করে পালকি ভাড়া ঠিক করে দিল সরকার।
পাঁচজন ঠিকা বেহারার একদিনের ভাড়া ছিল এক টাকা। অর্ধদিবসে আট আনা। কলকাতার বাইরে পাঁচ মাইল পর্যন্ত যেতে পালকি ভাড়া হতো চার আনা হিসেবে। এক ঘণ্টার কম সময়ের জন্য যাত্রীরা এক আনা হিসেবে ভাড়া দিত।
আস্তে আস্তে বেহারারা অতিরিক্ত ভাড়া নিতে থাকে।সাহেবদের প্রায়শই জঙ্গলের ভিতর দিয়ে নানা কাজে যেতে হত।পালকি বেহারারা অত্যাধিক ভাড়া দাবি করায় সাহেবরা ক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে। তাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে ৩৩ বছর পর ১৮২৭ সালে কোম্পানি এক নিয়ম লাগু করে১২ মে । ঘোষণা হল -
১: পালকি বেহারাদের লাইসেন্স নিতে হবে, মানে পুলিশের খাতায় নাম তুলতে হবে।
২: ভাড়া নির্দিষ্ট করে দেবে সরকার। এক মাইল পর্যন্ত ভাড়া হবে তিন আনা। আরও যেতে হলে মাইল প্রতি তিন আনা করে বেশ ভাড়া দিতে হবে।
৩: পুলিশের দেওয়া ব্যাজ পড়ে কাজ করতে হবে।
৪: আজকের গাড়ির নম্বর প্লেটের মতো পালকির নম্বর থাকবে।
কোম্পানির ফতোয়া মানতে রাজি ছিল না তারা। তাদের ধারণা ছিল হাতে ব্যাজ পরা মানে জাত খোয়ানো। এর ফলে তারা সমাজে অপাঙক্তেয় হয়ে যাবে। উপরন্তু ব্যাজের জন্য কোম্পানিকে কোনও অর্থ দিতেও রাজি ছিলনা পালকি বেহারারা।
এ'ছাড়াও বেহারাদের কাছে ঘড়ি নেই - ঘড়ি দেখতেও পারে না । ঘড়িটা থাকল আরোহীর হাতে, আর আরোহী যদি দেড় ঘণ্টা পালকি চড়ে সময় কমিয়ে এক ঘণ্টার মজুরি দেয়, তাহলে বেহারার আর কিছু বলার থাকবে না।
প্রায় ১২০০০ পালকি বেয়ারা এই আইনের বিরুদ্ধে
একত্রে জড়ো হয়ে সভা ডাকল। সেই সভায় পালকিবাহক পাঁচু সুর ছিলেন সভাপতি, আর প্রধান বক্তা ছিলেন গঙ্গাহরি।
ধর্মের নামে ঘট স্থাপন করে, ঘট ছুঁয়ে তাঁরা প্রতিজ্ঞা করেন - আইন বাতিল না করলে কেউই পালকি কাঁধে নেবেন না।
এটাই ভারতবর্ষের ইতিহাসে '"প্রথম ধর্মঘট।"
সংবাদপত্রের শিরোনামে উঠে এলো এই ঘটনা।
পালকিবাহকদের ধর্মঘট প্রায় ১ মাস স্থায়ী হয়েছিল।একদল মানুষ পালকি বেয়ারাদের পক্ষে জোর সওয়াল করেছিলেন।
ধর্মঘট ওঠার পেছনে চমকপ্রদ কাহিনি রয়েছে। ধর্মঘটে যে পালকি বেহারারা গিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই ছিলেন ওড়িয়া। এই ধর্মঘটের সুযোগ নিয়ে কলকাতায় প্রবেশ ঘটে বিহারের হিন্দুস্হানী রাউনিদের। এরা এসে ওড়িয়া বেয়ারাদের না ছোঁয়া পালকি
কাঁধে তুলে নিয়েছিল।
পালকির অভাবে তিনদিন ধরে বাড়িতে বসে হাঁফিয়ে উঠেছিলেন ব্রাউন লো নামের সাহেব।
তিনি মিস্ত্রী ডাকিয়ে একটা পাল্কির হাতলগুলো খুলিয়ে ফেললেন ও তলায় দু'টো চাকা লাগিয়ে দিলেন এবং সামনে জুড়ে দিলেন ঘোড়া। কলকাতার রাস্তায় চালু হলো ঘোড়ার গাড়ি। সাধারণ লোকেরা বলতো "পালকি গাড়ি"।
সাহেবদের কাছে 'ব্রাউনবেরি' গাড়ি।
পালকি ধর্মঘটে কোলকাতা পালকির সাথে ঘোড়া জুড়ে দিয়ে গতির যুগে প্রবেশ করল। নববাবুরা সেই গাড়িতে ঘুরতে লাগলেন। বাড়ি ফিরে বৈঠকখানার দরজার সামনে নেমে হেঁটে ঢুকতে হতো। পুরানোবাবুদের পালকি ঠিকই অন্দমহলে প্রবেশ করত। এই বেহারারা হেঁটা করে বলতো - " ঘোড়াবাবুরা রাস্তার বাবু ...।রোদে পোড়া - জলে ভেজা ....!"
ঘোড়াবাবুদের সম্মানে লাগলো। ঘোড়ার গাড়ির মাথা ঢাকা হলো। বাড়ির বারান্দা এগিয়ে এলো। যেখানে গাড়িটি দাঁড়াবে , আর তাঁরা টুপ করে নেমে অন্দরমহলে প্রবেশ করবেন ...!
এই বারান্দার নাম হয়ে গেল " গাড়ি বারান্দা" ।
মিউনিসিপ্যালিটি এই গাড়ি বারান্দাগুলোর জন্য রাস্তা চওড়া করতে গিয়ে বাঁধার সম্মুখীন হল।
১৮৭০ খ্রীষ্টাব্দে আইন পাশ করা হল,
নতুন করে আর কোনো গাড়ি বারান্দা তৈরী করা যাবে না।
তথ্য: কোলকাতার গাড়ি বারান্দা।
হরিপদ ভৌমিক।