যন্ত্রনির্ভর এক প্রজন্ম গড়ে উঠেছে যেন। অনেকেই বলেন, ওদের কেউ কেউ নাকি এমন, যে কিনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মা কিংবা বাবা দিবস নিয়ে তোলপাড় তুলছে, ওদিকে বাবা–মায়ের প্রতি ন্যূনতম কর্তব্যটুকুও পালন করতে অপারগ। আবার উল্টোটাও শোনা যায়, ডিজিটাল পর্দায় বুঁদ হয়ে থাকা বাবা–মায়ের স্নেহবঞ্চিত সন্তানের মানসিক বিকাশ হচ্ছে অসম্পূর্ণ।
সন্তান নিয়ে নেতিবাচক ভাবনা আসতে পারে মনে, সন্তান পালন কঠিন মনে হতে পারে। হয়তো অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে গর্ভে সন্তান এসেছে। কিংবা সময়মাফিক হলেও হয়তো ছেলেসন্তানের বাসনা পূরণ হলো না, জন্ম নিল ফুটফুটে এক মেয়ে। আফসোস হলো কি? হয়তো মেয়ের গায়ের রং হয়েছে একটু চাপা, অথবা সন্তানের কোনো জন্মগত ত্রুটি রয়েছে। যেমনই হোক, তাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করুন। গড়ে তুলুন স্নেহের পরশ দিয়ে। এমনটাই পরামর্শ দিলেন ঢাকার গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের অধ্যক্ষ ইসমাত রুমিনা।
মমতা-ভালোবাসায়
আবেগীয় প্রকাশে সন্তানকে জড়িয়ে ধরুন, স্পর্শ করুন। শিশু কাঁদুক আর জেদই করুক, তার মেধা কিংবা অন্যান্য গুণ নিয়ে অতিরিক্ত আকাঙ্ক্ষা রাখবেন না। অন্য শিশুর সঙ্গে তুলনাও অনুচিত। শিশু যেন আপনাকে ভয় না পায়, নির্দ্বিধায় বলতে পারে মনের কথা, যেকোনো সমস্যায় প্রথম আশ্রয় পায় বাবা–মায়ের বুকেই। তাহলে কিছু লুকানোর প্রবণতা তৈরি হবে না। শিশুবান্ধব পরিবেশে সে হয়ে উঠবে আত্মবিশ্বাসী।
শিশুর বেড়ে ওঠার ভিত্তি, অর্থাৎ প্রথম পাঁচ বছর সময়টা এভাবেই তাকে বড় করে তোলার পরামর্শ দিলেন অধ্যাপক ইসমাত রুমিনা, যাতে এই বয়সের পরেও শিশুর সঙ্গে বাবা–মায়ের খোলামেলা সম্পর্ক থাকে। তিনি আরও বললেন শিশুকে সময় দিতে, ওর সঙ্গে সুন্দরভাবে কথা বলতে, ওকে ওর মতো করে বই পড়ে শোনাতে, ওর সঙ্গে খেলায় যোগ দিতে। এমনকি কথা শেখার আগে থেকেই শিশুর সঙ্গে শুরু হোক মিথষ্ক্রিয়া। যন্ত্রনির্ভরশীলতা কমিয়ে দিন, অল্প সময়ের জন্য টেলিভিশন বা অন্য বিনোদন যন্ত্র ব্যবহার করলেও সেটির সামনে তাকে একাই বসিয়ে রাখবেন না। খেলনা দামি নয়, আপনার সময়টাই আসলে দামি।
শুরু থেকে সুস্থ জীবনধারা
শিশুর খাবারে বিশেষ নজর রাখুন
অসুস্থ, অপুষ্ট শিশু নিজেও কষ্টে ভোগে, মা-বাবাও থাকেন অশান্তিতে। নতুন বাবা–মায়ের সঙ্গে অভিজ্ঞ কেউ না থাকলে সমস্যায় পড়তে পারেন তাঁরা, তবে ক্ষেত্রবিশেষে গুরুজনেরা প্রচলিত সংস্কারে বিশ্বাসী হয়ে অবৈজ্ঞানিক কিছু করতে আদেশ করতে পারেন, যা শিশুর জন্য ক্ষতিকর। শিশুর সুস্থতায় পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক সাঈদা আনোয়ার।
- শালদুধ শিশুর জন্য জরুরি। জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যেই শিশুকে মায়ের দুধ টানতে দিতে হবে। ৬ মাস পর্যন্ত শুধু মায়ের দুধেই হয় পুষ্টি ও পানির চাহিদা পূরণ (এমনকি শিশু গরমে ঘামলেও)।
- ৬ মাস পেরোলে (৮ মাস পর্যন্ত) বুকের দুধের পাশাপাশি ১২৫ মিলি (আধা কাপ মতো) করে নরম খাবার দিন দুই বেলা, সঙ্গে এক বেলা নাশতা।
- এরপর ১ বছর বয়স পর্যন্ত এর সঙ্গে যোগ করুন বাড়তি এক বেলার খাবার, একই পরিমাণে।
- ২ বছর বয়স পর্যন্ত ২৫০ মিলি করে দিন তিন বেলা, সঙ্গে থাকুক নাশতা দুই বেলা।
- ১ বছর বয়স পর্যন্ত বাড়তি খাবারটুকু দেবেন বুকের দুধের পরে, এরপর ২ বছর বয়স পর্যন্ত তা দেবেন বুকের দুধের আগে।
- বসতে শিখলেই পরিবারের সঙ্গে বসে পরিবারের খাবার অভ্যাস করুন। খাবার টেবিলের আদবকেতা নিয়ে কড়াকড়ি নয়। ধীরে ধীরে নিজেই খেতে শিখুক, ফেলে-ছড়িয়ে, হেসেখেলে।
পারস্পরিক সহযোগিতায়, যত্নে
সন্তানের জন্য বাবা–মায়ের জীবনধারায় আসে বিরাট পরিবর্তন। মানিয়ে নিন পরিবর্তিত জীবনধারায়। মা-বাবা দুজন মিলে ভাগ করে নিন শিশুর দেখভাল। আর মায়ের পুষ্টি, বিশ্রাম, বিনোদন নিশ্চিত করতে হবে অবশ্যই। সন্তানের জন্য মায়ের জীবনটা যেন একেবারে হারিয়ে না যায়। সন্তান পালনকে বড় চাপ হিসেবে নেবেন না। আনন্দের সঙ্গে ভালোবাসায় জড়িয়ে রাখুন আপনার ‘সদ্যবর্ধিত’ পরিবারকে।