মা মারা যাবার কিছু দিন পরে,,,
মায়ের ঘর পরিষ্কার করতে গিয়ে মায়ের হাতের লেখা একটি চিঠি পায় তার ছেলে।। চিঠিতে লেখা থাকে, খোকা এই চিঠি যখন তোর হাতে পরবে তখন আমি তোর থেকে অনেক দূরে চলে যাবো, যেখান থেকে কেউকোনো দিন ফিরে আসে না।খোকা তোর অনেক কথা মনে নেই,তাই এই চিঠিতে লিখে গেলাম তোর মনে না থাকা সেই কথা গুলি। তুই যখন ছোট ছিলি একবার তোর জ্বর এসে ছিলো, আমি তিন রাত ঘুমাতে পারি নি তোকে বুকে নিয়ে বসে ছিলাম, কারন তোকে বিছানায় শোয়াইলে তুই কেঁদে উঠতি,তোর বাবা আমাকে বলেছিলো তোকে শুইয়ে রাখতে কিন্তু আমি পারিনি তোর বাবার কথা রাখতে, সে জন্য আমাকে অনেক গালাগাল দিয়ে ছিলো তোর বাবা। তোকে যখন রাতে বিছানায় শোয়াইতাম , তুই প্রস্রাব করে বিছানা ভিজিয়ে ফেলতি তখন আমি তোকে শুকনো জায়গায় শোয়াইতাম, আর আমি তোর প্রস্রাবে ভিজানো সেই জায়গায় শুইয়ে থাকতাম। তোর বাবা যখন মারা গেলো,তখন অনেক কষ্টে আমাকে সংসারটা চালাতে হয়ে ছিলো,একটা ডিম ভেজে দুই টুকরা করে তোকে দু বেলায় দিতাম,এমন দিন গেছে শুধু লবন দিয়ে খেয়ে উঠেছি আমি, তোকে বুঝতেও দেয় নাই আমি।
একদিন রান্না করার মতো কোনো চাল ছিলোনা ঘরে, তখন কোনো উপায় না পেয়ে একবাড়িতে কাজ করি সারাদিন, তার বিনিময় বাড়িওয়ালা কিছু চাল দিয়েছিলেন, সে চালগুলো রান্না করে খাইয়ে ছিলাম তোকে। হয়তো তুই ভুলে গেছিস, যখন তোর এস.এস.সি ফি দিতে পারছিলামনা তখন তোর বাবার দেয়া শেষ স্মৃতি নাক ফুলটা বিক্রি করে দিয়ে ছিলাম। আরো অনেক কথা আছে যা লিখতে গেলে হয়তো খাতা শেষ হয়ে যাবে,কিন্তু লেখা শেষ হবে না।ভাবছিস এতো কথা তোকে কেনো লিখে গেলাম? খোকা তুই যখন বড় হইলি একটা ভালো চাকরি পেয়েছিস, কিছু দিন পরে বিয়ে করলি,আমি তোদের নিয়েভালোই ছিলাম। একদিন ঘর থেকে কিছু টাকা চুরি হলো,সেই দিন তুই আমাকে জিজ্ঞেস করে ছিলি আমি তোর টাকার ব্যাপারে কিছু জানি কিনা,তুই আমাকে সরাসরি কিছু না বললেও আমি বুঝতে পেরেছিলাম তুই আমাকে চোর ভেবে ছিলি। কিছু দিন পর তুই আমাকে চোরের অপবাদ দিয়ে অন্য একটি ঘরে রেখে দিলি। খোকা আমার সেই ঘরটিতে থাকতে অনেক ভয় করতো,কারন ঘরটি তোর থেকে অনেক দূরে ছিলো,খোকা তোকে একদিন বলে ছিলাম আমার একা একা থাকতে ভয় লাগে,তুই বলে ছিলি মরন আসলে যেকোনো যায়গায় আসবে। আমার হাটুর ব্যাথাটা বেড়ে ছিলো তোকে বলে ছিলাম খোকা আমাকে কিছু ঔষদ কিনে দিবি,তুই বলেছিলি এইবয়সে ঔষদ খাওয়া লাগে না, এমনি এমনি ঠিক হয়ে যাবে। খোকা বিছানা থেকে উঠতে পারতাম না,, শরীরের ফোসকা পরে গিয়ে ছিলো,শরীর থেকে পচা গন্ধ আসতো। কতো দিন যে গোসল করিনি তা ঠিক বলতে পারবো না,খোকা তোর ঘরটা ছিলো আমার ঘরের থেকে অনেক দূরে, কখন আসিস কখন যাস আমি কিছুই দেখতে পারতাম না,শুধু পথের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, খোকা তুই যখন ছোট ছিলি আমি খেতে বসলে তোকে কোলে নিয়ে খেতে বসতাম,তখন তুই আমার কোলে পায়খানা করে দিতি, আমি তোর পায়খানা সরিরে নিয়ে খেয়ে উঠতাম কেনো জানি একটুও ঘৃণা লাগতো না আমার।কিন্তু তুই যখন আমার কাছে আসতি তখন নাকে রুমাল দিয়ে আসতি, কেনোরে খোকা আমার শরীর দিয়ে গন্ধ আসতো বলে? এক কাপড়ে আমাকে কত মাস যে থাকতে হয়েছে তা আমি ঠিক বলতে পারবো নারে খোকা।তুই যখন অনেক দিনপর একবার আমাকে দেখতে এসেছিলি আমার খুব ইচ্ছে হয়েছিলো তোকে বুকে জড়িয়ে ধরি কিন্তু খোকা পারিনি তোকে বুকে জড়িয়ে ধরতে।কারন আমার শরীরে তো অনেক ময়লা ছিলো। যদি তোর দামি দামি শার্ট-প্যান্ট নষ্ট হয়ে যায় এই ভয়তে তোকে বুকে নিতে পারিনি খোকা। খোকা কখনো আমাকে একবারও জিজ্ঞাস করিসনি, মা তোমার কিছু খেতে মন চায়,খাওয়ার কথা থাক,কতো দিন যে তোর মুখে মা ডাক শুনি নি তাও ঠিক বলতে পারবো না।খোকা আমার কি অপরাধ ছিলো,আমাকে তোর থেকে অনেক দূরে রাখলি? খোকা তুই কি পারতি না আমাকে তোর কাছে রাখতে? খোকা তুইকি পারতি না, আমাকে একটা কাপড় কিনে দিতে? খোকা তুই কি পারতি না, আমাকে একটা ডাক্তার দেখাতে? আমাকে একটা ডাক্তার দেখালে হয়তো এই পৃথিবীতে আরো কিছু দিন থাকতে পারতাম।খোকা কোনো মা তার সন্তানের কাছে পেট ভরে খেতে চায় না,শুধু মন ভরে মা ডাক শুনতে চায়। যা তোরা কখনো বুঝতে চাস না। খোকা তোকে একটি শেষ অনুরোধ করছি,আমার এই চিঠিটা তোর সন্তানদের পড়ে শুনাবি।কারণ তুই বৃদ্ধ হলে তোর সাথে তোর সন্তানেরা যাতে এরকমটি না করে।
ভালো থাকিস খোকা।।
ইতি তোর দুঃখিনী মা।