মে'রাজ বলে পরিচিত ঐতিহাসিক ঘটনাটি দু'টি অংশে বিভক্ত। প্রথমে ইসরা হরবং পরে মে'রাজ। 'ইসরা' অর্থ নৈশভ্রমণ হরবং মি'রাজ অর্থ সিঁড়ি। শারঈ পরিভাষায় মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তীনের বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে শেষরাতের স্বল্পকালীন নৈশভ্রমণকে 'ইসরা' বলা হয় হরবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদ থেকে ঊর্ধ্বগামী সিঁড়ির মাধ্যমে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহ্র সঙ্গে সাক্ষাতকে মি'রাজ বলা হয়। নবী জীবনে হরটি ছিল হরকটি অলৌকিক ও শিক্ষাপ্রদ ঘটনা। পবিত্র কুরআনে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতে 'ইসরা' হরবং সূরা নজমের ১৩ থেকে ১৮ মোট ৬টি আয়াতে 'মি'রাজ' সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। পুরা ঘটনাটি ২৫ জন ছাহাবী বর্ণিত রাসূলের হাদীছসমূহে বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। যা অকাট্টভাবে প্রমাণিত ও মুসলিম উম্মাহ্র নিকটে সর্বতোভাবে গৃহীত। তবে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতেই ইসরা ও মি'রাজের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বিধৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'পরম পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রির হরকাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বছা পর্যন্ত, যার চতুস্পার্শ্বকে আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (বনু ইসরাঈল ১৭/১)। উক্ত আয়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতীয়মান হয়। যেমন-
মে'রাজ বলে পরিচিত ঐতিহাসিক ঘটনাটি দু'টি অংশে বিভক্ত। প্রথমে ইসরা হরবং পরে মে'রাজ। 'ইসরা' অর্থ নৈশভ্রমণ হরবং মি'রাজ অর্থ সিঁড়ি। শারঈ পরিভাষায় মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তীনের বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে শেষরাতের স্বল্পকালীন নৈশভ্রমণকে 'ইসরা' বলা হয় হরবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদ থেকে ঊর্ধ্বগামী সিঁড়ির মাধ্যমে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহ্র সঙ্গে সাক্ষাতকে মি'রাজ বলা হয়। নবী জীবনে হরটি ছিল হরকটি অলৌকিক ও শিক্ষাপ্রদ ঘটনা। পবিত্র কুরআনে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতে 'ইসরা' হরবং সূরা নজমের ১৩ থেকে ১৮ মোট ৬টি আয়াতে 'মি'রাজ' সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। পুরা ঘটনাটি ২৫ জন ছাহাবী বর্ণিত রাসূলের হাদীছসমূহে বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। যা অকাট্টভাবে প্রমাণিত ও মুসলিম উম্মাহ্র নিকটে সর্বতোভাবে গৃহীত। তবে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতেই ইসরা ও মি'রাজের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বিধৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'পরম পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রির হরকাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বছা পর্যন্ত, যার চতুস্পার্শ্বকে আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (বনু ইসরাঈল ১৭/১)। উক্ত আয়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতীয়মান হয়। যেমন-
মে'রাজ বলে পরিচিত ঐতিহাসিক ঘটনাটি দু'টি অংশে বিভক্ত। প্রথমে ইসরা হরবং পরে মে'রাজ। 'ইসরা' অর্থ নৈশভ্রমণ হরবং মি'রাজ অর্থ সিঁড়ি। শারঈ পরিভাষায় মক্কার মসজিদুল হারাম থেকে ফিলিস্তীনের বায়তুল মুক্বাদ্দাস পর্যন্ত বোরাকের সাহায্যে শেষরাতের স্বল্পকালীন নৈশভ্রমণকে 'ইসরা' বলা হয় হরবং বায়তুল মুক্বাদ্দাস মসজিদ থেকে ঊর্ধ্বগামী সিঁড়ির মাধ্যমে মহাকাশের সীমানা পেরিয়ে আল্লাহ্র সঙ্গে সাক্ষাতকে মি'রাজ বলা হয়। নবী জীবনে হরটি ছিল হরকটি অলৌকিক ও শিক্ষাপ্রদ ঘটনা। পবিত্র কুরআনে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতে 'ইসরা' হরবং সূরা নজমের ১৩ থেকে ১৮ মোট ৬টি আয়াতে 'মি'রাজ' সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে। পুরা ঘটনাটি ২৫ জন ছাহাবী বর্ণিত রাসূলের হাদীছসমূহে বিশদভাবে বিবৃত হয়েছে। যা অকাট্টভাবে প্রমাণিত ও মুসলিম উম্মাহ্র নিকটে সর্বতোভাবে গৃহীত। তবে সূরা বনু ইসরাঈলের ১ম আয়াতেই ইসরা ও মি'রাজের উদ্দেশ্য ও তাৎপর্য বিধৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, 'পরম পবিত্র সেই মহান সত্তা, যিনি স্বীয় বান্দাকে রাত্রির হরকাংশে ভ্রমণ করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বছা পর্যন্ত, যার চতুস্পার্শ্বকে আমরা বরকতময় করেছি, যাতে আমরা তাকে আমাদের কিছু নিদর্শন দেখিয়ে দিতে পারি। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা (বনু ইসরাঈল ১৭/১)। উক্ত আয়াতে নিম্নোক্ত বিষয়গুলি প্রতীয়মান হয়। যেমন-
(১) ঘটনাটি ছিল অলৌকিক ও বিষ্ময়কর। তাই আয়াতের শুরুতে 'সুবহানা' শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, যা বিষ্ময়বোধক ক্ষেত্রেই কেবল ব্যবহৃত হয়। কেননা মক্কা থেকে ৪০ দিনের পথ চোখের পলকে যাওয়া ও আসার হর ঘটনায় মক্কার মুশরিক নেতারা বিস্মিত হয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ হরর দ্বারা আল্লাহ যে সবার উপরে ও হরকক স্রষ্টা হরবং তিনি যে সকলপ্রকার শরীক হ'তে মুক্ত ও পবিত্র, সে কথা বুঝানো হয়েছে
(২) ঘটনাটি ঘটেছিল রাতের হরকাংশের স্বল্পকালীন সময়ের মধ্যে হরবং যেটি রাসূল স্বেচ্ছায় করেননি বরং তাকে করানো হয়েছিল, যা 'আস্রা' ক্রিয়াপদ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। অতঃপর 'লায়লান' অনির্দিষ্ট বাচক শব্দ দ্বারা রাতের হরকাংশ বুঝানো হয়েছে, সারা রাত্রি নয়। আর সেটি ছিল শেষরাত্রিতে ফজরের পূর্বে যখন তিনি বোন উম্মে হানীর বাড়ীতে তাহাজ্জুদে ওঠেন ও মসজিদুল হারামে অবস্থান করছিলেন
(৩) ইসরা ও মে'রাজ ছিল দৈহিক ও জাগ্রত অবস্থায়, স্বপ্নে ও ঘুমন্ত অবস্থায় নয়। যা বে'আবদিহী শব্দ দ্বারা বুঝানো হয়েছে। দেহ হরবং আত্মার সমন্বয়েই আব্দ হয়ে থাকে, পৃথকভাবে নয়। যেমন সূরা জিন ১৯ আয়াতে হরবং সূরা আলাক্ব ১০ আয়াতে মক্কায় ছালাতরত রাসূলকে আব্দ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। আর যদি হরটা ঘুমন্ত অবস্থায় স্বপ্নের ব্যাপার হ'ত, তাহ'লে তাতে বিস্ময়ের কি ছিল? আর কেনইবা মি'রাজের ঘটনা শুনে অনেক নওমুসলিম মুরতাদ হয়ে গিয়েছিল? অনেকে আয়েশা ও মু'আবিয়া (রাঃ)-কে দলীল হিসাবে পেশ করেন যে, তাঁরা স্বপ্নযোগে মে'রাজের সমর্থক ছিলেন। অথচ কথাটি ছহীহ সূত্রে প্রমাণিত নয়। তাছাড়া মে'রাজের ঘটনার সময় আয়েশা ছিলেন মাত্র ৮ বছরের বালিকা। তখন তিনি রাসূলের ঘরে আসেননি। আর মু'আবিয়া তখন মুসলমান হননি
(৪) রাত্রির শেষ প্রহরের নিরিবিলি ইবাদতের মাধ্যমেই আল্লাহকে পাওয়া যায়, সেদিকেও ইঙ্গিত রয়েছে হরঘটনার মধ্যে।
(৫) 'ইসরা' অর্থাৎ নৈশভ্রমণটি ছিল মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আক্বছা পর্যন্ত। হরখানে আল্লাহ উভয় স্থানের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন 'মসজিদ' হিসাবে, বায়তুল্লাহ হিসাবে নয়। কেননা বান্দার নিকট আল্লাহ্র প্রধান কাম্য হ'ল 'সিজদা'। আর সিজদা হ'ল উবূদিয়াত তথা আল্লাহর প্রতি দাসত্বের প্রধান নিদর্শন। দ্বিতীয় তাৎপর্য হ'ল, মসজিদুল হারাম ও মসজিদুল আক্বছাকে কেন্দ্র করেই তাওহীদের দাওয়াত সারা পৃথিবীতে বিস্তার লাভ করে ইবরাহীমের জ্যেষ্ঠপুত্র ইসমাঈল ও তার বংশের মাধ্যমে মক্কা হরবং কনিষ্ঠপুত্র ইসহাক ও তার বংশের মাধ্যমে কিন'আন তথা ফিলিস্তীন অঞ্চল হ'তে। তাওহীদের হরই প্রধান দুই কেন্দ্রের উপর শেষনবীর অধিকার ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের জন্য রাসূলকে মাসজিদুল আক্বছা সফর করানো হয়।
(৬) 'আমরা (মসজিদুল আক্বছার) চতুস্পার্শ্বস্থ হরলাকাকে বরকতমন্ডিত করেছি' বাক্য দ্বারা উক্ত মসজিদের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে। কেননা যেখানে চতুস্পার্শ্বস্থ হরলাকাটি বরকতময়, সেখানে খোদ মসজিদটি নিঃসন্দেহে অনেকগুণ বেশী বরকতময়। অতঃপর চতুস্পার্শ্বস্থ বলার কারণ হরই যে, ইবরাহীম, ইসহাক, ইয়াকূব, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, আইয়ূব, ইউনুস, ইলিয়াস, যাকারিয়া, ইয়াহ্ইয়া, ঈসা সহ বড় বড় নবী ও রাসূলগণের কর্মস্থল ও অহি-র অবতরণ স্থল হ'ল হরই অঞ্চলটি। কয়েক হাযার নবী কেবল হর অঞ্চলেই জন্ম ও মৃত্যুবরণ করেছেন। যুগে যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাঁদের নিকট থেকে তাওহীদের বাণী শুনেছে হরবং ইহকালীন মঙ্গল ও পরকালীন মুক্তির সন্ধান পেয়ে ধন্য হয়েছে। আর দুনিয়াবী বরকত হরই যে, হর অঞ্চলটি আরব ভূখন্ডের সবচেয়ে উর্বর ও শস্য-শ্যামল হরলাকা। হাদীছে 'শাম' অঞ্চলের মর্যাদায় আরো অনেক বিষয় বর্ণিত হয়েছে। (৭) 'যাতে আমরা তাকে আমাদের নিদর্শন সমূহের কিছু অংশ দেখিয়ে দেই'- বাক্য দ্বারা ইসরা ও মি'রাজের মূল উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হয়েছে। 'কিছু অংশ দেখিয়ে দেই' বলার মাধ্যমে বুঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্র সকল নিদর্শন তাঁকে দেখানো হয়নি। বরং তার কিছু অংশ দেখানো হয়েছে। কি সেগুলো? হাদীছে যার ব্যাখ্যা হরসেছে। যেমন
(ক) সফরের পূর্বে তাঁর বক্ষ বিদারণ
(খ) অতঃপর চোখের পলকে বায়তুল মুক্বাদ্দাস গমন
(গ) সেখানে মসজিদে দু'রাক'আত ছালাত আদায় করে জিব্রীলের সাথে ঊর্ধ্বারোহন
(ঘ) অতঃপর সাত আসমানে নেতৃস্থানীয় নবীগণের সাক্ষাত লাভ
(ঙ) হররপর জান্নাত, জাহান্নাম, মাক্বামে মাহমূদ প্রভৃতি স্থান পরিদর্শন
(চ) অতঃপর সর্বোচ্চ সীমান্ত রেখা সিদরাতুল মুনতাহায় পৌছে আল্লাহ্র সাথে কথোপকথন ও পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত লাভ
(ছ) অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস নেমে হরসে সকল নবীর ছালাতে ইমামতি করণ
(জ) অতঃপর বোরাক্ব বাহনে মক্কায় প্রত্যাবর্তন প্রভৃতি।
মে'রাজের পুরো ঘটনাটিই তৎকালীন সময়ের হিসাবে ছিল মানবীয় জ্ঞানের বহির্ভূত। আর তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল অকল্পনীয় দ্রুততার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে যাওয়া।
(৮) কিন্তু দেড় হাযার বছর পরে যখন মানুষ নিজেদের বানানো রকেটে চড়ে সশরীরে শব্দের চেয়ে দ্রুত গতিতে লক্ষ লক্ষ মাইল উপরে মহাশূন্যে চলে যাচ্ছে। চাঁদের পিঠে অবতরণ শেষে হরখন সূর্যে পৌঁছবার স্বপ্ন দেখছে, তখন কি আর সেটা অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? মানুষ যদি তার সীমিত বুদ্ধি ও ক্ষমতায় চাঁদে যেতে পারে, তাহ'লে মানুষের স্রষ্টা আল্লাহ কি তাঁর বান্দাকে মহাশূন্য পেরিয়ে আরশের কাছে নিতে পারেন না?
(৯) চোখের দৃষ্টি কত দ্রুত সূর্যের আলো দেখতে পায়! কানের শ্রবণশক্তি কত দ্রুত আকাশের গর্জন শুনতে পায়! শক্তিধর অদৃশ্য বস্ত্তসমূহের সামনে মানুষ কত অসহায়! অদৃশ্য ঝঞ্ঝাবায়ু দৃশ্যমান সবকিছুকে মুহূর্তের মধ্যে লন্ডভন্ড করে দেয়। সাগর তলের অদৃশ্য সুনামির আঘাত ভূপৃষ্ঠকে চোখের পলকে তছনছ করে দেয়।
(১০) বায়ুমন্ডলের সময়ের গতি এবং ইথার জগতের সময়ের গতি যে এক নয়, আজকের বিজ্ঞান তা প্রমাণ করে দিয়েছে। এদিকে ইঙ্গিত করেই দেড় হাযার বছর পূর্বে কুরআন বলেছে, 'তিনি (অর্থাৎ আল্লাহ) আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্মপরিচালনা করেন। অতঃপর তা তাঁর নিকটে ঊর্ধ্বগামী হয় এমন দিনে যা তোমাদের গণনায় হাযার বছরের সমান' (সাজদাহ ৫)। অন্য আয়াতে এসেছে 'যার পরিমাণ পঞ্চাশ হাযার বছর' (মা'আরিজ ৪)। অতএব ইসরা ও মে'রাজের দ্রুততা যদি মানুষের কল্পনা বহির্ভূত দ্রুততায় সম্পন্ন হয়, তাতে বিস্ময়ের কিছু নেই। কেননা
(১১) ইতিপূর্বে নবী সুলায়মানের নির্দেশে চোখের পলকে রাণী বিলক্বীসের সিংহাসন উঠিয়ে আনার ঘটনা কুরআনে বর্ণিত হয়েছে (নমল ৪০)। অনুরূপভাবে তিনি বায়ুর পিঠে সওয়ার হয়ে সকালে এক মাসের পথ ও বিকালে এক মাসের পথ অতিক্রম করতেন (সাবা ১২)।
অবিশ্বাসীরা সন্দেহ করেছে বক্ষ বিদারণ ঘটনায়, মহাকাশে তাঁর দেহ পুড়ে ভস্মীভূত না হওয়ায়। (১২) অথচ আসমানী সফরের জন্য প্রস্ত্তত করে নেওয়ার স্বার্থেই বক্ষবিদারণ ঘটনা ঘটেছিল। আর আগুনে ভস্ম হওয়ার প্রশ্নই আসে না, যেখানে ফেরেশতা নিজেই তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বশীল।
(১৩) আর হর অলৌকিক ঘটনা স্বয়ং আল্লাহ ঘটিয়েছেন এক মহান উদ্দেশ্যে, যা বুঝার ক্ষমতা দুর্বলচেতা মুসলমান বা অবিশ্বাসীদের নেই। আর তা হ'ল, (ক) জান্নাত-জাহান্নাম, আরশ-কুরসী সবকিছুর প্রত্যক্ষ দর্শন নবীর মনে এনে দেবে এক দৃঢ় প্রভুতীতি। যা তাকে নিশ্চিন্ত, প্রশান্ত ও আবেগমুক্ত করবে। ইতিপূর্বে আল্লাহ ইবরাহীমকে চারটি পাখির টুকরা সমূহ একত্রিত করে তাতে জীবন দিয়ে দেখিয়েছিলেন (বাক্বারাহ ২৬০)। মূসাকে তূর পাহাড়ে স্বীয় নূরের তাজাল্লী দেখিয়েছিলেন ও তার সাথে কথা বলেছিলেন (আ'রাফ ১৪৩)। কিন্তু আরশে নিজ সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে কোন মানুষের সাথে আল্লাহ সরাসরি কথা বলেননি বা সবকিছু দেখাননি। নিঃসন্দেহে নবুঅতে মুহাম্মাদীর সর্বোচ্চ মর্যাদা এখানেই (খ) এই প্রত্যক্ষ দর্শন তাকে ভবিষ্যৎ সমাজ সংস্কার ও সমাজ পরিচালনার দুরুহ কাজে নিশ্চিত পথ নির্দেশ দান করবে
(গ) এই চাক্ষুস অভিজ্ঞতা তাকে ভবিষ্যৎ মাদানী জীবনের কঠিন পরীক্ষায়, যুদ্ধ-বিগ্রহে ও দুঃখ-কষ্টের বোঝা বহনে দৃঢ় হিমাদ্রির ন্যায় অটল রাখবে
(ঘ) এই অলৌকিক ঘটনা মানুষ অবিশ্বাস করবে জেনেও তিনি সত্য প্রকাশে দ্বিধা করেননি। যুগে যুগে সকল সত্যসেবীর প্রতি দ্ব্যর্থহীনভাবে সত্য প্রকাশের সে ইঙ্গিতই তিনি দিয়ে গেছেন। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন যে, ইসলাম সত্যধর্ম। মানুষ তা গ্রহণ করুক বা না করুক এর সত্য চিরন্তন ও শাশ্বত।
(ঙ) জানী দুশমন আবু জাহলের কাছে মে'রাজের ঘটনা নিজেই বর্ণনা করার মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন যে, অলৌকিক ক্ষমতার মাধ্যমে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হবে না। বরং স্বভাবধর্ম হওয়ার কারণেই তার নিজস্ব শক্তিতে তা প্রতিষ্ঠিত হবে। বিরোধীদের সকল বাধা মুকাবিলা করেই ইসলাম বিজয়ী হবে। দুর্বল বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসীদের তিনি কোনই গুরুত্ব দেননি। বরং আবুবকরের বিশ্বাস এতে আরও দৃঢ় হয়েছিল এবং তিনি নির্বিকারচিত্তে বলেছিলেন, আমি তাকে এর চাইতে অনেক বড় বিষয়ে সত্য বলে জানি। আমি সকালে ও সন্ধ্যায় তার নিকটে আগত আসমানী খবরকে সত্য বলে বিশ্বাস করে থাকি। আর এই দিন থেকেই তিনি 'ছিদ্দীক্ব' নামে অভিহিত হ'তে থাকেন' (হাকেম ৩/৬২, ছহীহাহ হা/৩০৬)। (১৪) এই ঘটনায় বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সৃষ্টি ও স্রষ্টা, আব্দ ও মা'বূদ কখনো এক নয়। উবূদিয়াত কখনো উলূহিয়াতের মর্যাদায় উত্তীর্ণ হ'তে পারে না। স্রষ্টা নিরাকার শূন্য সত্তা নন। তার নিজস্ব আকার আছে, যা কারু সাথে তুলনীয় নয়।
(১৫) এটাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, সৃষ্টিসেরা মানুষের সবচেয়ে বড় গর্ব হ'ল তার 'আব্দ' বা 'আল্লাহর দাস' হওয়া। সেজন্য প্রিয়তম মেহমান ও শ্রেষ্ঠতম রাসূলকে আল্লাহ 'আব্দ' বলে প্রিয়ভাষণে অভিহিত করেছেন, 'রাসূল' বা 'মুহাম্মাদ' নামে নয়। (১৬) এতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, মানুষ যদি তার বিশ্বাসে ও কর্মে সর্বদা আল্লাহর দাসত্ব করে, তাহ'লে সে সর্বোচ্চ মানবীয় মর্যাদায় আসীন হবে এবং আসমান ও যমীনের সর্বত্র সৃষ্টিজগতের উপর তার শ্রেষ্ঠত্ব ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে (বনু ইসরাঈল ৭০)। আর যদি আল্লাহর দাসত্ব না করে, তাহ'লে সে শয়তানের দাসত্বে আবদ্ধ হবে এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে অধঃপতনের অতলতলে নিক্ষিপ্ত হবে।
(১৭) আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, 'নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা'। অর্থাৎ মে'রাজের এই ঘটনায় আবু জাহল বাহিনী ও তাদের দোসররা কি বাজে মন্তব্য করল; পক্ষান্তরে ঈমানদাগণ ও আবুবকর কি সুন্দর মন্তব্য করলেন সবই আল্লাহ শুনেছেন। অতঃপর বায়তুল মুক্বাদ্দাস সফরকারী অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সম্মুখে যখন রাসূলের বক্তব্যের পরীক্ষা নেওয়া হ'ল এবং তারা সবাই রাসূলের বক্তব্যের সাথে একমত হ'ল, অথচ তার উপরে ঈমান আনলো না, তাদের তখনকার বিবর্ণ ও হঠকারী চেহারা আল্লাহ দেখেছেন। যুগে যুগে অবিশ্বাসীদের অবস্থা এরকমই হবে। সাথে সাথে বিশ্বাসীদের বিশ্বাস আরও দৃঢ় ও মযবূত হবে।
(১৮) পরিশেষে রাসূলকে দেওয়া হ'ল পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের তোহফায়ে মে'রাজ। আল্লাহ ইচ্ছা করলে জিব্রীলের মাধ্যমে দুনিয়াতেও ছালাতের এই নির্দেশ পাঠাতে পারতেন। কিন্তু আরশে নিজ সান্নিধ্যে ডেকে নিয়ে এই তোহফা প্রদানের মর্যাদা কত বেশী, তা যে কেউ বুঝতে পারেন। এর দ্বারা এই উপঢৌকনের মূল্য ও গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে, যা আমরা অনেকে বুঝতে পারি না। রাসূল (ছাঃ) মৃত্যুর সময়ে উম্মতের উদ্দেশ্যে শেষ বাক্য বলে গেছেন ছালাত ও নারীজাতি সম্পর্কে। ক্বিয়ামতের দিন প্রথম প্রশ্ন হবে 'ছালাত' সম্পর্কে। ছালাত হ'ল আল্লাহকে স্মরণ করার ও তাঁর প্রতি দাসত্ব প্রকাশের সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান। দৈনিক পাঁচবার মুসলমান আল্লাহর প্রতি দাসত্বের প্রতিজ্ঞা নেয় ও অন্তরজগতকে শয়তানী ধোঁকা থেকে মুক্ত করে। এর ফলে তার আত্মশুদ্ধি লাভ হয়। যা তার কর্মজগতে প্রতিফলিত হয় এবং এভাবে যাবতীয় শয়তানী কর্ম হ'তে ব্যক্তি ও সমাজ নিরাপদ থাকে। ছালাত তাই সত্যিকারের শান্তিময় মানবীয় সমাজ কায়েমের আবশ্যিক পূর্বশর্ত। ছালাতের বাইরে আত্মশুদ্ধি অর্জনের অন্য কোন নতুন তরীকা অবলম্বন করা সম্পূর্ণরূপে বিদ'আতী কর্ম, যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
(১৯) হিজরতের আগের বছরের যেকোন এক রাতে মে'রাজ সংঘটিত হয়। এর সঠিক দিন-তারিখ অস্পষ্ট রাখা হয়। যাতে মানুষ আনুষ্ঠানিকতায় বন্দী না হয় এবং মে'রাজের মূল তাৎপর্য বিস্মৃত না হয়। অথচ হতভাগা মুসলমানরা এখন অনুষ্ঠানের কফিন নিয়েই ব্যস্ত হয়েছে, মে'রাজের রূহ ভুলে গেছে।
(২০) রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরাম এদিনকে উপলক্ষ করে কোন দিবস পালন করেননি বা কোন বাড়তি ছালাত-ছিয়াম, যিকির, দান-ছাদাক্বা বা কোন অনুষ্ঠানাদি করেননি। অতএব ধর্মের নামে এসব করা বিদ'আত। এ থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন-আমীন !