রাহুল আবার বললো, "প্লীজ বী সিটেড।"
সুদীপ্তা এবার বসল। রাহুল ধীরে সুস্থে একটা সিগারেট ধরালো, রিং করতে লাগল। সুদীপ্তাকে বললো, "আপনার বায়োডাটা সঙ্গে এনেছেন?"
সুদীপ্তা ইলেকট্রনিক টাইপ করা বায়োডাটা এগিয়ে দিল রাহুলের দিকে।
চোখে চশমাটা পড়ে নিয়ে রাহুল অনেকক্ষণ ধরে পড়তে লাগল সেই কাগজ। মেয়েটির নাম লেখা আছে সুদীপ্তা বসু। ডেট অব বার্থ তিরিশ-বারো-অষ্টআশি। তারমানে এখন তেইশ বসন্তের অধিকারিণী হয়েছে সে। কলকাতা ইউনিভার্সিটি থেকে পাশ করেছে। এছাড়াও বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কোর্সে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রী আছে তার। সাথে আবার ছ মাসের অভিজ্ঞতাও। এই মেয়েটি কি হতে পারে রাহুলের শয্যাসঙ্গিনী?
মনের আকাশে নতুন এক রূপসী এসে ধরা দিয়েছে। রাহুল ভাবছে, ইন্টারভিউ তো শুধু এখন একটা নাটক। আই জাস্ট ওয়ান্ট টু ফাক ইউ বেবী!
চশমার ফাঁক দিয়ে বায়োডাটাতে চোখ বুলিয়ে মাঝে মাঝে সুদীপ্তাকেও নজর করছে রাহুল। প্রথমে একটু চোখ দিয়ে চাখা, তারপর সুযোগ বুঝে মিলনের আহ্বান।
রাহুল বললো, "আপনার কাজটা আমার পার্সোনাল অ্যাসিস্টেন্টের। সারাদিনের একটা অফিসের ডিউটি তো আছেই, তাছাড়া মাঝে মধ্যে আমাকে ট্যুরও করতে হয়। আপনি কি তখন আমার সাথে বেরোতে পারবেন?"
সুদীপ্তা তাকাল রাহুলের দিকে। এই প্রথম রাহুলকেও ভাল করে লক্ষ্য করল সে। সত্যি সুন্দর চেহারা রাহুল চ্যাটার্জ্জীর। একেবারে চোখে লাগার মতো, রোমান্টিক এক হীরো। যেমন উচ্চতা তেমনি চেহারা। সুপুরুষ রাহুল চ্যাটার্জ্জীকে সুদীপ্তার সোজাসাপ্টা উত্তর, "আপনি যা বলবেন, আমার তাতে কোন না নেই।"
রাহুল বললো, "এক মিনিট।"
রাহুল উঠে দাঁড়িয়ে ড্রয়ার খুলে একটা ফাইল বের করল।
মুচকি হেসে রাহুল বললো, "দেখুন সুদীপ্তা। গতমাস থেকে আজ অবধি জনা বিশেক মহিলা এসেছিলেন এই কাজে। এই হল তাদের সি.ভি.র ফাইল। আমার অফার কিন্তু দূর্দান্ত ছিল। কিন্তু ইনারা কেউই আমাকে সেভাবে স্যাটিসফাই করতে পারেন নি। বাট আপনাকে আমার পছন্দ হয়েছে। ডু ইউ থিঙ্ক? ইউ ক্যান হ্যান্ডেল দিজ্ জব?"
সুদীপ্তা স্মার্টলি উত্তর দিল, "ইয়েস স্যার। ওয়াই নট। আমি তো কাজ করব বলেই এসেছি।"
রাহুল খুশি হলো, "ওকে গুড। কবে থেকে তাহলে কাজ শুরু করতে চান? আমার কিন্তু নেক্সট উইকেই বাইরে যাবার প্রোগ্রাম ফিক্স করা আছে।"
সুদীপ্তা বললো, "স্যার, আমার প্যাকেজ?"
সুদীপ্তার প্রশ্নটা শুনে একটু হাসলো রাহুল। তারপর বললো, "আমি যা দেবো, কেউ আপনাকে দিতে পারবে না। স্যালারি ছাড়াও কনভেন্স পাবেন, মেডিকেল অ্যালাউন্স আছে। ডিয়ারেন্স অ্যালাউন্সও পাবেন। আর আপনি কি ভাড়া বাড়ীতে থাকেন? না নিজেদের বাড়ী?"
সুদীপ্তা এবার যে উত্তরটা দিল, তারজন্য মোটেই প্রস্তুত ছিল না রাহুল। একেবারে যেন মেঘ না চাইতেই জল। সুদীপ্তা বললো, "স্যার, কলকাতায় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া করে আছি মাস ছয়েক হল। আগে যে চাকরিটা করতাম, ওরা হাউস রেন্টটা দিয়ে দিত। মাসে ভাড়া চার হাজার টাকা। ফ্ল্যাটটা ছাড়িনি, যদি বেটার কোন অফার পাই।"
রাহুল জানতে চাইলো, "আপনি ছাড়া আর কে কে আছেন, ওই ফ্ল্যাটে?"
সুদীপ্তা বললো, "স্যার আর কেউ না। আমি একাই থাকি ওই ফ্ল্যাটটাতে। ছোটবেলা থেকেই কলকাতাতে থেকে পড়াশুনা করেছি। বাবা, মা আমার, দুজনেই থাকেন শিলিগুড়িতে। ওনারা শেষবার এসেছিলেন, সেই মাস পাঁচেক হল। এখানে থেকে চাকরি করছি। মাসের শেষে বাড়ীতে কিছু টাকা পাঠাই। বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে যে আমি।"
রাহুল আবার তাকাল সুদীপ্তার বুকের দিকে। বুকদুটো কি বিরাট। চোখে পড়ার মতো। মনে মনে বললো, "চাকরিটা তোমার কনফার্ম করে দিলাম। কিন্তু আমার চাহিদার দিকটাও তোমাকে মাঝে মধ্যে খেয়াল রাখতে হবে সুন্দরী!"
মুখে বললো, "ও.কে। হাউস রেন্টটাও তাহলে প্যাকেজে ইনক্লুড করে দিচ্ছি। সব মিলিয়ে তিরিশ হাজার। চলবে তো?"
সুদীপ্তা যেন আনন্দে আত্মহারা। খুশি খুশি বললো, "স্যার আমি যে কি বলে আপনাকে থ্যাঙ্কস্ জানাবো, বুঝতে পারছি না।"
রাহুল বললো, "থ্যাঙ্কস জানানোর দরকার নেই। আপনি আজকে থেকেই কাজে লেগে পড়ুন। জব সিরিয়াসলি করুন, অন্য চাকরি নিয়ে আপনাকে আর ভাবতে হবে না।"
মোবাইল থেকে ফোন মিলিয়ে ওই বয়স্ক ভদ্রলোককে ডাকল রাহুল, "মিষ্টার মজুমদার। আমার ঘরে একবার আসুন তো।"
একটু পরেই ওই লোকটা এসে ঘরে ঢুকলো। রাহুল বললো, "উনার সিভিটা নিন। আর টাইপিস্টকে বলুন, এক্ষুনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারটা কম্পূটারে টাইপ করে দিতে। আমি যা কিছু ইনক্লুড করার মেল এ করে দিচ্ছি।"
সঙ্গে সঙ্গে নিজের ল্যাপটপটা খুলল রাহুল। ঘটঘট করে কিসব টাইপ করল। লোকটাকে বললো, "যান, সেন্ড করে দিয়েছি। ওকে বলুন তাড়াতাড়ি এটা টাইপ করে এক্ষুনি যেন আপনার হাতে দিয়ে দেয়।"
লোকটা চলে যাওয়ার আগে একবার সুদীপ্তার দিকে তাকাল। সুদীপ্তা তখন আনন্দে প্রায় গদগদ।
নিজের সেল ফোন থেকে শিলিগুড়িতে ফোন করে তখুনি মা বাবাকে সুসংবাদটা জানাতে চাইছে। রাহুল দেখছে খুশিতে উছলে পড়ছে সুদীপ্তার শরীর। কথা বলতে বলতে আবার গালে টোলও খাচ্ছে। বেশ ভাল লেগে গেছে মেয়েটাকে। মনের ঘরে আগুন জ্বলছে, এবার দেখা যাক পালা কতদূর গড়ায়।
অফিস বয় এসে রাহুল আর সুদীপ্তাকে এক কাপ করে চা দিয়ে গেল। সুদীপ্তা ফোনে তখনও চাকরি পাওয়ার খবরটা বিস্তারিত ভাবে বাবা আর মা'কে পালা করে বলে যাচ্ছে। কিভাবে পেল, কিভাবে এল। সবকিছুর ইতিবৃত্ত। রাহুল বললো, "চা টা খেয়ে নিন, ঠান্ডা হয়ে যাবে যে।"
সুদীপ্তা চায়ের কাপটা হাতে ধরে ওর নরম ঠোঁটটা কাপে ছোঁয়ালো। দেখল রাহুলের এক মনকাড়া চাউনি। যেন অভিভূত হয়ে গেছে সুদীপ্তাকে দেখে। ফোনটা মুখের সামনে ধরেও কথা বলতে পারছে না সুদীপ্তা। ওর বস যে ওকে তন্ময় হয়ে দেখছে।
এক সপ্তাহ আগেই ভাগ্যিস খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনটা খুব মন দিয়ে পড়েছিল সুদীপ্তা। না হলে এমন মোটা মাইনের চাকরি, ভাবা যায়? জব ভ্যাকেন্সি ফর পার্সোনাল সেক্রেটারী।