What's new
Nirjonmela Desi Forum

Talk about the things that matter to you! Wanting to join the rest of our members? Feel free to sign up today and gain full access!

ক্যান্সার আক্রান্ত স্বামীর স্ত্রীয়ের পরকীয়া (1 Viewer)

Manali87

Exclusive Writer
Story Writer
Joined
Apr 19, 2022
Threads
11
Messages
143
Credits
13,104
হাসপাতালের করিডোরে মনীষা ও রবি অপেক্ষা করছিলো , অরুণের বায়োপসি রিপোর্ট আসার। মনীষা নিজের ছোট্ট মেয়েটি কে কোলে নিয়ে বসেছিল। রবি অরুণের ছোটবেলার বন্ধু। সবকাজে সবসময় এক আদর্শ বন্ধু হিসেবে পাশে থেকেছে। মনীষা কে বাড়ি থেকে পালাতেও সাহায্য করেছে , এবং দাঁড়িয়ে থেকে মনীষা ও অরুণের চার হাত এক করেছে।

বায়োপসি রিপোর্টে ধরা পড়লো অরুণের মারণ রোগ ক্যান্সার , তাও আবার অ্যাডভান্স স্টেজ। হাতে আর বেশি সময় নেই। শুনেই মনীষা ভেঙে পড়েছিলো। রবি ওকে শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলো কিন্তু তারও মনের অবস্থা ভালো ছিলোনা। বন্ধুর এরূপ অবস্থা সেও সহ্য করতে পারছিলোনা।

অরুণকে বাড়ি নিয়ে আসা হলো। যতোদিন আছে ততোদিন যত্ন নেওয়ার পরিকল্পনা করা হলো। মনে পাথর রেখে মনীষা নিজের সবটুকু উজাড় করে দিলো নিজের স্বামীকে। অরুণের প্রাইভেট জব ছিল। জীবনের আগে প্রথমে তার চাকরি গেলো। দিন দিন তার অবস্থা সবদিক দিয়ে শোচনীয় হয়েগেলো। চিকিৎসার খরচা , ছোট্ট মেয়েটির ভবিষ্যৎ , সবমিলিয়ে এক অভাবের সংসার। কিন্তু এই দুঃসময়ে একমাত্র তার প্রিয় বন্ধু রবিই নিঃস্বার্থ ভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল। অর্থনৈতিক সাহায্য থেকে নৈতিক সাহায্য সবই রবির কাছ থেকে তারা পেতো। একজন আদর্শ পারিবারিক বন্ধু যেরকম হয় আর কি।

দিন দিন অরুণের শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকলো। সে এবার ঠিক মতো উঠতে চড়তে পারছিলোনা। নিজের উপর ধিক্কার দিচ্ছিলো তার এই করুণ অবস্থার জন্য। বারবার নিজেকে সংসারের একটা বোঝা হিসেবে মনে হতে লাগলো। সে এখন একা একা বাথরুম পর্যন্ত যেতে পারেনা। তার জন্যও তাকে বউয়ের সাহায্য নিতে হয়। সে জানে তার হাতে বেশি সময় নেই। তাই সে বারংবার নিজের মৃত্যুকামনাই করে। এইভাবে বেঁচে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া ঢের ভালো। কিন্তু মনীষা ? ওর কি হবে ? তাছাড়া ওদের মেয়ে পরীরও বা কি হবে ? ওদের কি ভবিষ্যৎ অরুণের চলে যাওয়ার পর ? এই কথাগুলো অরুণকে সবসময়ে চিন্তায় রাখতো।

রবি প্রায় আসতো তাদের বাড়ি। ওদের খোঁজখবর নিতে এবং আর্থিক সাহায্য করতে। যখুনি অরুণের ডাক্তারের অ্যাপয়ন্টমেন্ট থাকতো , রবি যেত ওর সাথে। সবসময়ে মনীষা যেতে পারতোনা মেয়েটার জন্য। রবি ও মনীষার মধ্যে প্রায় কথা হতো , ফোনে ও সামনাসামনি। এবং বেশিরভাগটাই হতো অরুণকে নিয়েই। অরুণের চিকিৎসা , খাওয়াদাওয়া ইত্যাদি নিয়ে। অরুণ লক্ষ্য করতো যে ওর পর যদি কেউ মনীষার এতো যত্ন নেয় সেটা আর কেউ নয় তার বন্ধু রবি। সে একদিন এই ব্যাপারটা নিয়ে ভাবলো অনেকক্ষণ। এবার অরুণ একটা চরম সিদ্ধান্ত নিলো। নিজের পরিবারের জন্য , নিজের মেয়ের জন্য , সর্বোপরি মনীষার জন্য।

সে একদিন রবি কে ডাকলো , কিছু জরুরি কথা বলার জন্য।

"বল অরুণ , কি বলবি। ...."

"রবি , তুই তো সবই জানিস। আমি আর বেশিদিন নেই। "

"প্লিজ , এইভাবে বলিসনা। তুই ঠিক হয়ে যাবি , বিশ্বাস কর। .."

"কেন মিথ্যে আশা দিচ্ছিস ভাই। তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড , তোর মুখে এরকম ফর্মাল কথা মানায় না। আমি আমার ভবিতব্য মেনে নিয়েছি। .."

"আচ্ছা তবে বল , কি বলতে চাইছিস। .."

"আমি ভাবছি যে আমি চলে যাওয়ার পর মনীষা ও পরীর কি হবে ? আমার চাকরি নেই , পেনশন নেই , ইন্সুরেন্স করাও নেই। কি করে জানবো বল যে এতো তাড়াতাড়ি মৃত্যু কড়া নাড়বে দরজায়। আমি যাওয়ার পর কি ওরা না খেতে পেয়ে মরবে? আগে জানলে তো পরীকে এই পৃথিবীতেই আনতাম না " , এই বলে অরুণ ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।

রবি ওকে শান্ত্বনা দিতে দিতে বললো , "কাঁদিস না ভাই। আমি তো আছি। .."

"তাই জন্যই তো আজ তোকে ডেকেছি। আমার একটা আর্জি আছে। আমি অনেক ভেবেচিন্তে দেখেছি। ......"

"মানে ?? কি আর্জি ??"

"আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দে.... মনীষাকে তোর কেমন লাগে ?"

"ভালোই। .. তুই খুব লাকি , মনীষার মতো একজন স্ত্রীকে পেয়ে। "

"বাদ দে। আমি কতো লাকি সেটা তো দেখতেই পাচ্ছিস , আমার অবস্থা দেখে। কিন্তু তুই সেই লাকি ব্যক্তি হতে পারিস। "

"ঠিক কি বলতে চাইছিস তুই ?"

"তুই মনীষাকে বিয়ে কর। "

"কি !! তুই কি পাগল হয়েছিস !! তোর মাথার ঠিক আছে। আগে মনে হয় তোর মাথার চিকিৎসা করার দরকার ", রবি হকচকিয়ে বলে উঠলো। সে যে তখনও পর্যন্ত মনীষাকে অন্য চোখে দেখেনি।

"শান্ত হ রবি। আমি যা বলছি খুব ভেবেচিন্তেই বলছি। দেখ , তুই এখনো বিয়ে করিসনি। চাকরি করিস , এস্ট্যাব্লিশড। আর মনীষা মেয়ে হিসেবেও তো খারাপ নয়। দেখে কেউ বলবে ওর একটা ছোট্ট মেয়ে আছে। অসম্ভব সুন্দরী। তুই তো একবার বলেছিলিস না যে ওকে দেখতে একেবারে ঈশা সাহার মতো।"

"দেখ লজিক্যালি তুই যা বলছিস তা হয়তো ঠিক। তুই চলে যাওয়ার পর ওর এবং পরীর একজন সাথী দরকার। কিন্তু তা বলে আমি কি করে। ......"

"ওহঃ বুঝেছি। আসলে কি বলতো , ক্ষুদিরাম সবসময়ে পাশের বাড়ি থেকে হলেই আমাদের ভালো লাগে। আমরা লোক কে মহান দেখতে চাই , কিন্তু নিজে মহান হতে পারিনা। কারণ তার জন্য লাগে অনেক বড়ো স্যাক্রিফাইস। তুই জানিস আমি আর কিছুদিনের মধ্যে মারা যাবো। আমি চলে যাওয়ার পর আমার বউ বাচ্চা কে দেখার কেউ থাকবে না। আমার এখন কোনো চাকরিও নেই , যে সেটা পরে মনীষা পাবে , বা ও কোনো পেনশন ভাতা পাবে। আমি চলে যাওয়ার পর মনীষা অর্ধনৈতিক , মানসিক , শারীরিক সবদিক দিয়ে একা হয়ে পড়বে। তোকে ছাড়া আমি আর কাকেই বা বিশ্বাস করি বল। তুই একমাত্র ওর অবলম্বন হতে পারিস।"

"কিন্তু আমি কখনো মনীষা কে ওই চোখে দেখিনি। আর না মনীষা কখনো আমাকে সেই চোখে দেখেছে। "

"এবার দেখ। অন্তত মনীষা ও আমার মেয়েটার স্বার্থে। আমি জানি তুই সিঙ্গেল। আর মনীষার বিয়ে নাহলে সেও তোর জন্য একদম পারফেক্ট মেয়ে ছিল।"

"কিন্তু। ......."

"আর কোনো কিন্তু নয় ভাই। তুই মনীষা কে আপন করে নে প্লিজ। তাহলে আমি একটু শান্তিতে মরতে পারবো। "

"মনীষা আমার হয়ে গেলে তুই সহ্য করতে পারবি ?"

আলবাত পারবো। আমার থেকে বেশি খুশি কেউ হবেনা তখন। আমি মনীষাকে সেট্লড করে যেতে চাই। আমার মেয়ের ফিউচার সিকিউর করে যেতে চাই। আর সেটা তখুনি সম্ভব যখন তুই মনীষার হাতটা ধরবি। "

"মনীষা জানে তোর এই পাগলামোর কথা ?"

"ওকে এখনও বলিনি। আগে তুই রাজি হও , তারপর আমি ওকে ঠিক রাজি করিয়ে নেবো। ও আমার কথা ফেলেনা। এটাও ফেলবেনা , রাখবে।"

"দেখ তুই যা বলছিস তা সত্যি আমার খুব অদ্ভুত লাগছে। কিরকম যেন একটা মনে হচ্ছে। আমাকে একটু সময় দেয় , ভাববার জন্য। তুইও ভাব , যেটা তুই করতে চলেছিস সেটা উচিত হবে কিনা। "

"আমার আর কিছু ভাবার নেই। আমি ভেবেচিন্তেই কথাটা বলেছি। এবার সিদ্ধান্ত তোর। তুই তোর বন্ধুর পরিবারটা কে বাঁচাতে চাস কিনা। তুই সময় নিতে চাইছিস , নে সময়। কিন্তু দেখিস , বেশি সময় নিস না। আমার হাতে কিন্তু সময় খুব কম। আমি তোদের ঘর সংসার গুছিয়ে দিয়ে যেতে চাই। "

রবি চিন্তাভরা মুখ নিয়ে চলে গেলো। বেশ কয়েকদিন রবি এলোনা। তারপর একদিন অরুণের ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট ছিল। মনীষার সাথে রবিও গেলো অরুণ কে নিয়ে হাসপাতালে। সেইসময়ে রবি আড় চোখে মনীষার দিকে তাকাতে থাকলো। মনীষা কে যেন সে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে লাগলো। মনে মনে ভাবতে লাগলো যদি সত্যি নিজের বন্ধু অরুণের বউকে বিয়ে করতেই হয় তবে কেমন হবে ব্যাপারটা। নো ডাউট মনীষা এক অপরূপ সৌন্দর্য্যের ভান্ডার ছিল। যেকোনো পুরুষের মন ওর জন্য বিচলিত হয়ে ওঠা স্বাভাবিক। কিন্তু রবি এতোদিন ওকে সেই চোখে দেখেনি। এখন দেখতে শুরু করেছে। মনে মনে সুপ্ত বাসনা এবার রবির মনে জাগতে শুরু করেছে নিজের বন্ধুর স্ত্রী কে নিয়ে।

রবির নজর বারবার অকারণে মনীষার দিকে যাচ্ছিলো। মনীষা নোটিস না করলেও অরুণ সেটা করলো। অরুণ বুঝলো যে রবি মনে মনে তার প্রোপোজাল টা একসেপ্ট করেছে। কিন্তু তাও কেন অরুণের খারাপ লাগছিলো মনীষার দিকে রবির অকারণ চেয়ে থাকা দেখে ? আসলে সে তো মন থেকে চাইনি নিজের স্ত্রী কে অন্যের হাতে তুলে দিতে। পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করছে। সে তার স্ত্রী কে ভালোবাসে। তাই চায় মনীষার ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে। বাড়ি থেকে পালিয়ে বিয়ে করার পর থেকে মনীষার বাড়ির সাথে সম্পর্ক পুরোপুরিভাবে ছিন্ন। অরুণেরও একুল ওকূলে সেরকম কেউ নেই। আত্মীয়স্বজন কেউ সুজন নয়। তাহলে তার মৃত্যুর পর মনীষা যাবে কোথায় ? তাই তো মনে পাথর চেপে অরুণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে মনীষা কে রবির হাতে তুলে দিতে।

বাড়ি ফিরে অরুণ রবিকে জিজ্ঞেস করলো ওর সিদ্ধান্তের কথা। রবি মাথা নিচু করে অরুণের প্রস্তাবে সম্মতি দিলো। অরুণের বুকটা কেন জানি ছ্যাৎ করে উঠলো। সব দুঃখ কষ্ট চেপে অরুণ রবিকে নির্দেশ দিলো যাতে সে যেন মনীষার কাছাকাছি থাকার এবং যাওয়ার চেষ্টা করে। রবি বারবার নিজের প্রিয়বন্ধু কে জিজ্ঞেস করলো , সে সত্যি এসব চায় কিনা। অরুণও বারবার দাঁত চেপে প্রকাশ করলো নিজের সম্মতির কথা। অবশেষে রবি অরুণের কথা মেনে নিলো। তবে সে বললো মনিষা কে এই ব্যাপারে কথা অরুণ কেই বলতে হবে। অরুণ রাজি হয়েগেলো। তবে একটু সময় চেয়ে নিলো। আর এই সময়ের মধ্যে অরুণ চাইলো রবি যেন মনীষা কে একটু বেশি সময় দ্যায় , বন্ধু হিসেবেই।

দুই বন্ধুর মধ্যে কথা ফাইনাল হলো। তারপর কয়েকদিন রবি রোজ অরুণের বাড়ি আসতে লাগলো। মনীষার ঘরোয়া কাজে সাহায্য করতে লাগলো। মনীষা ব্যাপারটা কে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ হিসেবেই দেখলো। কারণ রবি প্রথম থেকেই খুব হেল্পফুল। ওই তো অরুণ ও মনীষাকে সাহায্য করেছিল পালিয়ে বিয়ে করতে। ও না থাকলে অরুণ এবং মনীষার বিয়েটাই হতোনা। যাই হোক অবশেষে সেই দিনটা এলো যেদিন অরুণ মনীষাকে নিজের কথা খুলে বললো।

"মনীষা। ....."

"হ্যাঁ বলো। .."

"তুমি আমাকে ভালোবাসো ?"

"এটা কোনো কথার কথা হলো ? তোমার কোনো সন্দেহ আছে ?"

"আহঃ , তাও বলোনা। ভালোবাসো আমায় ?"

"হ্যাঁ। সবথেকে বেশি এবং শুধু তোমায় ?"

"তাহলে আমার কথা সব রাখবে ?"

"বলো। .."

"তুমি তো জানো মনীষা আমার হাতে আর বেশি সময় নেই। প্লিজ , শান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করোনা , আমি বাচ্চা নই। সত্যিটা কে একসেপ্ট করতে জানি। এবং তুমিও সেটা একসেপ্ট করো। "

"তুমি বলতে কি চাইছো ?"

"আমার একটা শেষ ইচ্ছে রয়েছে। সেটা তুমি রাখবে ?"

"কি বলো ?"

"তুমি আবার নিজের জীবনটা কে নতুন করে শুরু করো। "

"মানে ?"

"তুমি বিয়ে করো। "

"তুমি কি পাগল হয়েছো ?", মনীষা চিৎকার করে উঠলো।

শান্ত গলায় অরুণ বললো , "শান্ত হও মনীষা। কালম ডাউন। নিজের কথা না ভাবো , অন্তত আমাদের পরীটার কথা ভাবো। আমার কি আছে যা রেখে যাবো তোমাদের জন্য। তোমরা তো পথে বসবে। আমি তো তাহলে মরেও শান্তি পাবোনা। "

মনীষা কাঁদতে কাঁদতে বললো , "প্লিজ অরুণ , তুমি চুপ করো। আমি আর কিচ্ছু শুনতে চাইছি না। "

এই বলে মনীষা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। অরুণ বুঝলো এইভাবে মনীষা কে কনভিন্স করানো যাবেনা। অন্য পথ দেখতে হবে। অরুণ তাই খাওয়া-দাওয়া ওষুধ নেওয়া বন্ধ করে দিলো। মনীষা জিজ্ঞেস করলো কেন অরুণ এরকম করছে। এরকম করলে তো ও আরো অসুস্থ হয়ে পড়বে। জবাবে অরুণ বললো সে তাড়াতাড়ি এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে চায়। কারণ সে দাঁড়িয়ে থেকে তার পরিবারের দুর্গতি আর দেখতে পারবে না। তার স্ত্রী যখন ঠিকই করে নিয়েছে তার মৃত্যুর পর নিজের ও মেয়ের ভবিষ্যৎ অন্ধকার করে দেবে তখন তার আশাহত হয়ে দ্রুত মরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। মনীষা বুঝতে পারলো অরুণ কেন এরূপ ব্যবহার করছে। সে তার স্বামীকে বোঝানোর চেষ্টা করলো যে সে তার স্বামী ব্যাতিত আর কাউকে নিজের জীবনে জায়গা দিতে পারবে না। অরুণও উল্টে তাকে বাস্তব পরিস্থিতির সাথে অবগত করানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

"আচ্ছা , ধরো মেনেও নিলাম তোমার কথা। কিন্তু এমন কাউকে কোথায় পাবো যে আমাকে তোমার মতো করে ভালোবাসবে? "

"পাবে , নিশ্চই পাবে। "

"তা আমার হাসবেন্ড আমার জন্য নতুন বর খুঁজে দেবে ? কোথা থেকে পাবে শুনি ?"

"আর যদি বলি , খোঁজা হয়েগেছে। "

"মানে , কি বলতে চাইছো তুমি ?", মনীষা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

"আগে বলো , তুমি রিএক্ট করবে না। শান্ত হয়ে সবকথা শুনবে। "

"ঠিক আছে , বলো। "

"রবি কে তোমার কেমন লাগে ?"

"কি !! তুমি রবি কে। ....."

"আগেই বলেছি , রিএক্ট করোনা। "

"রবি এসব জানে ? তুমি কিসব ভাবনা ওকে নিয়ে মাথায় চাষ করছো। .."

"দেখো , তুমি আমাকে খারাপ ভাবো , ভুল বোঝো , তবুও আমি বলবো আমি যা বলছি খুব ভেবেচিন্তে বলছি। মনীষা তুমি কেন বুঝতে পারছো না , আমি চলে যাওয়ার পর ইউ নিড সামওয়ান। আর আমি রবি ছাড়া কাউকে বিশ্বাস করতে পারবো না। রবিই একমাত্র তোমার আর আমাদের মেয়ের দায়িত্ব নিতে পারে। তাই তোমাকে রবির হাতে তুলে দিলে আমি অন্তত শান্তিতে মরতে পারবো। এইটুকু তো তুমি করতেই পারো। আমার জন্য আমাদের পরিবারের জন্য। "

"কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব। আমি রবির সম্পর্কে এসব কখনো কল্পনাও করিনি। "

"এখন করো , এখন ভাবো। রবি শুধু আমার বন্ধু নয় , এখন ও তোমারও একজন ভালো বন্ধু হয়ে উঠেছে। আর একজন ভালো বন্ধুকে যদি তুমি বাকিটা জীবন সঙ্গী হিসেবে পাও , তাহলে দেখো , তুমিও ভালো থাকবে আর সেও। "

"এসব কথা ভাবার আগে তুমি একবারও রবির সাথে কথা বলেছো ? মানছি তোমার পয়েন্ট অফ ভিউ দিয়ে দেখতে হলে তুমিই হয়তো ঠিক। কিন্তু তুমি কি করে কাউকে না জানিয়ে তার মতামত না নিয়ে তার জীবন সম্পর্কে এতো বড়ো সিদ্ধান্ত নিতে পারো ? আমার সম্পর্কে তুমিই বলতেই পারো এসব কথা , কারণ আমি তোমার স্ত্রী। আমার জীবন এবং আমার জীবন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তোমার সম্পূর্ণ ভাবে আছে। কিন্তু রবি ? ওর উপর তুমি কিছু চাপিয়ে দিতে পারোনা। তাছাড়া আমি কারোর জীবনে বোঝা হতে পারবো না। "

"আর যদি বলি রবি রাজি আছে। আমি ওর সাথে কথা বলেছি। "

"কি !!!!......", মনীষা আকাশ থেকে পড়লো অরুণের এই কথা শুনে।

"আমি ঠিকই বলছি মনীষা। আমি রবিকে রাজি করিয়ে নিয়েছি। সে প্রস্তুত তোমার আর পরীর দায়িত্ব নিতে। এবার তোমার পালা। তুমি যদি রাজি থাকো এই সম্পর্কে তাহলে আমি জীবনের বাকিটা সময়ে শান্তিতে কাটাতে পারবো , এবং নিশ্চিন্তে মরতে পারবো। যদি সেটা তুমি চাও। আর নইলে , আমাকে বুকভরা কষ্ট , ও হাজারো চিন্তা নিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। মরেও শান্তি পাবনা। এবার তুমি বলো , কি চাও ? আমাকে একটু শান্তি দিতে নাকি নিজের স্ত্রী ধর্ম পালনের নামে আমাকে এক কষ্টকর মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে ?"

অরুণের কথা শুনে মনীষা বসে পড়লো। সে বুঝতে পারছে না , সে কি করবে। স্ত্রী ধর্ম পালন করবে নাকি স্বামীর ইচ্ছের মর্যাদা রাখবে ? সেদিন মনীষার আর কোনো কাজে মন লাগলো না। রাতে ঠিকমতো ঘুমোতেও পারলো না। দু'দিন এভাবে কেটে গেলো। অবশেষে মনীষা হেরে গেলো , অরুণের ইচ্ছাশক্তির কাছে। তার কাছে যে আর অন্য কোনো পথ খোলা ছিলোনা। জীবন তাকে এমনই একটা জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলো। সে অরুণকে গিয়ে বললো যে সে রাজি , এবং জানতে চাইলো তাকে কি করতে হবে , তার স্বামীর ইচ্ছে রাখার জন্য।

"সবার প্রথমে তুমি আমাকে ডিভোর্স দাও। "

"কি !!"

"হ্যাঁ , ঠিকই শুনলে। সবার আগে আমাদের ডিভোর্স হবে। তারপর আমি দাঁড়িয়ে থেকে তোমাদের চার হাত এক করবো। ঠিক যেভাবে রবি আমাদের বিয়ে দিয়েছিলো মন্দিরে নিয়ে গিয়ে। এবার আমার জায়গায় থাকবে রবি , আর রবির জায়গায় আমি। তারপর রবি এই বাড়িতে এসেই থাকবে, যতোদিন আমি রয়েছি। আমি পরীকে নিয়ে অন্য ঘরে শিফট করে যাবো। আর তুমি ও রবি একই রুমে থাকবে স্বামী-স্ত্রীর মতো। "

"অসম্ভব ! আমি এটা কিছুতেই করতে পারবো না। "

"তোমাকে করতেই হবে। আমার জন্য না হোক , নিজের জন্য না হোক , আমাদের মেয়ের জন্য তোমাকে এই পদক্ষেপ নিতে হবে , নিতেই হবে। "

মনীষা অনর্গল কাঁদতে লাগলো। তার কান্না যেন থামার নামই নিচ্ছিলো না। অরুণের মন অনেকটাই ভারাক্রান্ত ছিল। তবুও সে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছিলো মনীষা কে শান্ত্বনা দিয়ে বোঝানোর। মনীষার কাছে আর অন্য কোনো রাস্তা পড়েছিলোনা , নিজের স্বামীর কথায় রাজি হওয়া ছাড়া। অবশেষে একদিন অরুণ রবি কে ডাকলো। মনীষার সামনেই রবিকে তার সব পরিকল্পনা বুঝিয়ে বললো। রবি ফের একবার অরুণ কে বললো তার সিদ্ধান্তটা পর্যালোচনা করে দেখতে। অরুণও বললো সে অলরেডি ভেবে নিয়েছে। সে জানে তার আর কোনো ভবিষ্যৎ নেই , কিন্তু তার স্ত্রী ও মেয়ের আছে। তাদের ভবিষ্যৎ টা তাকেই সুরক্ষিত করে রেখে যেতে হবে।

কথামতো অরুণ ও মনীষার ডিভোর্স হয়েগেলো। এটা পৃথিবীর প্রথম ডিভোর্স যেখানে স্বামী স্ত্রী অনিচ্ছাকৃত সত্ত্বেও শুধুমাত্র সিচুয়েশনের কবলে পড়ে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে বাধ্য হলো। ঠিক হলো তাদের মেয়ের কাস্টডি মা-ই পাবে , খুব স্বাভাবিক ভাবে। কয়েকদিন পর অরুণ মন্দিরে নিয়ে গিয়ে রবি ও মনীষার বিয়ে দিয়ে দিলো। তাদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজও করালো।

সেদিন ছিল রবি ও মনীষার বিয়ের পরের প্রথম রাত। রবি অরুণের বাড়িতে শিফট হয়েগেছিলো। মনীষা কাঁদতে কাঁদতে অরুণের কাছে জিজ্ঞাসা করলো যে সে কি করে একই ছাদের তলায় তার ও রবির সাথে থাকবে ? বিশেষ করে রবির সাথে , যেখানে পাশের ঘরেই তার প্রাক্তন কিন্ত প্রকৃত স্বামী অরুণ থাকবে। অরুণ ওকে বোঝালো মহাভারতের উদাহরণ দিয়ে , যে দ্রৌপদীরও পাঁচ স্বামী ছিল, এবং প্রত্যেকের সহিত তার সন্তান হয়েছিলো। সন্তান হওয়ার কথা শুনে মনীষা চমকে গেলো। সে অরুণের কাছ থেকে এরূপ উদাহরণ দেওয়ার অন্তর্নিহিত অর্থ জানতে চাইলো।

অরুণ বললো সে তাকে বোঝাতে চাইছে যে মহাভারত কাল থেকে নারী চাইলে একই সাথে একাধিক স্বামীর সহিত সহবাস করতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে যেটা হয় পলিগ্যামি , মেয়েদের ক্ষেত্রে সেটা পলিএন্ড্রি। আর সন্তান হওয়ার কথাতে তুমি এতো বিচলিত কেন হলে ? আজকে রবি আমার সংসারটা কে বাঁচাতে তোমাকে বিয়ে করেছে। কাল রবির স্বামী হিসেবে নিজস্ব কিছু চাহিদা থাকতেই পারে। তোমার তখন উচিত হবে নিজের স্ত্রীর ধর্ম পালন করা, রবির স্ত্রী হিসেবে।

মনীষা অবাক পানে চেয়ে অরুণ কে জিজ্ঞেস করলো , "তুমি কি করে পারছো এসব করতে ? কি করে পারছো এতোটা কঠিন হতে ?"

"আমি এখন সব পারা আর না পারার উর্ধে উঠে গেছি। ভাগ্য আমাকে যে পরিস্থিতির সম্মুখীন করিয়েছে , সেখান থেকে দাঁড়িয়ে আমি এখন আর আমার কথা ভাবছিনা। ভাবছি তোমার কথা , আমাদের সন্তানের কথা। আর আমার মনে হয় , তোমারও সেটাই করা উচিত। আমি এখন ধীরে ধীরে ইতিহাসের পাতায় প্রবেশ করছি। "

অরুণের কথা শুনে মনীষা কাঁদতে কাঁদতে অরুণকে জড়িয়ে ধরলো। অরুণ বললো সে এখন তার কাছে পরপুরুষ। তাই নিজের স্বামী থাকতে মনীষার মতো রুচিশীল মেয়ের এরূপ অন্য পুরুষের সহিত আলিঙ্গনে লিপ্ত হওয়া শোভা পায়না। অরুণ নিজের মনের জোড় রেখে মনীষা কে ধীরে ধীরে রবির দিকে ঠেলে দিচ্ছিলো। তাই বারংবার মনীষাকে মনে করিয়ে দিচ্ছিলো যে এখন তার স্বামী রবি , সে নয়।

মনীষা নিজের ঘরে বসেছিল। অরুণ মেয়ে কে নিয়ে পাশের ঘরে শিফট হয়ে গেছিলো। কিচ্ছুক্ষণ পর রবি মনীষার বেডরুমে প্রবেশ করলো। রবি কে দেখে মনীষার মনে এক অদ্ভুত অস্বস্তি কাজ করতে লাগলো। দুজনের মধ্যে বেশ কিচ্ছুক্ষণ কোনো কথা হলো না।
 
আমি মানালী দিদির হয়ে বাকি পর্ব গুলো পোস্ট করব আশা করি,,,,,,,,


পর্ব ০২ ও ০৩

তারপর মনীষা নিজেই রবিকে বললো , "দেখো রবি , তুমি আমাদের অনেক সাহায্য করেছো। তার জন্য আমি তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। কিন্তু তোমার নববিবাহিতা স্ত্রী হিসেবে তুমি আমার কাছ থেকে কিছু আশা করোনা প্লিজ। তোমাকে তাহলে বারংবার আশাহত হতে হবে। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি কি পরিস্থিতিতে এই বিয়েটা করতে বাধ্য হয়েছি। "

"আমি বুঝি মনীষা। তুমি চিন্তা করোনা , আমি কখনো তোমার অ্যাডভান্টেজ নেওয়ার চেষ্টা করবো না। তুমি আমার কাছে এখনো অরুণের স্ত্রী হিসেবেই যথাযত সম্মান পাবে। "

কিচ্ছুক্ষণ পর রবি আবার বলে উঠলো , "আমি কিন্তু ইচ্ছে করে বিয়েটা করতে চাইনি। তুমি চাইলে অরুণের সাথে থাকতে পারো। "

"অরুণ নিজেই আমার সাথে থাকতে চায়না। সে আমাকে পর করে দিয়েছে এখন ", খুব দুঃখে ও অভিমানের সাথে মনীষা কথাটি বললো।

"অরুণ যা করেছে তোমার আর পরীর ভালোর কথা ভেবে করেছে। "

"আমি তো এতোটা ভালো চাইনি। "

রবি আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। সে আর কথা না বাড়িয়ে মনীষাকে বিছানার এক ধারে শুয়ে পড়তে বললো। রবিও একই বিছানায় শুলো কিন্তু মনীষার সাথে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে।

রবি আর কি বলবে ভেবে পাচ্ছিলো না। সে আর কথা না বাড়িয়ে মনীষাকে বিছানার এক ধারে শুয়ে পড়তে বললো। রবিও একই বিছানায় শুলো কিন্তু মনীষার সাথে একটা নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে।

এভাবে কিছুদিন কেটে গেলো। মনীষা নিজের স্বপ্নেতেও রবিকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দিচ্ছিলো না। রবিও নিজের সীমা লংঘন করার সাহস দেখায়নি। অরুণ বুঝতে পারছিলো যে রবি ও মনীষার বিয়ে হলেও তারা এখনও পরস্পরের প্রতি দূরত্ব বজায় রেখে চলেছে, বিশেষ করে মনীষা। কিন্তু এভাবে চললে তো তারা সারাজীবনেও এক হবে না। অরুণকে তো নিজের মৃত্যুর আগে সবকিছু ঠিক করে দিয়ে যেতে হবে। তাই সে রবির সাথে এই নিয়ে কথা বলবে বলে ঠিক করলো। রবির সাথে সে একান্তে একদিন বসলো।

- "দেখ রবি , তোকে একটা সহজ কথা জিজ্ঞেস করছি , তোরা কি আমার কথা ভেবে একে অপরের থেকে দূরে সরে রয়েছিস ?

- "সত্যি বলতে মনীষাই তো এখনও মন থেকে আমাকে মেনে নিতে পারেনি। ও এখনো তোকেই নিজের স্বামী বলে ভাবে, এবং সারাজীবন হয়তো তাই ভাববে।"

- "তুই যদি ওর কাছাকাছি না যাস , ও কখনোই তোকে নিজের মনে জায়গা দেবে না। "

- "আমি সেটা কি করে করবো ! আর সর্বোপরি তুই আমাকে বলছি নিজের বউয়ের কাছাকাছি যেতে। "

- "রবি , ও এখন তোর স্ত্রী , আমার নয়। "

- "সেটা পরিস্থিতির কারণে অরুণ। তুই ওকে বাধ্য করেছিস আমাকে বিয়ে করতে। "

- "আমার কাছে যে অন্য কোনো রাস্তা খোলা ছিলোনা। "

- "জানি ভাই , তাই জন্যই তো তোকে সম্পূর্ণ দোষ দিতে পারছিনা। দোষটা আমাদের কপালের। "

- "এভাবে হাল ছেড়ে দিলে তো হবেনা ভাই। আমার নয় জীবনটা প্রায় শেষের দিকে , কিন্তু তোদের তো জীবন এখনো অনেকটা পড়ে রয়েছে। আর আমার বাচ্চাটার কি হবে ? জানি তুই ওর নতুন বাবা হিসেবে সব দায়িত্ব নিবি , কিন্তু ওর মা কে সবসময়ে এরকম উদাস মনে মনমরা হয়ে ঘুরতে দেখলে ওরও মনে তার ঋনাত্মক প্রভাব পড়বে। "

- "তাহলে তুই আমাকে কি করতে বলছিস বল। "

এবার আরো একবার বুকে পাথর রেখে অরুণ জবাব দিলো , "তুই আজকে রাতে ওর সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা কর। "

- "অরুণ , তুই এই কথাটা বলতে পারলি ! মনীষা তোকে কতো ভালোবাসে। যতোই আমাদের নাম কে ওয়াস্তে বিয়ে হয়ে যাক , ও এখনো শুধু তোকেই ভালোবাসে। আমি ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে কি করে এসব করবো !"

- "ওকে আমিও যে খুব ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই তো ওর ভালো চাই। আর তাই তোকে এসব করতে বলছি। যাতে ও নতুনভাবে তোর সাথে জীবনটা শুরু করতে পারে , সেটা মারা যাওয়ার আগে আমি দেখে যেতে চাই। "

- "কিন্তু ও আমাকে নিজের শরীর স্পর্শ করতে দেবে না। "

- "তুই একবার চেষ্টা তো কর ওর কাছে যাওয়ার। আমি জানি সাময়িকভাবে বাধা দিলেও পরে ও ঠিক তোকে আপন করে নেবে। শরীরের জ্বালাও তো একটা বড়ো জ্বালা। ও কতোদিন এভাবে উপবাসী হয়ে থাকবে আমার জন্য। কতোদিন হয়ে গ্যাছে ওর সেই সুন্দর কোমল শরীরে কোনো পুরুষের স্পর্শ পড়েনি। এটা তো ওর সৌন্দর্যের প্রতি চরম অন্যায় করা হচ্ছে। কারণ এতোদিন আমিই একমাত্র পূজারী ছিলাম এই সৌন্দর্য্যের। যে সুন্দর শরীরকে প্রতি রাতে আমার পুজো করা উচিত , তাকে আমি হেলায় ফেলে রেখেছি , নিজের শারীরিক অসুস্থতার দোহায়। এখন তুই সেই পূজারী হয়ে ওঠ রবি। তুই ওর ভবিষ্যৎ , আমি ধীরে ধীরে বাস্তব থেকে ওর স্মৃতিতে প্রবেশ করে যাবো। "

অরুণের কথাগুলো শুনে রবির রোম খাঁড়া হয়ে গেলো। অরুণ যৌনতাকে কি সুন্দরভাবে বর্ণনা করতে পারে , সত্যিই ! মৃত্যুপথযাত্রী মানুষ যখন জানতে পারে তার মৃত্যু আসন্ন , তখন হয়তো সে আপনা-আপনি কবি ও দার্শনিক হয়ে ওঠে। কারণ সে ততোদিনে সব জাগতিক মোহ-মায়া কাটিয়ে উঠেছে।

যাই হোক , অরুণের সাথে কথা বলে রবি ডিনার টা সেরে নিলো। অরুণ যথারীতি নিজের ঘরেই ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ডায়েট খাবার খেলো , যা মনীষা রান্না করে অরুণের জন্য নিয়ে এসছিল। রাতে মনীষা নিজের কাজবাজ সেরে ঘরে চলে গেলো ঘুমোতে। পাশের ঘরে অরুণের পাশে তাদের ছোট্ট মেয়ে পরী চুপটি ঘরে ঘুমিয়ে পড়েছিলো। ব্যালকনিতে রবি সিগারেটে টান মারছিলো এবং অরুণের বলা প্রতিটি কথাকে recall করছিলো।

সিগারেট শেষ করে রবি এবার মনীষার ঘরের দিকে যেতে লাগলো। অরুণের ঘরের দরজা খোলা ছিল। অরুণ বালিশে হেলান দিয়ে বই পড়ছিলো। তারও যে ঘুম আসছিলোনা আজ। সে যে নিজের বন্ধুকে একপ্রকার লাইসেন্স দিয়ে ফেলেছিলো তার স্ত্রীয়ের উপর শারীরিক অধিকার ফলানোর। আজকেই হয়তো তার মনীষা তার বন্ধুর হয়ে যাবে , চিরকালের জন্য।

সারাজীবনের জন্য সে তার স্ত্রীকে হারিয়ে ফেলবে। ভেবেই অরুণের বুকটা যেন কষ্টে ফেটে যাচ্ছিলো। কিন্তু তাকে তো এই কঠিন পদক্ষেপটা নিতেই হতো , তার পরিবারের মঙ্গলের জন্য। মনীষা যদি এভাবে রবির থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখে , দূরে দূরে পালায় , তাহলে হয়তো একদিন রবি বিরক্ত হয়ে তার বন্ধুর চাপিয়ে দেওয়া সংসারের দায়িত্ব থেকে মুক্ত হতে চাইবে। তখন মনীষা ও পরীর কি হবে ! একটি মেয়ে যখন তার স্বামীকে হারিয়ে ফেলে , এবং সেই মেয়ে যদি অপরূপ সৌন্দর্য্যের অধিকারী ও এক সন্তানের জননী হয় , তখন সেই বিধবা মেয়েটিকে পুরুষতান্ত্রিক সমাজ কেবল নিজের শিকার ভেবে হিংস্র হায়নার মতো শুধু শোষণ করতে চায় , দায়িত্ব কেউ নিতে চায়না। তাই অরুণের হাতে আর কোনো উপায় ছিলোনা , নিজের স্ত্রীকে নিজের বিশ্বস্ত বন্ধুর হাতে তুলে দেওয়া ছাড়া। রবির কাছে মনীষা ও তার মেয়ে পরী অন্তত সুরক্ষিত ও নিরাপদ থাকবে।

রবি মনীষার ঘরে যাওয়ার আগে একবার অরুণের ঘরের দিকে তাকালো। দেখলো অরুণ চাতক পাখির মতো ওর দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রবি প্রশ্নভরা মুখ করে অরুণের দিকে তাকালো , যেন সে জানতে চাইছে অরুণের সত্যি সম্মতি রয়েছে কিনা। অরুণও চোখের ইশারায় তাকে ঘরে যেতে বললো। সম্মতি দিলো নিজের স্ত্রীকে আপন করে নেওয়ার।,,,,,,,to be continued,,,,,,,
 
পর্ব ৪

অরুণের অন্তিম সম্মতি পেয়ে রবি প্রবেশ করলো সেই ঘরে যেই ঘরে মনীষা শায়িত ছিল। রবির বুক ধড়পড় করছিলো। কিভাবে শুরু করবে সে বুঝে পাচ্ছিলো না। মনীষা যথারীতি বিছানার এক ধারে এক পাশ ফিরে শুয়েছিল। রবি বিছানার অপর ধারে এসে উঠলো। মনীষা রবির দিকে পিঠ করে শুয়েছিল। যবে থেকে ওদের বিয়ে হয়েছে তবে থেকে ওরা এভাবেই একে অপরের থেকে মুখ ঘুরিয়ে শোয়ে। আর মাঝখানে থাকে বিস্তর ফাঁকা জায়গা।
মনীষা যে এই বিয়েটা কে বিয়ে বলেই মানে না। সে যা করেছে তা স্বামীর কথা রাখতে , তার স্বামীর দিকটা বিচার বিবেচনা করে। তার স্বামী অর্থাৎ অরুণ রায়। সে এখনো অরুণকেই তার স্বামী মনে করে। আইনত ভাবে সে রবি সেন কে বিয়ে করে এখন মনীষা সেন হয়ে গেলেও মনে প্রাণে সে এখনও মিসেস রায়ই রয়েছে , আর সেটাই খুব স্বাভাবিক।
অরুণের কথা মেনে আজ রবি ঠিক করেছিল মনীষা ছোঁবে। তাই লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে সে হাত বাড়ালো নিজের বন্ধু অরুণের প্রাক্তন স্ত্রীয়ের দিকে। আলতো করে মনীষার কাঁধে হাত রাখলো। সঙ্গে সঙ্গে রবির শরীরে যেন ৪৪০ ভোল্টের কারেন্ট দৌড়ে গেলো। মনীষা তখন ঘুমিয়ে পড়েছিল , তাই সেই আলতো স্পর্শ মনীষার চেতনায় আঘাত করলো না।
রবি ধীরে ধীরে মনীষার কাছে এলো। বিছানার মাঝখানের সে বিস্তর ফাঁকা জায়গা কখন যে ভরাট হয়েগেলো তা মনীষা টের পেলো না। রবি এখন মনীষার ঠিক পিছনে ছিল , অর্ধ হেলান দেওয়া অবস্থায়। রবির বাম হস্ত মনীষার ঘাড়েই রাখা ছিল। সেই স্পর্শকে রবি আরেকটু মজবুত করলো , অর্থাৎ আরেকটু সাহস যুগিয়ে মনীষাকে শক্ত করে চেপে ধরলো। এখনো মনীষার ঘুম ভাঙেনি।
এবার ধীরে ধীরে রবি নিজের ঠোঁটটা নামিয়ে আনলো মনীষার কাঁধের কাছে। হালকা একটা চুমু দিলো প্রথমে। মনীষা একটু নেড়ে চেড়ে উঠলো তবে সেটা ঘুমের ঘোরে। আস্তে আস্তে রবি সাপের মতো মনীষাকে নিজের বাম হস্ত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। রবির সাহস ধাবমান গতিতে বাড়ছিলো।
মনীষার চুল একটু এলোমেলো হয়েছিল। ঘুমোনোর সময়ে সবারই হয়ে থাকে , বিশেষ করে যাদের ঘন লম্বা চুল থাকে মনীষার মতো। রবি মনীষার কাঁধের কাছে থাকা চুল গুলো ডান হাত দিয়ে গুছিয়ে একপাশে সড়িয়ে দিলো , যাতে সে মনীষার কাঁধে নিজের ঠোঁটের অবাধ বিচরণ করাতে পারে।
প্রথমে রবি মনীষার ঘাড়ের কাছে গিয়ে তার শরীরের ঘ্রান নাক দিয়ে আহরণ করলো। সেই ঘ্রানে নেশাগ্রস্ত হয়ে রবি কিছুক্ষণ মনীষার কাঁধের জায়গাটি নাক দিয়ে ঘষলো। এরপর ব্লাউজের ওপরের দিকে মনীষার শরীরের ফাঁকা জায়গা পেয়ে রবি কাঁধের উপরে ছোট ছোট চুমু খেতে লাগলো। হাত দিয়ে ব্লাউজের কাপড়কে অল্প অল্প টেনে নামিয়ে শরীরের ফাঁকা জায়গা খুঁজে এদিক ওদিক চুমু খেতে লাগলো।
বাঙালি মদ্ধবিত্ত বাড়ির বউয়েরা সাধারণত ইউ শেপ ব্লাউজ পড়ে থাকে , যার সামনে ও পিঠ উভয় ইউএর মতো কাটা থাকে। মনীষাও সেরকম ব্লাউজ পড়তো। আর মনীষা শুয়েছিল ডান পাশ ফিরে। তাই রবি মনীষার চুলগুলোকে সরিয়ে ওর পিঠে ক্রমাগত চুমু খেতে শুরু করলো।
রবি আরো যেন উত্তেজিত হয়ে পড়লো। সে বাম হাত দিয়ে এক পাশে মনীষাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো , অপর হাত দিয়ে মনীষার চুল সড়িয়ে মনীষার পিঠে , কাঁধে , ঘাড়ে অবাধ চুম্বনের বৃষ্টি করাচ্ছিলো। এবার রবির বাম হস্তবন্ধনীর জোড় বাড়তে লাগলো। রবি মনীষাকে নিজের বাম হাত দিয়ে আরো চেপে জড়িয়ে ধরলো।
মনীষার গভীর ঘুমের ঘোর কাটতে শুরু করেছিল। কিন্তু এখনও খেলা কিছুটা বাকি ছিল। কারণ মনীষার মন-মস্তিস্ক তাকে বিপথে চালিত করছিলো। তার মনে হচ্ছিলো সে হয়তো স্বপ্ন দেখছে , আর স্বপ্নে সে অরুণের সাথে এসব করছে, মানে অরুণ তাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে এই ক্রিয়াকলাপ অরুণের বন্ধু তথা তার সদ্য বিবাহীত সো কল্ড নতুন স্বামী রবি করছিলো।
রবি চুমু খেতে খেতে এবার পিঠ থেকে কাঁধ হয়ে মনীষার গলায় নিজের মুখটা নামিয়ে এনেছিলো। তার সাহস এতোটাই বেড়ে গেছিলো যে সে এবার মনীষার বক্ষের কোমল দুধ যুগলের দিকে হাত বাড়াতে লাগলো। রবি এবার ফুল ফর্মে চলে এসছিল। ওর সাময়িক ভয়টা কেটে গেছিলো। মনীষাও তার অবচেতনে অরুণকে নিজের সঙ্গী ভেবে ঘুমের ঘোরে গোঙাচ্ছিল।
মনীষার "ওঃহহহ আঃহ্হ্হ " গোঙানি শুনে রবির সাহস ও উত্তেজনা দুটোই আকাশকুসুম কোনো পথে পাড়ি দিচ্ছিলো। মনীষার শরীরে তার প্রতিটা চুম্বন তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছিলো। সাথে চলছিলো বাম হস্তের কারুকার্য। বেশ নিপুণভাবে সে নিজের হাত প্রথমে মনীষার খোলা পেটে তারপর ব্লাউজের উপর থেকে দুধ যুগলের চারিদিকে ঘোরাতে লাগলো।
এভাবে কিছুক্ষণ চলার পর রবি মনীষাকে টেনে সোজা করে শুইয়ে দিলো। তারপর রবি ওর উপর চড়তেই যাবে কি তখুনি মনীষার ঘুম ভেঙে গেলো। আসলে রবির হ্যাঁচকা টানেই মনীষা স্বপ্ন থেকে একেবারে বাস্তবের মাটিতে এসে পড়েছিল বা বলা ভালো বাস্তবের অন্তরঙ্গতায়। সে চোখ খুলে যখন অরুণের জায়গায় রবিকে দেখলো , তখন তার চেতনা ফিরে এলো। সে বুঝলো এতোক্ষণ স্বপ্নে সে শুধু মরীচিকার পিছনে দৌড়োচ্ছিলো। সত্যিই তো , অরুণের পক্ষে তো এখন এসব করা আর সম্ভব নয়। অরুণ তার স্বপ্নে সাজানো কল্পনা ছিল , বাস্তবে তো যা করার তা রবি করছিলো।
তার শরীরের উপর চড়ে বসা মানুষটা যে রবি সেটা বোঝা মাত্রই মনীষা রবিকে নিজের উপর থেকে ধাক্কা মেরে ঠেলে সরিয়ে দিলো। দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বিছানা থেকে উঠে পড়লো। চিৎকার করে বলে উঠলো , "রবি , তুমিই !"
বলেই মনীষা জোড়ে জোড়ে হাঁপাতে লাগলো। শাড়ির আঁচল ঠিক করে নিয়ে নিজের বক্ষ যুগলকে ঢাকার চেষ্টা করলো। রবির টেপাটেপিতে তার দুধ দুটো ব্লাউজ থেকে প্রায় বেড়িয়ে আসছিলো। মনীষা হাত দিয়ে সেটাকে চেপে ধরলো, নিজের সম্মানার্থে। মনীষার এই আতংকিত রূপ দেখে রবিও ভয় পেয়ে গেছিলো।
ক্যান্সার ধরা পড়ার পর থেকে চিন্তায় অরুণের রাতে ঘুম হতো না। মৃত্যুভয়ের চেয়েও বড়ো ভয় ছিল তার মনীষা ও পরীর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে। সেই কারণে ডাক্তার তাকে ক্যান্সার সম্পর্কিত বাকি সব ওষুধের সাথে রাতে দরকার মতো স্বল্প ডোজের ঘুমের ওষুধও নিতে পরামর্শ দিয়েছিলো। তাই ভাগ্গিস অরুণ প্রতিদিনের ন্যায় ডাক্তারের প্রেসক্রাইব করা ঘুমের ওষুধ খেয়ে রাতে ঘুমোতে গেছিলো , নাহলে মনীষার চিৎকারে হয়তো অরুণের ঘুম ভেঙে যেত , এবং সে এসে কি দেখতো ? তার ঘুম তো আর মেয়ে পরীর মতো অতো গাঢ় নয়।
"আস্তে মনীষা , অরুণ আর পরী জেগে যাবে " , রবি অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে মনীষাকে যেকোনো মতে শান্ত করার চেষ্টা করলো। কিন্তু মনীষা রবির একটাও কথা কানে তুলতে প্রস্তুত ছিলোনা। সে অরুণ ও পরীর ঘুমের খাতিরে নিজের গলার আওয়াজ কম করলেও রবিকে তুলোধোনা করতে বিরত থাকলো না।
- "ছিঃ রবি , ছিঃ। অরুণের মতো আমিও তোমাকে একজন ভালো বন্ধু ভেবেছিলাম। তুমি সেই বন্ধুত্বের এই দাম দিলে ! তোমাকে বিশ্বাস করেছিলাম , তাই আমি এই পুতুল বিয়েতে রাজি হয়েছিলাম। তুমি খুব ভালো করেই জানো আমি এখনো অরুণের , এবং সারাজীবন শুধু অরুণেরই থাকবো। তোমাকে সব আগেই পরিস্কার করে জানিয়ে দিয়েছিলাম, যে তুমি আমার কাছ থেকে কিছু এক্সপেক্ট করোনা। অরুণের কথা রাখতে আমি তোমার সাথে এই ঘরটা শেয়ার করতে রাজি হয়েছিলাম। বিশ্বাস ছিল যে তুমি আমার এই পরিস্থিতির ফায়দা তুলবে না। কিন্তু আজ সেই বিশ্বাস তুমি নিজের হাতে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিলে রবি। এটা তোমার কাছ থেকে আমি আশা করিনি। "
- "মনীষা , একবার আমার কথাটা শোনো , আমার সত্যিই কোনো খারাপ উদ্দেশ্য ছিলোনা। "
- "কি শোনার বাকি আছে আর রবি ? তুমি আমাকে না জিজ্ঞেস করে আমাকে স্পর্শ করেছো। হতে পারে আইনত আমি এখন তোমার স্ত্রী, কিন্তু তুমি খুব ভালোমতো জানো কোন পরিস্থিতিতে আমি নিজের স্বামীকে ছেড়ে তোমার সাথে এই বিয়েটা করেছি বা বলতে পারো বাধ্য হয়েছি বিয়েটা করতে। "
- "আমি সব জানি মনীষা , সব বুঝি। "
"না , তুমি বোঝোনা , কিচ্ছু বোঝোনা। বুঝলে তুমি এই কান্ডটা আজ ঘটাতে না ", রবিকে থামিয়ে মনীষা বললো , এবং অঝোরে কেঁদে ফেললো। রবি বুঝলো এখন মনীষার মানসিক স্থিতি ঠিক নেই , তাকে যতোই বোঝানো হোক , সে বুঝবে না এখন। তাই কথা বাড়িয়ে আর লাভ নেই। সুতরাং রবি সবশেষে বললো, "ঠিক আছে তোমার যদি তাই মনে হয় , তাহলে আমি আর আজকে কিছু বলবো না। সময় আসলে তুমি ঠিক বুঝবে আমাকে। ততোদিন আমি অপেক্ষা করে থাকবো , তোমার জন্য। "
এই বলে রবি নিজের বালিশ নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো। বেড়িয়ে গিয়ে ডাইনিং রুমের সোফায় বালিশ পেতে শুলো। মনীষা ঘরে একা পড়ে রইলো। চিন্তায় মগ্ন অথচ বিভ্রান্ত। কিছুক্ষণ পর মনীষা নিজের শাড়িটা কে ঠিক করে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো , যে বিছানায় রবি কিছু সময় আগে তাকে চুম্বন দিতে গিয়ে তার শাড়িটা কে এলোমেলো করে দিয়েছিলো। মনীষা বিছানায় শুয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে আকাশকুসুম কিসব ভাবছিলো যেন। ভাবতে ভাবতে তার চোখ আবার লেগে এলো। সে পাড়ি দিলো ফের ঘুমের দেশে। সেদিনের মতো গল্পের ইতি টানলো সেই রাত।
পরের দিন জাগতিক নিয়মে সূর্যোদয় হলো। সবার ঘুম ভাঙলো , কিন্তু রবির একটু আগেই ভেঙেছিল। কারণ সে বাকি রাত সোফায় যেমন তেমন করে শুয়েছিল , তাই আরামের ঘুম সে পায়নি। সে উঠেই নিজের বালিশটা মনীষার ঘরে রেখে এলো যাতে অরুণ কিছু টের না পায় , কি হয়েছিল গত রাতে। অরুণ অসুস্থ , অরুণের উপর এই সাংসারিক সমস্যা সে চাপাতে চাইছিলো না।
অরুণকে এসব বললে অরুণ মনীষার সাথে এই নিয়ে কথা বলতো , বন্ধুর খাতিরে মনীষার উপর অনিচ্ছাকৃত চাপ সৃষ্টি করতো। এইসব রবি চায়না হতে দিতে। তাই রবি চুপচাপ মনীষার ঘরে বালিশ রেখে এসে নিজেই ঘরের সব কাজ করতে লাগলো। সে ভাবলো মনীষা হয়তো কাল ঠিকমতো ঘুমোতে পারেনি। সারারাত হয়তো মেয়েটা কেঁদেছে , তার জন্য রবি নিজেকেই দোষী মনে করে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছিল নিজেকে।
আর সেই জন্যই মনীষার একটু রেস্টের প্রয়োজন। সে যদি আজ একটু দেরীতে ওঠেও তাতে কোনো সমস্যা নেই, রবি নিজে মনীষার হয়ে ঘরের কাজ একটু এগিয়ে রাখবে বলে ঠিক করলো। আসলে মনে মনে রবি কবে ও কখন যে মনীষাকে ভালোবেসে ফেলেছে সেটা হয়তো ও নিজেই জানে না। সে মনীষাকে সত্যি সত্যি নিজের স্ত্রী বলে মেনে নিতে শুরু করেছিলো।
মনীষা ঘুম থেকে উঠে দেখলো পাশে রবির বালিশ রয়েছে , রবি নেই। সে জানে গত রাতে রবি ডাইনিং হলের সোফায় শুয়েছিল। এখন হয়তো উঠে পড়েছে। ঘর থেকে বেড়িয়ে দেখলো রবি বাড়ির অর্ধেক কাজ করে দিয়েছে। রান্নাঘর পরিষ্কার , ওয়াটার পিউরিফায়ার থেকে জল বোতলে ভরে রাখা , পরীর দুধ গরম করে দেওয়া ইত্যাদি সব রবি করে দিয়েছে।
দুজন একে অপরকে দেখলো , কিন্তু রবি মুখ ফিরিয়ে নিলো। রবিকে দেখে মনীষার একটু খারাপই লাগলো তখন। সে ভাবলো সে কি গতরাতে একটু বেশিই রিএক্ট করে ফেলেছে? রবি তো একটা পুরুষমানুষ , তার শারীরিক একটা চাহিদা থাকতেই পারে। যখন সে রবিকে তিরস্কার করছিলো তখন রবি মুখ বুজে সব সহ্য করে নিলো। সে চাইলে জোর জবরদস্তি করতে পারতো , হুমকি দিতে পারতো। মনীষা মানুক বা না মানুক , রবিই এখন তার স্বামী , তাই সে চাইলেই তখন স্বামীর অধিকার ফলাতে পারতো। ভারতবর্ষে ম্যারিটাল রেপ বলে আইনত কোনো নির্দেশিকা বা প্রবিধান নেই। রবি চাইলেই সেটার সুযোগ নিতে পারতো , কাল কেন তার আগেও নিতে পারতো। কিন্তু রবি সেটা করেনি।
মনীষার তখন রিয়েলাইজেশান হলো যে রবি গত রাতে যা করেছে তা নিছকই শারীরিক টানে। একজন পুরুষ যখন প্রতিরাতে একটি সমবয়সী মেয়ের সাথে এক ঘরে রাত্রি যাপন করে তখন তাদের শোয়ার মাঝে যতই বিস্তর ফাঁকা জায়গা থাকুক না কেন , শারীরিক আকর্ষণ এর বন্ধন ধীরে ধীরে স্থাপন হতে শুরু করে।
মনীষা এখন খুব লজ্জিত বোধ করছিলো। সে বুঝতে পারছিলো না কিভাবে রবির মুখোমুখি হয়ে রবির সাথে বিষয়টা মিটিয়ে নেবে। রবিও কোনো ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছিলো না মনীষার সাথে কথা বলার। অরুণ ততক্ষণে ঘুম থেকে উঠে পড়েছিল। ঘুম থেকে উঠেই অরুণ রবিকে খুঁজছিলো এটা জানতে যে গতরাতে কি ঘটলো ? অরুণের কথামতো রবি কি মনীষার কাছাকাছি গেছিলো ? মনীষা রবিকে কতোটা সীমা পর্যন্ত অ্যালাও করলো ? এইসব প্রশ্ন অরুণের মাথায় ঘুড়পাক খাচ্ছিলো।
অরুণ কাল ইচ্ছে করে এক ডোজ বেশি ঘুমের ওষুধ খেয়েছিলো। কারণ সে তার মনীষাকে অন্য কারোর সাথে নিকট অবস্থায় দেখতে বা কল্পনা করতে পারবে না। তাই অরুণ চেয়েছিলো একটা সাউন্ড স্লীপ ঘুম , যাতে তার কৌতূহল তাকে মনীষা ও রবির ঘর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়ে তাকে তাদের নিকট ঘনিষ্ট মুহূর্তের সাক্ষী করতে না পারে। তা যে অরুণের কাছে খুব যন্ত্রণাদায়ক হতো।
অরুণ রবির কাছে শুধু জানতে চাইছিলো যে তারা কাছাকাছি এসছে কিনা ? সে কোনো পার্ভার্ট পুরুষের মতো ইন ডিটেলস জানতে চাইছিলো না যে কিভাবে কেমন করে তার বন্ধু তার স্ত্রীকে মর্দন করেছে। সে তো পরিস্থিতির শিকার হয়েই নিজের স্ত্রীকে নিজের বন্ধুর হাতে তুলে দিয়েছে, কোনোরকম কোনো যৌন ফ্যান্টাসির জন্য নয়।
অরুণ যখন রবিকে নিজের ঘরে নিয়ে এসে কথা বলতে লাগলো , ঠিক তখুনি মনীষা আসছিলো অরুণের ঘরে অরুণের খাবার নিয়ে এবং মেয়ে পরীকে ঘুম থেকে তুলতে। তখুনি সে বাইরে থেকে অরুণ ও রবির সব কথোপকথন শুনতে পায়। কি ছিল সেই কথোপকথন ? শুনুন .......
- "অরুণ , তুই হঠাৎ আমাকে এভাবে নিজের ঘরে নিয়ে এলি কেন ? তোর শরীর ঠিক আছে তো ভাই ?"
- "আমি একদম ঠিক আছি। আমি শুধু তোর কাছ থেকে একটা কথা জানতে চাই। ...."
- "কি কথা ?"
- "তুই শুধু আমাকে এইটুকু বল , কালকে আমি যা বলেছিলাম , তা তুই করেছিস ?"
অরুণের কথা রবি বুঝতে পেরে রবি চুপ করে গেলো। কোনো উত্তর দিলো না।
- "কি হলো , চুপ করে গেলি কেন ? বল। ...."
- "তুই এসব কেন জানতে চাস ? জেনে কি করবি ? কেন আমাকে এসব করতে বলছিস বলতো ? তোকে কতোবার বোঝাবো , ও শুধু তোকেই ভালোবাসে , ও শুধু তোর। তুই ওর মন এইভাবে বদলাতে পারবি না। আর আমার কথা বলছিস , আমি তো তোকে কথা দিয়েছি ভাই , সারাজীবন মনীষা আর পরীর খেয়াল রাখবো , কখনো ওদের হাত ছাড়বো না। কিন্তু ওরা সবসময়ে তোরই থাকবে , মনীষা তোর স্ত্রী আর পরী তোর মেয়ে হয়ে , তাই তুই এই পৃথিবীতে থাক বা নাই থাক। "
- "কিন্তু তাও আমি জানতে চাই , কাল তোদের মধ্যে কি হলো ? বা আদেও কিছু হলো কিনা ?"
- "কেন জানতে চাস ?"
- "জানিনা কেন , তবে তবুও জানতে চাই। "
- "দেখ , কাল আমি তোর কথা মতো মনীষার কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম , কিন্তু মনীষা আমাকে নিজের কাছে ঘেঁষতে দ্যায়নি। ব্যাস এইটুকু শুধু জেনে রাখ যে আমার আর মনীষার মধ্যে কাল কিচ্ছু হয়নি। "
এইসব কথা মনীষা বাইরে থেকে শুনছিলো। ওর মাথায় যেন আকাশ থেকে বাজ পড়লো , যখন সে জানতে পারলো তার অরুণই রবিকে বলেছিলো তার কাছাকাছি যেতে। সে খামোখা কাল রবিকে ভুল বুঝেছিলো।
to be continued,..........
 
পর্ব - 0৫

মনীষা তখন চুপচাপ সেখান থেকে ফিরে রান্নাঘরে চলে এলো। মনে মনে সে আত্মগ্লানিতে ভুগছিলো। সে যে রবিকে ভুল বুঝে তাকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছিলো। আসল কালপ্রিট তো অরুণ ছিল যে রবিকে একপ্রকার বাধ্য করেছিল এসব করতে।

যাই হোক, মনীষা তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ওদের কথোপকথন শেষ হবে , কখন রবি অরুণের ঘর থেকে বেড়োবে , তারপর মনীষা অরুণকে খাবার দিতে যাবে। অরুণ মনীষাকে নিয়ে যাই ভাবুক না কেন , মনীষা তো শুধু তাকেই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তাই কষ্ট পেলেও , খারাপ লাগলেও , মনীষার নিজের কর্তব্য থেকে কখনও বিচ্যুতি ঘটবে না।

অরুণের সাথে কথা শেষ করে রবি ঘর থেকে বেড়োনোর পর , মনীষা গেলো খাবার নিয়ে অরুণের কাছে। মনীষাকে দেখে অরুণের অদ্ভুত এক তৃপ্তি ও গর্ব বোধ হলো। কারণ সে রবির কাছ থেকে শুনেছে যে মনীষা রবিকে তার কাছেই ঘেঁষতে দ্যায়নি। সে প্রমাণ করেছে তার স্বামী শয্যাশায়ী হওয়া সত্ত্বেও সে তার স্বামীর প্রতি কতোটা সৎ , প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অরুণের তখন কেন জানিনা মনে হলো যে সে এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতো। যেখানে রবি তাকে কথা দিয়েছে অরুণের মৃত্যুর পরেও সে অরুণের পরিবারের যথাযত খেয়াল রাখবে , যখন তার স্ত্রী কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে ব্যাতিত অন্য কোনো পরপুরুষকে নিজের করে নিতে পারবে না , তখন এভাবে সেই পতিব্রতা স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে তার অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে দেওয়ার এই পুতুল খেলার মতো নাটকটা না করলেও পারতো সে।

এটা তো ছিল অরুণের পরিবর্তিত মনোভাব। কিন্তু ততক্ষণে মনীষার মনোভাব অরুণের প্রতি একটু হলেও পাল্টে গেছিলো। মনীষার মনে কিছুটা হলেও অরুণের প্রতি অশ্রদ্ধা জেগে উঠেছিল। কারণ সে জানতে পেরেছিলো, যে স্বামীকে সে এতোটা ভালোবাসে সেই স্বামী তার বন্ধুকে কাল রাতে তার কাছে পাঠিয়েছিল তার সতীত্ব নষ্ট করতে।

মনীষা অরুণের সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওকে খাবার দিয়ে , পরীকে ঘুম থেকে তুলতে লাগলো। অরুণ ভালোবেসে মনীষাকে জিজ্ঞেস করলো , "তুমি খেয়েছো ?"

মনীষা কোনো উত্তর দিলো না। অরুণ ভাবলো কালকে রবির দুঃসাহসিক আচরণে মনীষা হয়তো দুঃখ পেয়েছে, তাই সে চুপচাপ রয়েছে । কিন্তু রবিরও তো এতে কোনো দোষ নেই, সেটা অরুণ জানতো। তাকে তো অরুণই বলেছিল এই পদক্ষেপটি নিতে। অরুণ আবার চেষ্টা করলো মনীষার সাথে কথা বলার। সে মনীষাকে বারবার পরীকে ঘুম থেকে তোলার জন্য ডাকতে দেখে বললো , "থাক না , ওকে একটু ঘুমোতে দাও। এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি করবে মেয়েটা ?"

এবার মনীষা না পারতে গম্ভীর ভাবে জবাব দিলো , "ওর খাবার তৈরী হয়েগেছে। রবি ওর দুধ আগে থেকে গরম করে রেখেছে। "

মুখ ফসকে মনীষা রবির কথা তুলে ফেললো অরুণের সামনে। অরুণের ভেবে ভালো লাগলো যে রবি তার পরিবারের জন্য এতো কিছু করছে। সে মনীষার মতো একজন সতীলক্ষী বউ , ও রবির মতো পরোপকারী বন্ধু পেয়েছে। সত্যি এবার সে নিশ্চিন্ত মনে মরতে পারবে। অরুণ মনে মনে ভাবলো বেচারা রবি হয়তো কালকের রাতের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মনীষাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করছে।

এসব ভাবতে ভাবতে অরুণ দেখলো পরী ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো , "গুড মর্নিং বাবা ", তারপর মায়ের দিকে তাকিয়েও গুড মর্নিং বললো। পরীর তো শিশু মন , সে এখনো সংসারের জাঁতাকলে পড়েনি। তাই সে এখনো মনীষা ও অরুণকেই নিজের অভিভাবক বলে মনে করে , আর রবি কে আংকেল। সে জানেনা , সরকারিভাবে তার বাবা পরিবর্তিত হয়েছে। তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গ্যাছে। তার জন্মদাতা বাবাই তার মায়ের বিয়ে তার রবি আংকেলের সাথে দিয়েছে। রবি আংকেলই এখন তার লিগ্যাল বাবা। পরী ছোট বলে পরীকে এসব ব্যাপারে অবগত করা হয়নি। সে জানেও না তার জন্মদাতা বাবা আর বেশিদিন তার সাথে থাকবে না। সে শুধু জানে তার বাবার একটু শরীর খারাপ হয়েছে , আর সেই জন্য রবি আংকেল এখন তাদের বাড়িতে এসে থাকে।
যখন তার বাবা তার মা কে একা ফেলে তাকে নিয়ে পাশের ঘরে শিফট করলো, তখন সে সরল মনে জানতে চেয়েছিলো এর কারণ। তখন তার বাবা বলেছিলো যে রবি আংকেল তাদের অতিথি তাই রবি আংকেল কে বড়ো ঘরটা ছেড়ে দেওয়া তাদের উচিত। মা তাহলে কেন তাদের সাথে এলো না ? জবাবে বাবা উত্তর দিয়েছিলো , নতুন জায়গায় রবি আংকেল এর একা একা ঘুমোতে ভয় করে। তাই মা রবি আংকেল কে ঘুম পাড়ানোর জন্য রবি আংকেলের সাথে থাকে।

আর পরী তো খুব স্ট্রং এন্ড সাহসী মেয়ে, তাই পরীর মাকে দরকার পড়েনা , সে নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া তার বাবা তো আছে। এই ভাবে সেই শিশু মনকে ভুলিয়েছিলো অরুণ , মনীষা ও রবির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। এছাড়াও যেদিন তার বাবা তার মায়ের সাথে রবি আংকেল এর বিয়ে দিয়েছিলো সেদিনও এরকমই কোনো এক বাহানা বানিয়ে পরীর মন ভুলিয়ে ছিল পরীর বায়োলজিক্যাল বাবা অরুণ।

অরুণ ও মনীষা দুজনেই পরীকে আদর করে গুড মর্নিং বললো। তারপর মনীষা অরুণের সাথে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে পরীকে নিয়ে চলে গেলো , ওর মুখ হাত ধুইয়ে ওকে খাওয়াতে। অরুণ ভাবছিলো মনীষার মুড অফ হয়েছে রবির জন্য। কিন্তু মনীষা তো রবিকে তখুনি ক্ষমা করে দিয়েছিলো যখন সে ভাগ্যবশত জানতে পারে এসবের পিছনে আসল মাস্টারমাইন্ডটা কে ছিল। এখন তার সব রাগ ছিল অরুণের প্রতি, সেটা অরুণ জানতো না।

এভাবে দেখতে দেখতে দিনটা কেটে গেলো। রাত হলো। রাতে খাওয়ার পর অরুণ নিজের মেয়েকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো ঘুম পাড়াতে। মনীষা নিজের ঘরে ছিল। রবিকে মনীষার ঘরে ঢুকতে দেখে অরুণের বুকটা কিরকম চিঁন চিঁন করে উঠলো। সে মনে মনে ভাবছিলো এবার এই খেলাটা তাকে বন্ধ করতে হবে, যে খেলাটা সে নিজেই শুরু করেছিল, মনীষা ও রবির বিয়ে বিয়ে নামক খেলা। কিন্তু এখন অনেক দেরী হয়ে যায়নি তো ? নাকি এখনো হাতে সময় রয়েছে ? সেটা সময়ই বলবে।
to be continued.......

মনীষা তখন চুপচাপ সেখান থেকে ফিরে রান্নাঘরে চলে এলো। মনে মনে সে আত্মগ্লানিতে ভুগছিলো। সে যে রবিকে ভুল বুঝে তাকে অনেক কথা শুনিয়ে ফেলেছিলো। আসল কালপ্রিট তো অরুণ ছিল যে রবিকে একপ্রকার বাধ্য করেছিল এসব করতে।

যাই হোক, মনীষা তারপর অপেক্ষা করতে লাগলো কখন ওদের কথোপকথন শেষ হবে , কখন রবি অরুণের ঘর থেকে বেড়োবে , তারপর মনীষা অরুণকে খাবার দিতে যাবে। অরুণ মনীষাকে নিয়ে যাই ভাবুক না কেন , মনীষা তো শুধু তাকেই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তাই কষ্ট পেলেও , খারাপ লাগলেও , মনীষার নিজের কর্তব্য থেকে কখনও বিচ্যুতি ঘটবে না।

অরুণের সাথে কথা শেষ করে রবি ঘর থেকে বেড়োনোর পর , মনীষা গেলো খাবার নিয়ে অরুণের কাছে। মনীষাকে দেখে অরুণের অদ্ভুত এক তৃপ্তি ও গর্ব বোধ হলো। কারণ সে রবির কাছ থেকে শুনেছে যে মনীষা রবিকে তার কাছেই ঘেঁষতে দ্যায়নি। সে প্রমাণ করেছে তার স্বামী শয্যাশায়ী হওয়া সত্ত্বেও সে তার স্বামীর প্রতি কতোটা সৎ , প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অরুণের তখন কেন জানিনা মনে হলো যে সে এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতো। যেখানে রবি তাকে কথা দিয়েছে অরুণের মৃত্যুর পরেও সে অরুণের পরিবারের যথাযত খেয়াল রাখবে , যখন তার স্ত্রী কোনো পরিস্থিতিতেই তাকে ব্যাতিত অন্য কোনো পরপুরুষকে নিজের করে নিতে পারবে না , তখন এভাবে সেই পতিব্রতা স্ত্রীকে ডিভোর্স দিয়ে তার অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে দেওয়ার এই পুতুল খেলার মতো নাটকটা না করলেও পারতো সে।

এটা তো ছিল অরুণের পরিবর্তিত মনোভাব। কিন্তু ততক্ষণে মনীষার মনোভাব অরুণের প্রতি একটু হলেও পাল্টে গেছিলো। মনীষার মনে কিছুটা হলেও অরুণের প্রতি অশ্রদ্ধা জেগে উঠেছিল। কারণ সে জানতে পেরেছিলো, যে স্বামীকে সে এতোটা ভালোবাসে সেই স্বামী তার বন্ধুকে কাল রাতে তার কাছে পাঠিয়েছিল তার সতীত্ব নষ্ট করতে।

মনীষা অরুণের সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওকে খাবার দিয়ে , পরীকে ঘুম থেকে তুলতে লাগলো। অরুণ ভালোবেসে মনীষাকে জিজ্ঞেস করলো , "তুমি খেয়েছো ?"

মনীষা কোনো উত্তর দিলো না। অরুণ ভাবলো কালকে রবির দুঃসাহসিক আচরণে মনীষা হয়তো দুঃখ পেয়েছে, তাই সে চুপচাপ রয়েছে । কিন্তু রবিরও তো এতে কোনো দোষ নেই, সেটা অরুণ জানতো। তাকে তো অরুণই বলেছিল এই পদক্ষেপটি নিতে। অরুণ আবার চেষ্টা করলো মনীষার সাথে কথা বলার। সে মনীষাকে বারবার পরীকে ঘুম থেকে তোলার জন্য ডাকতে দেখে বললো , "থাক না , ওকে একটু ঘুমোতে দাও। এতো তাড়াতাড়ি উঠে কি করবে মেয়েটা ?"

এবার মনীষা না পারতে গম্ভীর ভাবে জবাব দিলো , "ওর খাবার তৈরী হয়েগেছে। রবি ওর দুধ আগে থেকে গরম করে রেখেছে। "

মুখ ফসকে মনীষা রবির কথা তুলে ফেললো অরুণের সামনে। অরুণের ভেবে ভালো লাগলো যে রবি তার পরিবারের জন্য এতো কিছু করছে। সে মনীষার মতো একজন সতীলক্ষী বউ , ও রবির মতো পরোপকারী বন্ধু পেয়েছে। সত্যি এবার সে নিশ্চিন্ত মনে মরতে পারবে। অরুণ মনে মনে ভাবলো বেচারা রবি হয়তো কালকের রাতের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য মনীষাকে বাড়ির কাজে সাহায্য করছে।

এসব ভাবতে ভাবতে অরুণ দেখলো পরী ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো , "গুড মর্নিং বাবা ", তারপর মায়ের দিকে তাকিয়েও গুড মর্নিং বললো। পরীর তো শিশু মন , সে এখনো সংসারের জাঁতাকলে পড়েনি। তাই সে এখনো মনীষা ও অরুণকেই নিজের অভিভাবক বলে মনে করে , আর রবি কে আংকেল। সে জানেনা , সরকারিভাবে তার বাবা পরিবর্তিত হয়েছে। তার মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গ্যাছে। তার জন্মদাতা বাবাই তার মায়ের বিয়ে তার রবি আংকেলের সাথে দিয়েছে। রবি আংকেলই এখন তার লিগ্যাল বাবা। পরী ছোট বলে পরীকে এসব ব্যাপারে অবগত করা হয়নি। সে জানেও না তার জন্মদাতা বাবা আর বেশিদিন তার সাথে থাকবে না। সে শুধু জানে তার বাবার একটু শরীর খারাপ হয়েছে , আর সেই জন্য রবি আংকেল এখন তাদের বাড়িতে এসে থাকে।
যখন তার বাবা তার মা কে একা ফেলে তাকে নিয়ে পাশের ঘরে শিফট করলো, তখন সে সরল মনে জানতে চেয়েছিলো এর কারণ। তখন তার বাবা বলেছিলো যে রবি আংকেল তাদের অতিথি তাই রবি আংকেল কে বড়ো ঘরটা ছেড়ে দেওয়া তাদের উচিত। মা তাহলে কেন তাদের সাথে এলো না ? জবাবে বাবা উত্তর দিয়েছিলো , নতুন জায়গায় রবি আংকেল এর একা একা ঘুমোতে ভয় করে। তাই মা রবি আংকেল কে ঘুম পাড়ানোর জন্য রবি আংকেলের সাথে থাকে।

আর পরী তো খুব স্ট্রং এন্ড সাহসী মেয়ে, তাই পরীর মাকে দরকার পড়েনা , সে নিজে নিজেই ঘুমিয়ে পড়তে পারে। তাছাড়া তার বাবা তো আছে। এই ভাবে সেই শিশু মনকে ভুলিয়েছিলো অরুণ , মনীষা ও রবির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর। এছাড়াও যেদিন তার বাবা তার মায়ের সাথে রবি আংকেল এর বিয়ে দিয়েছিলো সেদিনও এরকমই কোনো এক বাহানা বানিয়ে পরীর মন ভুলিয়ে ছিল পরীর বায়োলজিক্যাল বাবা অরুণ।

অরুণ ও মনীষা দুজনেই পরীকে আদর করে গুড মর্নিং বললো। তারপর মনীষা অরুণের সাথে আর কোনো কথা না বাড়িয়ে পরীকে নিয়ে চলে গেলো , ওর মুখ হাত ধুইয়ে ওকে খাওয়াতে। অরুণ ভাবছিলো মনীষার মুড অফ হয়েছে রবির জন্য। কিন্তু মনীষা তো রবিকে তখুনি ক্ষমা করে দিয়েছিলো যখন সে ভাগ্যবশত জানতে পারে এসবের পিছনে আসল মাস্টারমাইন্ডটা কে ছিল। এখন তার সব রাগ ছিল অরুণের প্রতি, সেটা অরুণ জানতো না।

এভাবে দেখতে দেখতে দিনটা কেটে গেলো। রাত হলো। রাতে খাওয়ার পর অরুণ নিজের মেয়েকে নিয়ে ঘরে চলে গেলো ঘুম পাড়াতে। মনীষা নিজের ঘরে ছিল। রবিকে মনীষার ঘরে ঢুকতে দেখে অরুণের বুকটা কিরকম চিঁন চিঁন করে উঠলো। সে মনে মনে ভাবছিলো এবার এই খেলাটা তাকে বন্ধ করতে হবে, যে খেলাটা সে নিজেই শুরু করেছিল, মনীষা ও রবির বিয়ে বিয়ে নামক খেলা। কিন্তু এখন অনেক দেরী হয়ে যায়নি তো ? নাকি এখনো হাতে সময় রয়েছে ? সেটা সময়ই বলবে।
to be continued.......
 

Users who are viewing this thread

Back
Top