দেশে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার, বেড়েছে সংক্রমণজনিত জটিলতা ও মৃত্যু। ঘরে থাকার সময় ফিরে এসেছে আবার। চলছে লকডাউন। জীবনধারণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করতেই হচ্ছে, জরুরি প্রয়োজনে বাইরেও যেতে হচ্ছে। কত হাতই না ঘুরে ঘরে আসছে বাজারসদাই। সংক্রমণের ভয়ে ঘরে ফিরে নানা জিনিস জীবাণুমুক্ত করতে হচ্ছে। জেনে নিন কোনটি কীভাবে জীবাণুমুক্ত করবেন।
রেস্তোরাঁর খাবার
খাদ্যসামগ্রীর মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়ায় না বললেই চলে। তাই সত্যিকার অর্থে রেস্তোরাঁর খাবার বাড়িতে আনিয়ে খেলেও খাবার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর ভয় খুব কম। বাইরে থেকে খাবার আনা হলে পরিষ্কার হাতে খাবারটা প্যাকেট থেকে বের করে নিন। প্যাকেট ফেলে দিয়ে আবার হাত ধুয়ে নিন সাবান দিয়ে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. নুসরাত সুলতানা জানালেন, বাইরে থেকে আনা জিনিস ছুঁলেই যে জীবাণুর সংক্রমণ হবে, বিষয়টা সে রকম নয়। বরং বাইরে থেকে আনা জিনিস স্পর্শ করার পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার আগে নাক-মুখ-চোখে যাতে হাত দেওয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি। আর জিনিসগুলো জীবাণুমুক্ত করে নিয়ে এরপর ব্যবহার করা যাবে স্বাভাবিকভাবেই।
সবজিও জীবানুমুক্ত করার স্প্রে পাওয়া যায় বাজারে
বাজারসদাই
ব্যাগ বা বস্তায় বাজার আনার পর (যেমন চাল, ডাল, মসলা প্রভৃতি) বাড়ির এমন জায়গায় তিন দিনের জন্য রাখতে পারেন, যেখানে কেউ সেটিকে স্পর্শ করবে না। এরপর সেখান থেকে বের করে নিন রান্নার এসব উপকরণ। তড়িঘড়ি ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে যে প্যাকেটটি প্রয়োজন, সেটি বের করে বাইরের পলিথিন বা প্লাস্টিকের মোড়কটি জীবাণুমুক্ত করে নিন ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল স্প্রের মাধ্যমে কিংবা টিস্যু পেপারে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল দ্রবণ নিয়ে সেটির মাধ্যমে।
প্যাকেট ফেলে ভেতরের জিনিসটা (আটা, ময়দা প্রভৃতি) নিয়ে নিন একটি আলাদা পাত্রে। আর ফলমূল-সবজি এবং ডিম আনা হলে, বাসায় আনার পরপরই প্যাকেট ফেলে দিন, আর অবশ্যই ধুয়ে নিয়ে এরপর এগুলো খেতে বা রান্না করতে হবে। লবণ, ভিনেগার, লেবুর রস, সাবান কিংবা অন্য কোনো রাসায়নিক পদার্থের সাহায্যে খাদ্যসামগ্রী থেকে জীবাণু দূর করার চেষ্টা করবেন না। মাছ-মাংস আনার পর ধুয়ে নিন প্রবহমান পানিতে (কলের পানি), এরপর তুলে রাখতে পারেন ফ্রিজে (বাজার থেকে কেনার দুই ঘণ্টার মধ্যেই, এমনকি গরমের সময় এক ঘণ্টার মধ্যেই), কিংবা এই সময়ের ভেতরেই রান্না করে নিন, দীর্ঘ সময় এগুলো ফ্রিজের বাইরে রেখে দেওয়া যাবে না।
নিত্য ব্যবহার্য
মুঠোফোন, অন্যান্য যন্ত্র, চশমা, রোদচশমা, ঘড়ি, গয়না ইত্যাদি বাইরে থেকে এনে অ্যালকোহল প্যাড (৭০ শতাংশ অ্যালকোহলসমৃদ্ধ) দিয়ে মুছে নিতে পারেন। চাবির গোছা, জুতা বা ব্যাগে ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল স্প্রে করা যেতে পারে কিংবা টিস্যু পেপারে এই অ্যালকোহলের কিছুটা দ্রবণ নিয়ে সেটি দিয়ে মুছে ফেলতে পারেন। কাপড়ের ব্যাগ, কাপড়ের জুতা, স্পঞ্জজাতীয় জুতা সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলা যায়।
পোশাক-পরিচ্ছদ
বাইরে থেকে ফিরে সাবান দিয়ে গোসল করে নেওয়া যেমন ভালো, তেমনি একই সঙ্গে পোশাকটিও সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে মিনিটখানেক ভিজিয়ে রেখে এরপর ধুয়ে ফেলা ভালো। ধোয়া সম্ভব না হলে অন্তত তিন দিন কাপড়টিকে বাসার এমন স্থানে রাখুন, যা কেউ স্পর্শ করবে না। ধোয়া কাপড় ইস্ত্রি করতে হলেও তা বাসায় করাই ভালো। তবে বাসায় ইস্ত্রি করতে ঝামেলা হলে লন্ড্রিতে দিতে পারেন। ভারী কাপড়ও লন্ড্রিতে ধুতে দেন অনেকে। লন্ড্রি থেকে কাপড় বাসায় আনার পর অন্তত তিন দিনের জন্য আলাদা রাখাই ভালো, যাতে কেউ স্পর্শ না করে। তিন দিন পর কাপড়টা বের করে ব্যবহার করা যায়, আলমারিতেও তুলে রাখা যায়।
নতুন আসবাব ও বইপত্র
এ সময়ে নতুন আসবাব আনা হলে কিংবা বাইরে থেকে বই, কাগজপত্র, পার্সেল এলে সেগুলোও অন্তত তিন দিন পর ব্যবহার করাই ভালো। খুব প্রয়োজন হলে অবশ্য ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল দ্রবণ দিয়ে আসবাব মুছে নেওয়া যেতে পারে। পার্সেলের মোড়ক ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল দ্রবণ দিয়ে স্প্রে করে নেওয়া যেতে পারে। আর জরুরি কাগজপত্র বাইরে থেকে এনে ৭২ ঘণ্টা পেরোনোর আগে স্পর্শ করতে হলে খেয়াল রাখুন, হাত যেন সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে নিয়মমাফিক জীবাণুমুক্ত করার আগে নাক-মুখ-চোখে দেওয়া না হয়।