সুস্থ থাকার জন্য শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। করোনাকালে ইমিউনিটি বা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে বলছেন সবাই। রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য খুব দামি বা হিসাব করে খাবারদাবার খাওয়ার কোনো দরকার নেই।
বরং আমাদের রান্নাঘরে সহজেই পাওয়া যায়, এমন অনেক কিছুই শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে পারে। আপনি যদি খালি পেটে আপনার প্রতিদিনের ডায়েটে ৩টি জিনিস গ্রহণ করেন, তাহলে আপনার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা অনেকটা বাড়বে। চলুন দেখে নেওয়া যাক।
রসুন
স্বাস্থ্যরক্ষায় রসুন খাওয়ার চল বহুদিনের। খ্রিষ্টপূর্ব ১৫০০ শতকে চীন ও ভারতে রক্ত পাতলা রাখার জন্য এর প্রচলন ছিল। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের জনক হিপোক্রেটিসও একে ব্যবহার করেছিলেন সারভাইক্যাল ক্যানসারের চিকিৎসায়। রান্নায় ব্যবহার ছাড়াও রসুনে অনেক রকমের ঔষধি গুণ আছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় রসুনের ব্যবহার চলে এসেছে। রসুনের মধ্যে পাওয়া যায় ক্যালসিয়াম‚ কপার‚ পটাশিয়াম‚ ফসফরাস‚ আয়রন ও ভিটামিন বি ওয়ান।
শুধু তা–ই নয়, রসুনের মধ্যে আমাদের শরীরে যা প্রয়োজন, মোটামুটি সবই পাওয়া যায়। কাঁচা রসুন খেলে জ্বর এবং সাধারণ ঠান্ডা তাড়াতাড়ি সেরে যায়। এর কারণ, রসুন খেলে ইমিউন সিস্টেমের কার্যক্ষমতা অনেকটা বেড়ে যায়। কোভিডের জটিলতা বাড়াতে হৃদ্রোগ ও উচ্চ রক্তচাপের কোনো জুড়ি নেই। কাজেই নিয়মিত রসুন খেলে হার্ট ও রক্তচাপ ঠিক থাকে। কম থাকবে কোভিডের জটিলতাও। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের মাত্রাও বেশি থাকে কাঁচা রসুনে। পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২-৩টি রসুনের কোয়া খেতে বলছেন পুষ্টিবিদেরা। তাই আপনি খালি পেটে রসুনের এক বা দুই কোয়া গরম পানির সঙ্গে খেতে পারেন।
আমলকী
ভেষজ গুণে অনন্য একটি ফল আমলকী। বিভিন্ন অসুখ সারানো ছাড়াও আমলকী রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে দারুণ সাহায্য করে। আমলকীর গুণাগুণের জন্য আয়ুর্বেদিক ওষুধেও এখন আমলকীর নির্যাস ব্যবহার করা হয়। আমলকীতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি। পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, আমলকীতে পেয়ারা ও কাগজিলেবুর চেয়ে তিন গুণ ও দশ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। আমলকীতে কমলালেবুর চেয়ে ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি, আপেলের চেয়ে ১২০ গুণ বেশি, আমের চেয়ে ২৪ গুণ এবং কলার চেয়ে ৬০ গুণ বেশি ভিটামিন সি রয়েছে। এটি গরম পানির সঙ্গে খেতে পারেন বা খালি পেটেও খেতে পারেন। এর রসও পান করা যায়। এটি অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ। খালি পেটে খাওয়ার সময় অভ্যন্তরীণভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি করে, যা আমাদের ত্বক এবং চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
মধু
স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। মধুতে যেসব উপকরণ রয়েছে, তার মধ্যে প্রধান উপকরণ সুগার। সুগার বা চিনি আমরা অনেকই এড়িয়ে চলি। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ—এ দুটি সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসেবে জমা হয় না। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ে মধুর নমুনা পরীক্ষায় দেখা গেছে যে এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিঙ্ক ও জৈব অ্যাসিড (যেমন: ম্যালিক অ্যাসিড, সাইট্রিক অ্যাসিড, টারটারিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড), কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টিবায়োটিক, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স ও মিনারেল (১৯-২১ শতাংশ) ছাড়াও অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান রয়েছে। ভিটামিন, যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ বা ক্যারোটিন বিদ্যমান। মধুর রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। যেমন এটি পচন নিবারক (অ্যান্টিসেপটিক), কোলেস্টেরলবিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী। প্রতিদিন সকাল ও বিকেলে খালি পেটে চা–চামচের এক বা দুই চামচ করে মধু খেলে দারুণ উপকার পাওয়া যাবে।