খুরশেদ ফ্লাই ওভারের তলায় পানাভর্তি খালের জলে স্নান সেরে এসে ছেঁড়া লুঙ্গিটা পরে নিল।পুঁটলি থেকে এক এক করে পয়সা গুন ছিল।একটা পুরোনো একটাকার অচল পয়সা কেউ দিয়েছে।মুখ দিয়ে 'বেহেনচোদ' অশ্লীল শব্দ বেরিয়ে এলো।প্রায় এক বছর ধরে ভিক্ষা করছে সে।কত লোকের নির্দয় ব্যবহার দেখেছে।মাঝে মাঝে তার মনে হয় কষিয়ে লাথি চালিয়ে দিতে।তার বাঁ পা'টা যখন ছিল তখন তাকে এরকম ভিক্ষা করতে হত না।বিহার থেকে যখন কলকাতায় এসেছিল বয়স কত হবে তার।এই ২৩-২৪।তার তাগড়াই চেহারা দেখে রাজেশ সাউ তাকে কুলির কাজটা পাইয়ে দিয়েছিল।শিয়ালদা স্টেশনে কুলির কাজ করবার সময় তাকে সব কুলিরা সমীহ করত।পেশীবহুল ৬'ফুট লম্বা, তামাটে রঙের গায়ে কত জোর ছিল তার।বিহার গিয়ে বিয়ে করেছিল জোবেদাকে।জোবেদার তখন বয়স ষোলো।কুলিগিরি করে তার আর জোবেদা সংসার চলে যেত।রেললাইনের ধারে ঝুপড়িতে তার সংসার ছিল।প্রায় দশ বছর পরেও তাদের কোনো বাচ্চা না হওয়ায় লোকে জোবেদাকে 'বাঁজ' বলত।তাতে কোনো দুঃখ ছিল না খুরশেদের।খুরশেদের শরীরী চাহিদা বেশি ছিল।জোবেদা কখন তাকে ফেরায়নি।সবসময় তৃপ্ত রাখতো তাকে।এরকমই এক গরমে কাজ সেরে ফিরছিল খুরশেদ রেলবস্তির ধারে জটলা দেখে খুরশেদ এগিয়ে গেল।দেখলো রাস্তার ধারে জোবেদার দেহ পড়ে আছে।বস্তির লোকেরা ডাক্তার নিয়ে আসতে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করলো।জোবেদার নাকি কঠিন রোগ ছিল,একথা বিশ্বাস করতে পারেনি খুরশেদ।
খুরশেদের জীবন বদলে যেতে শুরু করলো সেদিন থেকে।বিড়ি ছাড়া যে খুরশেদের আর কোনো নেশা ছিল না।সেও শুড়িখানা যাওয়া শুরু করলো।রাতে টলতে টলতে বাড়ী ফিরত সে।তার বিরাট চেহারার জন্য সকলে তাকে ভয় পেত।শুড়িখানায় পেত মঞ্জু আসমা,মংলা,তপতি এদের।এদের মধ্যে মঞ্জুর কাছেই খুরশেদ বেশি যেত।খুরশেদের পাশবিক কাম তৃপ্ত করতে পারতো মঞ্জু।সারাদিনের রোজগার ঢেলে দিত মঞ্জুর কাছে।মদ গিলে বাড়ী ফিরবার সময়ই দেখা হত ফয়জলের সাথে।ফয়জলই একদিন খুরশেদকে আবার বিয়ের প্রস্তাব দেয়।ফয়জলকে ছোট ভাইর মত দেখেছে খুরশেদ।তার প্রস্তাব ফেলতে পারেনি।আনোয়ারা কে যেদিন দেখেছিল সে,সেদিন অবাক হয়ে গেছিল খুরশেদ।রোগাটে শ্যামলা চেহারার আনোয়ারা ফয়জলের বিহারের গাঁ থেকে এসেছে।খুরশেদ ফয়জলকে বলেছিল, 'ইস উমর কি লেড়কি অর ম্যায়!'
খুরশেদের বয়স তখন চল্লিশ আর আনোয়ারা আঠারো।নিকার প্রথম রাতে আনোয়ারা ঘোমটা টেনে বসেছিল।খুরশেদ কোনো বাক্যালাপ ছাড়াই আসতে আসতে আনোয়ারার গা থেকে এক একটা পোশাক খুলে নিয়েছিল।বুকের কাছে চোখ পড়তেই দেখলো পেয়ারার মত দুটো স্তন।ধাতব হাতে মুচড়ে ধরেছিল খুরশেদ।এক ঝটকায় নীচের অংশ উন্মুক্ত করে যোনিতে হাত ঘষতে থাকলো।শ্যামলা ময়লাটে গায়ের রং আনোয়ারার বুকের কাছটা তুলনামূলক উজ্জ্বল ছিল।আনোয়ারা টের পাচ্ছিল একটা নরপশু তার উপর চেপে রয়েছে।মুখ বুজে উপভোগ করবার চেষ্টা করছিল সে।বেশি সময় নেইনি খুরশেদ নিজের লৌহদণ্ডের মত দীর্ঘ কালো লিঙ্গটা গেঁথে দিল যোনিতে।সতীচ্ছদা ভেদ করে উথিত হল লিঙ্গ খানা।প্রথমদিনের যন্ত্রনা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার।ধীরে ধীরে শিখে গেছিল কি করে এই পুরুষকে সুখী করতে হয়।নতুন বউ পেয়ে খুরশেদ বাড়ী ফিরত তাড়াতাড়ি।এসেই ঝাঁপিয়ে পড়তো আনোয়ারার উপর।খুরশেদের ছিল একধিক বিকৃত কামনা।আনোয়ারা বাধা দিত না।চলত উদোম যৌনক্রিয়া।ঝুপড়ির মধ্যে বয়ে যেত কামানলের তীব্র ঝড়।আনোয়ারা গর্ভবতী হবার পর খুরশেদ যে আনন্দ পেয়েছিল তা সে জীবনে পায়নি।অষ্টাদশী আনোয়ারার পেটটা ফুলে উঠছিল ধীরে ধীরে।গর্ভাবস্থায়ও আনোয়ারা খুরশেদের যৌনখিদেকে অতৃপ্ত রাখেনি।মুন্নির জন্ম হবার পর খুরশেদ তার ভালো নাম রেখেছিল মুস্কান।আসতে আসতে মুস্কান বড় হচ্ছিল খুরশেদের জীবনে সুখের আলোক বইছিল ধীরে ধীরে।খুরশেদ মনে করত জোবেদাই তাকে এসব দিচ্ছে।যা সে নিজে দিতে পারেনি।মুস্কান যখন হাঁটতে শিখেছে,আনোয়ারা আবার গর্ভবতী হল।খুরশেদ চেয়েছিল তাদের একাধিক বাচ্চা।বস্তিতে পুরুষ মহলে একধিক বাচ্চা থাকা যেন গৌরবের।তাতে পুরুষের যৌন ক্ষমতার প্রমান হয়।আনোয়ারা প্রথমটা রাজি ছিল না।তবে আনোয়ারা জানতো খুরশেদের রাগের কথা।মুখের অশ্লীল শব্দে ঝড় তুলতো খুরশেদ।খুরশেদ সেদিন কাজে গেছিল,পেটের ব্যথা ওঠায় ফয়জল ও তার বউ সালমা অন্তঃসত্বা আনোয়ারা কে হাঁসপাতালে ভর্তি করলো।খুরশেদ খবর পেয়ে হাঁসপাতালের বাইরে পায়চারি করছিল।
কিছুক্ষণ পর আনোয়ারা বিবি নাম টা শুনে,খুরশেদ এগিয়ে গেল।
'হাঁ সাব বলিয়ে,ম্যায় হু উসকা পতি'
ডাক্তার যা জানালো,তা শুনে খুরশেদের পড়ে যাবার উপক্রম।আনোয়ারা এবং বাচ্চা দুজনেই মৃত। ফয়জল ধরে ফেলল খুরশেদকে। ভারী দীর্ঘ চেহারার খুরশেদকে সামলাতে পারছিল না ফয়জল।বলল 'খুরশেদ ভাই শান্ ত হুইয়ে'
খুরশেদ মুন্নিকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল সেখান থেকে।
ফয়জলের বিবি সালমাই মুন্নির দেখাশোনা করত।খুরশেদ কাজ থেকে ফিরে মেয়েকে কোলে তুলে নিত।এভাবেই চলছিল খুরশেদের জীবন।খুরশেদ তার জীবনের কামলালসা কে বর্জন করেছিল মুন্নির মুখের দিকে তাকিয়ে।খুরশেদ নাম সহি করতে জানে ও অক্ষর চেনে তাও হিন্দিতে।ফয়জলের বউ সালমা ফোর পর্যন্ত পড়েছে বাংলায়।ছোট্ট মুন্নিকে অ আ শেখাতে লাগলো।
বৃষ্টির দিনে রেল লাইনের পাশে জল জমে থাকতো।শরীরটা ম্যাজ ম্যাজ করছিল খুরশেদের,কাজে যেতে মন ছিল না সেদিন।মুন্নি ফয়জলের বাড়ীতে তার মেয়ের সাথে খেলছে।বৃষ্টিটা কমতেই খুরশেদ বিড়ি ধরিয়ে রেল লাইন পার হচ্ছিল।তারপর..আর মনে নেই তার যখন জ্ঞান ফিরলো বাঁ পা টা নেই।ব্যান্ডেজ বাঁধা।কিছু দিন ফয়জল ও তার বিবি খুরশেদের দেখাশোনা করত।ফয়জলও খুরশেদের মত কুলি।ধীরে ধীরে খুরশেদ সুস্থ হয়ে উঠতে ফয়জল তার গরীবের সংসারে আর দায়ভার নিতে রাজি হয়নি।ঝুপড়ি ত্যাগ করে মুন্নিকে নিয়ে ভিক্ষে করতে বেরিয়ে এসেছিল খুরশেদ।সারাদিনে এইভাবেই চলে খুরশেদের। রেলকতৃপক্ষ তার ঝুপড়িটাও ভেঙে দিয়েছে।বলতে বলতে খুরশেদের বয়সও প্রায় ৪৫-৪৬।জীবনের অনেক ঝড় দেখেছে সে।তবু দমেনি সে।দীর্ঘ চেহারার পাথরের মত খুরশেদ চলে এসেছে বস্তি থেকে দূরে। এই নির্জন ফ্লাইওভারের তলায় পলিথিন ও কাগজের পেটি দিয়ে সে থাকবার জায়গা বানিয়েছে।তার একমাত্র সম্বল এখন মুন্নি।খুরশেদ এখনও স্বপ্ন দেখে মুন্নি একদিন বড় হবে,লেখাপড়া করবে।বড়লোকদের দেখলে রাগ-হিংসা হয় খুরশেদের।
'আব্বা! আব্বা!' ডাকে সম্বিৎ ফিরে পেল খুরশেদ।দেখলো মুন্নির হাতে থালা ভর্তি কিছু একটা...
মুন্নির হাতে থালা দেখে,খুরশেদ বিড়ির ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বলল
'থালি মে ক্যায়া হ্যায় মুন্নি?কাঁহা সে লে আয়া?'
মুন্নির চোখে মুখে আনন্দে ছাপ,'আব্বা ও জো ঘর হ্যায় না,উহিসে দিয়া হ্যায় এক অওরত'
খুরশেদ দূর থেকে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে ধমক দিয়ে বলল,'তু ইতনা দূর কিউ গ্যায়াথা,তুঝে ক্যাহি নেহি জানেকো বোলাথা না না?'
মুন্নি ভয় পেয়ে সিঁটিয়ে যেতে খুরশেদ হাঁসি মুখে এগিয়ে এলো।
'চল বিটিয়া ক্যায়া লায়া হ্যায় দেখু তো'
খাবার দেখে লোভ সংবরন না করতে পারলেও খুরশেদ বুঝতে পারলো একটি বাচ্চার জন্য দেওয়া খাবারে তার আর হবে না।
সে মুন্নিকে খেয়ে নিতে বলতে মুন্নি চেঁটেপুটে খেতে থাকলো।
খুরশেদ দূরে একটা সস্তার হোটেল আছে সেদিকে রওনা দিল,সামান্য পয়সা দিলে তারা খাবার দেয় ভালোই।খুচরো কয়েনগুলো নিয়ে ভাঙানোর বিনিময় বাপ-বেটিতে পেট ভরে যায় দু-বেলা।
*******