‘কুঁচবরণ কন্যা রে তার মেঘবরণ কেশ
ওরে আমায় নিয়ে যাও রে নদী সেই সে কন্যার দেশ রে’
নজরুলের গানে এভাবেই এসেছে নারীর চুলের অপূর্ব বর্ণনা। এখন এমন বর্ণনার চুল সাহিত্যেই বেশি পাওয়া যায়, বাস্তবে কম।
কাঠের চিরুনি, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
মায়েরা তো মেয়ের চুলে তেল দিতে বসলেই নস্টালজিক হয়ে পড়েন। ‘চুল ছিল আমাদের সময়। তোর দাদির মাথায় যে আশি বছর বয়সেও কী চুল ছিল...তোরা তো হাবিজাবি মেখে চুলগুলো নষ্ট করেছিস,’ এগুলো মায়েদের ‘কমন ডায়লগ’। অনেকে আবার চুল নষ্ট হওয়ার পেছনে দায়ী করেন প্লাস্টিক, ধাতু বা ফাইবারের তৈরি চিরুনিকে। সেই দাবির যে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি আছে, সময়ের সঙ্গে তা–ও সামনে এসেছে। তাই প্লাস্টিকের চিরুনি সরিয়ে সেই জায়গা নিক কাঠের চিরুনি। কাঠের চিরুনির সঙ্গে হোক মেঘবরণ কেশের সন্ধি। কেননা, অনেক ক্ষেত্রেই মেঘবরণ কেশের পূর্বশর্ত একটি কাঠের চিরুনি।
বাজারে পাওয়া যায় নানান রকম কাঠের চিরুনি, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
প্লাস্টিকের চিরুনি মাথার ভেতর থেকে সব ময়লা টেনে বের করতে পারে না। ধাতব বা প্লাস্টিকের চিরুনিতে যে স্ট্যাটিক বিদ্যুৎ তৈরি হয়, তাতে আঁচড়ানোর সময় চুলের ধুলা–ময়লা চিরুনির গায়ে আটকে আবার চুলেই থেকে যায়। কাঠের চিরুনিতে সে ভয় একেবারেই নেই। অন্যদিকে কাঠের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ালে মাথা পরিষ্কার থাকে। কারণ, আঁচড়ানোর সময় মাথার ধুলা–ময়লা বেরিয়ে আসে চিরুনির সঙ্গে। আর খুশকির সমস্যাও থাকে না। কাঠের চিরুনি ব্যবহারে প্রাকৃতিকভাবে চুলের ভলিউম বাড়ে।
চুল আঁচড়াতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় প্লাস্টিকের চিরুনি। এসব প্লাস্টিক বা ধাতুর তৈরি চিরুনি চুল আঁচড়ানোর সময় ছোট ছোট স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে, তা চুলের জন্য ক্ষতিকর। প্রাকৃতিক কাঠের চিরুনিতে এই সমস্যা থাকে না। ফলে চুল ভাঙে না বা রুক্ষ হয়ে যায় না। বরং চুলে পুষ্টি জোগায়।
বাজারে পাওয়া যায় নানান রকম কাঠের চিরুনি, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
কাঠের চিরুনি কোমলভাবে চুলের জট ছড়ায়। এর ধারগুলো মসৃণ আর গোলাকার হয় বলে মাথার তালু থেকে প্রাকৃতিকভাবে যে তেল উৎপন্ন হয়, তা সব চুলের গোড়ায় সুষমভাবে পৌঁছায়। অন্যান্য চিরুনির তুলনায় কাঠের চিরুনিতে মাথার তালুর ম্যাসেজ হয় সবচেয়ে ভালোভাবে। এতে মাথায় রক্ত সঞ্চালন বাড়ে। তাই চুলের বৃদ্ধির জন্যও কাঠের চিরুনি দারুণভাবে সহায়ক।
কাঠের চিরুনি ব্যবহারে চুল থাকে ঝলমলে, ছবি: ইনস্টাগ্রাম
অন্যান্য চিরুনিতে চুল আঁচড়ানোর সময় মাথায় তাপ উৎপন্ন হয়, যা চুলের জন্য ক্ষতিকারক। মাথার তালু এই অতিরিক্ত তাপ সহ্য করতে পারে না বলে চুল পড়ে। কাঠের চিরুনি এদিক দিয়ে সুবিধাজনক। এতে অতিরিক্ত তাপ উৎপন্ন হয় না। তা ছাড়া অন্যান্য চিরুনিতে অনেকের অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে।
কাঠের চিরুনি পরিষ্কার করবেন যেভাবে
চিরুনিটি সামান্য নারকেল তেল বা পেট্রোলিয়াম জেলি মাখিয়ে আধঘণ্টা রাখুন। তাতে ময়লাগুলো নরম হয়ে আসবে। পরে কাপড়, কাগজ বা কিচেন টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। ব্যস, হয়ে গেল নতুনের মতো। সহজ তো। কাঠের কোনো কিছু পানিতে না ধোয়াই ভালো।