করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নেওয়ার পরও কেউ কেউ এই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এতে অনেকের মধ্যেই টিকা নেওয়ার ব্যাপারে উৎসাহ কমে গেছে। কিন্তু এরই মধ্যে প্রমাণিত হয়েছে যে টিকা নেওয়ার পর করোনা সংক্রমিত হলেও তীব্রতা বা জটিলতার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জনসাধারণের ৭০ শতাংশকে টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা গেলে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করা সম্ভব। আর এটি অর্জন করা গেলে নতুন করোনাভাইরাস প্রকৃতি থেকে বিনাশ না হলেও তা মানুষের মধ্যে তীব্র রোগ কিংবা মৃত্যুঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারবে না। বিশ্বজুড়ে টিকা কর্মসূচির মূল উদ্দেশ্য এটাই।
করোনার টিকা নেওয়ার পর এই ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়া নিয়ে অনেকের মধ্যেই নানা রকম প্রশ্ন জেগেছে। একটি প্রশ্ন হলো, টিকার কারণেই সংক্রমণ ঘটল কি না। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, টিকায় জীবিত ভাইরাস ব্যবহার হয় না। নিষ্ক্রিয় ভাইরাসের অংশবিশেষ দিয়ে টিকা উৎপাদন করা হয়। কাজেই টিকা নিজে কারও শরীরে সংক্রমণ ঘটাতে অক্ষম। সংক্রমণ বা রোগ সৃষ্টি করতে হলে মানবদেহে ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি করতে হবে, যা কেবল জীবিত ভাইরাসই করতে পারে।
এদিকে টিকা নেওয়ার পরপরই শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় না। এর জন্য কিছুদিন সময় লাগে। এই সময়ের মধ্যে কিংবা টিকা নেওয়ার আগমুহূর্তে কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে থাকলে সে ক্ষেত্রে টিকা তেমন প্রতিরোধ গড়তে পারে না। আর করোনার টিকার সর্বোচ্চ সুরক্ষা পেতে দুই ডোজ টিকা নিতে হয়। কাজেই প্রথম ডোজের পরই পূর্ণ নিরাপত্তা পাওয়া সম্ভব নয়। আবার করোনার যেসব টিকা বিভিন্ন দেশে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর কোনোটাই শতভাগ সুরক্ষা দেয় না। কাজেই টিকা নিয়েই নিজেকে সুরক্ষিত ভাবার কোনো সুযোগ নেই।
আমাদের দেশে করোনার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েই অনেকে স্বাস্থ্যবিধি মানা ছেড়ে দিয়েছেন। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্বের নিয়মকানুন মেনে চলা, কিছুক্ষণ পরপর সাবান–পানি দিয়ে হাত ধোয়ায় এসেছে শিথিলতা। গত কিছুদিনে বিপুলসংখ্যক মানুষ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ঘুরে বেড়িয়েছেন, সামাজিক অনুষ্ঠান বা উৎসব পালন করেছেন। এসব ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মানা হয়নি বললেই চলে। এমনটা করা চলবে না কিছুতেই।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে মাস্ক পরুন, ভিড় এড়িয়ে চলুন। সামাজিক অনুষ্ঠান–উৎসব সীমিত আকারে পালন করুন। বারবার হাত ধুতে হবে, হাঁচি–কাশির আদবকেতা মেনে চলুন। কারও জ্বর কিংবা করোনার অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে সবার থেকে আলাদা থাকুন। টিকা নেওয়ার সময়ও সব ধরনের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। টিকা নেওয়ার পর করোনার উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা করাতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
এদিকে করোনার টিকা নিয়ে দেশে দেশে আরেকটি উদ্বেগ ছড়াতে শুরু করেছে, তা হলো করোনার টিকা নিলে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি আছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কেমন কিছু নেই। ইউরোপে এ পর্যন্ত প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষ অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে খুবই নগণ্য। ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার টিকার ক্ষেত্রেও মোটামুটি একই হারে রক্ত জমাট বাঁধার ঘটনা ঘটেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউরোপীয় মেডিসিন এজেন্সি জানিয়েছে, গবেষণায় এখন পর্যন্ত করোনার টিকার সঙ্গে রক্ত জমাট বাঁধার কোনো যোগসূত্র পাওয়া যায়নি। কাজেই যতই গুজব রটুক, তাতে কান না দিয়ে টিকা নিন।
* লেখক: অধ্যাপক ডা.মোহাম্মদ আজিজুর রহমান | বক্ষব্যাধি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ