করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নতুন নতুন প্রস্তুতি চলছেই। লকডাউন, শাটডাউনে নানাভাবে এ ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা চলছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এর একটি ঢেউ পার করার পর পরবর্তী ঢেউ আসছে আরও শক্তিশালীভাবে। আবার সবার পক্ষে ঘরে বসে থাকাও সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে বিশেষজ্ঞরা করোনাভাইরাস প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হিসেবে ব্যক্তিগত সচেতনতা ও শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা, অর্থাৎ ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে তোলার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বড় ভূমিকা রাখে। এ ছাড়া অন্যান্য ভাইরাসজনিত রোগ যেমন জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া থেকেও সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব। ভালো ইমিউন সিস্টেমের লক্ষণ হচ্ছে সঠিকভাবে কার্যকর শ্বাসযন্ত্র, পরিপাকতন্ত্র ও সুস্থ শরীর।
তাই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন বেশি পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন। যেমন মধু। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো কিছু ভিটামিন, মিনারেল ও এনজাইম; যা শরীরের ক্ষতিকর ফ্রি র্যাডিক্যালের বিরুদ্ধে লড়াই করে শরীরের কোষগুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচিয়ে শরীরে জীবাণু সংক্রমণের ঝুঁকি প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। প্রধান অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো হলো বিটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, সি ও ই, লাইকোপেন, লুটেইন সেলেনিয়াম ইত্যাদি।
পিওর মধুতে প্রায় ৪৫টি খাদ্য উপাদান থাকে। ফুলের পরাগের মধুতে থাকে ২৫ থেকে ৩৭ শতাংশ গ্লুকোজ, ৩৪ থেকে ৪৩ শতাংশ ফ্রুক্টোজ, ০.৫ থেকে ৩.০ শতাংশ সুক্রোজ এবং ৫ থেকে ১২ শতাংশ মন্টোজ। আরও থাকে ২২ শতাংশ অ্যামিনো অ্যাসিড, ২৮ শতাংশ খনিজ লবণ ও ১১ শতাংশ এনকাইম। এতে চর্বি ও প্রোটিন নেই। ১০০ গ্রাম পিওর মধুতে থাকে ২৮৮ ক্যালরি।
করোনা অতিমারিকালে মধুর উপযোগিতা সম্পর্কে এভারকেয়ার হসপিটালস ঢাকার প্রধান পুষ্টিবিদ তামান্না চৌধুরী বলেন, ‘আসলে কোনো কিছুই এককভাবে তেমন কার্যকর নয়। মহামারিকালে শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ানো খুবই জরুরি। আর মধু রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক। মধুতে প্রচুর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে। রয়েছে পটাশিয়াম। চিনির পরিবর্তে নিয়মিত মধু খেলে তা স্বাস্থ্যঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে। ইমিউন সিস্টেম বাড়ে। মধুতেও ক্যালরি আছে। তবে সেটি অন্য ক্যালরির মতো ক্ষতিকর নয়।’ এই পুষ্টিবিদ আরও বলেন, অনেকে ঠান্ডা লাগলে বেশ কয়েক কাপ লাল চা খান। আর ঠান্ডা–কাশি করোনার অন্যতম লক্ষণ। এতে আবার রাতে ভালো ঘুম হয় না। রাতে ঘুম না হলে আবার যেকোনো অসুখ থেকে সেরে ওঠা কঠিন। এর বদলে তিনি যদি এক কাপ উষ্ণ গরম পানিতে মধু আর লেবু মিশিয়ে খান, তাহলে ঠান্ডা দ্রুত সেরে যাবে। আর রাতেও ভালো ঘুম হবে।
মধুতে থাকে খুব বেশি পরিমাণে কপার, লৌহ ও ম্যাঙ্গানিজ, যা রক্তের হিমোগ্লোবিন গঠনে সহায়তা করে এবং শরীরে রক্তশূন্যতা কমায়। আদিকাল থেকে মানুষ ফুসফুস ভালো রাখতে এবং এর যাবতীয় রোগ প্রতিরোধে মধু খেয়ে আসছে। এতে যে শর্করা থাকে, তা সহজেই হজম হয় এবং ডেক্সট্রিন সরাসরি রক্তে প্রবেশ করে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে মানুষের হজমক্ষমতা বাড়ায়। সবশেষে বলা যায়, মধু শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়। শরীরের ভেতরে ও বাইরে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করার ক্ষমতাও জোগান দেয়। মধুতে আছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধকারী উপাদান, যা অনাকাঙ্ক্ষিত সংক্রমণ থেকে দেহকে রক্ষা করে।
তবে বাজারে অনেক সময় ভেজাল বা চিনিমিশ্রিত মধু অনেক অসাধু ব্যবসায়ী আসল সুন্দরবনের মধু হিসেবে খোলা বাজারে বিক্রি করে থাকেন। তাই এসব সংশয় না রেখে যাচাইকৃত ও পরীক্ষিত মানের মোড়কজাত মধু কেনা উত্তম। কারণ, এগুলো বিএসটিআইসহ বিভিন্ন অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান দ্বারা পরীক্ষিত ও স্বীকৃত হয়ে থাকে, যা মানের নিশ্চয়তা দেয়।