বছরজুড়েই বাড়িতে বেকিং করার প্রতি ঝোঁক দেখা গেছে। অভিনেত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী টয়া।
মনে রাখার মতোই একটা বছর ২০২০ সাল। বদলে গিয়েছে জীবনযাপনের ধারা। আবার ধীরে ধীরে প্রয়োজনের কারণে ফেরতও এসেছে। ২০২১ সালে যাওয়ার আগে ২০২০ সালের উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনগুলোর দিকে শেষবারের মতো ফিরে তাকানো যাক।
ধরুন সাল ২০৩০। করোনাভাইরাসের নাম শুনলে মানুষ এখন আর আগের মতো ভয় পায় না। টিকাও অনেকটা নাগালের মধ্যেই চলে এসেছে। ১০ বছর আগের সঙ্গে এখনকার অনেক কিছুরই মিল নেই। জীবনযাপনের অর্থই যেন বদলে গিয়েছিল সে সময়। জীবন বাঁচানো যেখানে মুখ্য ছিল, তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে ছোট থেকে বড় অনেক পরিবর্তন চলে এসেছিল প্রতিদিনের জীবনযাপনে। আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ছিল অনেকে। থমকে গিয়েছিল জমকালো ফ্যাশনের দুনিয়া। মুখ থুবড়ে পড়েছিল অনেক ফ্যাশন হাউস। বেশ কিছু সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্র ও পোশাকের দোকান বন্ধই হয়ে গেল। আবার চিন্তা করলে অনলাইনভিত্তিক দোকানগুলো বেশ লাভের সঙ্গেই ব্যবসা করেছে।
ভাবতে অবাক লাগে, কিন্তু ১০ বছর পর বসে কি আমরা আসলেই অনুভব করতে পারব এ বছরের অভিজ্ঞতা। ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করে রাখার মতোই একটা বছর ২০২০ সাল। ওলট-পালট হয়ে গেছে অনেক কিছুই। আবার ধীরে ধীরে প্রয়োজনের কারণে ফেরতও এসেছে। ২০২১ সালে যাওয়ার আগে একবার ২০২০ সালের দিকে না হয় শেষবারের মতো ফিরে তাকানো যাক।
বেকিংয়ের ঝোঁক
বাইরে খাওয়া আমাদের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হওয়া মানা, এটা মানসিকভাবে ধাক্কা দিয়েছে সবাইকে। প্রাথমিকভাবে নিজেদের সামলে নেওয়ার পর জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার ওপর মনোযোগ দেয় সবাই। বেকিং এখানেই জোরালো ভূমিকা পালন করে। শুধু আমাদের দেশেই নয়, পাশ্চাত্যেও প্রায় প্রতিটি পরিবারেই চলে বেকিং করার প্রতিযোগিতা। মজার বিষয় হচ্ছে, ছেলেরাও তৈরি করেছে মজার মজার সব পদ। রুটি, কেকসহ নানা রকম ঝাল পদগুলো ইচ্ছা করলেই যে বাড়িতে তৈরি করা যায়, হাতে-কলমে বোঝা গেছে ভালোভাবে।
বেকিং করায় ছিল আগ্রহ
আরামের পোশাকে সারা দিন
কাফতান ২০২০ সালের অন্যতম জনপ্রিয় পোশাক। আরামদায়ক কাটের কারণে এটা সারা দিনই পরে থাকা যায়। গরমেও আরাম দেয়। এ ছাড়া ট্রাউজার্স, পালাজ্জো কিংবা ঢিলেঢালা ম্যাক্সি ড্রেসও আছে তালিকায়।
কাফতান ছিল এ বছরের জনপ্রিয় পোশাক
জুম মিটিংয়ের সাজ
বাড়ি থেকেই অফিস করা হয়েছে মূলত। মিটিংগুলোও তাই। মিটিংয়ের আগে নিজেকে গুছিয়ে নেওয়ার বিষয়টিও আছে। যেমন-তেমন অবস্থায় কম্পিউটারের কি-বোর্ড টেপার কাজ না হয় শেষ করা গেল। কিন্তু পেশাগত কাজে চেহারা দেখানোর বিষয় যখন আসবে, তখন তো টিপটপই থাকতে হবে। ক্যামেরা দিয়ে যতটুকু দেখা যায়, নিজের সেটুকু অংশ সাজিয়ে তোলা কিংবা চারপাশের পরিবেশটা গুছিয়ে নেওয়াটাও প্রায় প্রতিদিনের কাজই ছিল।
জুম মিটিঙের আগে নিজেকে পরিপাটি হওয়া
বাড়িতেই বিয়ের আয়োজন
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে বেশির ভাগ বিয়ের আয়োজন হয়েছে বাড়ির মধ্যেই। বিষয়টা বেশ উপভোগ করার মতোই। খুব কাছের কয়েকজন মানুষ মিলে বাড়ির ভেতরেই বিয়ের সাধারণ অথচ জমকালো আয়োজন করা হয়েছে। পুরোনো দিনগুলো এক অর্থে ফিরে এসেছিল।
বিয়ের আয়োজন হয়েছে বাড়িতেই মডেল হয়েছেন অভিনেত্রী সারিকা সাবাহ
পারলারের যত্ন ঘরে
চুল কাটা, ত্বকের নিয়মিত যত্ন, শিট মাস্কের ব্যবহার, চুলের যত্ন, চুল রং করার মতো বিষয়গুলো বাড়িতেই করা হয়েছে। চুল কাটা নিয়ে যে নিত্যনতুন মজার ঘটনাও ঘটেছে, ফেসবুকে তুলে দেওয়া ছবিগুলোতে সেই বিষয়টি উঠে এসেছে ভালোভাবেই।
ত্বকের যত্ন নেওয়া হয়েছে বাড়িতেই মডেল আরুষ ও টয়া
মাস্ক
ভাইরাসকে হারাতেই মাস্কের ব্যবহার আবশ্যক এখন প্রতি মুহূর্তে। সামনে করোনার ভয়াবহ চিত্র চিন্তা করে শুরু হয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। মুখে মাস্ক না থাকলেই জরিমানা করা হচ্ছে। কথা না মানলে ভবিষ্যতে জেলের সাজাও হতে পারে, এমনটাও শোনা যাচ্ছে। ভাইরাসকে ভয় দেখানোর জন্য হলেও পরে ফেলুন মাস্ক। কে জানে আপনার দিকে আসতে গিয়ে মাস্কের নকশা দেখেই উল্টো দিকে দৌড় দেবে। প্রিন্ট, হাতের নকশা সবকিছুই তুলে ধরা হচ্ছে মাস্কের ওপর। দেশীয় নকশা জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। আছে পতাকার নকশা, গামছা, জামদানি, মোমবাটিক, রিকশাচিত্র, প্রাকৃতিক রং, পুঁতি বসানো বা বেনারসির নকশায় জমকালো মাস্ক।
মাস্কে দেখা গেছে নানা ধরনের নকশা
ঘরে উৎসব পালন
এ বছরের প্রতিটি উৎসবই বাড়িতে থেকে করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে, নিজের এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য। পয়লা বৈশাখ, ঈদ, পূজা কিংবা বড়দিনের মতো দিনগুলো কেটেছে পরিবারের মধ্যেই, বাড়িতেই। মানুষ উৎসব উদ্যাপন করেছে ভিন্নভাবে। রান্না, সাজা, ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়া-সবই হয়েছে বাড়ির চার দেয়ালের মধ্যেই।
ঘর সাজানোতে উৎসাহ ও বাড়িতেই উৎসব পালন করা—দুটো বিষয়ই ছিল এ বছর। মডেল হয়েছেন অভিনয়শিল্পী দম্পতি টয়া ও শাওন।
অন্দরসাজ
বাড়িকে নতুনভাবে সাজানোর বিষয়ে বেশ আগ্রহ দেখা গেছে এবার। বাড়ি পরিষ্কারের বিষয়টি তো ছিলই। অনেকে তো দেয়ালের রংও বদলে ফেলেছেন নিজে নিজে। অনেকে ছোটখাটো আসবাবের ওপর দিয়েছেন নতুন রং। আসবাবের দিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অনেকে দিয়েছেন নতুন অন্দরসাজ।
বাগান করা
বাগান করাটা বিলাসিতা অনেকের কাছে। মূলত সময়ের অভাবের কারণেই। এবার সেই শখও মেটানো হয়েছে ইচ্ছেমতো। বাড়ির বারান্দায় কিংবা ছাদের এক কোণে গড়ে তুলেছেন নিজের ছোট্ট একটি বাগান। সেই ছবিও আবার গর্ব করে প্রকাশ করেছেন সামাজিক মাধ্যমে।
বাগান করাতে বেড়েছে আগ্রহ
চোখ সাজানো
মাস্কের কারণেই চোখ সাজানোর বিষয়টি এ বছর বেশ গুরুত্ব পেয়েছে। সাজতে ভালোবাসেন যাঁরা, তাঁদের কারণেই এ ধারা তৈরি হয়ে গেছে। পুরো চেহারা না হোক। যেটুকু দেখা যাচ্ছে, সেটুকুকেই মন ভরে সাজানো হোক না হয়। আইশ্যাডো আর মাসকারার দৌরাত্ম্য এখন। লিপস্টিকের জনপ্রিয়তা কমে গেছে অনেকটাই। এ তথ্য দিচ্ছে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমগুলোও। মাস্ক পরে থাকার কারণে নজর এখন চোখের দিকেই।
মাস্ক পরার কারণে চোখ সাজানোয় বেড়েছে গুরুত্ব
ঘরে থাকা পোশাকই উৎসবের পোশাক
উৎসব মানেই নতুন পোশাক। এটা আনন্দ প্রকাশেরই আরেকটা মাধ্যম। তবে এবার দৃশ্য ছিল কিছুটা ভিন্ন। তুলনামূলক কম পরা হয়েছে বা বাড়িতে আগে থেকে কেনা নতুন পোশাক ছিল, সেটা দিয়েই হাসিমুখে উদ্যাপন করা হয়েছে উৎসবগুলো।
আগের পোশাকেই সম্পূর্ন হয়েছে উৎসবের সাজ
তারকাদের মতো করে সাজা
তারকাদের বিখ্যাত সাজ বা বিখ্যাত চরিত্রের মতো নিজেকে সাজাতে পছন্দ করেন অনেক ভক্তই। করোনার এই সময়ে সে সুযোগ আরও বেশি পাওয়া গেছে। যে পোশাক ও সাজের পেছনে তারকাদের খরচ হয় লাখ লাখ টাকা, বাড়িতে হাতের কাছে থাকা সাজের নানা অনুষঙ্গ, পোশাক দিয়ে ভক্তরা একই সাজ সাজছেন অনেকটা বিনা পয়সাতেই। লালগালিচায় তারকাদের সাজের পাশাপাশি বিখ্যাত চিত্রকর্মের চরিত্র, গানের অ্যালবামের প্রচ্ছদের ছবি, চলচ্চিত্রের চরিত্রগুলোতেই আবার সাজছেন ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবিও দিচ্ছেন। তারকাদের পেছনে ফেলে ভক্তরাই এখন বেশি প্রশংসা পাচ্ছেন। এর মাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে তাঁদের সৃজনশীলতাও।
তারকাদের অনুকরণে সাজতে দেখা গেছে ভক্তদের। অভিনেত্রী অর্ড্রে হপবার্নের অনুকরণে সেজেছেন মডেল প্রিয়ম।
বাড়িতে ক্র্যাফটের কাজ
শিশুদের ব্যস্ত রাখতে বা ঘর সাজাতে অনেকে বাড়িতে বসেই তৈরি করেছেন নানা রকম হাতে বানানো জিনিস। কাগজ, কাপড়, খালি বাক্স ইত্যাদি দিয়েই বানানো হয়েছে মজার সব জিনিস।
হাতে বানানো জিনিস করা হয়েছে অনেক